পাপুলের স্ত্রী-কন্যাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

পাপুল ও পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার।

আমিন উদ্দিন মানিক জানান, দুদকের করা মামলায় গত ১০ ডিসেম্বর পাপুলের স্ত্রী ও মেয়েকে আত্মসমর্পণ করতে ১০ দিনের সময় দেয়া হলেও নি¤œ আদালতের অবকাশকালীন ছুটির কারণে তারা তা করতে পারেননি। তাই উচ্চ আদালতের আদেশ সংশোধন চেয়ে তারা হাইকোর্টে আবেদন জানান। সে আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার বিষয়ে আদালতের একটি আদেশ ছিল, সেখানে ভ্যাকেশন বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। যে কারণে তারা সেই সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে পারেননি বলে আরেকটি আবেদন করে সময় চান। আদালত সেই শুনানি শেষে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিত আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছেন।

পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। গত ১১ নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠানের’ আড়ালে জেসমিন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এসব কাজে পাপুল তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে তাদেরও আসামি করা হয়। মামলায় জেসমিনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ইসলাম ও দুলাভাই শহিদ ইসলাম পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানিলন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে ‘লিলাবালী’ নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। গত ২২ জুন একই অভিযোগে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক। অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতের কারাগারে আছেন এমপি পাপুল।

এমপি পাপুল ও তার পরিবারের

বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা

এদিকে ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল, তার ব্যক্তিগত কর্মচারী, মেয়ে ও শ্যালিকাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার এজাহারে ৬ জন ছাড়াও দুই প্রতিষ্ঠানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক পাপুলের ভাই এবং শ্যালিকা। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে এই অর্থ পাচার করা হয়। গতকাল সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের (ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম) সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এমপি পাপুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলো- পাপুলের ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান ওরফে মনির (৩৫), পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান (২৩), মেয়ে ওয়াফা ইসলাম (২৬), ভাই কাজী বদরুল আলম ওরফে লিটন, টাকা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ‘জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা (৫৬), জেসমিন প্রধানের প্রতিষ্ঠান জে. ডব্লিউ লীলাবালী এবং কাজী বদরুল আলম লিটনের প্রতিষ্ঠান ‘জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল’। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫/৬ জনকে।

সিআইডি বলছে, উল্লিখিত আসামি ও প্রতিষ্ঠানসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনের সহযোগিতা ও পরস্পর যোগসাজশে সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের মাধ্যমে ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ হাজার টাকা অবৈধ আয় করে। আসামিরা এই অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, স্থাবর/অস্থাবর সম্পদে রূপান্তর, ভোগবিলাসে ব্যয় ও অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। তবে দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থিত অবৈধ সম্পদের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সন্দেহভাজনদের নামে-বেনামে আরও সম্পত্তি থাকতে পারে বলে সিআইডি’র ধারণা।

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪২

পাপুলের স্ত্রী-কন্যাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

পাপুল ও পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার।

আমিন উদ্দিন মানিক জানান, দুদকের করা মামলায় গত ১০ ডিসেম্বর পাপুলের স্ত্রী ও মেয়েকে আত্মসমর্পণ করতে ১০ দিনের সময় দেয়া হলেও নি¤œ আদালতের অবকাশকালীন ছুটির কারণে তারা তা করতে পারেননি। তাই উচ্চ আদালতের আদেশ সংশোধন চেয়ে তারা হাইকোর্টে আবেদন জানান। সে আবেদনের শুনানি করে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার বিষয়ে আদালতের একটি আদেশ ছিল, সেখানে ভ্যাকেশন বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। যে কারণে তারা সেই সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে পারেননি বলে আরেকটি আবেদন করে সময় চান। আদালত সেই শুনানি শেষে আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিত আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছেন।

পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। গত ১১ নভেম্বর তার এবং তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠানের’ আড়ালে জেসমিন পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এসব কাজে পাপুল তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে তাদেরও আসামি করা হয়। মামলায় জেসমিনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ইসলাম ও দুলাভাই শহিদ ইসলাম পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানিলন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে ‘লিলাবালী’ নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। গত ২২ জুন একই অভিযোগে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক। অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতের কারাগারে আছেন এমপি পাপুল।

এমপি পাপুল ও তার পরিবারের

বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা

এদিকে ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল, তার ব্যক্তিগত কর্মচারী, মেয়ে ও শ্যালিকাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার এজাহারে ৬ জন ছাড়াও দুই প্রতিষ্ঠানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক পাপুলের ভাই এবং শ্যালিকা। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে এই অর্থ পাচার করা হয়। গতকাল সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের (ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম) সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এমপি পাপুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলো- পাপুলের ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান ওরফে মনির (৩৫), পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান (২৩), মেয়ে ওয়াফা ইসলাম (২৬), ভাই কাজী বদরুল আলম ওরফে লিটন, টাকা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ‘জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা (৫৬), জেসমিন প্রধানের প্রতিষ্ঠান জে. ডব্লিউ লীলাবালী এবং কাজী বদরুল আলম লিটনের প্রতিষ্ঠান ‘জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল’। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫/৬ জনকে।

সিআইডি বলছে, উল্লিখিত আসামি ও প্রতিষ্ঠানসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনের সহযোগিতা ও পরস্পর যোগসাজশে সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের মাধ্যমে ৩৮ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ হাজার টাকা অবৈধ আয় করে। আসামিরা এই অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, স্থাবর/অস্থাবর সম্পদে রূপান্তর, ভোগবিলাসে ব্যয় ও অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। তবে দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থিত অবৈধ সম্পদের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সন্দেহভাজনদের নামে-বেনামে আরও সম্পত্তি থাকতে পারে বলে সিআইডি’র ধারণা।