করোনাভাইরাস ইস্যুতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনকে আবারও দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য তিনি চীনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানান। কিন্তু চৌকসভাবে অভিযোগ খ-ন করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, কোনো দেশের সঙ্গে একটি শীতল যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা তার দেশের নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এমন এক সময়ে করলেন যখন তার সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ৩৯ দিন। এ সময়ে এভাবে চীনকে ঘায়েল করার মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বিবিসি

তবে করোনা সংক্রমণের বিষয়টিকে তিনি গুরুত্বই দেননি এমন কথা নিজেই এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন কার্ড নির্বাচনে কতটা কাজে দেবে তা বোঝা মুশকিল।

বিশ্বের বড় দুই শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তেজনা বা সংঘাতময় অবস্থা বিদ্যমান অনেকদিন ধরে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, হংকং ইস্যু, সিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম সংখ্যালঘু উইঘুরদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের গোয়েন্দাবৃত্তিসহ বিভিন্ন ইস্যু। এত ইস্যুতে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কনস্যুলেট। বাণিজ্যে শুল্ক আরোপ, বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। ফলে বিশেষ করে এ বছরটিতে সেই উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে পৌঁছে যায়।

তিনি বলেন, একটি দেশকে অবশ্যই আমাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ওই দেশটি বিশ্বে প্লেগ বা মহামারী ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা হলো চীন।

ট্রাম্প বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথমদিককার সময়ে অভ্যন্তরীণভাবে সব রকম চলাচল লকডাউন করে দেয় চীন। অন্যদিকে চীন ত্যাগ করার ফ্লাইট সচল ছিল। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে সংক্রমিত করা হয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে আমি যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম, তার নিন্দা করেছে চীন। এমনকি তারা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো বাতিল করে জনগণকে দেশের ভেতর বন্দী করে রেখেছিল।

জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই শি জিনপিং বক্তব্য রাখেন। তিনি সবাইকে সভ্যতার সংঘাতের (ক্ল্যাস ওব সিভিলাইজেশনস) ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেন। বলেন, আমরা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব মতপার্থক্য ও বিরোধ নিষ্পত্তি অব্যাহত রাখব। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের ভেতরে অথবা শূন্য ফল আসে এমন কোনো খেলায় নিজেদের আবদ্ধ রাখব না। তিনি এদিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাও করেন। বলেন, বৈশ্বিক বিষয়ে আধিপত্য বিস্তারে, অন্যদের গন্তব্য নিয়ন্ত্রণে অথবা সব কিছুতে তাদের সুবিধা বজায় রাখার একক অধিকার কোনো দেশেরই নেই।

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ সর্বোচ্চে পৌঁছাবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হবে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে চীন।

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৫ মহররম ১৪৪২, ০৬ আশ্বিন ১৪২৭

করোনাভাইরাস ইস্যুতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা

image

জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিক সাধারণ ভার্চুয়াল অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিংপিং -বিবিসি

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনকে আবারও দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য তিনি চীনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানান। কিন্তু চৌকসভাবে অভিযোগ খ-ন করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, কোনো দেশের সঙ্গে একটি শীতল যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা তার দেশের নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এমন এক সময়ে করলেন যখন তার সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ৩৯ দিন। এ সময়ে এভাবে চীনকে ঘায়েল করার মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বিবিসি

তবে করোনা সংক্রমণের বিষয়টিকে তিনি গুরুত্বই দেননি এমন কথা নিজেই এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন কার্ড নির্বাচনে কতটা কাজে দেবে তা বোঝা মুশকিল।

বিশ্বের বড় দুই শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তেজনা বা সংঘাতময় অবস্থা বিদ্যমান অনেকদিন ধরে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, হংকং ইস্যু, সিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম সংখ্যালঘু উইঘুরদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের গোয়েন্দাবৃত্তিসহ বিভিন্ন ইস্যু। এত ইস্যুতে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কনস্যুলেট। বাণিজ্যে শুল্ক আরোপ, বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। ফলে বিশেষ করে এ বছরটিতে সেই উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে পৌঁছে যায়।

তিনি বলেন, একটি দেশকে অবশ্যই আমাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ওই দেশটি বিশ্বে প্লেগ বা মহামারী ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা হলো চীন।

ট্রাম্প বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথমদিককার সময়ে অভ্যন্তরীণভাবে সব রকম চলাচল লকডাউন করে দেয় চীন। অন্যদিকে চীন ত্যাগ করার ফ্লাইট সচল ছিল। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে সংক্রমিত করা হয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে আমি যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম, তার নিন্দা করেছে চীন। এমনকি তারা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো বাতিল করে জনগণকে দেশের ভেতর বন্দী করে রেখেছিল।

জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই শি জিনপিং বক্তব্য রাখেন। তিনি সবাইকে সভ্যতার সংঘাতের (ক্ল্যাস ওব সিভিলাইজেশনস) ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেন। বলেন, আমরা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব মতপার্থক্য ও বিরোধ নিষ্পত্তি অব্যাহত রাখব। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের ভেতরে অথবা শূন্য ফল আসে এমন কোনো খেলায় নিজেদের আবদ্ধ রাখব না। তিনি এদিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাও করেন। বলেন, বৈশ্বিক বিষয়ে আধিপত্য বিস্তারে, অন্যদের গন্তব্য নিয়ন্ত্রণে অথবা সব কিছুতে তাদের সুবিধা বজায় রাখার একক অধিকার কোনো দেশেরই নেই।

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ সর্বোচ্চে পৌঁছাবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হবে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে চীন।