বিশ্বের ২১৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল নেই

বিশ্বের ২১৮টি দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে বাংলাদেশের সংক্রমণের মিল নেই। অন্য দেশে করোনা শনাক্তের হার বাড়লে মৃত্যুর হার বেড়েছে। বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের হার কমলেও মৃত্যুর হার সেভাবে কমেনি। জুন ও জুলাইয়ে মোট শনাক্তের হার কমবেশি ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল। সেপ্টম্বরে এসে তা কমে শনাক্তের হার কমবেশি ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ এসেছে। তবে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ রয়ে গেছে। এছাড়াও অন্য দেশে করোনা সংক্রমিত হওয়ার দু’এক মাসেই সংক্রমণ ও মৃত্যু শীর্ষ চলে যায়। পরের দু’তিন মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু বাংলাদেশ গত ছয় মাসেও করোনা শনাক্ত সেভাবে বাড়েনি কিন্তু মানুষের মৃত্যুও কমেনি।

করোনা শনাক্তের হার কমে যাওয়া এবং মৃত্যুর হার একই অবস্থানে থাকার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত ছয় মাসেও বাংলাদেশ করোনা শনাক্তের প্রকৃত চিত্র জাতির সামনে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। কারণ স্বাস্থ্যবিভাগের অব্যবস্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ভাবনা হওয়ায় করোনা শনাক্তের হার কমেছে। করোনা শনাক্তের হার বাড়ানো দরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন করোনা বিজ্ঞপ্তিতে মৃত্যুর হার যা দেখানো হচ্ছে, এতে বোঝা যাচ্ছে যে, দেশে বহু সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়ালে মৃত্যুর হার আরও কয়েকগুণ বাড়বে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্বে ২১৮টি দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ফেব্রুয়ারি ও মার্চের দিকে শুরু হয়। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু শীর্ষে চলে যায়। জুলাই ও আগস্টে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মার্চে করোনা রোগী শনাক্তের পর নমুনা পরীক্ষা হার কম ছিল। প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের নমুনা করানোর অবস্থায় যেতে সময় লাগে দুই মাসের বেশি। জুন মাসে করোনার নমুনা পরীক্ষা বেড়ে কমবেশি ১৮ হাজারে উন্নীত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা কমতে থাকে। গতকাল শুক্রবার সারাদেশে ৯৪টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৯৬১টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৪৭টি। যার মধ্যে ১ হাজার ৭৯২ জন শনাক্ত হয়।

বাংলাদশে দীর্ঘদিন বিশ্বে করোনাভাইরাস শনাক্তের দিক থেকে ১৫তম স্থানে, আর মৃতের সংখ্যায় ২৯তম অবস্থানে এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলেন, বিশ্বের অন্য দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর দু’একমাস সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ফের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে গত ছয় মাসে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিবন্ধকতা নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা কমেছে। কারণ গত ২৩ এপ্রিল একদিনে ৩ হাজার ৯২১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে ৩ হাজার ৪১৬টির পরীক্ষা হয়। তখন ৭ জনের মৃত্যু হয়। করোনার এই পরীক্ষা বাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু আগস্টে এসে দেখা গেল একদিনে ১ হাজার ৮৯৭ জনের নমুনা সংগ্রহ হয়, ৪২ জন মারা যায়। করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা কিংবা শনাক্ত হোক বা না হোক মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে মাসের পর মাস সময় গেলেও করোনা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। স্বাস্থ্যবিভাগ করোনার নমুনা পরীক্ষা কমলেও মৃত্যুর হার কমেনি। এতে বোঝা যায়, সারা দেশে বহু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন কিন্তু তাদের মৃত্যুর হিসাব আসছে না। অন্যদেশে করোনা পরীক্ষা, আইসোলেশন ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করায় তিন মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব যথাযথভাবে হচ্ছে না।

করোনা শনাক্তের হার কমছে কিন্তু মৃত্যুর হার অপরিবর্তিত রয়েছে এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনা আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত অনুযায়ী মৃত্যু সংখ্যা ঘোষণা দিচ্ছেন। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে, সেটি করোনার প্রকৃত চিত্র নেই। কারণ গ্রামাঞ্চলে এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের করোনার নমুনা নেয়া হচ্ছে না। আগে প্রতিদিন ২০ হাজার করোনার নমুনা পরীক্ষা করে মৃত্যুর সংখ্যা যা ছিল, এখন ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে সেই একই মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃত্যুর হার কমেনি।

তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনায় মানুষ করোনা আক্রান্ত হলেও নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই বাাড়িতে থাকছেন। হাসপাতালের বিষয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।

ইউরোপের অনেক দেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব কমেছে। গত জুন মাসে ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো, ফ্রান্স ও ইরানে সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও এসব দেশে করোনা সংক্রমণ কমেনি। চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে করোনাভাইরাস প্রথম সংক্রমণ হয়। এরপর দেশটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে কড়াকড়ি নিয়ম জারি করে। এতে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে চীন। কিন্তু বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। ২ এপ্রিল দেশে করোনা শনাক্ত হয় দু’জনের শরীরে। পরদিন ৩ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হয় পাঁচজনের দেহে। এর পরদিন ৪ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হয় নয়জনের দেহে। ৫ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হয় ১৮ জনের দেহে। ৬ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হলো ৩৫ জনের দেহে। এরপর ৩০ এপ্রিল ৫৬৪ জন, ৩১ মে পর্যন্ত আড়াই হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়। জুন মাসে করোনা সংক্রমণ সাড়ে তিন হাজার পেরিয়ে যায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে রোগী শনাক্তের হার কমে গেছে।

জাপানের হোক্কাইডো অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম লকডাউন জারি করা হয়। মার্চ নাগাদ সেখানে প্রতিদিন রোগী শনাক্তের সংখ্যা দুইজনে নেমে আসে। সেখানে কড়াকড়ি ব্যবস্থা এতটাই ভালো কাজ করেছিল যে, এপ্রিল নাগাদ বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে স্কুল খুলে দেয় হয়। কিন্তু জুনে আবার সেখানে নতুন করে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়। হোক্কাইডোতে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের দফা শুরু হয়ে গিয়েছিল জুনে। এখন অবশ্য জাপান ভাবছে, যতদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হবে, ততদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলবে দেশটি। গতকাল জাপানে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা ছিল শূন্য।

২১৮টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত যুক্তরাষ্ট্রে ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার জন। আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ। তবে মৃত্যুর দিক থেকে এখনও দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল। আর করোনা আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ব্রাজিল। বিশ্বে বাংলাদেশ মৃত্যুর দিক থেকে ১৫ তম এবং আক্রান্তের দিক দিয়ে ২৯তম অবস্থানে রয়েছে।

ভারতে ১৫ মার্চ ২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর ৩০ মে একদিনে ৭ হাজার ৯৬৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়। ভারতে করোনা শনাক্তের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী। এক মাসের ব্যবধানে ৩০ জুন একদিনে ১৮ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়। ৩১ জুলাই এসে করোনা সংক্রমণ একদিনে দাঁড়ায় ৫৫ হাজারে। আরও এক মাসের ব্যবধানে ৩১ আগস্ট একদিনে ৭৮ হাজার ৫০০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়। ৭ সেপ্টম্বর একদিনে ৯০ হাজার ৮শ’ জনের করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করে ভারত। গতকাল পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ লাখ ১৯ হাজার। মোট মৃত্যু ৭৬ হাজার ৬৭৬ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে ৪ মার্চ ২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হলে দুজন মারা যায়। মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৬ মে একদিনে দেশটিতে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০২ জনের মৃত্যু হয়। ১৭ জুলাই একদিনে ৭৫ হাজার ৮২১ জন মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করে দেশটি। জুলাই মাস থেকে ধীরে ধীরে করোনা সংক্রমণ কমছে। সর্বশেষ ৮ সেপ্টম্বর ২২ হাজার করোনা আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত করেছে। এভাবে প্রতিদিন মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে আর নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার। মোট মৃত্যু ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে গত মঙ্গলবার একদিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার, মারা গেছেন ৫০০ জন।

ব্রাজিলে ১৪ মার্চ প্রথম ২৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে যা ৩০ এপ্রিলে একদিনে ৭ হাজার ২১৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে মে, জুন, জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়। সর্বোচ্চ ২৯ জুলাই একদিনে ৬৯ হাজার ৪৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। চলতি মাসে করোনা সংক্রমণ কমছে। ৭ সেপ্টম্বর একদিনে ১০ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। গত ছয় মাসে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ লাখ ৬৫ হাজার। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৭ জন। গতকাল করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে ৩হাজার ৪৭১ জন মানুষ আর মারা গেছেন ৩৮ জন।

মেক্সিকোতে ১৮ মার্চ করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট এই পাঁচ মাস ক্রমান্বয়ে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। পহেলা আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়। আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন কমবেশি ৫ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পর্যন্ত মেক্সিকোতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৪২ হাজার এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৮ হাজার ৪৮৪ জনের। গতকাল মেক্সিকো একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৪ হাজার ৮৫৭ জন এবং মারা গেছেন ৫৫৪ জন।

অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ১০ মার্চ ২১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত পাওয়া যায়। এরপর থেকে সংক্রমণ বেড়ে ২৮ মার্চ ৪৫৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়। এপ্রিল মাসে সংক্রমণ কমে যায়। এপ্রিল, মে জুন এই তিন মাস প্রতিদিন কমবেশি ২০ জন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। জুলাই ও আগস্ট মাসে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে ৩০ জুলাই একদিনে ৭২১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়। আগস্ট মাসের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ কমে আসে। সেপ্টম্বরের চলতি ৯ দিনে সংক্রমণ কমেছে। এই পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৪৬৫ জন এবং মোট মৃত্যু ৭৮১ জনের। গতকাল অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ জন, মারা গেছেন ৯ জন।

ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। মার্চ মাসে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত হয় দেশটি। মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাস করোনা সংক্রমণ কমেছে। আগস্ট ও সেপ্টম্বরে ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। ফ্রান্সে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ৪৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করে দেশটি। এরপর ক্রমাণয়ে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হয়। ৩১ এপ্রিলে একদিনে সাড়ে ৭ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত করে। মে, জুন এবং জুলাই এই তিন মাস করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন কমবেশি আড়াই হাজারের নিচে আক্রান্ত হয়। আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকে। চলতি মাসের ৪ সেপ্টম্বর একদিনে ৮ হাজার ৯৭৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ফ্রান্সে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪৪ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৩০ হাজার ৮১৩ জন।

জার্মানিতে মার্চ মাসের শুরুতে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। মে মাসে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত হয়। জুন ও জুলাই মাসে করোনা সংক্রমণ কমে। কিন্তু আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে ফের করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। জার্মানিতে পহেলা মার্চ ৫১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ধাপে ধাপে মানুষের মাঝে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ৩ এপ্রিলে একদিনে ৬ হাজার ১৭৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিল মাসের পর থেকে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকে। গত মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন এক হাজারের নিচে ও উপরে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত জার্মানিতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৭ জন এবং মোট মৃত্যু ৯ হাজার ৪০৯ জনের। গতকাল প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত জার্মানিতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬২ জন এবং এইদিন করোনায় মারা গেছে ২ জন।

ইতালিতে ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। মার্চ মাস থেকে করোনা বাড়তে থাকে যা এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়। মে মাস থেকে করোনা সংক্রমণ কমতে থাকে। জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনে দেশটি। কিন্তু চলতি সেপ্টম্বর মাসে ফের নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি মাসে করোনা সংক্রমণ নিচের দিকে নামছে না। ইতালিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি ৭১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে সংক্রমণের হার বাড়তে বাড়তে ২১ মার্চ একদিনে সাড়ে ৬ হাজার মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই এই চার মাস করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন ৫শ’র নিচে নেমে আসে। আগস্ট মাস থেকে ফের করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। চলতি সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন কমবেশি এক হাজারের উপরে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এই পর্যন্ত ইতালিতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ১৮০ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮৭ জনের।

নিউজিল্যান্ডে ২৩ মার্চ প্রথম ৩৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। মার্চ মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ জনের নিচে মানুষ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। মে, জুন, জুলাই, আগস্ট এই চার মাস কোনদিন একজন থেকে দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এই চার মাসে কোন দিন আবার কেউ আক্রান্ত হয়নি। তবে সেপ্টম্বর মাসে চলতি ৯ দিনের প্রতিদিন কমবেশি ৪ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৮ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। গতকাল নিউজিল্যান্ডে ১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য।

দক্ষিণ কোরিয়া ২০ ফেব্রুয়ারি ৫৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়। পহেলা মার্চ সর্বোচ্চ এক হাজার ৬২ জন করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিলের পর থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন কমবেশি ৫০ জনের মতো করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে আগস্টের শুরুর দিকে ফের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২৬ আগস্ট ৪২৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়। চলতি মাসে ফের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণের শুরুতে প্রতিদিন কমবেশি ১ হাজার মানুষের করোনা নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়। একইসঙ্গে নতুন রোগীদের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করার জন্য অ্যাপস ও জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে, যার ফলে দ্রুত মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। এতে গত ৮ মাসে ২১ হাজার ৫৮৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করে। ৮ মাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৪৪ জন। সেপ্টম্বর মাসে দেশটিতে প্রতিদিন কমবেশি ৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

করোনা সংক্রমণ

বিশ্বের ২১৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল নেই

ফারুক আলম

বিশ্বের ২১৮টি দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে বাংলাদেশের সংক্রমণের মিল নেই। অন্য দেশে করোনা শনাক্তের হার বাড়লে মৃত্যুর হার বেড়েছে। বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের হার কমলেও মৃত্যুর হার সেভাবে কমেনি। জুন ও জুলাইয়ে মোট শনাক্তের হার কমবেশি ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল। সেপ্টম্বরে এসে তা কমে শনাক্তের হার কমবেশি ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ এসেছে। তবে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ রয়ে গেছে। এছাড়াও অন্য দেশে করোনা সংক্রমিত হওয়ার দু’এক মাসেই সংক্রমণ ও মৃত্যু শীর্ষ চলে যায়। পরের দু’তিন মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু বাংলাদেশ গত ছয় মাসেও করোনা শনাক্ত সেভাবে বাড়েনি কিন্তু মানুষের মৃত্যুও কমেনি।

করোনা শনাক্তের হার কমে যাওয়া এবং মৃত্যুর হার একই অবস্থানে থাকার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত ছয় মাসেও বাংলাদেশ করোনা শনাক্তের প্রকৃত চিত্র জাতির সামনে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। কারণ স্বাস্থ্যবিভাগের অব্যবস্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ভাবনা হওয়ায় করোনা শনাক্তের হার কমেছে। করোনা শনাক্তের হার বাড়ানো দরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন করোনা বিজ্ঞপ্তিতে মৃত্যুর হার যা দেখানো হচ্ছে, এতে বোঝা যাচ্ছে যে, দেশে বহু সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়ালে মৃত্যুর হার আরও কয়েকগুণ বাড়বে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্বে ২১৮টি দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ফেব্রুয়ারি ও মার্চের দিকে শুরু হয়। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু শীর্ষে চলে যায়। জুলাই ও আগস্টে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মার্চে করোনা রোগী শনাক্তের পর নমুনা পরীক্ষা হার কম ছিল। প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের নমুনা করানোর অবস্থায় যেতে সময় লাগে দুই মাসের বেশি। জুন মাসে করোনার নমুনা পরীক্ষা বেড়ে কমবেশি ১৮ হাজারে উন্নীত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা কমতে থাকে। গতকাল শুক্রবার সারাদেশে ৯৪টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৯৬১টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৪৭টি। যার মধ্যে ১ হাজার ৭৯২ জন শনাক্ত হয়।

বাংলাদশে দীর্ঘদিন বিশ্বে করোনাভাইরাস শনাক্তের দিক থেকে ১৫তম স্থানে, আর মৃতের সংখ্যায় ২৯তম অবস্থানে এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলেন, বিশ্বের অন্য দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর দু’একমাস সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ফের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে গত ছয় মাসে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিবন্ধকতা নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা কমেছে। কারণ গত ২৩ এপ্রিল একদিনে ৩ হাজার ৯২১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে ৩ হাজার ৪১৬টির পরীক্ষা হয়। তখন ৭ জনের মৃত্যু হয়। করোনার এই পরীক্ষা বাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু আগস্টে এসে দেখা গেল একদিনে ১ হাজার ৮৯৭ জনের নমুনা সংগ্রহ হয়, ৪২ জন মারা যায়। করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা কিংবা শনাক্ত হোক বা না হোক মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে মাসের পর মাস সময় গেলেও করোনা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। স্বাস্থ্যবিভাগ করোনার নমুনা পরীক্ষা কমলেও মৃত্যুর হার কমেনি। এতে বোঝা যায়, সারা দেশে বহু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন কিন্তু তাদের মৃত্যুর হিসাব আসছে না। অন্যদেশে করোনা পরীক্ষা, আইসোলেশন ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করায় তিন মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব যথাযথভাবে হচ্ছে না।

করোনা শনাক্তের হার কমছে কিন্তু মৃত্যুর হার অপরিবর্তিত রয়েছে এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনা আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত অনুযায়ী মৃত্যু সংখ্যা ঘোষণা দিচ্ছেন। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে, সেটি করোনার প্রকৃত চিত্র নেই। কারণ গ্রামাঞ্চলে এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের করোনার নমুনা নেয়া হচ্ছে না। আগে প্রতিদিন ২০ হাজার করোনার নমুনা পরীক্ষা করে মৃত্যুর সংখ্যা যা ছিল, এখন ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে সেই একই মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃত্যুর হার কমেনি।

তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনায় মানুষ করোনা আক্রান্ত হলেও নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই বাাড়িতে থাকছেন। হাসপাতালের বিষয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।

ইউরোপের অনেক দেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব কমেছে। গত জুন মাসে ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো, ফ্রান্স ও ইরানে সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও এসব দেশে করোনা সংক্রমণ কমেনি। চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে করোনাভাইরাস প্রথম সংক্রমণ হয়। এরপর দেশটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে কড়াকড়ি নিয়ম জারি করে। এতে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে চীন। কিন্তু বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। ২ এপ্রিল দেশে করোনা শনাক্ত হয় দু’জনের শরীরে। পরদিন ৩ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হয় পাঁচজনের দেহে। এর পরদিন ৪ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হয় নয়জনের দেহে। ৫ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হয় ১৮ জনের দেহে। ৬ এপ্রিল করোনা শনাক্ত হলো ৩৫ জনের দেহে। এরপর ৩০ এপ্রিল ৫৬৪ জন, ৩১ মে পর্যন্ত আড়াই হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়। জুন মাসে করোনা সংক্রমণ সাড়ে তিন হাজার পেরিয়ে যায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে রোগী শনাক্তের হার কমে গেছে।

জাপানের হোক্কাইডো অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম লকডাউন জারি করা হয়। মার্চ নাগাদ সেখানে প্রতিদিন রোগী শনাক্তের সংখ্যা দুইজনে নেমে আসে। সেখানে কড়াকড়ি ব্যবস্থা এতটাই ভালো কাজ করেছিল যে, এপ্রিল নাগাদ বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে স্কুল খুলে দেয় হয়। কিন্তু জুনে আবার সেখানে নতুন করে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়। হোক্কাইডোতে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের দফা শুরু হয়ে গিয়েছিল জুনে। এখন অবশ্য জাপান ভাবছে, যতদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হবে, ততদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলবে দেশটি। গতকাল জাপানে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা ছিল শূন্য।

২১৮টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত যুক্তরাষ্ট্রে ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার জন। আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ। তবে মৃত্যুর দিক থেকে এখনও দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল। আর করোনা আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ব্রাজিল। বিশ্বে বাংলাদেশ মৃত্যুর দিক থেকে ১৫ তম এবং আক্রান্তের দিক দিয়ে ২৯তম অবস্থানে রয়েছে।

ভারতে ১৫ মার্চ ২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর ৩০ মে একদিনে ৭ হাজার ৯৬৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়। ভারতে করোনা শনাক্তের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী। এক মাসের ব্যবধানে ৩০ জুন একদিনে ১৮ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়। ৩১ জুলাই এসে করোনা সংক্রমণ একদিনে দাঁড়ায় ৫৫ হাজারে। আরও এক মাসের ব্যবধানে ৩১ আগস্ট একদিনে ৭৮ হাজার ৫০০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়। ৭ সেপ্টম্বর একদিনে ৯০ হাজার ৮শ’ জনের করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করে ভারত। গতকাল পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ লাখ ১৯ হাজার। মোট মৃত্যু ৭৬ হাজার ৬৭৬ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে ৪ মার্চ ২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হলে দুজন মারা যায়। মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৬ মে একদিনে দেশটিতে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০২ জনের মৃত্যু হয়। ১৭ জুলাই একদিনে ৭৫ হাজার ৮২১ জন মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করে দেশটি। জুলাই মাস থেকে ধীরে ধীরে করোনা সংক্রমণ কমছে। সর্বশেষ ৮ সেপ্টম্বর ২২ হাজার করোনা আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত করেছে। এভাবে প্রতিদিন মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে আর নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার। মোট মৃত্যু ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে গত মঙ্গলবার একদিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার, মারা গেছেন ৫০০ জন।

ব্রাজিলে ১৪ মার্চ প্রথম ২৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে যা ৩০ এপ্রিলে একদিনে ৭ হাজার ২১৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে মে, জুন, জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়। সর্বোচ্চ ২৯ জুলাই একদিনে ৬৯ হাজার ৪৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। চলতি মাসে করোনা সংক্রমণ কমছে। ৭ সেপ্টম্বর একদিনে ১০ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। গত ছয় মাসে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ লাখ ৬৫ হাজার। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৭ জন। গতকাল করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে ৩হাজার ৪৭১ জন মানুষ আর মারা গেছেন ৩৮ জন।

মেক্সিকোতে ১৮ মার্চ করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট এই পাঁচ মাস ক্রমান্বয়ে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। পহেলা আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়। আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন কমবেশি ৫ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পর্যন্ত মেক্সিকোতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৪২ হাজার এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৮ হাজার ৪৮৪ জনের। গতকাল মেক্সিকো একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৪ হাজার ৮৫৭ জন এবং মারা গেছেন ৫৫৪ জন।

অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ১০ মার্চ ২১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত পাওয়া যায়। এরপর থেকে সংক্রমণ বেড়ে ২৮ মার্চ ৪৫৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়। এপ্রিল মাসে সংক্রমণ কমে যায়। এপ্রিল, মে জুন এই তিন মাস প্রতিদিন কমবেশি ২০ জন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। জুলাই ও আগস্ট মাসে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে ৩০ জুলাই একদিনে ৭২১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়। আগস্ট মাসের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ কমে আসে। সেপ্টম্বরের চলতি ৯ দিনে সংক্রমণ কমেছে। এই পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ৪৬৫ জন এবং মোট মৃত্যু ৭৮১ জনের। গতকাল অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ জন, মারা গেছেন ৯ জন।

ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। মার্চ মাসে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত হয় দেশটি। মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাস করোনা সংক্রমণ কমেছে। আগস্ট ও সেপ্টম্বরে ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। ফ্রান্সে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ৪৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করে দেশটি। এরপর ক্রমাণয়ে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হয়। ৩১ এপ্রিলে একদিনে সাড়ে ৭ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত করে। মে, জুন এবং জুলাই এই তিন মাস করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন কমবেশি আড়াই হাজারের নিচে আক্রান্ত হয়। আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকে। চলতি মাসের ৪ সেপ্টম্বর একদিনে ৮ হাজার ৯৭৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ফ্রান্সে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪৪ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৩০ হাজার ৮১৩ জন।

জার্মানিতে মার্চ মাসের শুরুতে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। মে মাসে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত হয়। জুন ও জুলাই মাসে করোনা সংক্রমণ কমে। কিন্তু আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে ফের করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। জার্মানিতে পহেলা মার্চ ৫১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ধাপে ধাপে মানুষের মাঝে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ৩ এপ্রিলে একদিনে ৬ হাজার ১৭৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিল মাসের পর থেকে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকে। গত মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন এক হাজারের নিচে ও উপরে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত জার্মানিতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৭ জন এবং মোট মৃত্যু ৯ হাজার ৪০৯ জনের। গতকাল প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত জার্মানিতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬২ জন এবং এইদিন করোনায় মারা গেছে ২ জন।

ইতালিতে ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। মার্চ মাস থেকে করোনা বাড়তে থাকে যা এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়। মে মাস থেকে করোনা সংক্রমণ কমতে থাকে। জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনে দেশটি। কিন্তু চলতি সেপ্টম্বর মাসে ফের নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি মাসে করোনা সংক্রমণ নিচের দিকে নামছে না। ইতালিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি ৭১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে সংক্রমণের হার বাড়তে বাড়তে ২১ মার্চ একদিনে সাড়ে ৬ হাজার মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই এই চার মাস করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন ৫শ’র নিচে নেমে আসে। আগস্ট মাস থেকে ফের করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। চলতি সেপ্টম্বর মাসে প্রতিদিন কমবেশি এক হাজারের উপরে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এই পর্যন্ত ইতালিতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ১৮০ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮৭ জনের।

নিউজিল্যান্ডে ২৩ মার্চ প্রথম ৩৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। মার্চ মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ জনের নিচে মানুষ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। মে, জুন, জুলাই, আগস্ট এই চার মাস কোনদিন একজন থেকে দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এই চার মাসে কোন দিন আবার কেউ আক্রান্ত হয়নি। তবে সেপ্টম্বর মাসে চলতি ৯ দিনের প্রতিদিন কমবেশি ৪ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৮ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। গতকাল নিউজিল্যান্ডে ১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য।

দক্ষিণ কোরিয়া ২০ ফেব্রুয়ারি ৫৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়। পহেলা মার্চ সর্বোচ্চ এক হাজার ৬২ জন করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিলের পর থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন কমবেশি ৫০ জনের মতো করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে আগস্টের শুরুর দিকে ফের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২৬ আগস্ট ৪২৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়। চলতি মাসে ফের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণের শুরুতে প্রতিদিন কমবেশি ১ হাজার মানুষের করোনা নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়। একইসঙ্গে নতুন রোগীদের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করার জন্য অ্যাপস ও জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে, যার ফলে দ্রুত মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। এতে গত ৮ মাসে ২১ হাজার ৫৮৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করে। ৮ মাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৪৪ জন। সেপ্টম্বর মাসে দেশটিতে প্রতিদিন কমবেশি ৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।