বরখাস্ত ওসি প্রদীপের ৭ ইন্ধনদাতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা

কক্সবাজারের টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অপরাধ কর্মের ইন্ধনদাতা চিহ্নিত করে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ওসি মাসুম খান মামলাটি রেকর্ড করেন। মামলায় অপহরণ, ডাকাতি, জোরপূর্বক স্ট্যাম্প আদায়সহ বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।

২৪ সেপ্টেম্বর কারামুক্ত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের ছোট বোন ফাতিমা খানম মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- টেকনাফের হ্নীলা ফুলের ডেইলের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও থানার দালালখ্যাত মৃত তজর মুল্লুকের ছেলে আবুল কালাম প্রকাশ আলম, হ্নীলা নয়া বাজার পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মফিজ আহমদ ইকবাল প্রকাশ গুটি মফিজ, ফুলের ডেইলের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে জহিরুল ইসলাম, একই এলাকার মৃত আবুল বশরের ছেলে দলিলুর রহমান, পানখালীর মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে সরওয়ার কামাল, ফুলের ডেইলের শরাফত আহমদের ছেলে নুরুল আবছার, মৃত আবুল বশরের ছেলে র?ফিকুল ইসলাম।

মামলায় বাদী ফাতেমা খানম অভিযোগ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মাদকের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি প্রদীপদের সঙ্গে আঁতাত করে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে তার বড় ভাই সাংবাদিক ফরিদুলকে অস্ত্রের মুখে তুলে এনে প্রদীপের সঙ্গে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এরপর সাজানো মামলা দিয়ে সাংবাদিক ফরিদুলকে কারাগারে পাঠানোর পর তারা পরস্পর যোগসাজশে বাদীনির কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার বসতবাড়িতে ২৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আকস্মিকভাবে বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা বাদীনির অপর এক বোনকে লোহার রড দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে ক্ষান্ত হননি, মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে মাটিতে ফেলে রাখে। আসামিরা ঘটনার রাতে বাদীনি এবং তার ছোট বোনের পাঁচ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৭৫ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল সেট ও বাড়ির জরুরি কাগজপত্র লুট করে। এরপর আসামিরা বাদীনিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ৩০০ টাকার একটি ননজুডিশিয়াল খালি স্ট্যাম্পের শিরোভাগে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে লুণ্ঠিত মালামালসহ পালিয়ে যায়।

বাদী বলছেন, আসামিরা টেকনাফ থানার সাবেক ওসির দালাল, মাদক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাদীনি ও তার পরিবারকে নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি বড় ভাই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা কারাগারে থাকা এবং প্রশাসনিকভাবে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় মামলা দায়ের বিলম্ব হয়।

কক্সবাজার থানা পুলিশ জানিয়েছে, সংঘঠিত ঘটনায় বিলম্ব হলেও মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র অভিযোগ করেছেন, এসব আসামিরা বর্তমানে কক্সবাজার ও টেকনাফে নিশ্চিন্তে থানায় দালালি, মাদক ব্যবসাসহ হরেক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ থানার বতর্মান পুলিশ আদৌ তাদের ধরবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজ। তারা বলেন, এদের আটক করলেই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা ও তার পরিবারের উপর কেন বর্বর নির্যাতন এবং এতগুলো মিথ্যা মামলা হয়েছে তার আসল রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি প্রদীপের অনেক কুকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসবে।

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৭ মহররম ১৪৪২, ০৮ আশ্বিন ১৪২৭

বরখাস্ত ওসি প্রদীপের ৭ ইন্ধনদাতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

কক্সবাজারের টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অপরাধ কর্মের ইন্ধনদাতা চিহ্নিত করে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ওসি মাসুম খান মামলাটি রেকর্ড করেন। মামলায় অপহরণ, ডাকাতি, জোরপূর্বক স্ট্যাম্প আদায়সহ বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।

২৪ সেপ্টেম্বর কারামুক্ত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের ছোট বোন ফাতিমা খানম মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- টেকনাফের হ্নীলা ফুলের ডেইলের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও থানার দালালখ্যাত মৃত তজর মুল্লুকের ছেলে আবুল কালাম প্রকাশ আলম, হ্নীলা নয়া বাজার পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মফিজ আহমদ ইকবাল প্রকাশ গুটি মফিজ, ফুলের ডেইলের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে জহিরুল ইসলাম, একই এলাকার মৃত আবুল বশরের ছেলে দলিলুর রহমান, পানখালীর মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে সরওয়ার কামাল, ফুলের ডেইলের শরাফত আহমদের ছেলে নুরুল আবছার, মৃত আবুল বশরের ছেলে র?ফিকুল ইসলাম।

মামলায় বাদী ফাতেমা খানম অভিযোগ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মাদকের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি প্রদীপদের সঙ্গে আঁতাত করে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে তার বড় ভাই সাংবাদিক ফরিদুলকে অস্ত্রের মুখে তুলে এনে প্রদীপের সঙ্গে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এরপর সাজানো মামলা দিয়ে সাংবাদিক ফরিদুলকে কারাগারে পাঠানোর পর তারা পরস্পর যোগসাজশে বাদীনির কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার বসতবাড়িতে ২৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আকস্মিকভাবে বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা বাদীনির অপর এক বোনকে লোহার রড দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে ক্ষান্ত হননি, মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে মাটিতে ফেলে রাখে। আসামিরা ঘটনার রাতে বাদীনি এবং তার ছোট বোনের পাঁচ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৭৫ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল সেট ও বাড়ির জরুরি কাগজপত্র লুট করে। এরপর আসামিরা বাদীনিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ৩০০ টাকার একটি ননজুডিশিয়াল খালি স্ট্যাম্পের শিরোভাগে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে লুণ্ঠিত মালামালসহ পালিয়ে যায়।

বাদী বলছেন, আসামিরা টেকনাফ থানার সাবেক ওসির দালাল, মাদক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাদীনি ও তার পরিবারকে নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি বড় ভাই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা কারাগারে থাকা এবং প্রশাসনিকভাবে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় মামলা দায়ের বিলম্ব হয়।

কক্সবাজার থানা পুলিশ জানিয়েছে, সংঘঠিত ঘটনায় বিলম্ব হলেও মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র অভিযোগ করেছেন, এসব আসামিরা বর্তমানে কক্সবাজার ও টেকনাফে নিশ্চিন্তে থানায় দালালি, মাদক ব্যবসাসহ হরেক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ থানার বতর্মান পুলিশ আদৌ তাদের ধরবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজ। তারা বলেন, এদের আটক করলেই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা ও তার পরিবারের উপর কেন বর্বর নির্যাতন এবং এতগুলো মিথ্যা মামলা হয়েছে তার আসল রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি প্রদীপের অনেক কুকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসবে।