বদলির হয়রানি থেকেও পরিত্রাণ চান ইউএনওরা

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও উপরের কর্মকর্তাদের মর্জির শিকার

দুই ধরনের নিরাপত্তা পাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। গানম্যানের (পুলিশ) মাধ্যমে ইউএন’র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং আনসার ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে তাদের বাসভবনের নিরাপত্তা হচ্ছে। যদিও ‘গানম্যান’ বা দেহরক্ষীর মাধ্যমে নিরাপত্তা নয়, একইসঙ্গে বদলির হয়রানি থেকেও পরিত্রাণ চান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) ও সহকারী কমিশনাররা (এসিল্যান্ড)। দায়িত্ব পালনে স্থানীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিভাগীয় কমিশনাররাও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের চাপে, কখনও নিজেদের মর্জিমাফিক ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের বদলি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ধরনের বদলির হয়রানি থেকে পরিত্রাণ চান ইউএনও ও সহকারী কমিশনাররা। তারা ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের ন্যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পদায়ন চান।

ইউএনও ও সহকারী কমিশনাররা তাদের বদলি ও পদায়ন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে করার আবেদন বা দাবি করেছেন কিনা জানতে চাইলে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ সংবাদকে বলেন, ‘না, তারা এ রকম কোন আবেদন করেনি। আমার যতটুকু জানা আছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ রকম কোন চিন্তাভাবনাও নেই। ডিভিশনাল কমিশনাররা এখন বিভিন্ন উপজেলায় ইউএনওদের বদলি-পদায়ন করে থাকে। এখানে কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের তরপ থেকে এ রকম কোন ডিমান্ডও (দাবি) নেই। এখন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে।’

গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এ ঘটনায় আসামিরা গ্রেফতার হলেও ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বপালন করা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আলোকেই ইউএনওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের প্রায় সব সদসের পদায়ন করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে। ২০১২ সাল পর্যন্ত ইউএনওদের বদলি ও পদায়নও করতো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে সরকারি সেবার মান বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ইউএনদের বদলি ও পদায়ন (পোস্টিং) বিভাগীয় কমিশনারদের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়।

মাঠ প্রশাসনের পাঁচজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গানম্যান বা নিরাপত্তা কর্মীর মাধ্যমে সাময়িকভাবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা শঙ্কা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। কিন্তু এর উল্টো দিকও আছে, বিশেষ করে নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে সেবা প্রত্যাশীদের অনেকেই হয়তো ইউএনও ও সহকারী কমিশনারদের কক্ষে প্রবেশ করতে প্রতিবন্ধকতার সমম্মুখীন হবেন। এতে করে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।

ইউএনওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেÑ জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তাদের অঙ্গীভূত আনসার (ব্যাটালিয়ন) দিয়েছে। এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে সব ইউএনওকে পুলিশের থেকে গানম্যান এবং ব্যাটালিয়ন আনসারের মাধ্যমে তাদের বাংলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’ কয়েকজন ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালুমহাল, অর্পিত সম্পতি, বেদখল হওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নানারকম কাজে জড়িত থাকেন ইউএনও এবং সহকারী কমিশনাররা। এসব কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী মহল, ভূমিদস্যুসহ অনেকের সঙ্গে নানা রকম দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ সৃষ্টি হয় ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকে কেন্দ্রে করে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নাখোশ হন উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধের কারণে ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের শায়েস্তা করতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়মিত ধরনা দেন। প্রায় এই ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইউএনও এবং সহকারী কমিশনাররা হয়রানিমূলক বদলির শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন ইউএনও নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে এসিল্যান্ড এবং ইউএনওর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চারবার হয়রানিমূলক বদলির শিকার হয়েছি। ওপর মহলের নির্দেশনা অনুসারে ভূমির নাম জারি না করা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা এবং জনপ্রতিনিধিদের তদবির অনুযায়ী নথি নিষ্পত্তি না করার কারণেই বারবার বদলির শিকার হচ্ছি।’

এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে কর্মরত সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘পছন্দের ব্যক্তিদের হাওর ইজারা দেয়ার জন্য আমার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান। ওইসব ব্যক্তির নামে ইজারা দেয়া হলেও স্থানীয়ভাবে মারত্মক সংঘর্ষ হতে পারেÑ এমন তথ্য পেয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য পরামর্শ চেয়ে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়। এর কিছুদিন পরই আমার বদলির আদেশ জারি হয়। অথচ তারা ইচ্ছে করলে আমাকে বদলি না করেও সমস্যাটি নিষ্পত্তি করতে পারতো।’

ওইসব কারণেই সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পদায়ন ও বদলির দাবি করছেন ইউএনও এবং সহকারী কমিশনাররা। তারা বলেনÑ কেন্দ্রীয়ভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বদলি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হলে মাঠ প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমবে। মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বপালন করা কর্মকর্তারা ওইসব যুক্তি তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে বদলি ও পদায়নের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনার জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ ও তদবির করছেন।

নিজে পাঁচ বছর বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি বলেন, ‘দেশের সব ইউএনও যদি তাদের বদলি করাতে বা ঠেকাতে সচিবালয়ে আসেন, তাহলে একটা বাজারের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে যখন তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়টি ন্যস্ত করা হয় তখন একটা নীতিমালা করা হয়েছিল। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ইউএনও যোগ দেয়ার তিন দিনের মধ্যে তাকে পোস্টিং (পদায়ন) দিতে হয়। শূন্য হলেই ইউএনও পদে পোস্টিং দেয়া হয়। এটি একটি ভালো নীতিমালা। এখন কোন বিভাগীয় কমিশনার যদি নীতিমালা ভঙ্গ করেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫২০ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছে। তারা আটটি বিভাগে আটজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জেলা প্রশাসনের অধীনে সরকারের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের পদায়ন হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

নিরাপত্তা পেলেও

বদলির হয়রানি থেকেও পরিত্রাণ চান ইউএনওরা

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও উপরের কর্মকর্তাদের মর্জির শিকার

রাকিব উদ্দিন

দুই ধরনের নিরাপত্তা পাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। গানম্যানের (পুলিশ) মাধ্যমে ইউএন’র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং আনসার ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে তাদের বাসভবনের নিরাপত্তা হচ্ছে। যদিও ‘গানম্যান’ বা দেহরক্ষীর মাধ্যমে নিরাপত্তা নয়, একইসঙ্গে বদলির হয়রানি থেকেও পরিত্রাণ চান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) ও সহকারী কমিশনাররা (এসিল্যান্ড)। দায়িত্ব পালনে স্থানীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিভাগীয় কমিশনাররাও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের চাপে, কখনও নিজেদের মর্জিমাফিক ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের বদলি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ধরনের বদলির হয়রানি থেকে পরিত্রাণ চান ইউএনও ও সহকারী কমিশনাররা। তারা ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের ন্যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পদায়ন চান।

ইউএনও ও সহকারী কমিশনাররা তাদের বদলি ও পদায়ন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে করার আবেদন বা দাবি করেছেন কিনা জানতে চাইলে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ সংবাদকে বলেন, ‘না, তারা এ রকম কোন আবেদন করেনি। আমার যতটুকু জানা আছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ রকম কোন চিন্তাভাবনাও নেই। ডিভিশনাল কমিশনাররা এখন বিভিন্ন উপজেলায় ইউএনওদের বদলি-পদায়ন করে থাকে। এখানে কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের তরপ থেকে এ রকম কোন ডিমান্ডও (দাবি) নেই। এখন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে।’

গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এ ঘটনায় আসামিরা গ্রেফতার হলেও ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বপালন করা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আলোকেই ইউএনওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের প্রায় সব সদসের পদায়ন করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে। ২০১২ সাল পর্যন্ত ইউএনওদের বদলি ও পদায়নও করতো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে সরকারি সেবার মান বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ইউএনদের বদলি ও পদায়ন (পোস্টিং) বিভাগীয় কমিশনারদের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়।

