রংপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ বর্ষণ

১১ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি

রংপুর ও আশপাশের এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিতে রংপুরের অন্তত ৬০টি মহল্লা পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। নগরীর বেশির ভাগ রাস্তা ঘাট তালিয়ে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াত ও চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। গ্যাসের চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্না বন্ধ। পানিবন্দী নগরবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ১১ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ৬০ বছরের বৃদ্ধরাও বলতে পারেননি তারা এর আগে কখনই নগরীতে এমন একটানা মুষলধারে বৃষ্টি হতে দেখেছেন।

সরেজমিনে রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর প্রধান সড়কসহ বেশিরভাগ সড়ক ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর বাবু খাঁ ও কামারপাড়া, জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সীপাড়া, গণেশপুর, বাবুখা, কামারপাড়া, বাস টার্মিনাল, নগরীর শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, কামাল কাছনা মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মুলাটোল মেডিকেল পাকার মাথা জলকর নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অন্তত ৫০টি মহল্লার প্রধান সড়কসহ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দী হাজার হাজার পরিবারের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া মহল্লার প্রতিটি বাড়িতে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। গভীর রাতে ঘরে ঘরে পানি প্রবেশ করায় বেশির ভাগ বাড়ির ঘরের মধ্যে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য সামগ্রী পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার অধিবাসী সেলিম ও আসমা বেগম জানালেন, রাত ৩টার দিকে ঘুম থেকে জেগে বাথরুমে যাবার জন্য বিছানা থেকে নেমে দেখেন ঘরের ভেতরে পানি। এরপর পানি বাড়তে শুরু করে সকাল ৭টার মধ্যে বাড়ির উঠানসহ ঘরের মধ্যে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। বিছানাপত্র, খাট তলিয়ে যাওয়ায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে তারা। ওই এলাকার সালেক মিয়া জানালেন, বাসার ভেতরে এক কোমর পানি ঘরের মধ্যে কোমর পর্যন্ত পানি। সব আসাবাবপত্র তলিয়ে গেছে, এমনি অবস্থায় মালামাল নিয়ে অনত্র যাওয়াও সম্ভব নয় ফলে খাটের উপর দুই সন্তান নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে তাদের। এদিকে পার্শ্ববর্তী মুন্সীপাড়া মহল্লায় গিয়ে দেখা গেল একই অবস্থা এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে ৩/৪ ফুট পানি প্রবেশ করেনি। মুন্সীপাড়া অধিবাসী জোহরা বেগম ও সালমা দু’বোন জানালেন, বাড়ির ভেতরে পানি প্রবেশ করায় আসবাবপত্রসহ বেশির ভাগ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। রান্না ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি থাকায় সেখানে থাকা গ্যাসের চুলা পানিতে তলিয়ে গেছে ফলে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, আকলিমা বেগম, হকসহ অনেকে জানালো রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের বাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে তারা।

রংপুর নগরীর সড়ক যোগাযোগ বব্যবস্থা পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে। প্রতিটি সড়ক ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫ লাখ নগরবাসী কার্যত বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না তারা পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছে।

রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জরুরি কাজে ঢাকায় এসেছেন। তার নিজের বাড়িতেও পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এক লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে হতদরিদ্র লাখো পরিবার অনাহারে আছে তাদের জরুরিভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ করার জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুরের গত একশ বছরে এমন বৃষ্টি হয়নি। এর আগে সর্র্ব্বোচ্য ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল। গত শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩৩ মিলিমিটার। তিনি জানান, বৃষ্টি আরও ২ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

image

স্মরণকালের ভয়াবহ বর্ষণে ডুবে যাওয়া রংপুর মহানগর -সংবাদ

আরও খবর
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অধিকতর সহযোগিতার ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ
ভারতের নয়া হাইকমিশনার আসবেন ৫ অক্টোবর
হতাহত ৩৫ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা
বাংলাদেশের পানি প্রবাহের ৯২ শতাংশের উৎস হিমালয়
আপিল বিভাগে ৪ হাজার ৭৩টি মামলা নিষ্পত্তি
ফের নুরসহ সহযোগীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা ছাত্রলীগের
পাপিয়া দম্পতির অস্ত্র মামলার রায় ১২ অক্টোবর
বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদককে বহিষ্কারের ঘোষণা পাল্টা আল্টিমেটাম
নড়াইল জেলা বিএনপিতে হ য ব র ল অবস্থা
যশোরের ১৯৩ মিল মালিকের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে
ছয় মাস পর খুলে দেয়া হয়েছে রমনা পার্ক
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস আজ

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৯ মহররম ১৪৪২, ১০ আশ্বিন ১৪২৭

রংপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ বর্ষণ

১১ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

image

স্মরণকালের ভয়াবহ বর্ষণে ডুবে যাওয়া রংপুর মহানগর -সংবাদ

রংপুর ও আশপাশের এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিতে রংপুরের অন্তত ৬০টি মহল্লা পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। নগরীর বেশির ভাগ রাস্তা ঘাট তালিয়ে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াত ও চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। গ্যাসের চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্না বন্ধ। পানিবন্দী নগরবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ১১ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ৬০ বছরের বৃদ্ধরাও বলতে পারেননি তারা এর আগে কখনই নগরীতে এমন একটানা মুষলধারে বৃষ্টি হতে দেখেছেন।

সরেজমিনে রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর প্রধান সড়কসহ বেশিরভাগ সড়ক ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর বাবু খাঁ ও কামারপাড়া, জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সীপাড়া, গণেশপুর, বাবুখা, কামারপাড়া, বাস টার্মিনাল, নগরীর শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, কামাল কাছনা মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মুলাটোল মেডিকেল পাকার মাথা জলকর নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অন্তত ৫০টি মহল্লার প্রধান সড়কসহ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দী হাজার হাজার পরিবারের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া মহল্লার প্রতিটি বাড়িতে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। গভীর রাতে ঘরে ঘরে পানি প্রবেশ করায় বেশির ভাগ বাড়ির ঘরের মধ্যে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য সামগ্রী পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার অধিবাসী সেলিম ও আসমা বেগম জানালেন, রাত ৩টার দিকে ঘুম থেকে জেগে বাথরুমে যাবার জন্য বিছানা থেকে নেমে দেখেন ঘরের ভেতরে পানি। এরপর পানি বাড়তে শুরু করে সকাল ৭টার মধ্যে বাড়ির উঠানসহ ঘরের মধ্যে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। বিছানাপত্র, খাট তলিয়ে যাওয়ায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে তারা। ওই এলাকার সালেক মিয়া জানালেন, বাসার ভেতরে এক কোমর পানি ঘরের মধ্যে কোমর পর্যন্ত পানি। সব আসাবাবপত্র তলিয়ে গেছে, এমনি অবস্থায় মালামাল নিয়ে অনত্র যাওয়াও সম্ভব নয় ফলে খাটের উপর দুই সন্তান নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে তাদের। এদিকে পার্শ্ববর্তী মুন্সীপাড়া মহল্লায় গিয়ে দেখা গেল একই অবস্থা এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে ৩/৪ ফুট পানি প্রবেশ করেনি। মুন্সীপাড়া অধিবাসী জোহরা বেগম ও সালমা দু’বোন জানালেন, বাড়ির ভেতরে পানি প্রবেশ করায় আসবাবপত্রসহ বেশির ভাগ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। রান্না ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি থাকায় সেখানে থাকা গ্যাসের চুলা পানিতে তলিয়ে গেছে ফলে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, আকলিমা বেগম, হকসহ অনেকে জানালো রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের বাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে তারা।

রংপুর নগরীর সড়ক যোগাযোগ বব্যবস্থা পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে। প্রতিটি সড়ক ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫ লাখ নগরবাসী কার্যত বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না তারা পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছে।

রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জরুরি কাজে ঢাকায় এসেছেন। তার নিজের বাড়িতেও পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এক লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতরভাবে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে হতদরিদ্র লাখো পরিবার অনাহারে আছে তাদের জরুরিভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ করার জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুরের গত একশ বছরে এমন বৃষ্টি হয়নি। এর আগে সর্র্ব্বোচ্য ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল। গত শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩৩ মিলিমিটার। তিনি জানান, বৃষ্টি আরও ২ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।