ডিসিসিআই’র ওয়েবিনার

ব্যবসা পরিচালনায় মানসম্মত আর্থিক প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ

ব্যবসা পরিচালনায় মানসম্মত আর্থিক প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই আর্থিক প্রতিবেদন উপর ভিত্তি করে ব্যবসার পরিকল্পনা করা হয়। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট ২০১৫ : ব্যবসায়িক কর্মকা-ের প্রভাব’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের মহা হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মোসলেম চৌধুরী প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, মানসম্মত অডিট রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ চিহ্নিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখনও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। এছাড়াও দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান সারাবিশ্বের অন্যান্য দেশসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ অবস্থা উন্নয়নে লিস্টেট ও নন-লিস্টেট কোম্পানিসমূহের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিসমূহকে ‘ইন্টারন্যাশনাল একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড’-এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করতে হয়। এই ক্ষেত্রেও ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের জন্য ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ের গাইডলাইন আরও সহজীকরন এবং ব্যবহার বান্ধব করা প্রয়োজন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মোসলেম চৌধুরী বলেন, আমাদের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়াদির পাশাপাশি জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও বিবেচনা করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কাউন্সিলের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ ও দৃশ্যমান করা দরকার। ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইআরএফএস)’ অনুসরণের ক্ষেত্রে আমাদের আবশ্যই নিজেদের সক্ষমাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের এসএমই খাত এখনইআইআরএফএস-এর গাইড লাইন অনুসরণের জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি। তাই এ বিষয়টি নিয়ে সবারই যতœবান হতে হবে। ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সিল এবং এ খাতে প্রফেশনালদের মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়নোর প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে আগামী ১০ বছরের মধ্যে আইওটি এবং মেশিন লার্নিং ব্যবস্থা আরও সহজলভ্য হলে, আমাদের প্রথাগত অডিট রিপোর্টের ব্যবস্থা কে যুগোপোযোগী করার জন্য আইসিএবি ও আইসিএমএবি-এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পানা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও তিনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও গর্ভানেন্স বাড়ানোর আহ্বান জানান।

সম্মানিত অতিথি’র বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম বলেন, ক্যামেল রেটিংয়ের মতো অডিট কোম্পানিসমূহের জন্য এফআরসি কর্তৃক রেটিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারে। এর মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, অবস্থান এবং সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা ধারণা পেতে পারি। এছাড়াও তিনি অডিট রিপোর্টের বিশ^াসযোগ্যতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের ‘ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট মনিটরিং ডিভিশন’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ৩টি বিষয় যেমন : আর্থিক তথ্য বিবরণী, অডিট প্রসেস এবং স্বচ্ছতা নিরূপণ ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্মত ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট একটি ব্যাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ^াস বৃদ্ধি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তিনি অডিট রিপোর্ট প্রস্তুতকরণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের স্ট্যান্ডার্ড সেটিং ডিভিশনের নির্বাহী পরিচালক এম আনোয়ারুল করিম বলেন, ফাইনান্সিয়াল কাউন্সিলের পক্ষ হতে অডিট রিপোর্টের স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিতকরণের জন্য বিভিন্ন ধাপে এ পদ্ধতির সহজীকরণ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালা আয়োজনসহ বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাভেদ সিদ্দিকী বলেন, মানসম্মত অডিটি রিপোর্ট নিশ্চিতকল্পে বিদ্যমান আইনে ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে বেশ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যা বাস্তবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ অডিট ফি সারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূকভাবে বেশ কম, যা বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি হারে কর্মশালার আয়োজন এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এএম মাসুম বলেন, কাউন্সিলের কার্যক্রম আরও দৃশ্যমান করার জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি অডিটদের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিতদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান আইনের ৪৭ ধারার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আত্মবিশাস ফিরিয়ে আনতে তিনি আইনের ৭১ ধারা ব্যবসারের জন্য কাউন্সিলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

আইসিএবি-এর সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রেগুলেটরদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাউন্সিরকে কাজ করতে হবে। সাধারণত অডিটদের দ্বারা তৈরি কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই সেইসব প্রতিষ্ঠানের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট তৈরি করা হয় এবং এক্ষেত্রে কোন ধরনের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে অডিটদের পাশাপাশি সেই প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিতদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড’-এর নীতিমালাসমূহ খুব বেশি অনুসরণ করা হয় না। তিনি অডিটরদের নিবন্ধন একটি সংস্থার আওতায় নিয়ে আসারও প্রস্তাব করেন।

আইসিএমএবি-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আকন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং আইনের আওতায় কস্ট অডিটকে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবি জানান। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ, কাউন্সিলের পর্যবেক্ষণের কার্যক্রম আরও বাড়ানো ও শক্তিশালীকরণের আহ্বান জানান। তিনি বিদ্যমান আইনে বেসরকারি খাতে এসএমইদের থ্রেসহোল্ড-এর সীমা পুনঃনির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ প্রদান করেন।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা আবদুল কাদের জোয়ারদার, এফসিএ, ওমেরা ফুয়েলস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আকতার হোসেন, এফসিএ, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকালটি সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ আহকাম প্রমুখ মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচকরা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মানসিকতা পরিবর্তন, অডিট ফি বাড়ানো এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহে দক্ষ অডিট কর্মকর্তা নিয়োগ দানের উপর জোরারোপ করেন।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৮ মহররম ১৪৪২, ০৯ আশ্বিন ১৪২৭