মাঠ প্রশাসনের পাঁচজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গানম্যান বা নিরাপত্তা কর্মীর মাধ্যমে সাময়িকভাবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা শঙ্কা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। কিন্তু এর উল্টো দিকও আছে, বিশেষ করে নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে সেবা প্রত্যাশীদের অনেকেই হয়তো ইউএনও ও সহকারী কমিশনারদের কক্ষে প্রবেশ করতে প্রতিবন্ধকতার সমম্মুখীন হবেন। এতে করে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।

ইউএনওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেÑ জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তাদের অঙ্গীভূত আনসার (ব্যাটালিয়ন) দিয়েছে। এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে সব ইউএনওকে পুলিশের থেকে গানম্যান এবং ব্যাটালিয়ন আনসারের মাধ্যমে তাদের বাংলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’ কয়েকজন ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালুমহাল, অর্পিত সম্পতি, বেদখল হওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নানারকম কাজে জড়িত থাকেন ইউএনও এবং সহকারী কমিশনাররা। এসব কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী মহল, ভূমিদস্যুসহ অনেকের সঙ্গে নানা রকম দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ সৃষ্টি হয় ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকে কেন্দ্রে করে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নাখোশ হন উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধের কারণে ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারদের শায়েস্তা করতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়মিত ধরনা দেন। প্রায় এই ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইউএনও এবং সহকারী কমিশনাররা হয়রানিমূলক বদলির শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন ইউএনও নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে এসিল্যান্ড এবং ইউএনওর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চারবার হয়রানিমূলক বদলির শিকার হয়েছি। ওপর মহলের নির্দেশনা অনুসারে ভূমির নাম জারি না করা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা এবং জনপ্রতিনিধিদের তদবির অনুযায়ী নথি নিষ্পত্তি না করার কারণেই বারবার বদলির শিকার হচ্ছি।’

এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে কর্মরত সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘পছন্দের ব্যক্তিদের হাওর ইজারা দেয়ার জন্য আমার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান। ওইসব ব্যক্তির নামে ইজারা দেয়া হলেও স্থানীয়ভাবে মারত্মক সংঘর্ষ হতে পারেÑ এমন তথ্য পেয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য পরামর্শ চেয়ে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়। এর কিছুদিন পরই আমার বদলির আদেশ জারি হয়। অথচ তারা ইচ্ছে করলে আমাকে বদলি না করেও সমস্যাটি নিষ্পত্তি করতে পারতো।’

ওইসব কারণেই সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পদায়ন ও বদলির দাবি করছেন ইউএনও এবং সহকারী কমিশনাররা। তারা বলেনÑ কেন্দ্রীয়ভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বদলি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হলে মাঠ প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমবে। মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বপালন করা কর্মকর্তারা ওইসব যুক্তি তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে বদলি ও পদায়নের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনার জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ ও তদবির করছেন।

নিজে পাঁচ বছর বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি বলেন, ‘দেশের সব ইউএনও যদি তাদের বদলি করাতে বা ঠেকাতে সচিবালয়ে আসেন, তাহলে একটা বাজারের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে যখন তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়টি ন্যস্ত করা হয় তখন একটা নীতিমালা করা হয়েছিল। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ইউএনও যোগ দেয়ার তিন দিনের মধ্যে তাকে পোস্টিং (পদায়ন) দিতে হয়। শূন্য হলেই ইউএনও পদে পোস্টিং দেয়া হয়। এটি একটি ভালো নীতিমালা। এখন কোন বিভাগীয় কমিশনার যদি নীতিমালা ভঙ্গ করেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫২০ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছে। তারা আটটি বিভাগে আটজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জেলা প্রশাসনের অধীনে সরকারের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের পদায়ন হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে।