করোনা সংকটেও

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে

সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ : সেতুমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের সংকটেও পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর এ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এরমধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ। এছাড়া নদী শাসন কাজ শেষ হয়েছে ৭৪ শতাংশ। দুই পারের সংযোগ সড়ক প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতুর সময় বৃদ্ধির জন্য ১০টি কারণ আছে। এরমধ্যে প্রধান কারণগুলো হলোÑ সেতুর ১৪ পিয়ারে একটি করে পাইলিং বৃদ্ধি করে নতুন নকশা করতে সময় ব্যয় হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে চীনা শ্রমিক চীনে গিয়ে আটকা পড়া ও নদী ভাঙনের কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হওয়া। সেতু সার্ভিস এলাকায় কয়েকবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই মাওয়ায় ১ নম্বর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সেতুটির সংরক্ষিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরমধ্যে ১৯২টি রেলওয়ে স্টিনজার এবং ১২৬টি রোডওয়ে ডেক (স্লাব) ছিল। এ সব কারণ বিবেচনা করে পদ্মা সেতুর সময় ৬ মাস বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে না। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মার মূল সেতুর নির্মাণ কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে।

সেতুর ৪২টি পিয়ার নির্মাণ শেষ হয়েছে। ৩১ স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো) বসানো হয়েছে। বাকি ১০ স্প্যান নির্মাণ শেষ হয়েছে। চারটি প্রস্তুত রয়েছে। ছয়টি স্প্যানে রঙ দেয়ার কাজ চলছে। এছাড়া স্প্যানের উপরে রেলওয়ে স্লাব ও রোডওয়ে স্লাব কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শেষ হয়েছে। রোডওয়ে স্লাব অর্ধেকের কম বসানো হয়েছে। তবের নদীর স্রোতে ও পানি কিছুটা কমলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। গতকাল পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি বিষয়ক এক পর্যালোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সেতুতে একের পর এক স্প্যান বসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারক করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৮১ ভাগেরও বেশি হয়েছে। এরমধ্যে সেতুর মূল কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। নদী শাসনের অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৭৪ ভাগ। এর আগেই মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজার কাজ শেষ হয়েছে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩১টি ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৬৫০ মিটার। পদ্মার পানি প্রবাহের গতি কমলে আমরা স্প্যানগুলো বসাতে পারব। ৪২টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেতুর ওপর যানবাহন চলাচলের ডেক ও স্লাব স্থাপনের কাজ চলছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এ মাইলফলক প্রজেক্টের সঙ্গে আপনারা সংযুক্ত থাকছেন বলে আপনারা গর্ববোধ করবেন। সবাইকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে আহ্বান জানাই। প্রকল্পের ইমেজ ক্ষুণœ হয় এমন কোন কাজ কেউ করবেন না। কী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন আর্থিক সংকট নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে এ প্রকল্পে আর্থিক সংকট হবে না। বাজেটে পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রয়েছে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ আজ এ পর্যায়ে এসেছে। সব সমালোচনা পেছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। আজ এগিয়ে চলছে সেতুর কাজ। পৃথিবীর নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা একটি আনপ্রেডিক্টেবল রিভার। এখানে সয়েল কন্ডিশনগুলোসহ অন্যান্য বিষয়ে সময় বদলায়। অতি সম্প্রতি কিছু স্প্যান স্থাপনের পরিকল্পনা ও তীব্র স্রোতের কারণে সম্ভব হয়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা হতে মাওয়া এবং পাচ্চর হতে ভাঙা পর্যন্ত দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন যান চলাচলের জন্য। পদ্মা সেতু চালু হলে বদলে যাবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতির চালচিত্র। করোনাকালে এক মুহূর্তের জন্যও পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ থেমে থাকেনি দেশের অন্যান্য উন্নয়ন গতিতে যখন ছন্দপতন তখনও সেতুর ওপর বসেছে একের পর এক স্প্যান। করোনা মহামারীর শুরু থেকে প্রকল্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি জনবল স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ এগিয়ে নেয়ার যে দক্ষতা দেখিয়েছেন এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ২০০৭ সালে রেলপথ ছাড়া একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে রেলপথ যুক্ত করে প্রথম দফায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা দ্বিগুণের বেশি। তখর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফায় ২০১৮ সালে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণের টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

