ইউএনও’র ওপর হামলায় রবিউলকে ফাঁসানো হচ্ছে

উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছে

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর মামলায় রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার এবং তার স্বীকারোক্তি জোরপূর্বক বলে পরিবারের দাবি। তারা ঘটনাটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করে বলেন, ম্যাডামের (ইউএনও ওয়াহিদা খানম) কাছে রবিউলকে হাজির করা হোক, তিনিই বলতে পারবেন রবিউল ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা। প্রতিবেশীদেরও দাবি নির্দোষ রবিউলকে ফাঁসানো হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মন্তব্য রবিউল ষড়যন্ত্রের শিকার। গতকাল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামে রবিউল ইসলামের (৩০) বাড়িতে গিয়ে জানা গেল মৃত খতিবউদ্দিনের ৭ ছেলে, ১ মেয়েসহ ৮ সন্তানের মধ্যে রবিউল ইসলাম সবার ছোট। খতিবউদ্দিন গ্রামের মসজিদের ইমামতি করতেন। গত ২ বছর আগে স্ত্রী ও ৮ সন্তানকে রেখে মারা যান। দুই ভাই আমিনুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম ২০০৮ সালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পান। চাকরি পাবার পর রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন জেলা প্রশাসকের বাংলায় মালি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর সে ঘোড়াঘাট ইউএনও’র সরকারি বাসভবনের মালি পদে বদলি হন। গত জানুয়ারি মাসে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভ্যানিটি ব্যাগ হতে অর্থ চুরির অভিযোগে রবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় তাকে ন্যস্ত করা হয়। রবিউল ইসলাম নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন। অন্য ভাই আমিনুল ইসলাম বর্তমানে দিনাজপুর সার্কিট হাউসে কর্মরত। গ্রামে ৭ ভাই একই বাড়িতে বসবাস করেন।

প্রতিবেশী মাসুদ রানা জানিয়েছেন, ২ সেপ্টেম্বর রবিউল ইসলামকে তিনি অফিস শেষে বিকেলে গ্রামে দেখেছেন। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টায় তার (মাসুদ রানা) জমিতে কাজ করেছে। সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তাকে ইউএনওকে হত্যার চেষ্টার ঘটনার সঙ্গে জড়িত করার ষড়যন্ত্র চলছে। এছাড়াও প্রতিবেশী রশিদুল, রওশন আরা একই কথা বলেছেন। তারা বলেন, রবিউলের পরিবারের সদস্যরা খুবই নিরীহ। এলাকার সব মানুষই তাদের ভালোবাসে এবং ভালো মানুষ হিসেবেই জানেন। তারা কোন ঝুট-ঝামেলার সঙ্গে জড়িত নয়। রবিউল এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন কথা গ্রামের কেউ বিশ্বাস করেন না।

রবিউল ইসলামের চাচা ওয়াজিদ উদ্দিন বলেন, জানুয়ারি মাসে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ব্যাগ হতে ৫০ হাজার টাকা চুরি যায়। এতে সিসিডিভি’র ক্যামেরা দেখে রবিউলকে চোর শনাক্ত করা হয়। সে সময় রবিউলকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে পরিবার হতে ৫০ হাজার টাকা ইউএনও ম্যাডামকে দেয়া হয়েছে। এরপর হতে রবিউল ইসলাম জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় কর্মরত আছে এবং নিয়মিত সরকারি বেতন পাচ্ছেন।

তিনি জানান, ৯ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ গভীর রাতে রবিউল ইসলামকে বাড়ি হতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। দরজার কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে রবিউল নিজেই দরজা খুলে দেয়। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে ডিবি পুলিশ রবিউলের স্ত্রী শাবনাজ ও ভাই মহসীনকে আটক করে নিয়ে যায়। সারারাত আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরের দিকে তাদের ছেড়ে দেয়। চাচা ওয়াজিউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ডিবি পুলিশ তাদের ওপর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করে এবং রবিউল ইউএনওকে হত্যা চেষ্টা করেছে এমন স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। মহসীন ও রবিউলের স্ত্রী শাবনাজকে বলা হয়েছে, তোমরা স্বীকার কর রবিউল ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, তবে রবিউলের শাস্তি কম হবে।

রবিউলের মা রহিমা বেগম বলেন, তার নির্দোষ ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে ডিবি পুলিশ। তিনি দাবি করে বলেন, ম্যাডামের (ইউএনও ওয়াহিদা খানম) কাছে আমার ছেলে রবিউলকে হাজির করা হোক। তিনি (ইউএনও) যদি বলেন রবিউলই তার ওপর হামলা করেছে, তা হলে আমার এবং আমার পরিবারের কিছু বলার থাকবে না।

বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, এখানে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র আছে। প্রায় ৩৬ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদে তার দায়িত্ব পালনে রবিউলের পরিবারের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও তিনি পাননি। তিনি এ দুঃখজনক ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেন।

পরিবারসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ বিষয়ে মুঠো ফোনে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চাইলে ওসি ডিবি ইমাম জাফর তিনি বলেন, রবিউলের পরিবারের লোকজন মৌখিকভাবে এসব কথা বলতেই পারে। সে যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং ঘটনার দিন সেখানে সে ছিল তার সাক্ষ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।

এদিকে, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে হত্যা চেষ্টার সঙ্গে ইতিপূর্বে আটক আসাদুল ইসলাম জড়িত নয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘোডাঘাট উপজেলা পরিষদের সাময়িক বরখাস্ত মালি রবিউল ইসলাম। রবিউল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত হাতুড়িসহ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলামের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতেই তাকে সাথে নিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদে অভিযান চালিয়ে পরিষদের পুকুর থেকে হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। ডিআইজি জােিয়ছেন, রবিউলকে রিমান্ডে নেয়ার পর এই ঘটনার সাথে আর কারা জড়িত আছে কিনা কী কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিষয়গুলো তদšত্ম করা হবে। তবে এর আগে আটক আসাদুল ইসলাম এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি জানান।

প্রেস ব্রিফিং শেষে ১২ সেপ্টম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আটক রবিউল ইসলাম এবং এর আগে ৭ দিনের রিমান্ড নেয়া অন্যতম আসামি আসাদুল ইসলামকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমাম জাফর রবিউল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ডের কোন আবেদন না থাকায় আসাদুল ইসলাম, নবিরুল ও সান্টু কুমার রায়কে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

ঘটনার প্রথম দিকে, ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হত্যাচেষ্টা ঘটনায় প্রথমে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় যুবলীগ আহ্বায়ক জাহঙ্গীর, সদস্য আসাদুল ইসলাম (ঘটনার পর বহিষ্কৃত), রং মিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার রায়। রংপুর র‌্যাব-১৩ কার্যালয়ে ৪ সেপ্টেম্বর র‌্যাব কর্মকর্তারা প্রেস ব্রিফিং-এ জানিয়েছিলেন, আসাদুল ইসলাম র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে সে নিছক চুরি করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

পরিবারের দাবি

ইউএনও’র ওপর হামলায় রবিউলকে ফাঁসানো হচ্ছে

উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছে

চিত্ত ঘোষ, দিনাজপুর

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর মামলায় রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার এবং তার স্বীকারোক্তি জোরপূর্বক বলে পরিবারের দাবি। তারা ঘটনাটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করে বলেন, ম্যাডামের (ইউএনও ওয়াহিদা খানম) কাছে রবিউলকে হাজির করা হোক, তিনিই বলতে পারবেন রবিউল ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা। প্রতিবেশীদেরও দাবি নির্দোষ রবিউলকে ফাঁসানো হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মন্তব্য রবিউল ষড়যন্ত্রের শিকার। গতকাল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামে রবিউল ইসলামের (৩০) বাড়িতে গিয়ে জানা গেল মৃত খতিবউদ্দিনের ৭ ছেলে, ১ মেয়েসহ ৮ সন্তানের মধ্যে রবিউল ইসলাম সবার ছোট। খতিবউদ্দিন গ্রামের মসজিদের ইমামতি করতেন। গত ২ বছর আগে স্ত্রী ও ৮ সন্তানকে রেখে মারা যান। দুই ভাই আমিনুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম ২০০৮ সালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পান। চাকরি পাবার পর রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন জেলা প্রশাসকের বাংলায় মালি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর সে ঘোড়াঘাট ইউএনও’র সরকারি বাসভবনের মালি পদে বদলি হন। গত জানুয়ারি মাসে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভ্যানিটি ব্যাগ হতে অর্থ চুরির অভিযোগে রবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখায় তাকে ন্যস্ত করা হয়। রবিউল ইসলাম নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন। অন্য ভাই আমিনুল ইসলাম বর্তমানে দিনাজপুর সার্কিট হাউসে কর্মরত। গ্রামে ৭ ভাই একই বাড়িতে বসবাস করেন।

প্রতিবেশী মাসুদ রানা জানিয়েছেন, ২ সেপ্টেম্বর রবিউল ইসলামকে তিনি অফিস শেষে বিকেলে গ্রামে দেখেছেন। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টায় তার (মাসুদ রানা) জমিতে কাজ করেছে। সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তাকে ইউএনওকে হত্যার চেষ্টার ঘটনার সঙ্গে জড়িত করার ষড়যন্ত্র চলছে। এছাড়াও প্রতিবেশী রশিদুল, রওশন আরা একই কথা বলেছেন। তারা বলেন, রবিউলের পরিবারের সদস্যরা খুবই নিরীহ। এলাকার সব মানুষই তাদের ভালোবাসে এবং ভালো মানুষ হিসেবেই জানেন। তারা কোন ঝুট-ঝামেলার সঙ্গে জড়িত নয়। রবিউল এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন কথা গ্রামের কেউ বিশ্বাস করেন না।