ডিসিসিআই’র ওয়েবিনার

ব্যবসা পরিচালনায় মানসম্মত আর্থিক প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

ব্যবসা পরিচালনায় মানসম্মত আর্থিক প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই আর্থিক প্রতিবেদন উপর ভিত্তি করে ব্যবসার পরিকল্পনা করা হয়। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট ২০১৫ : ব্যবসায়িক কর্মকা-ের প্রভাব’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের মহা হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মোসলেম চৌধুরী প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, মানসম্মত অডিট রিপোর্ট প্রস্তুতকরণ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ চিহ্নিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখনও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। এছাড়াও দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান সারাবিশ্বের অন্যান্য দেশসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ অবস্থা উন্নয়নে লিস্টেট ও নন-লিস্টেট কোম্পানিসমূহের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিসমূহকে ‘ইন্টারন্যাশনাল একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড’-এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করতে হয়। এই ক্ষেত্রেও ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের জন্য ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ের গাইডলাইন আরও সহজীকরন এবং ব্যবহার বান্ধব করা প্রয়োজন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মোসলেম চৌধুরী বলেন, আমাদের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়াদির পাশাপাশি জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও বিবেচনা করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ কাউন্সিলের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ ও দৃশ্যমান করা দরকার। ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইআরএফএস)’ অনুসরণের ক্ষেত্রে আমাদের আবশ্যই নিজেদের সক্ষমাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের এসএমই খাত এখনইআইআরএফএস-এর গাইড লাইন অনুসরণের জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি। তাই এ বিষয়টি নিয়ে সবারই যতœবান হতে হবে। ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সিল এবং এ খাতে প্রফেশনালদের মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়নোর প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে আগামী ১০ বছরের মধ্যে আইওটি এবং মেশিন লার্নিং ব্যবস্থা আরও সহজলভ্য হলে, আমাদের প্রথাগত অডিট রিপোর্টের ব্যবস্থা কে যুগোপোযোগী করার জন্য আইসিএবি ও আইসিএমএবি-এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পানা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও তিনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও গর্ভানেন্স বাড়ানোর আহ্বান জানান।

সম্মানিত অতিথি’র বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম বলেন, ক্যামেল রেটিংয়ের মতো অডিট কোম্পানিসমূহের জন্য এফআরসি কর্তৃক রেটিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারে। এর মাধ্যমে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, অবস্থান এবং সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা ধারণা পেতে পারি। এছাড়াও তিনি অডিট রিপোর্টের বিশ^াসযোগ্যতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের ‘ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট মনিটরিং ডিভিশন’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ৩টি বিষয় যেমন : আর্থিক তথ্য বিবরণী, অডিট প্রসেস এবং স্বচ্ছতা নিরূপণ ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্মত ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট একটি ব্যাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ^াস বৃদ্ধি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তিনি অডিট রিপোর্ট প্রস্তুতকরণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের স্ট্যান্ডার্ড সেটিং ডিভিশনের নির্বাহী পরিচালক এম আনোয়ারুল করিম বলেন, ফাইনান্সিয়াল কাউন্সিলের পক্ষ হতে অডিট রিপোর্টের স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিতকরণের জন্য বিভিন্ন ধাপে এ পদ্ধতির সহজীকরণ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালা আয়োজনসহ বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাভেদ সিদ্দিকী বলেন, মানসম্মত অডিটি রিপোর্ট নিশ্চিতকল্পে বিদ্যমান আইনে ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে বেশ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যা বাস্তবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ অডিট ফি সারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূকভাবে বেশ কম, যা বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি হারে কর্মশালার আয়োজন এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এএম মাসুম বলেন, কাউন্সিলের কার্যক্রম আরও দৃশ্যমান করার জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি অডিটদের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিতদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান আইনের ৪৭ ধারার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আত্মবিশাস ফিরিয়ে আনতে তিনি আইনের ৭১ ধারা ব্যবসারের জন্য কাউন্সিলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

আইসিএবি-এর সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রেগুলেটরদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাউন্সিরকে কাজ করতে হবে। সাধারণত অডিটদের দ্বারা তৈরি কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই সেইসব প্রতিষ্ঠানের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট তৈরি করা হয় এবং এক্ষেত্রে কোন ধরনের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে অডিটদের পাশাপাশি সেই প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিতদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড’-এর নীতিমালাসমূহ খুব বেশি অনুসরণ করা হয় না। তিনি অডিটরদের নিবন্ধন একটি সংস্থার আওতায় নিয়ে আসারও প্রস্তাব করেন।

আইসিএমএবি-এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আকন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং আইনের আওতায় কস্ট অডিটকে অন্তর্ভুক্তকরণের দাবি জানান। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ, কাউন্সিলের পর্যবেক্ষণের কার্যক্রম আরও বাড়ানো ও শক্তিশালীকরণের আহ্বান জানান। তিনি বিদ্যমান আইনে বেসরকারি খাতে এসএমইদের থ্রেসহোল্ড-এর সীমা পুনঃনির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ প্রদান করেন।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা আবদুল কাদের জোয়ারদার, এফসিএ, ওমেরা ফুয়েলস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আকতার হোসেন, এফসিএ, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকালটি সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ আহকাম প্রমুখ মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচকরা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মানসিকতা পরিবর্তন, অডিট ফি বাড়ানো এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহে দক্ষ অডিট কর্মকর্তা নিয়োগ দানের উপর জোরারোপ করেন।