অনিয়মের তদন্ত রিপোর্ট একসঙ্গে ৭ জনকে অবসর প্রদান

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের অভিযোগ একটি তদন্ত রিপোর্টকে ভিত্তি করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও কন্ট্রোলারসহ ৭ জনের বেশি কর্মকর্তাকে এক সঙ্গে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও একজন প্রকৌশলীসহ আরও কয়েকজন শিক্ষককে সম্প্রতি অবসরে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড থেকে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে অবসরে পাঠানো নিয়ে ভার্সিটিজুড়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে ভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনায় কোনরকম ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ৮০ লাখ টাকা অগ্রিম দেয়া এবং পার্টির খরচে লন্ডন ভিজিট করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি অধ্যাপক এমইএইচ খানের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি কয়েক মাস তদন্ত শেষে সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি অনুযায়ী যারা অফিসের কর্মকর্তা এবং তাদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর আর শিক্ষকদের ৭০ বছর। তবে যেসব কর্মকর্তা শিক্ষক শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ, অফিস করতে এবং শিক্ষাদানে সক্ষম তাদের উক্ত বয়সের বেশি সময় হলেও চাকরিতে থাকার সুযোগ আছে। তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে একসঙ্গে হঠাৎ করে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত জুন মাসে তাদের চাকরির মেয়াদ চুক্তি অনুয়ায়ী শেষ হওয়ার পর আবার দুই মাসের জন্য নতুনভাবে বৃদ্ধি করা হয়। এরপর কোন আলোচনা ছাড়াই গত ৩১ আগস্ট রেজিস্ট্রার, কন্ট্রোলার, লাইব্রেরিয়ান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার, উপ-পরিচালক অর্থসহ ৭ থেকে ৮ জনকে অবসরে পাঠানো হয়। এছাড়াও আরও কয়েকজন ডাক্তার ও শিক্ষক রয়েছেন যাদের সম্প্রতি অবসরে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিক্ষক সংবাদকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের তদন্ত কমিটিতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের তদন্তে ভার্সিটির বিভিন্ন অনিয়ম উদ্ঘাটন ও সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করার পর ক্ষোভের কারনে পূর্ব আলোচনা ছাড়াই তাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে। আরও কয়েকজন শিক্ষককে অবসরে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

তদন্ত রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর (২০১৯) ছাত্র আন্দোলন ও তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশ অভিযোগ সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ডা. কাজী শরীফুল আলমের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইএসের (সেন্টার ফর এক্সটেনশন সার্ভিসেসের পরিচালকের দায়িত্ব নেয়ার পর রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন মানা হয়নি। কোন সভা ডাকা হয়নি। উপচার্যের অনুমোদন ছাড়াই সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। আর সিইএসের একাউন্ট পরিচালনার ব্যাপারে নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা কমিটি গঠন ও অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে আগে রুলস মানা হলেও তার সময় কিছুই মানা হয়নি। আশুলিয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ব্যক্তিগত জমি কেনার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের হিসাবে জমা রাখা অনিয়ম হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি মনে করেন। অধ্যাপক ড. কাজি শরীফুল আলম ট্রেজারার হিসেবে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব তার একক স্বাক্ষরে পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ট্রেজারারের হিসাব থেকে তার ব্যক্তিগত হিসাবে ৬০ লাখ টাকা অতি গোপনে স্থানান্তর করেছেন বলে তদন্ত কমিটি থেকে জানা গেছে। যা সাধারণ নিয়ম বহির্ভূত। দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে।

এছাড়াও তার সময় ভার্সিটির সব অনিয়মের বিষয় যথাসময়ে তার কাছে তুলে ধরতে সাহস পায়নি বলে তদন্ত কমিটি তাদের পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনার সময় অগ্রিম অর্থ দেয়া ও অন্যান্য কর্ম সম্পাদনের যথাযথ নিয়মে করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরবরাহকারীর টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করা সরাসরি অনিয়ম না হলেও বিষয়টি অনৈতিকতার পর্যায়ে পড়ে। ৮০ লাখ টাকা সিকিউরিটি ব্যতীত দেয়ায় তিনি কেনাকাটার রুলস মানা হয়নি। এটাও অনিয়ম বলে তদন্ত কমিটি মনে করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে।

গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের আন্দোলনের নেপথ্য কাহিনী হিসেবে তদন্ত কমিটি যা উদ্ঘাটন করেছে তা হলো। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রাখার কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। অনিয়মগুলো বিশবিদ্যালয়ের আইন ও নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ দৃশ্যমান না হওয়ায় এবং পরবর্তীতে অনিয়ম সম্পর্কে অবহিত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের প্রতিকার ও সংশোধনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামর্থ্যরে মধ্যে পূরণ বা বাড়ানো দরকার। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, নিয়ম ও যথাযথভাবে মেনে পরিচালনা করা হয়। সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ ধরনের অনিয়মে জড়িত কোন ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষা বা প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেয়া বা নিয়োজিত রাখা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কর্মকা-ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত করার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সচেতন ও নিয়ম-নিষ্ঠ হওয়া আবশ্যক। একই ব্যক্তিকে প্রশাসনের বহু দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি সেই নিরিখে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এমএইচ খান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ (সাবেক চেয়ারম্যান এনবিআর), ড. এসএম খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম মোল্লাহ এবং অধ্যাপক ড. মো. কায়কোবাদ স্বাক্ষর করেছেন।

তদন্ত কমিটি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অনিয়ম মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুসন্ধান তদন্ত করলে ভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম উন্নত হবে। আর ছাত্রছাত্রী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এ রিপোর্ট মূল তদন্ত কমিটির। এছাড়াও আর্থিক অনিয়ম উদ্ঘাটনে অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটি ভার্সিটির আর্থিক অনিয়ম নিয়ে ভিসির কাছে রিপোর্ট পেশ করেছেন।

এ সম্পর্কে ভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মো. ফাজলী ইলাহী মুঠোফোনে বলেন, রেজিস্ট্রার, কন্ট্রোলারসহ যাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে তা বয়সের কারণে পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে তদন্ত কমিটির কোন সম্পর্ক নেই। ছাত্র আন্দোলন তার আমলের আগেই হয়েছে। আর কাজি শরীফুল আলম সাহেব চাকরিতে নেই। তাকে নিয়ে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট সিন্ডিকেটে দেয়া হবে। সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ সম্পর্কে প্রফেসর ডা. শরিফুল আলমের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি তাকে কোন অভিযোগ গতকাল পর্যন্ত জানায়নি। এরপর পুনরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি তদন্ত কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এ সম্পর্কে ভার্সিটির আর্থিক অনিয়ম তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ড. আমান উল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ তদন্ত করে সিন্ডিকেটের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন।

এ সম্পর্কে প্রথম তদন্ত কমিটির সদস্য ও টাস্টি বোর্ডের সদস্য এসএম খলিলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক অনিয়ম প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। রিপোর্র্টটি সিন্ডিকেটে দেয়া হয়েছে। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।

আরও খবর
গোমতী নদীর ১৩ স্থান থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন
শতভাগ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট চলাচল শুরু আজ থেকে
ঢাকা থেকে রেল সংযোগের পর কক্সবাজার হবে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী রেলমন্ত্রী
সারাদেশে বিদ্যুতের তার হবে ভূগর্ভে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর ঝুলন্ত তার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করবে ডিএনসিসি ৩
এসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মৃত্যু
অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
তদন্ত শুরু : আলামত রাসায়নিক পরীক্ষাগারে
ইলিশ ধরা পড়ছে ব্যাপক হারে চিন্তিত মৎস্য বিশেষজ্ঞরা
মানব পাচারের অভিযোগে নৃত্যশিল্পী সোহাগ গ্রেফতার
খাদ্যাভাবে বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৩ মহররম ১৪৪২, ২৫ ভাদ্র ১৪২৭

আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অনিয়মের তদন্ত রিপোর্ট একসঙ্গে ৭ জনকে অবসর প্রদান

বাকিবিল্লাহ |

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের অভিযোগ একটি তদন্ত রিপোর্টকে ভিত্তি করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও কন্ট্রোলারসহ ৭ জনের বেশি কর্মকর্তাকে এক সঙ্গে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও একজন প্রকৌশলীসহ আরও কয়েকজন শিক্ষককে সম্প্রতি অবসরে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড থেকে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে অবসরে পাঠানো নিয়ে ভার্সিটিজুড়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে ভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনায় কোনরকম ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ৮০ লাখ টাকা অগ্রিম দেয়া এবং পার্টির খরচে লন্ডন ভিজিট করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি অধ্যাপক এমইএইচ খানের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি কয়েক মাস তদন্ত শেষে সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি অনুযায়ী যারা অফিসের কর্মকর্তা এবং তাদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর আর শিক্ষকদের ৭০ বছর। তবে যেসব কর্মকর্তা শিক্ষক শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ, অফিস করতে এবং শিক্ষাদানে সক্ষম তাদের উক্ত বয়সের বেশি সময় হলেও চাকরিতে থাকার সুযোগ আছে। তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে একসঙ্গে হঠাৎ করে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত জুন মাসে তাদের চাকরির মেয়াদ চুক্তি অনুয়ায়ী শেষ হওয়ার পর আবার দুই মাসের জন্য নতুনভাবে বৃদ্ধি করা হয়। এরপর কোন আলোচনা ছাড়াই গত ৩১ আগস্ট রেজিস্ট্রার, কন্ট্রোলার, লাইব্রেরিয়ান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার, উপ-পরিচালক অর্থসহ ৭ থেকে ৮ জনকে অবসরে পাঠানো হয়। এছাড়াও আরও কয়েকজন ডাক্তার ও শিক্ষক রয়েছেন যাদের সম্প্রতি অবসরে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী কয়েকজন কর্মকর্তা ও শিক্ষক সংবাদকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের তদন্ত কমিটিতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের তদন্তে ভার্সিটির বিভিন্ন অনিয়ম উদ্ঘাটন ও সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করার পর ক্ষোভের কারনে পূর্ব আলোচনা ছাড়াই তাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে। আরও কয়েকজন শিক্ষককে অবসরে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