রবিউল ইসলামের চাচা ওয়াজিদ উদ্দিন বলেন, জানুয়ারি মাসে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ব্যাগ হতে ৫০ হাজার টাকা চুরি যায়। এতে সিসিডিভি’র ক্যামেরা দেখে রবিউলকে চোর শনাক্ত করা হয়। সে সময় রবিউলকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে পরিবার হতে ৫০ হাজার টাকা ইউএনও ম্যাডামকে দেয়া হয়েছে। এরপর হতে রবিউল ইসলাম জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখায় কর্মরত আছে এবং নিয়মিত সরকারি বেতন পাচ্ছেন।

তিনি জানান, ৯ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ গভীর রাতে রবিউল ইসলামকে বাড়ি হতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। দরজার কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে রবিউল নিজেই দরজা খুলে দেয়। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে ডিবি পুলিশ রবিউলের স্ত্রী শাবনাজ ও ভাই মহসীনকে আটক করে নিয়ে যায়। সারারাত আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরের দিকে তাদের ছেড়ে দেয়। চাচা ওয়াজিউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ডিবি পুলিশ তাদের ওপর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করে এবং রবিউল ইউএনওকে হত্যা চেষ্টা করেছে এমন স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। মহসীন ও রবিউলের স্ত্রী শাবনাজকে বলা হয়েছে, তোমরা স্বীকার কর রবিউল ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, তবে রবিউলের শাস্তি কম হবে।

রবিউলের মা রহিমা বেগম বলেন, তার নির্দোষ ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে ডিবি পুলিশ। তিনি দাবি করে বলেন, ম্যাডামের (ইউএনও ওয়াহিদা খানম) কাছে আমার ছেলে রবিউলকে হাজির করা হোক। তিনি (ইউএনও) যদি বলেন রবিউলই তার ওপর হামলা করেছে, তা হলে আমার এবং আমার পরিবারের কিছু বলার থাকবে না।

বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, এখানে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র আছে। প্রায় ৩৬ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদে তার দায়িত্ব পালনে রবিউলের পরিবারের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও তিনি পাননি। তিনি এ দুঃখজনক ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেন।

পরিবারসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ বিষয়ে মুঠো ফোনে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চাইলে ওসি ডিবি ইমাম জাফর তিনি বলেন, রবিউলের পরিবারের লোকজন মৌখিকভাবে এসব কথা বলতেই পারে। সে যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং ঘটনার দিন সেখানে সে ছিল তার সাক্ষ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।

এদিকে, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে হত্যা চেষ্টার সঙ্গে ইতিপূর্বে আটক আসাদুল ইসলাম জড়িত নয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘোডাঘাট উপজেলা পরিষদের সাময়িক বরখাস্ত মালি রবিউল ইসলাম। রবিউল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত হাতুড়িসহ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলামের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতেই তাকে সাথে নিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদে অভিযান চালিয়ে পরিষদের পুকুর থেকে হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। ডিআইজি জােিয়ছেন, রবিউলকে রিমান্ডে নেয়ার পর এই ঘটনার সাথে আর কারা জড়িত আছে কিনা কী কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিষয়গুলো তদšত্ম করা হবে। তবে এর আগে আটক আসাদুল ইসলাম এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি জানান।

প্রেস ব্রিফিং শেষে ১২ সেপ্টম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আটক রবিউল ইসলাম এবং এর আগে ৭ দিনের রিমান্ড নেয়া অন্যতম আসামি আসাদুল ইসলামকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমাম জাফর রবিউল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ডের কোন আবেদন না থাকায় আসাদুল ইসলাম, নবিরুল ও সান্টু কুমার রায়কে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

ঘটনার প্রথম দিকে, ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হত্যাচেষ্টা ঘটনায় প্রথমে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় যুবলীগ আহ্বায়ক জাহঙ্গীর, সদস্য আসাদুল ইসলাম (ঘটনার পর বহিষ্কৃত), রং মিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার রায়। রংপুর র‌্যাব-১৩ কার্যালয়ে ৪ সেপ্টেম্বর র‌্যাব কর্মকর্তারা প্রেস ব্রিফিং-এ জানিয়েছিলেন, আসাদুল ইসলাম র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে সে নিছক চুরি করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।