করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাংলাদেশে এখনও লকডাউন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, বিশ্বে চলমান করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধের আলোচনা চলছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের দেশে প্রবেশের পর সাতদিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সাত দিন শেষ হলে কোয়ারেন্টিনে থেকেই সরকারিভাবে যাত্রীদের কোভিড টেস্ট করে ছেড়ে দেয়া হবে। দেশের কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর আশকোনা কোয়ারেন্টিন সেন্টারে জিন এক্সপার্ট টেস্ট এবং ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাব উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার সক্ষম হয়েছে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্ষম হয়েছি। আর নতুন ভেরিয়েন্টের নতুন ধরনের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে কিনা সে নিয়ে সরকার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছে। নতুন চিকিৎসা থাকলে সেটাও আমরা গ্রহণ করব।
দেশের নানা উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি সংস্থাসহ অন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি এবং চিকিৎসায় এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন উন্নয়ন হচ্ছে চিকিৎসা খাতে।
মন্ত্রী বলেন, কোভিড চিকিৎসায় প্রথমেই টেস্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকে দেশে মাত্র একটি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি ছিল। সেখান থেকে বর্তমানে ১১০টির বেশি ল্যাব রয়েছে। পাশাপাশি আরও আধুনিক টেস্টের জন্য অ্যান্টিজেন এবং জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে কয়েকটি জেলায়। অ্যান্টিজেন টেস্ট সব জেলাতেই করা হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে, যেটা টিবি (যক্ষ্মা) শনাক্তের কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ৩৩টি জিন এক্সপার্ট মেশিন করোনা শনাক্তের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় আরও বাড়ানো হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতির তালিকাতে আরেকটি সংযোজন হলো জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন করা হলো। আপাতত হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের জন্যই এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব কাজ করবে। তবে যেখানে ল্যাব নেই সেখানেও এটি নিয়ে যাওয়া যাবে এবং দ্রুত পরীক্ষা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, নমুনা দেয়া ব্যক্তি পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে জানতে পারবেন। জরুরি প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পাঞ্চলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করবে এই ল্যাব। এখানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব বায়ো সেইফটি লেভেল-২ মানসম্পন্ন।
আশকোনা হজ ক্যাম্পে স্থাপন করা জিন এক্সপার্ট ল্যাবে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোভিড-১৯ আছে কিনা তা জানতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হবে বলেও বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু সব হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ছিল না। বর্তমানে ৭৮টি নতুন সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত মাসে মৃত্যুর হার একটু বেড়েছে। তবে এখন মৃত্যুর হার, সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সুস্থতার হার বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর কেউ অসুস্থবোধ করলে টেস্ট করে তাকে চিকিৎসা নিতে হবে।
দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ষাটোর্ধ্বদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং অসুস্থ হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমএফআর-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফাইজুর রহমান, লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম, লে. কর্নেল সাইফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাংলাদেশে এখনও লকডাউন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, বিশ্বে চলমান করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধের আলোচনা চলছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের দেশে প্রবেশের পর সাতদিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সাত দিন শেষ হলে কোয়ারেন্টিনে থেকেই সরকারিভাবে যাত্রীদের কোভিড টেস্ট করে ছেড়ে দেয়া হবে। দেশের কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর আশকোনা কোয়ারেন্টিন সেন্টারে জিন এক্সপার্ট টেস্ট এবং ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাব উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার সক্ষম হয়েছে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্ষম হয়েছি। আর নতুন ভেরিয়েন্টের নতুন ধরনের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে কিনা সে নিয়ে সরকার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছে। নতুন চিকিৎসা থাকলে সেটাও আমরা গ্রহণ করব।
দেশের নানা উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি সংস্থাসহ অন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি এবং চিকিৎসায় এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন উন্নয়ন হচ্ছে চিকিৎসা খাতে।
মন্ত্রী বলেন, কোভিড চিকিৎসায় প্রথমেই টেস্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকে দেশে মাত্র একটি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি ছিল। সেখান থেকে বর্তমানে ১১০টির বেশি ল্যাব রয়েছে। পাশাপাশি আরও আধুনিক টেস্টের জন্য অ্যান্টিজেন এবং জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে কয়েকটি জেলায়। অ্যান্টিজেন টেস্ট সব জেলাতেই করা হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে, যেটা টিবি (যক্ষ্মা) শনাক্তের কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ৩৩টি জিন এক্সপার্ট মেশিন করোনা শনাক্তের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় আরও বাড়ানো হবে।
পরীক্ষা পদ্ধতির তালিকাতে আরেকটি সংযোজন হলো জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর ল্যাব উদ্বোধন করা হলো। আপাতত হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের জন্যই এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব কাজ করবে। তবে যেখানে ল্যাব নেই সেখানেও এটি নিয়ে যাওয়া যাবে এবং দ্রুত পরীক্ষা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, নমুনা দেয়া ব্যক্তি পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে জানতে পারবেন। জরুরি প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পাঞ্চলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করবে এই ল্যাব। এখানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব বায়ো সেইফটি লেভেল-২ মানসম্পন্ন।
আশকোনা হজ ক্যাম্পে স্থাপন করা জিন এক্সপার্ট ল্যাবে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোভিড-১৯ আছে কিনা তা জানতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হবে বলেও বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু সব হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ছিল না। বর্তমানে ৭৮টি নতুন সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত মাসে মৃত্যুর হার একটু বেড়েছে। তবে এখন মৃত্যুর হার, সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সুস্থতার হার বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর কেউ অসুস্থবোধ করলে টেস্ট করে তাকে চিকিৎসা নিতে হবে।
দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ষাটোর্ধ্বদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং অসুস্থ হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএমএফআর-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফাইজুর রহমান, লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম, লে. কর্নেল সাইফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।