তদন্ত রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর (২০১৯) ছাত্র আন্দোলন ও তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশ অভিযোগ সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ডা. কাজী শরীফুল আলমের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইএসের (সেন্টার ফর এক্সটেনশন সার্ভিসেসের পরিচালকের দায়িত্ব নেয়ার পর রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন মানা হয়নি। কোন সভা ডাকা হয়নি। উপচার্যের অনুমোদন ছাড়াই সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। আর সিইএসের একাউন্ট পরিচালনার ব্যাপারে নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা কমিটি গঠন ও অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে আগে রুলস মানা হলেও তার সময় কিছুই মানা হয়নি। আশুলিয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ব্যক্তিগত জমি কেনার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের হিসাবে জমা রাখা অনিয়ম হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি মনে করেন। অধ্যাপক ড. কাজি শরীফুল আলম ট্রেজারার হিসেবে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব তার একক স্বাক্ষরে পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ট্রেজারারের হিসাব থেকে তার ব্যক্তিগত হিসাবে ৬০ লাখ টাকা অতি গোপনে স্থানান্তর করেছেন বলে তদন্ত কমিটি থেকে জানা গেছে। যা সাধারণ নিয়ম বহির্ভূত। দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে।

এছাড়াও তার সময় ভার্সিটির সব অনিয়মের বিষয় যথাসময়ে তার কাছে তুলে ধরতে সাহস পায়নি বলে তদন্ত কমিটি তাদের পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনার সময় অগ্রিম অর্থ দেয়া ও অন্যান্য কর্ম সম্পাদনের যথাযথ নিয়মে করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরবরাহকারীর টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করা সরাসরি অনিয়ম না হলেও বিষয়টি অনৈতিকতার পর্যায়ে পড়ে। ৮০ লাখ টাকা সিকিউরিটি ব্যতীত দেয়ায় তিনি কেনাকাটার রুলস মানা হয়নি। এটাও অনিয়ম বলে তদন্ত কমিটি মনে করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে।

গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের আন্দোলনের নেপথ্য কাহিনী হিসেবে তদন্ত কমিটি যা উদ্ঘাটন করেছে তা হলো। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রাখার কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। অনিয়মগুলো বিশবিদ্যালয়ের আইন ও নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ দৃশ্যমান না হওয়ায় এবং পরবর্তীতে অনিয়ম সম্পর্কে অবহিত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের প্রতিকার ও সংশোধনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামর্থ্যরে মধ্যে পূরণ বা বাড়ানো দরকার। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, নিয়ম ও যথাযথভাবে মেনে পরিচালনা করা হয়। সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ ধরনের অনিয়মে জড়িত কোন ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষা বা প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেয়া বা নিয়োজিত রাখা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কর্মকা-ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত করার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সচেতন ও নিয়ম-নিষ্ঠ হওয়া আবশ্যক। একই ব্যক্তিকে প্রশাসনের বহু দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি সেই নিরিখে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এমএইচ খান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ (সাবেক চেয়ারম্যান এনবিআর), ড. এসএম খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম মোল্লাহ এবং অধ্যাপক ড. মো. কায়কোবাদ স্বাক্ষর করেছেন।

তদন্ত কমিটি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অনিয়ম মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুসন্ধান তদন্ত করলে ভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম উন্নত হবে। আর ছাত্রছাত্রী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এ রিপোর্ট মূল তদন্ত কমিটির। এছাড়াও আর্থিক অনিয়ম উদ্ঘাটনে অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটি ভার্সিটির আর্থিক অনিয়ম নিয়ে ভিসির কাছে রিপোর্ট পেশ করেছেন।

এ সম্পর্কে ভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মো. ফাজলী ইলাহী মুঠোফোনে বলেন, রেজিস্ট্রার, কন্ট্রোলারসহ যাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে তা বয়সের কারণে পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে তদন্ত কমিটির কোন সম্পর্ক নেই। ছাত্র আন্দোলন তার আমলের আগেই হয়েছে। আর কাজি শরীফুল আলম সাহেব চাকরিতে নেই। তাকে নিয়ে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট সিন্ডিকেটে দেয়া হবে। সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ সম্পর্কে প্রফেসর ডা. শরিফুল আলমের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি তাকে কোন অভিযোগ গতকাল পর্যন্ত জানায়নি। এরপর পুনরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি তদন্ত কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এ সম্পর্কে ভার্সিটির আর্থিক অনিয়ম তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ড. আমান উল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ তদন্ত করে সিন্ডিকেটের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন।

এ সম্পর্কে প্রথম তদন্ত কমিটির সদস্য ও টাস্টি বোর্ডের সদস্য এসএম খলিলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক অনিয়ম প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। রিপোর্র্টটি সিন্ডিকেটে দেয়া হয়েছে। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।