টরন্টো লেখক উৎসবে

এই প্রথম বাঙালি লেখকরা কথা বলবেন

সুজিত কুসুম পাল

আজ ২২ অক্টোবর ২০২০। শুরু হচ্ছে ১১ দিনব্যাপী ৪১তম টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভাল অফ অথার্স (টিআইএফএ) অর্থাৎ আন্তর্জাতিক গ্রন্থকার উৎসব। কোভিড-১৯ সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০২০ টিফা (টিআইএফএ) একটি ভার্চুয়াল ইভেন্ট হিসেবে উদযাপিত হলেও, উৎসবকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে গ্রহণ করা হয়েছে অনেক নান্দনিক পরিকল্পনা। অংশ নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের আড়াই শতাধিক লেখক, চিত্রকর, সঙ্গীতবিৎ ও চিন্তক। থাকবে সঙ্গীত, মিউজিক, গ্রাফিক ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশনসহ নানান অনুষঙ্গের ফল্গুধারা।

ডাউনটাউনের ইউনিয়ন স্টেশনে ‘ফ্রন্ট লাইন্স: বেন্ট, নট ব্রোকেন’ এবং ‘ফ্রন্ট লাইন্স: আনটিল দ্য ওয়ার্ডস রান পিওর’ শীর্ষক দুটি কাব্য সংকলনের ওপর ধারণকৃত একটি বিশেষ ভিডিও ইন্সটলেশনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করবেন টরন্টো সিটির ষষ্ঠ পোয়েট লরিয়েট ‘কিং অফ মেটাফর’ খ্যাত এ. এফ. মরিজ। উৎসবের প্রথম দিনই থাকছে ক্যানাডার ‘কালচারাল কুইন’ খ্যাত মার্গারেট অ্যাটউড (জন্ম. ১৯৩৯)-এর একটি অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকার। ২০০৭ সালে কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ডোর’ প্রকাশিত হওয়ার দীর্ঘ ১৩ বছর পর, ১০ নভেম্বর ২০২০ প্রকাশিত হবে তাঁর প্রথম এবং বহুল আলোচিত কাব্যগ্রন্থ ‘ডিয়ারলি’।

‘ব্রিঙ্গিং অ্যা নিউ ওয়ার্ল্ড ইন্টু ফোকাস’ স্লোগানকে সামনে রেখেই ক্যানাডার বৃহত্তম এই লেখক সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এইবারের প্যানডেমিককালীন টিফার আয়োজক কমিটি। টরন্টোর নগর কর্তৃপক্ষের আর্থিক সহায়তায় আয়োজিত এই উৎসবের সহযোগী হিসেবে রয়েছে গভর্নমেন্ট অফ কানাডা, কানাডা কাউন্সিল ফর দ্য আর্টস, অন্টারিও আর্টস কাউন্সিল, টরন্টো আর্টস কাউন্সিল, অন্টারিও ক্রিয়েট্স, এবং হারবারফ্রন্ট সেন্টার। অফিসিয়াল গ্রন্থবিক্রেতার দায়িত্ব পেয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো বুকস্টোর।

কানাডার অগ্রগণ্য যে সাহিত্যকেরা এবার যুক্ত হবেন তারা হলেন আন্দ্রে আলেক্সিস, আনোস ইরানী, ডেভিড বার্গেন, এরিখ ওয়ালটারস, হেলেন হাম্ফ্রে, আয়ান উইলিয়ামস, মাইকেল ক্রামি, রা বয়োগোডা, শানি মাতো, স্যারন বালা প্রমুখ। মোট প্রায় দুই শ আশি জন কবি-লেখক এবার যুক্ত হবেন ভার্চুয়ালি। ইতোমধ্যেই প্রায় দুই শ ভিডিও রেকর্ড হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

বিদেশি গ্রন্থকারদের মধ্যে যাঁরা এই উৎসবে যুক্ত হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শোকোফেহ আযার (ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত), মার্ক বিলিংহ্যাম (ইংল্যান্ড), রয় জ্যাকবসেন (নরওয়ে), মিকো কাওয়াকামি (জাপান), ড্যানিয়েল কেহলম্যান (জার্মানি), আমিন মালাউফ (লেবানন থেকে এসে ফ্রান্সে বসবাসরত), ফার্নান্ডা মেলচর (মেক্সিকো), মার্টা ওরিওলস (স্পেন) এবং গনক্যালো এম তাভারেস (পর্তুগাল)। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভাল অফ অথার্স হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হলেও পরবর্তীকালে এটি টিফা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং লেখকদের নিয়ে উৎসব আকারে অনুষ্ঠান শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে।

২০২০ টিফার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে, এই প্রথমবারের মতো বাংলাভাষী লেখকদের টিফায় অংশগ্রহণ। আরও গর্বের বিষয়, টিফার অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি হলেও, বাংলাভাষী ১১ জন লেখক এগারো দিনের এই উৎসবে তিন দিন কথা বলবেন, এবং এই তিন দিনের মধ্যে দু’দিনই কথা বলবেন মাতৃভাষা বাংলায়; একদিন ইংরেজিতে। উল্লেখ্য, এবারের টিফায় বাঙালি ছাড়াও ফরাসি, স্প্যানিশ এবং ইটালিয়ানরাও তাঁদের মাতৃভাষায় কথা বলবেন। টিফা কর্তৃপক্ষ এই চারটি অতিরিক্ত ভাষায় লেখকদের অংশগ্রহণের বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের ওয়েবসাইটে প্রচার করছেন।

চার বছর পর, অবিশ্বাস্য এক কাকতালীয় যোগাযোগ, ২২ অক্টোবর ২০২০ টিফার একই লেখক মঞ্চে কথা বলবেন মার্গারেট অ্যাটউড এবং ছয়জন বাঙালি লেখক। এই দিন সন্ধে ছ’টায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের এক ঘণ্টাব্যাপী ‘ক্যানলিট টু বেঙ্গলি’ অনুষ্ঠানের পর পরই তাঁর প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ ‘ডিয়ারলি’ নিয়ে কথা বলবেন ‘ক্যানলিট কুইন’ খ্যাত সাহিত্যিক মার্গারেট অ্যাটউড।

অ্যাটউডের সাথে দুই বাংলার লেখকদের সংযোগের বিষয়টি ব্যক্তিগত হলেও, তাঁদের এই সংযোগের কারণে ঢাকা ও কলকাতা মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় পরিচিতি পেয়েছে, এই কথা সত্যি। তবে, ২০২০ টিফায় বাংলাভাষী লেখকদের অন্তর্ভুক্তির পেছনে কাজ করেছে গত পাঁচ বছর ধরে টরন্টোর বিভিন্ন বাঙালি মঞ্চে ক্যানাডিয়ান ও বাংলাভাষী লেখকদের কিছু ধারাবাহিক সাহিত্যকর্ম। বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি)-এর উদ্যোগে এই সময়কালে বেশ কিছু সাহিত্যবিষয়ক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় টরন্টো শহরে। তাঁর মধ্যে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের লেখক সম্মেলন এবং সম্মেলন উপলক্ষে দোভাষী (বাংলা ও ইংরেজি) ম্যাগাজিন ‘বিএলআরসি সাহিত্য পত্রিকা’ প্রকাশ, বাংলা সাহিত্যকে অ-বাংলাভাষী ক্যানাডিয়ান পাঠকদের কাছে প্রক্ষেপণের উদ্দেশে ২০১৭ সালে স্থানীয় অ্যালবার্ট ক্যাম্পবেল গ্রন্থাগারে ‘প্রেজেন্টিং বেঙ্গলি লিটারেচার ইন ইংলিশ’ শীর্ষক বছরব্যাপী কর্মশালা, ২০১৮ সালে ক্যানাডিয়ান ও বাংলাভাষী সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপন অন্যতম। টরন্টোর নেতৃস্থানীয় ও জনপ্রিয় ক্যানাডিয়ান লেখকদের উপস্থিতিতে এইসব অনুষ্ঠানে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকরা তাঁদের নিজ নিজ সাহিত্যকর্ম উপস্থাপন করেন।

উল্লিখিত অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণকারী লেখকদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন ক্যানাডিয়ান পার্লামেন্টারি পোয়েট লরিয়েট জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক, টরন্টোর প্রাক্তন পোয়েট লরিয়েট অ্যান মাইকেলস, রাইটার্স ইউনিয়ন অফ ক্যানাডার নির্বাহী পরিচালক জন ডেগেন, রাইটার্স ট্রাস্ট অফ ক্যানাডার নির্বাহী পরিচালক মেরি ওসবার্ন, লিটার?্যারি ট্রানস্লেটরস’ এ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যানাডার প্রেসিডেন্ট লেখক ও অনুবাদক বিয়াট্রিজ হাউসনার, রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনম মুখার্জি, কবি আয়ান ফ্রেন্স, কবি জিম জনস্টোন, টরন্টোর বর্তমান পোয়েট লরিয়েট এ এফ মরিজ প্রমুখ।

প্রবাসে থাকা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক ও চিন্তকদের মধ্যে ছিলেন আসাদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান, অশোক চক্রবর্তী, দিলীপ চক্রবর্তী, দার্শনিক দেবাশীষ মৃধা (অ্যামেরিকা), সৈয়দ ইকবাল, রন্না ব্লুম, আন্না ইন, আয়েশা চ্যাটার্জী, রাখাল সরকার, সুজিত দত্ত, সালমা বাণী, হাসান মাহমুদ, সুধীর সাহা, শুক্লা দত্ত, শাহানা আক্তার মহুয়া, দয়ালি ইসলাম, সঞ্চারী সুর, রেজা সাত্তার, সৈকত রুশদী, সুরজিত রায় মজুমদার, নজরুল ইসলাম মিন্টু, রুমানা চৌধুরী, মামুনুর রশিদ, শাহিনুর ইসলাম, শাখাওয়াত সাদি, আব্দুল হাসিব, মৌ মধুবন্তী, মাঞ্জুমান আরা, শিউলি জাহান, চয়ন দাস, ননীগোপাল দেবনাথ, সুব্রত পুরু, সুজিত কুসুম পাল, আকবর হোসেন, ফায়জুল করিম, সায়ীদ যাদীদ, সুলতানা শিরিন সাজি, পারভেজ চৌধুরী, তাসমিনা খান, দেলওয়ার এলাহী, বাদল ঘোষ, মেহরাব রহমান, অমিত মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ আলম, সুমন মালিক, আহমেদ হোসেন, মেরি রাশেদীন, শর্মিষ্ঠা সাহা, দিলারা নাহার বাবু প্রমুখ। তরুণ সাহিত্যকর্মীদের মধ্যে ছিলেন শাম্মা সালমা পূর্বা, অদিতি জহির, অর্ক ভট্টাচার্জী, সূচনা দাস বাঁধন, ব্রতী দাসদত্ত, মেরিলিন সামান্তা পাণ্ডে, অদিতি ফৌজিয়া, সুইটি রয়, মাসুদা জাবিন, মোহাম্মদ আজওয়া কবির, অনন্যা ঐশ্বরিয়া রাফা, হাসিব করিম, অনিন্দ দাস।

উল্লেখ করে রাখা প্রয়োজন টিফা কতৃপক্ষ তাদের এই আয়োজনে বিএলআরসিকে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অভিনন্দন সুব্রত কুমার দাস। অভিনন্দন বিএলআরসি। অভিনন্দন বাংলাভাষী লেখকবৃন্দ। অভিনন্দন টিফা।

পরিশেষে, সালাম জানাই একুশের বীর শহীদদের, যাঁরা আত্মত্যাগ করেছিলেন বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে। টিফা স্টুডিওতে আজ আমরা বাংলায় কথা বলবো।

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০ , ৬ কার্তিক ১৪২৭, ৪ রবিউল ‍আউয়াল ১৪৪২

টরন্টো লেখক উৎসবে

এই প্রথম বাঙালি লেখকরা কথা বলবেন

সুজিত কুসুম পাল

image

আজ ২২ অক্টোবর ২০২০। শুরু হচ্ছে ১১ দিনব্যাপী ৪১তম টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভাল অফ অথার্স (টিআইএফএ) অর্থাৎ আন্তর্জাতিক গ্রন্থকার উৎসব। কোভিড-১৯ সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০২০ টিফা (টিআইএফএ) একটি ভার্চুয়াল ইভেন্ট হিসেবে উদযাপিত হলেও, উৎসবকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে গ্রহণ করা হয়েছে অনেক নান্দনিক পরিকল্পনা। অংশ নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের আড়াই শতাধিক লেখক, চিত্রকর, সঙ্গীতবিৎ ও চিন্তক। থাকবে সঙ্গীত, মিউজিক, গ্রাফিক ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশনসহ নানান অনুষঙ্গের ফল্গুধারা।

ডাউনটাউনের ইউনিয়ন স্টেশনে ‘ফ্রন্ট লাইন্স: বেন্ট, নট ব্রোকেন’ এবং ‘ফ্রন্ট লাইন্স: আনটিল দ্য ওয়ার্ডস রান পিওর’ শীর্ষক দুটি কাব্য সংকলনের ওপর ধারণকৃত একটি বিশেষ ভিডিও ইন্সটলেশনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করবেন টরন্টো সিটির ষষ্ঠ পোয়েট লরিয়েট ‘কিং অফ মেটাফর’ খ্যাত এ. এফ. মরিজ। উৎসবের প্রথম দিনই থাকছে ক্যানাডার ‘কালচারাল কুইন’ খ্যাত মার্গারেট অ্যাটউড (জন্ম. ১৯৩৯)-এর একটি অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকার। ২০০৭ সালে কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ডোর’ প্রকাশিত হওয়ার দীর্ঘ ১৩ বছর পর, ১০ নভেম্বর ২০২০ প্রকাশিত হবে তাঁর প্রথম এবং বহুল আলোচিত কাব্যগ্রন্থ ‘ডিয়ারলি’।

‘ব্রিঙ্গিং অ্যা নিউ ওয়ার্ল্ড ইন্টু ফোকাস’ স্লোগানকে সামনে রেখেই ক্যানাডার বৃহত্তম এই লেখক সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এইবারের প্যানডেমিককালীন টিফার আয়োজক কমিটি। টরন্টোর নগর কর্তৃপক্ষের আর্থিক সহায়তায় আয়োজিত এই উৎসবের সহযোগী হিসেবে রয়েছে গভর্নমেন্ট অফ কানাডা, কানাডা কাউন্সিল ফর দ্য আর্টস, অন্টারিও আর্টস কাউন্সিল, টরন্টো আর্টস কাউন্সিল, অন্টারিও ক্রিয়েট্স, এবং হারবারফ্রন্ট সেন্টার। অফিসিয়াল গ্রন্থবিক্রেতার দায়িত্ব পেয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো বুকস্টোর।

কানাডার অগ্রগণ্য যে সাহিত্যকেরা এবার যুক্ত হবেন তারা হলেন আন্দ্রে আলেক্সিস, আনোস ইরানী, ডেভিড বার্গেন, এরিখ ওয়ালটারস, হেলেন হাম্ফ্রে, আয়ান উইলিয়ামস, মাইকেল ক্রামি, রা বয়োগোডা, শানি মাতো, স্যারন বালা প্রমুখ। মোট প্রায় দুই শ আশি জন কবি-লেখক এবার যুক্ত হবেন ভার্চুয়ালি। ইতোমধ্যেই প্রায় দুই শ ভিডিও রেকর্ড হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

বিদেশি গ্রন্থকারদের মধ্যে যাঁরা এই উৎসবে যুক্ত হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শোকোফেহ আযার (ইরান ছেড়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত), মার্ক বিলিংহ্যাম (ইংল্যান্ড), রয় জ্যাকবসেন (নরওয়ে), মিকো কাওয়াকামি (জাপান), ড্যানিয়েল কেহলম্যান (জার্মানি), আমিন মালাউফ (লেবানন থেকে এসে ফ্রান্সে বসবাসরত), ফার্নান্ডা মেলচর (মেক্সিকো), মার্টা ওরিওলস (স্পেন) এবং গনক্যালো এম তাভারেস (পর্তুগাল)। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভাল অফ অথার্স হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হলেও পরবর্তীকালে এটি টিফা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং লেখকদের নিয়ে উৎসব আকারে অনুষ্ঠান শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে।

২০২০ টিফার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে, এই প্রথমবারের মতো বাংলাভাষী লেখকদের টিফায় অংশগ্রহণ। আরও গর্বের বিষয়, টিফার অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি হলেও, বাংলাভাষী ১১ জন লেখক এগারো দিনের এই উৎসবে তিন দিন কথা বলবেন, এবং এই তিন দিনের মধ্যে দু’দিনই কথা বলবেন মাতৃভাষা বাংলায়; একদিন ইংরেজিতে। উল্লেখ্য, এবারের টিফায় বাঙালি ছাড়াও ফরাসি, স্প্যানিশ এবং ইটালিয়ানরাও তাঁদের মাতৃভাষায় কথা বলবেন। টিফা কর্তৃপক্ষ এই চারটি অতিরিক্ত ভাষায় লেখকদের অংশগ্রহণের বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের ওয়েবসাইটে প্রচার করছেন।

চার বছর পর, অবিশ্বাস্য এক কাকতালীয় যোগাযোগ, ২২ অক্টোবর ২০২০ টিফার একই লেখক মঞ্চে কথা বলবেন মার্গারেট অ্যাটউড এবং ছয়জন বাঙালি লেখক। এই দিন সন্ধে ছ’টায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের এক ঘণ্টাব্যাপী ‘ক্যানলিট টু বেঙ্গলি’ অনুষ্ঠানের পর পরই তাঁর প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ ‘ডিয়ারলি’ নিয়ে কথা বলবেন ‘ক্যানলিট কুইন’ খ্যাত সাহিত্যিক মার্গারেট অ্যাটউড।

অ্যাটউডের সাথে দুই বাংলার লেখকদের সংযোগের বিষয়টি ব্যক্তিগত হলেও, তাঁদের এই সংযোগের কারণে ঢাকা ও কলকাতা মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় পরিচিতি পেয়েছে, এই কথা সত্যি। তবে, ২০২০ টিফায় বাংলাভাষী লেখকদের অন্তর্ভুক্তির পেছনে কাজ করেছে গত পাঁচ বছর ধরে টরন্টোর বিভিন্ন বাঙালি মঞ্চে ক্যানাডিয়ান ও বাংলাভাষী লেখকদের কিছু ধারাবাহিক সাহিত্যকর্ম। বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি)-এর উদ্যোগে এই সময়কালে বেশ কিছু সাহিত্যবিষয়ক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় টরন্টো শহরে। তাঁর মধ্যে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের লেখক সম্মেলন এবং সম্মেলন উপলক্ষে দোভাষী (বাংলা ও ইংরেজি) ম্যাগাজিন ‘বিএলআরসি সাহিত্য পত্রিকা’ প্রকাশ, বাংলা সাহিত্যকে অ-বাংলাভাষী ক্যানাডিয়ান পাঠকদের কাছে প্রক্ষেপণের উদ্দেশে ২০১৭ সালে স্থানীয় অ্যালবার্ট ক্যাম্পবেল গ্রন্থাগারে ‘প্রেজেন্টিং বেঙ্গলি লিটারেচার ইন ইংলিশ’ শীর্ষক বছরব্যাপী কর্মশালা, ২০১৮ সালে ক্যানাডিয়ান ও বাংলাভাষী সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপন অন্যতম। টরন্টোর নেতৃস্থানীয় ও জনপ্রিয় ক্যানাডিয়ান লেখকদের উপস্থিতিতে এইসব অনুষ্ঠানে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকরা তাঁদের নিজ নিজ সাহিত্যকর্ম উপস্থাপন করেন।

উল্লিখিত অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণকারী লেখকদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন ক্যানাডিয়ান পার্লামেন্টারি পোয়েট লরিয়েট জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক, টরন্টোর প্রাক্তন পোয়েট লরিয়েট অ্যান মাইকেলস, রাইটার্স ইউনিয়ন অফ ক্যানাডার নির্বাহী পরিচালক জন ডেগেন, রাইটার্স ট্রাস্ট অফ ক্যানাডার নির্বাহী পরিচালক মেরি ওসবার্ন, লিটার?্যারি ট্রানস্লেটরস’ এ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যানাডার প্রেসিডেন্ট লেখক ও অনুবাদক বিয়াট্রিজ হাউসনার, রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনম মুখার্জি, কবি আয়ান ফ্রেন্স, কবি জিম জনস্টোন, টরন্টোর বর্তমান পোয়েট লরিয়েট এ এফ মরিজ প্রমুখ।

প্রবাসে থাকা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক ও চিন্তকদের মধ্যে ছিলেন আসাদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান, অশোক চক্রবর্তী, দিলীপ চক্রবর্তী, দার্শনিক দেবাশীষ মৃধা (অ্যামেরিকা), সৈয়দ ইকবাল, রন্না ব্লুম, আন্না ইন, আয়েশা চ্যাটার্জী, রাখাল সরকার, সুজিত দত্ত, সালমা বাণী, হাসান মাহমুদ, সুধীর সাহা, শুক্লা দত্ত, শাহানা আক্তার মহুয়া, দয়ালি ইসলাম, সঞ্চারী সুর, রেজা সাত্তার, সৈকত রুশদী, সুরজিত রায় মজুমদার, নজরুল ইসলাম মিন্টু, রুমানা চৌধুরী, মামুনুর রশিদ, শাহিনুর ইসলাম, শাখাওয়াত সাদি, আব্দুল হাসিব, মৌ মধুবন্তী, মাঞ্জুমান আরা, শিউলি জাহান, চয়ন দাস, ননীগোপাল দেবনাথ, সুব্রত পুরু, সুজিত কুসুম পাল, আকবর হোসেন, ফায়জুল করিম, সায়ীদ যাদীদ, সুলতানা শিরিন সাজি, পারভেজ চৌধুরী, তাসমিনা খান, দেলওয়ার এলাহী, বাদল ঘোষ, মেহরাব রহমান, অমিত মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ আলম, সুমন মালিক, আহমেদ হোসেন, মেরি রাশেদীন, শর্মিষ্ঠা সাহা, দিলারা নাহার বাবু প্রমুখ। তরুণ সাহিত্যকর্মীদের মধ্যে ছিলেন শাম্মা সালমা পূর্বা, অদিতি জহির, অর্ক ভট্টাচার্জী, সূচনা দাস বাঁধন, ব্রতী দাসদত্ত, মেরিলিন সামান্তা পাণ্ডে, অদিতি ফৌজিয়া, সুইটি রয়, মাসুদা জাবিন, মোহাম্মদ আজওয়া কবির, অনন্যা ঐশ্বরিয়া রাফা, হাসিব করিম, অনিন্দ দাস।

উল্লেখ করে রাখা প্রয়োজন টিফা কতৃপক্ষ তাদের এই আয়োজনে বিএলআরসিকে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অভিনন্দন সুব্রত কুমার দাস। অভিনন্দন বিএলআরসি। অভিনন্দন বাংলাভাষী লেখকবৃন্দ। অভিনন্দন টিফা।

পরিশেষে, সালাম জানাই একুশের বীর শহীদদের, যাঁরা আত্মত্যাগ করেছিলেন বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে। টিফা স্টুডিওতে আজ আমরা বাংলায় কথা বলবো।