করোনা সংকটেও

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে

সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ : সেতুমন্ত্রী

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

পদ্মার মূল সেতু -সংবাদ

করোনাভাইরাসের সংকটেও পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর এ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এরমধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ। এছাড়া নদী শাসন কাজ শেষ হয়েছে ৭৪ শতাংশ। দুই পারের সংযোগ সড়ক প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতুর সময় বৃদ্ধির জন্য ১০টি কারণ আছে। এরমধ্যে প্রধান কারণগুলো হলোÑ সেতুর ১৪ পিয়ারে একটি করে পাইলিং বৃদ্ধি করে নতুন নকশা করতে সময় ব্যয় হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে চীনা শ্রমিক চীনে গিয়ে আটকা পড়া ও নদী ভাঙনের কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হওয়া। সেতু সার্ভিস এলাকায় কয়েকবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই মাওয়ায় ১ নম্বর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সেতুটির সংরক্ষিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরমধ্যে ১৯২টি রেলওয়ে স্টিনজার এবং ১২৬টি রোডওয়ে ডেক (স্লাব) ছিল। এ সব কারণ বিবেচনা করে পদ্মা সেতুর সময় ৬ মাস বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে না। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মার মূল সেতুর নির্মাণ কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে।

সেতুর ৪২টি পিয়ার নির্মাণ শেষ হয়েছে। ৩১ স্প্যান (ইস্পাতের কাঠামো) বসানো হয়েছে। বাকি ১০ স্প্যান নির্মাণ শেষ হয়েছে। চারটি প্রস্তুত রয়েছে। ছয়টি স্প্যানে রঙ দেয়ার কাজ চলছে। এছাড়া স্প্যানের উপরে রেলওয়ে স্লাব ও রোডওয়ে স্লাব কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শেষ হয়েছে। রোডওয়ে স্লাব অর্ধেকের কম বসানো হয়েছে। তবের নদীর স্রোতে ও পানি কিছুটা কমলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। গতকাল পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি বিষয়ক এক পর্যালোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সেতুতে একের পর এক স্প্যান বসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারক করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৮১ ভাগেরও বেশি হয়েছে। এরমধ্যে সেতুর মূল কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। নদী শাসনের অগ্রগতি শতকরা প্রায় ৭৪ ভাগ। এর আগেই মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজার কাজ শেষ হয়েছে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩১টি ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৬৫০ মিটার। পদ্মার পানি প্রবাহের গতি কমলে আমরা স্প্যানগুলো বসাতে পারব। ৪২টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেতুর ওপর যানবাহন চলাচলের ডেক ও স্লাব স্থাপনের কাজ চলছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এ মাইলফলক প্রজেক্টের সঙ্গে আপনারা সংযুক্ত থাকছেন বলে আপনারা গর্ববোধ করবেন। সবাইকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে আহ্বান জানাই। প্রকল্পের ইমেজ ক্ষুণœ হয় এমন কোন কাজ কেউ করবেন না। কী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন আর্থিক সংকট নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে এ প্রকল্পে আর্থিক সংকট হবে না। বাজেটে পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রয়েছে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ আজ এ পর্যায়ে এসেছে। সব সমালোচনা পেছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। আজ এগিয়ে চলছে সেতুর কাজ। পৃথিবীর নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা একটি আনপ্রেডিক্টেবল রিভার। এখানে সয়েল কন্ডিশনগুলোসহ অন্যান্য বিষয়ে সময় বদলায়। অতি সম্প্রতি কিছু স্প্যান স্থাপনের পরিকল্পনা ও তীব্র স্রোতের কারণে সম্ভব হয়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা হতে মাওয়া এবং পাচ্চর হতে ভাঙা পর্যন্ত দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন যান চলাচলের জন্য। পদ্মা সেতু চালু হলে বদলে যাবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতির চালচিত্র। করোনাকালে এক মুহূর্তের জন্যও পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ থেমে থাকেনি দেশের অন্যান্য উন্নয়ন গতিতে যখন ছন্দপতন তখনও সেতুর ওপর বসেছে একের পর এক স্প্যান। করোনা মহামারীর শুরু থেকে প্রকল্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি জনবল স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ এগিয়ে নেয়ার যে দক্ষতা দেখিয়েছেন এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ২০০৭ সালে রেলপথ ছাড়া একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে রেলপথ যুক্ত করে প্রথম দফায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা দ্বিগুণের বেশি। তখর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফায় ২০১৮ সালে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণের টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।