জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাসকে সম্পদ অর্জনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আশফাকুর রহমানের আদালতে শুনানি শেষে প্রদীপকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখায় এবং কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দুপর ১টায় নিñিদ্র নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রদীপ কুমার দাসকে চট্টগ্রাম আদালতে নিয়ে আসা হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার আদালত থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রদীপকে নিয়ে আসা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট চুমকি কারণ ও তার স্বামী প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। মামলায় প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ দমন আইন- ২০১২ এর ৪(২), ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দ-বিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চুমকি পেশায় একজন গৃহিণী। তিনি কোথাও চাকরি করেন না। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দানপত্র দলিল মূলে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন পাথরঘাটা এলাকায় জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। শ্বশুরের কাছ থেকে প্রদীপের স্ত্রীর উপহার পাওয়া বাড়ি নিয়ে দুদকের তদন্তে দেখা যায়, চুমকিকে তার পিতা একটি বাড়ি দানপত্র করে দিলেও তার অন্য ২ ভাই ও ১ বোনকে কোন বাড়ি দানপত্র করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অর্জিত আয় গোপন করার উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে ওই বাড়ি নির্মাণ করে রূপান্তরপূর্বক পরে চুমকির নামে দানপত্র করে নিয়ে প্রদীপ দাশ ভোগদখল করছেন। প্রদীপের গৃহিণী স্ত্রী চুমকি কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে ২০১৩-১৪ সালে প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন।
পরে মৎস্য ব্যবসায়ী ও বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তিনি ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ কর বছরে আয়কর রিটার্নে কমিশন ব্যবসা বাবদ ব্যবসার মূলধন ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেখান। তবে দুদক তদন্ত করে দেখেন, কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স, সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বা অন্য কোন রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেনি। ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ। এসআই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করতে লাগামগহীন হয়ে পড়েন প্রদীপ। তার সম্পদ দৃশ্যমান হতে তাকে ২০০২ সালের পর থেকে। প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকির নামে। যার বিশ্বাসযোগ্য কোন উৎস নেই বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদক পিপি সানোয়ার আহমেদ লাভলু জানান, টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে দুদকের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর আদালতের কাছে একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। একপর্যায়ে আদালত তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখায়। সানোয়ার আহমেদ লাভলু আরও জানান, শুনানির সময় আসামি প্রদীপের পক্ষের আইনজীবীরা দুদকের এ মামলা থেকে প্রদীপকে জামিন দিতে আদালতের কাছে একটি আবেদন করেন। আদালত এ বিষয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাসকে সম্পদ অর্জনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আশফাকুর রহমানের আদালতে শুনানি শেষে প্রদীপকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখায় এবং কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দুপর ১টায় নিñিদ্র নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রদীপ কুমার দাসকে চট্টগ্রাম আদালতে নিয়ে আসা হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার আদালত থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রদীপকে নিয়ে আসা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট চুমকি কারণ ও তার স্বামী প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। মামলায় প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ দমন আইন- ২০১২ এর ৪(২), ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দ-বিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চুমকি পেশায় একজন গৃহিণী। তিনি কোথাও চাকরি করেন না। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দানপত্র দলিল মূলে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন পাথরঘাটা এলাকায় জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। শ্বশুরের কাছ থেকে প্রদীপের স্ত্রীর উপহার পাওয়া বাড়ি নিয়ে দুদকের তদন্তে দেখা যায়, চুমকিকে তার পিতা একটি বাড়ি দানপত্র করে দিলেও তার অন্য ২ ভাই ও ১ বোনকে কোন বাড়ি দানপত্র করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অর্জিত আয় গোপন করার উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে ওই বাড়ি নির্মাণ করে রূপান্তরপূর্বক পরে চুমকির নামে দানপত্র করে নিয়ে প্রদীপ দাশ ভোগদখল করছেন। প্রদীপের গৃহিণী স্ত্রী চুমকি কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে ২০১৩-১৪ সালে প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন।
পরে মৎস্য ব্যবসায়ী ও বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তিনি ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ কর বছরে আয়কর রিটার্নে কমিশন ব্যবসা বাবদ ব্যবসার মূলধন ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেখান। তবে দুদক তদন্ত করে দেখেন, কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স, সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বা অন্য কোন রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেনি। ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ। এসআই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করতে লাগামগহীন হয়ে পড়েন প্রদীপ। তার সম্পদ দৃশ্যমান হতে তাকে ২০০২ সালের পর থেকে। প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকির নামে। যার বিশ্বাসযোগ্য কোন উৎস নেই বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদক পিপি সানোয়ার আহমেদ লাভলু জানান, টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে দুদকের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর আদালতের কাছে একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। একপর্যায়ে আদালত তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখায়। সানোয়ার আহমেদ লাভলু আরও জানান, শুনানির সময় আসামি প্রদীপের পক্ষের আইনজীবীরা দুদকের এ মামলা থেকে প্রদীপকে জামিন দিতে আদালতের কাছে একটি আবেদন করেন। আদালত এ বিষয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।