ভাসানচর নয় স্বদেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে নয় স্বদেশে ফিরতে চায়। তাদের দাবি তারা পাহাড়ে বসবাসে অভ্যস্ত। ভাসানচরে পরিবেশগত কারণে তাদের জন্য বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও ইতোমধ্যে ভাসানচরে গুচ্ছঘর, স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ ও রাস্তাঘাটসহ সব নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তারা বলছে, আমরা ভাসানচরে যেতে চাই না, স্বদেশে ফিরে যেতে চাই। একটি সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপের সিদ্ধান্ত ছাড়া সাধারণ রোহিঙ্গারা কিছুই করতে পারে না। ভাসানচরে যাওয়া পরিদর্শনকারীদের মধ্যে তাদের গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছে একটি পক্ষ। এ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দফায় দফায় বৈঠকও চলছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

এ বিষয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম জানান, ভাসানচর পরিদর্শন করার পর পরিদর্শনকারীরা আপাতত নীরব রয়েছে। তাদের দাবি ভাসানচর প্রাকৃতিক দুযোর্গের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গারা ভাসানচর যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, গুচ্ছঘর, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও রাস্তাঘাটসহ সব করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা প্রায় পাহাড়ি এলাকায় বসাবাসে অভ্যস্ত। তারা সাগরকে ভয় পায়। তার চেয়ে তাদের স্থান্তান্তর না করে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এই আবেদন জানাচ্ছি।

ভাসানচর ফেরত টেকনাফের জাদিমুরা শরণার্থী শিবিরের চেয়ারম্যান বলেন, ভাসানচরের অবকাঠামো ও পরিবেশের সম্পর্কে ক্যাম্পে প্রচারণা শুরু করা হয়নি। তাছাড়া ক্যাম্পে সিআইসিরাও এই বিষয় নিয়ে কিছু বলেননি। একই কথা বলেছেন, ফিরে আসা আরও ২ রোহিঙ্গা নেতা। তবে নাম না বলার শর্তে অপর এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, সত্যি কথা বলতে মায়ানমারে জেনোসাইডের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছি। যেতে হলে মায়ানমারে চলে যাব, ভাসানচরে নয়। আবার অনেকে মনে করেন, তারা এখন মায়ানমারের কাছাকাছি আছেন। ভাসানচরে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাছাড়া অনেকের মাঝে একটি ভয়ও কাজ করছে।

এ বিষয়ে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ জানান, বাংলাদেশ সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। মায়ানমারে আমাদের সব আছে। আমরা দেশে ফিরে যেতে চায়।

এর আগে, পরিদর্শনে যাওয়া রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচর থেকে বলেছিলেন, অবকাঠামো এবং সুন্দর পরিবেশ বিষয়ে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের জানানো হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে, অন্তত প্রতিটি ক্যাম্প থেকে যেন স্বেচ্ছায় কিছু পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হয়।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের ৪০ সদস্যের প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে নিজেদের ক্যাম্পে ফেরত আসেন। সেখানে অবস্থানকালে ভাসানচর বিষয়ে তাদের ইতিবাচক মন্তব্য ছিল। তবে বুধবার ক্যাম্পে অন্য রোহিঙ্গা সদস্যদের মধ্যে তারা ভাসানচর বিষয়ে কোন ধরনের প্রচারণা চালাননি। উল্টো অভিযোগ করেন, ভাসানচর সম্পর্কে কোন প্রচারণা চালালে তাদের ক্ষতি করা হবে, এমন হুমকি ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে সরকার ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠা ওই দ্বীপে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। রোহিঙ্গা মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, আমার শিবিরের চার জন রোহিঙ্গা নেতা ভাসানচরে ঘুরে এসেছেন। একটি পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন কৌশলে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। ভাসানচর নিয়ে ক্যাম্পে কোন ধরনের প্রচারণা না চালানোর জন্য বলা হয়েছে। যাতে সেখানে কোন মানুষ না যায়। না হলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও জানিয়েছে। অতীতেও এ ধরনের হুমকি ও ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

উখিয়ার হাকিম পাড়ার শরণার্থী শিবিরের হেড মাঝি ও ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের টিম লিডার হামিদ হোসেন বলেন, ভাসানচরের অবকাঠামো ও পরিবেশ খুবই সুন্দর। তবে সেখানে থাকার ঘরগুলো নিয়ে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। আসার আগের দিন ভাসানচর নিয়ে মতামত চাওয়া হলে সবার পক্ষে থেকে বিষয়টি সেখানকার কর্মকর্তাদের তুলে ধরেছি। ফেরার পর ভাসানচরে যেতে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পে কোন ধরনের প্রচারণা চালানো হয়নি। তাছাড়া এখানে আসার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের গুজব কানে আসছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।

ভাসানচর দেখে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতারা ক্যাম্পে এখনও প্রচারণা শুরু করেনি বলে জানিয়েছেন টেকনাফের জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিআইসি) মোহাম্মদ খালিদ হোসেন। তবে শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি উচ্চ পর্যায়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ভাসানচর দেখে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্রমতে, ৪০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিকে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। প্রতিনিধি দলটি চট্টগ্রাম হয়ে বিকাল ৫টার দিকে ভাসানচরে পৌঁছায়। তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে কী ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে তা তাদের জানানো হয়। এরপর তাদের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ২ দিন পুরো আবাসন প্রকল্পের অবকাঠামো ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে নৌবাহিনী, পুলিশসহ আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তারা কক্সবাজারের ক্যাম্পে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

image
আরও খবর
চার দশকে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বণ্যপ্রাণীর প্রাণনাশ
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান চাকরিচ্যুত
অস্ট্রেলিয়ায় পাচারের ট্রানজিট বেছে নেয়া হয় বাংলাদেশ
বহির্বিভাগে সেবাপ্রাপ্তির অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনলাইনে
সাহেদের অস্ত্র মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
অচলাবস্থার ৮ দিন পর ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে আজ
শিশু-উদ্ধার : দুই অপহরণকারী গ্রেফতার
জঙ্গি সন্দেহে ৪ জন গ্রেফতার
সাবেক এমপি শামছুল হকসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সাবরিনা-আরিফসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলায় আরও দু’জনের সাক্ষ্য
বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৩
সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক পুলিশসহ নিহত ৩

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২১ মহররম ১৪৪২, ২৩ ভাদ্র ১৪২৭

ভাসানচর নয় স্বদেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে নয় স্বদেশে ফিরতে চায়। তাদের দাবি তারা পাহাড়ে বসবাসে অভ্যস্ত। ভাসানচরে পরিবেশগত কারণে তাদের জন্য বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও ইতোমধ্যে ভাসানচরে গুচ্ছঘর, স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ ও রাস্তাঘাটসহ সব নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তারা বলছে, আমরা ভাসানচরে যেতে চাই না, স্বদেশে ফিরে যেতে চাই। একটি সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপের সিদ্ধান্ত ছাড়া সাধারণ রোহিঙ্গারা কিছুই করতে পারে না। ভাসানচরে যাওয়া পরিদর্শনকারীদের মধ্যে তাদের গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছে একটি পক্ষ। এ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দফায় দফায় বৈঠকও চলছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

এ বিষয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম জানান, ভাসানচর পরিদর্শন করার পর পরিদর্শনকারীরা আপাতত নীরব রয়েছে। তাদের দাবি ভাসানচর প্রাকৃতিক দুযোর্গের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গারা ভাসানচর যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, গুচ্ছঘর, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও রাস্তাঘাটসহ সব করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা প্রায় পাহাড়ি এলাকায় বসাবাসে অভ্যস্ত। তারা সাগরকে ভয় পায়। তার চেয়ে তাদের স্থান্তান্তর না করে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এই আবেদন জানাচ্ছি।

ভাসানচর ফেরত টেকনাফের জাদিমুরা শরণার্থী শিবিরের চেয়ারম্যান বলেন, ভাসানচরের অবকাঠামো ও পরিবেশের সম্পর্কে ক্যাম্পে প্রচারণা শুরু করা হয়নি। তাছাড়া ক্যাম্পে সিআইসিরাও এই বিষয় নিয়ে কিছু বলেননি। একই কথা বলেছেন, ফিরে আসা আরও ২ রোহিঙ্গা নেতা। তবে নাম না বলার শর্তে অপর এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, সত্যি কথা বলতে মায়ানমারে জেনোসাইডের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছি। যেতে হলে মায়ানমারে চলে যাব, ভাসানচরে নয়। আবার অনেকে মনে করেন, তারা এখন মায়ানমারের কাছাকাছি আছেন। ভাসানচরে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাছাড়া অনেকের মাঝে একটি ভয়ও কাজ করছে।

এ বিষয়ে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ জানান, বাংলাদেশ সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। মায়ানমারে আমাদের সব আছে। আমরা দেশে ফিরে যেতে চায়।

এর আগে, পরিদর্শনে যাওয়া রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচর থেকে বলেছিলেন, অবকাঠামো এবং সুন্দর পরিবেশ বিষয়ে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের জানানো হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে, অন্তত প্রতিটি ক্যাম্প থেকে যেন স্বেচ্ছায় কিছু পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হয়।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের ৪০ সদস্যের প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে নিজেদের ক্যাম্পে ফেরত আসেন। সেখানে অবস্থানকালে ভাসানচর বিষয়ে তাদের ইতিবাচক মন্তব্য ছিল। তবে বুধবার ক্যাম্পে অন্য রোহিঙ্গা সদস্যদের মধ্যে তারা ভাসানচর বিষয়ে কোন ধরনের প্রচারণা চালাননি। উল্টো অভিযোগ করেন, ভাসানচর সম্পর্কে কোন প্রচারণা চালালে তাদের ক্ষতি করা হবে, এমন হুমকি ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে সরকার ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে উঠা ওই দ্বীপে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। রোহিঙ্গা মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, আমার শিবিরের চার জন রোহিঙ্গা নেতা ভাসানচরে ঘুরে এসেছেন। একটি পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন কৌশলে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। ভাসানচর নিয়ে ক্যাম্পে কোন ধরনের প্রচারণা না চালানোর জন্য বলা হয়েছে। যাতে সেখানে কোন মানুষ না যায়। না হলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও জানিয়েছে। অতীতেও এ ধরনের হুমকি ও ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

উখিয়ার হাকিম পাড়ার শরণার্থী শিবিরের হেড মাঝি ও ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের টিম লিডার হামিদ হোসেন বলেন, ভাসানচরের অবকাঠামো ও পরিবেশ খুবই সুন্দর। তবে সেখানে থাকার ঘরগুলো নিয়ে আমাদের দ্বিমত রয়েছে। আসার আগের দিন ভাসানচর নিয়ে মতামত চাওয়া হলে সবার পক্ষে থেকে বিষয়টি সেখানকার কর্মকর্তাদের তুলে ধরেছি। ফেরার পর ভাসানচরে যেতে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পে কোন ধরনের প্রচারণা চালানো হয়নি। তাছাড়া এখানে আসার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের গুজব কানে আসছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।

ভাসানচর দেখে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতারা ক্যাম্পে এখনও প্রচারণা শুরু করেনি বলে জানিয়েছেন টেকনাফের জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিআইসি) মোহাম্মদ খালিদ হোসেন। তবে শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি উচ্চ পর্যায়ের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ভাসানচর দেখে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্রমতে, ৪০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিকে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। প্রতিনিধি দলটি চট্টগ্রাম হয়ে বিকাল ৫টার দিকে ভাসানচরে পৌঁছায়। তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে কী ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে তা তাদের জানানো হয়। এরপর তাদের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ২ দিন পুরো আবাসন প্রকল্পের অবকাঠামো ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে নৌবাহিনী, পুলিশসহ আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তারা কক্সবাজারের ক্যাম্পে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।