মায়ানমারের মানচিত্র থেকে উধাও রোহিঙ্গা গ্রাম

মায়ানমারের সরকারি মানচিত্র থেকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কান কিয়া গ্রামকে মুছে ফেলা হয়েছে। ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সেনা অভিযানের সময় এই গ্রামে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নাফ নদী থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কান কিয়া গ্রামে কয়েকশ’ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুরো গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গিয়ে দেখেছেন গ্রামের যেটুকু চিহ্ন দাঁড়িয়ে ছিল তাও বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

মায়ানমারে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ ২০২০ ?সালে দেশটির নতুন মানচিত্র তৈরি করেছে। মায়ানমারের সরকারি মানচিত্রের ভিত্তিতে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ নিজেদের মানচিত্র তৈরি করে। ইউএনএইচসিআর-সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ওই মানচিত্র ব্যবহার করে। জাতিসংঘ জানায়, মায়ানমারের নতুন ?মানচিত্রে গুঁড়িয়ে ফেলা গ্রামের নাম আর নেই। বরং ওই জায়গাটিকে এখন কাছের মংডু শহরের বর্ধিত অংশ বলা হচ্ছে।

এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে প্ল্যানেট ল্যাব থেকে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি থেকে দেখা যায়, কান কিয়া গ্রামটি আগে যেখানে ছিল সেখানে এখন ডজনের বেশি সরকারি ও সামরিক ভবন গড়ে উঠেছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানাচ্ছে, কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো ছবির মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন- কান কিয়ার মতো অন্তত ৪০০ গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। ধ্বংস করে ফেলা অন্তত এক ডজন রোহিঙ্গা গ্রামের নাম বর্তমান মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিকে, মায়ানমারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাখাইন রাজ্যের পুনর্গঠনের কাজ দেখভাল করছে। রয়টার্সের পক্ষ থেকে তাদের কাছে গ্রামের নাম মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কারণ এবং কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনা হবে তা জানতে চাওয়া হলে, তারা এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মায়ানমারের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে (জিএডি) যোগাযোগ করতে বলে। সেখানে যোগাযোগ করেও কারও কোন সাড়া পায়নি রয়টার্স।

এ প্রসঙ্গে মায়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক দূত ইয়াংহি লি বলেন, মায়ানমার সরকার ইচ্ছা করেই রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরা কঠিন করে দিচ্ছে। তারা কিভাবে সেই জায়গায় ফিরবে, যার কোন নাম নেই বা যেখানে তাদের বসবাসের কোন চিহ্ন নেই?

প্রসঙ্গত, মায়ানমার সরকার রাখাইনে সন্ত্রাস দমনের নামে ওই ?অভিযান চালালেও জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ওই অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে ?অভিহিত করেছে। রাখাইনে সেনা ?অভিযানের সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়। ওই শরণার্থীদের বর্ণনায় সাধারণ মানুষের ওপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নিপীড়নের চিত্র ফুটে ওঠে। সম্প্রতি, মায়ানমারের দুই সেনা সদস্য দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে রাখাইনে গণহত্যার উদ্দেশে সামরিক অভিযান পরিচালনার কথা স্বীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মায়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে শুনানি চলছে।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

মায়ানমারের মানচিত্র থেকে উধাও রোহিঙ্গা গ্রাম

সংবাদ ডেস্ক |

মায়ানমারের সরকারি মানচিত্র থেকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কান কিয়া গ্রামকে মুছে ফেলা হয়েছে। ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সেনা অভিযানের সময় এই গ্রামে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নাফ নদী থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কান কিয়া গ্রামে কয়েকশ’ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুরো গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গিয়ে দেখেছেন গ্রামের যেটুকু চিহ্ন দাঁড়িয়ে ছিল তাও বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

মায়ানমারে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ ২০২০ ?সালে দেশটির নতুন মানচিত্র তৈরি করেছে। মায়ানমারের সরকারি মানচিত্রের ভিত্তিতে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ নিজেদের মানচিত্র তৈরি করে। ইউএনএইচসিআর-সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ওই মানচিত্র ব্যবহার করে। জাতিসংঘ জানায়, মায়ানমারের নতুন ?মানচিত্রে গুঁড়িয়ে ফেলা গ্রামের নাম আর নেই। বরং ওই জায়গাটিকে এখন কাছের মংডু শহরের বর্ধিত অংশ বলা হচ্ছে।

এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে প্ল্যানেট ল্যাব থেকে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি থেকে দেখা যায়, কান কিয়া গ্রামটি আগে যেখানে ছিল সেখানে এখন ডজনের বেশি সরকারি ও সামরিক ভবন গড়ে উঠেছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানাচ্ছে, কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো ছবির মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন- কান কিয়ার মতো অন্তত ৪০০ গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। ধ্বংস করে ফেলা অন্তত এক ডজন রোহিঙ্গা গ্রামের নাম বর্তমান মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিকে, মায়ানমারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাখাইন রাজ্যের পুনর্গঠনের কাজ দেখভাল করছে। রয়টার্সের পক্ষ থেকে তাদের কাছে গ্রামের নাম মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কারণ এবং কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনা হবে তা জানতে চাওয়া হলে, তারা এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মায়ানমারের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে (জিএডি) যোগাযোগ করতে বলে। সেখানে যোগাযোগ করেও কারও কোন সাড়া পায়নি রয়টার্স।

এ প্রসঙ্গে মায়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক দূত ইয়াংহি লি বলেন, মায়ানমার সরকার ইচ্ছা করেই রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরা কঠিন করে দিচ্ছে। তারা কিভাবে সেই জায়গায় ফিরবে, যার কোন নাম নেই বা যেখানে তাদের বসবাসের কোন চিহ্ন নেই?

প্রসঙ্গত, মায়ানমার সরকার রাখাইনে সন্ত্রাস দমনের নামে ওই ?অভিযান চালালেও জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ওই অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে ?অভিহিত করেছে। রাখাইনে সেনা ?অভিযানের সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়। ওই শরণার্থীদের বর্ণনায় সাধারণ মানুষের ওপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নিপীড়নের চিত্র ফুটে ওঠে। সম্প্রতি, মায়ানমারের দুই সেনা সদস্য দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে রাখাইনে গণহত্যার উদ্দেশে সামরিক অভিযান পরিচালনার কথা স্বীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মায়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে শুনানি চলছে।