মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ

বেঁচে থাকা ৫ জনের অবস্থাও সংকটজনক

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হওয়া মুসুল্লিদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৫ জনের অবস্থাও সংকটজনক। তাদের শ্বাসনালীসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ায় এ ৫ জন বাঁচবে কিনা সে নিশ্চয়তা চিকিৎসকরাও দিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩৭ জনের মধ্যে ৩১ জন মারা গেছেন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক ডা. হোসাইন ইমাম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৩৭ জনের মধ্যে মাত্র একজনকে আমরা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিতে পেরেছি। বাকি ৩৬ জনের মধ্যে ৩১ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আর পাঁচজন আইসিইউতে আছেন। তাদের কেউ শঙ্কামুক্ত নন, সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। ডা. হোসাইন ইমাম জানান, ৫০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ৫৫ বছরের শেখ ফরিদ, ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ২৪ বছরের কেনান হোসেন বাপ্পী, ২৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ৩৯ বছরের আমজাদ, ২২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ১৮ বছরের সিফাত এবং ৪৭ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নিয়ে ৪০ বছরের আবদুল আজিজ আইসিইউতে রয়েছেন। আর এই পাঁচজনের মধ্যে শেখ ফরিদ এবং আবদুল আজিজের অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক।

সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মো. নজরুল (৫০), শেখ ফরিদ (২১) ও আবদুস ছাত্তার (৪০)। এর আগে মারা যান- ইমাম আবদুল মালেক (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার ছেলে জুনায়েদ (১৭), দুই ভাই জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), মোস্তফা কামাল (৩৪), রাশেদ (৩০), হুমায়ুন কবির (৭২), জামাল আবেদিন (৪০), ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), মো. রিফাত (১৮), মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার জয়নাল (৩৮), নয়ন (২৭), নিজাম (৩৪), রাসেল (৩৪), কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শিশু জুবায়ের (৭), নাদিম (৪৫), বাহার উদ্দিন (৫৫), শামীম হাসান (৪৫) জুলহাস (৩৫), মোহাম্মদ আলী (৫৫), আবুল বাশার মোল্লা (৫১), মনির ফরাজি (৩০), ইমরান হোসেন (৩০) ও আবদুল হান্নানসহ (৫০) ২৮ জন।

গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে মসজিদের ভিতরে থাকা ৬টি এসি চূর্ণ হয়ে যায়। বিস্ফোরণের কারণে আগুনে নামাজরত ৪০ মুসল্লি আহত হয়। এরমধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে দ্রুত ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। রাতেই ১১ জন মারা যান। পর্যায়ক্রমে একে একে প্রাণহানী ঘটে ৩১ জনের। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট প্রাথমিক তদন্তে বিস্ফোরণের জন্য তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, তিতাস এবং ফায়ার সার্ভিস থেকে ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মসজিদ কমিটির অভিযোগ ছিল মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনে দীর্ঘদিন লিকেজ ছিল। মেরামতের কথা বললে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। এসব বিতর্কের মধ্যে পাল্টা যুক্তি দেখায় তিতাস। তিতাসের স্থানীয় ৮ জনকে বরখাস্ত করে। পরে রাস্তা ঘুরে মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনে ৬টি লিকেজ চিহ্নিত করা হয়। তিতাস থেকে বলা হয় মসজিদ নির্মাণের সময় গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই লিকেজগুলো তৈরি হয়। আর মসজিদ নির্মাণের সময় অনুমোদনও নেয়া হয়নি। সব বিতর্কের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২২ মহররম ১৪৪২, ২৪ ভাদ্র ১৪২৭

মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ

বেঁচে থাকা ৫ জনের অবস্থাও সংকটজনক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হওয়া মুসুল্লিদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৫ জনের অবস্থাও সংকটজনক। তাদের শ্বাসনালীসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ায় এ ৫ জন বাঁচবে কিনা সে নিশ্চয়তা চিকিৎসকরাও দিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩৭ জনের মধ্যে ৩১ জন মারা গেছেন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক ডা. হোসাইন ইমাম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৩৭ জনের মধ্যে মাত্র একজনকে আমরা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিতে পেরেছি। বাকি ৩৬ জনের মধ্যে ৩১ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আর পাঁচজন আইসিইউতে আছেন। তাদের কেউ শঙ্কামুক্ত নন, সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। ডা. হোসাইন ইমাম জানান, ৫০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ৫৫ বছরের শেখ ফরিদ, ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ২৪ বছরের কেনান হোসেন বাপ্পী, ২৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ৩৯ বছরের আমজাদ, ২২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ১৮ বছরের সিফাত এবং ৪৭ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নিয়ে ৪০ বছরের আবদুল আজিজ আইসিইউতে রয়েছেন। আর এই পাঁচজনের মধ্যে শেখ ফরিদ এবং আবদুল আজিজের অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক।

সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মো. নজরুল (৫০), শেখ ফরিদ (২১) ও আবদুস ছাত্তার (৪০)। এর আগে মারা যান- ইমাম আবদুল মালেক (৬০), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার ছেলে জুনায়েদ (১৭), দুই ভাই জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), মোস্তফা কামাল (৩৪), রাশেদ (৩০), হুমায়ুন কবির (৭২), জামাল আবেদিন (৪০), ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), মো. রিফাত (১৮), মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার জয়নাল (৩৮), নয়ন (২৭), নিজাম (৩৪), রাসেল (৩৪), কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শিশু জুবায়ের (৭), নাদিম (৪৫), বাহার উদ্দিন (৫৫), শামীম হাসান (৪৫) জুলহাস (৩৫), মোহাম্মদ আলী (৫৫), আবুল বাশার মোল্লা (৫১), মনির ফরাজি (৩০), ইমরান হোসেন (৩০) ও আবদুল হান্নানসহ (৫০) ২৮ জন।

গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে মসজিদের ভিতরে থাকা ৬টি এসি চূর্ণ হয়ে যায়। বিস্ফোরণের কারণে আগুনে নামাজরত ৪০ মুসল্লি আহত হয়। এরমধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে দ্রুত ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। রাতেই ১১ জন মারা যান। পর্যায়ক্রমে একে একে প্রাণহানী ঘটে ৩১ জনের। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট প্রাথমিক তদন্তে বিস্ফোরণের জন্য তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজ থাকার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, তিতাস এবং ফায়ার সার্ভিস থেকে ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মসজিদ কমিটির অভিযোগ ছিল মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনে দীর্ঘদিন লিকেজ ছিল। মেরামতের কথা বললে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। এসব বিতর্কের মধ্যে পাল্টা যুক্তি দেখায় তিতাস। তিতাসের স্থানীয় ৮ জনকে বরখাস্ত করে। পরে রাস্তা ঘুরে মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনে ৬টি লিকেজ চিহ্নিত করা হয়। তিতাস থেকে বলা হয় মসজিদ নির্মাণের সময় গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই লিকেজগুলো তৈরি হয়। আর মসজিদ নির্মাণের সময় অনুমোদনও নেয়া হয়নি। সব বিতর্কের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।