দুটি সরু বেইলি সেতুতে নিত্য যানজট : অচল আড়াইহাজার

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের দক্ষিণপাড়া ও রামচন্দ্রদীতে দীর্ঘদিনের পুরনো ও সরু পৃথক দু’টি বেইলি ব্রিজের কারণে তীব্র যানজটে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। নিত্যদিন এ ব্রিজ দুটির সামনে পেছনে কয়েক কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। নিত্যদিনে যানজটে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।

ঢাকা-গোপালদী, ঢাকা-বিশনন্দী মানিকপুর ফেড়িঘাট পর্যন্ত বাসরোড রয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার ১০টি উপজেলার সঙ্গে এ রোডটি সংযুক্ত রয়েছে। উপজেলার আরও ১৫টির মতো সংযোগ সড়ক দিয়ে ভারি যানবাহনসহ সকল প্রকার যাত্রীবাহী যাপনবাহন চলাচল করে এ রোডটি দিয়ে।

এ রোডে আড়াইহাজার উপজেলা সদরে দক্ষিণপাড়া এলাকায় জামাইকাটা খালের ওপর স্বাধীনতা পরবর্তীতে ৩০ মিটারের একটি ঢালাই ব্রিজ ছিল। ১৯৯০ সালে গোপালদী বাজারে রড বোঝাই ট্রাক যাওয়ার পথে ব্রিজটি ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। তারপর এখানে একটি স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ। যা দিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে এ ব্রিজের নাটবল্টু খুলে নিয়ে যায় চোরেরা। বিভিন্নস্থানে স্টিলের পাটাতন ও রেলিং ভেঙ্গে গিয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ১৯৯৪ সালে রামচন্দ্রদীতে মেঘনার শাখা নদীর ওপর তৎকালীন সরকার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। যা দিয়ে বিশনন্দী ইউনিয়নের সঙ্গে আড়াইহাজার উপজেলার এ অঞ্চলের জনগণের যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়নের মানিকপুর মেঘনা নদীতে ফেড়ি চালু করা হয়। এ ফেড়ি চালুর কারনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার সঙ্গে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সে থেকে এ সড়কটি একটি ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়। এ সেতুটির মাঝ খান দিয়ে নাট-বল্টু উঠে গিয়ে অনেকটা নিচে নেমে গেছে। যানবাহন উঠলেই থরথর করে কাপতে থাকে । তাছাড়াও সেতুটির অনেক স্থান দিয়ে সাইড রেলিং নেই। সাইড রেলিং না থাকায় গত ৬ মাসে অর্ধশতাধিকের বেশি যাত্রী নদীতে পড়ে মারাত্মক আহত হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে বিআরটিসি বড় বাস চলাচল করে। একটি বড় বাস ব্রিজে উঠলেই সেটি দীর্ঘক্ষণ ব্রিজে আটকে থাকতে হয়। আড়াইহাজার পৌরসভা সদরে ৬-৭টি সংযোগ সড়কে ড্রেন ও রাস্তার কাজ চলমান থাকায় এ রাস্তাগুলোর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে সকল যানবাহন প্রধান সড়ক আড়াইহাজার গোপালদী ও আড়াইহাজার বিশনন্দী সড়কটি ব্যবহার করে যানবাহন চলাচল করছে।

সে কারণে কৃষ্ণপুরা পায়রা চত্ব¡র থেকে আড়াইহাজার বাজার, আড়াইহাজার পৌরসভা, সরকারি সফর আলী কলেজ থেকে ফতেপুর ইউনিয়নের বগাদী পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কে ও রামচন্দ্রী বেইলি ব্রিজের দুইপাশে মানিকপুর ফেড়িঘাট থেকে জালাকান্দি মশারির মিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। হাজার হাজার চলমান যানবাহনের চাপের কারণে এ সরু ও লক্করঝক্কর ব্রিজ দুটিই আড়াইহাজারের এখন মহাসমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কর্মচঞ্চল আড়াইহাজারকে স্থবির করে দিয়েছে এ ব্রিজ দুটি। এতই সরু যে একটি ট্রাক বা বাস ব্রিজে উঠলে একটি মানুষ হেটে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাছাড়া কিছু যানবাহন প্রতিযোগিতার কারণে পুরো সড়কে মহাবিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা মুমূর্ষু রোগীদের চিৎকারে মানুষের হৃদয় বিদীর্ণ হলেও যানজট থেকে বাঁচার কোন উপায় থাকে না। এছাড়াও যানজটের কারণে মানুষ তাদের কর্মস্থলে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেমন যথাসময়ে যেতে পারে না তেমনি সরকারি বহু কাজই যথাসময়ে করা সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ হোসেন জানান, বেইলি ব্রিজ দুটিতে তীব্র যানজটের কারণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ব্রিজ দুটিতে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এ ব্রিজ দুটি পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানান।

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪২

দুটি সরু বেইলি সেতুতে নিত্য যানজট : অচল আড়াইহাজার

হারাধন চন্দ্র দে, আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ)

image

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের দক্ষিণপাড়া ও রামচন্দ্রদীতে দীর্ঘদিনের পুরনো ও সরু পৃথক দু’টি বেইলি ব্রিজের কারণে তীব্র যানজটে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। নিত্যদিন এ ব্রিজ দুটির সামনে পেছনে কয়েক কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। নিত্যদিনে যানজটে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।

ঢাকা-গোপালদী, ঢাকা-বিশনন্দী মানিকপুর ফেড়িঘাট পর্যন্ত বাসরোড রয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার ১০টি উপজেলার সঙ্গে এ রোডটি সংযুক্ত রয়েছে। উপজেলার আরও ১৫টির মতো সংযোগ সড়ক দিয়ে ভারি যানবাহনসহ সকল প্রকার যাত্রীবাহী যাপনবাহন চলাচল করে এ রোডটি দিয়ে।

এ রোডে আড়াইহাজার উপজেলা সদরে দক্ষিণপাড়া এলাকায় জামাইকাটা খালের ওপর স্বাধীনতা পরবর্তীতে ৩০ মিটারের একটি ঢালাই ব্রিজ ছিল। ১৯৯০ সালে গোপালদী বাজারে রড বোঝাই ট্রাক যাওয়ার পথে ব্রিজটি ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। তারপর এখানে একটি স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ। যা দিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে এ ব্রিজের নাটবল্টু খুলে নিয়ে যায় চোরেরা। বিভিন্নস্থানে স্টিলের পাটাতন ও রেলিং ভেঙ্গে গিয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ১৯৯৪ সালে রামচন্দ্রদীতে মেঘনার শাখা নদীর ওপর তৎকালীন সরকার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। যা দিয়ে বিশনন্দী ইউনিয়নের সঙ্গে আড়াইহাজার উপজেলার এ অঞ্চলের জনগণের যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়নের মানিকপুর মেঘনা নদীতে ফেড়ি চালু করা হয়। এ ফেড়ি চালুর কারনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার সঙ্গে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সে থেকে এ সড়কটি একটি ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়। এ সেতুটির মাঝ খান দিয়ে নাট-বল্টু উঠে গিয়ে অনেকটা নিচে নেমে গেছে। যানবাহন উঠলেই থরথর করে কাপতে থাকে । তাছাড়াও সেতুটির অনেক স্থান দিয়ে সাইড রেলিং নেই। সাইড রেলিং না থাকায় গত ৬ মাসে অর্ধশতাধিকের বেশি যাত্রী নদীতে পড়ে মারাত্মক আহত হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে বিআরটিসি বড় বাস চলাচল করে। একটি বড় বাস ব্রিজে উঠলেই সেটি দীর্ঘক্ষণ ব্রিজে আটকে থাকতে হয়। আড়াইহাজার পৌরসভা সদরে ৬-৭টি সংযোগ সড়কে ড্রেন ও রাস্তার কাজ চলমান থাকায় এ রাস্তাগুলোর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে সকল যানবাহন প্রধান সড়ক আড়াইহাজার গোপালদী ও আড়াইহাজার বিশনন্দী সড়কটি ব্যবহার করে যানবাহন চলাচল করছে।

সে কারণে কৃষ্ণপুরা পায়রা চত্ব¡র থেকে আড়াইহাজার বাজার, আড়াইহাজার পৌরসভা, সরকারি সফর আলী কলেজ থেকে ফতেপুর ইউনিয়নের বগাদী পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কে ও রামচন্দ্রী বেইলি ব্রিজের দুইপাশে মানিকপুর ফেড়িঘাট থেকে জালাকান্দি মশারির মিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। হাজার হাজার চলমান যানবাহনের চাপের কারণে এ সরু ও লক্করঝক্কর ব্রিজ দুটিই আড়াইহাজারের এখন মহাসমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কর্মচঞ্চল আড়াইহাজারকে স্থবির করে দিয়েছে এ ব্রিজ দুটি। এতই সরু যে একটি ট্রাক বা বাস ব্রিজে উঠলে একটি মানুষ হেটে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাছাড়া কিছু যানবাহন প্রতিযোগিতার কারণে পুরো সড়কে মহাবিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা মুমূর্ষু রোগীদের চিৎকারে মানুষের হৃদয় বিদীর্ণ হলেও যানজট থেকে বাঁচার কোন উপায় থাকে না। এছাড়াও যানজটের কারণে মানুষ তাদের কর্মস্থলে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেমন যথাসময়ে যেতে পারে না তেমনি সরকারি বহু কাজই যথাসময়ে করা সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ হোসেন জানান, বেইলি ব্রিজ দুটিতে তীব্র যানজটের কারণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ব্রিজ দুটিতে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এ ব্রিজ দুটি পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানান।