পরিবহন ধর্মঘটে অচল সিলেট

সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

সিলেটের বন্ধ পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেয়ার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে টানা তিনদিনের পরিবহন ধর্মঘটে মুলত অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। ধর্মঘটে সব প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকায় গোটা সিলেটে অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এ ধর্মঘটের কারণে শুধু সিলেট বিভাগই নয়, সারাদেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেট। এতে গত দুইদিনে অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে বিশিষ্টজনরা বলছেন, পাথর কোয়ারি নিয়ে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়ার ঘটনা আদালত অবমাননার শামিল। কারণ আদালতের নির্দেশেই কোয়ারিগুলো বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ধর্মঘটকারীদের ভাষ্য, সাধারণ শ্রমিকদের পাশাপাশি তাদের ট্রাকও পাথর পরিবহন করতে পারছে না। ফলে এক্ষেত্র তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘটে নাগরিক ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় বিপাকে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রীরা। আর সেই সুযোগে অ্যাপস ছাড়াই চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করছেন রাইড শেয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করা মোটরসাইকেল চালকরা। এজন্য তারা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছে।

করোনাকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় না নিয়ে সিলেট নগরীর প্রায় সবকটি মোড়েই লোকাল বাসের মতো ডেকে ডেকে মোটরসাইকেলে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। নগরীর প্রায় সবগুলো স্পট থেকেই ডেকে ডেকে যাত্রী পরিবহন করছে রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেলগুলো। আর ভাড়া নিয়ে রীতিমতো দরদামে মেতে উঠছেন তারা।

এদিকে অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রী না উঠে মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে চড়ে বসা যাত্রী বা চালক উভয়ই অপরিচিত থাকায় কারও তথ্যই কারও কাছে থাকছে না। এতে দুজনই বিপদ নিয়ে চলাচল করছেন সড়কে।

নগরের রিকাবীবাজার পয়েন্ট থেকে টিলাগড়ের গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন অমিতাভ দেবনাথ নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি পাঠাও-উবারের অ্যাপস ব্যবহার করেন। অন্যদিন যেখানে রিকোয়েস্ট পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল হাজির হতো, আজ সেখানে রিকোয়েস্ট গ্রহণই হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘একজন ফোন রিসিভ করেছিলেন, কিন্তু তিনি অ্যাপসের পরিবর্তে চুক্তিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেই। পরে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে অফিসে যাই।’

উপশহর পয়েন্ট থেকে শিবগঞ্জ পয়েন্টে অ্যাপসে ভাড়া আসে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সেখানে দ্বিগুণ ৫০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করছেন রাইড নেয়া যাত্রীরা। এদিকে সিলেটের রাইডাররা মোটরবাইক নিয়ে ট্রিপ দিচ্ছেন মৌলভীবাজার পর্যন্ত। সেখানে ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া শেরপুর পর্যন্ত রাইডাররা চাচ্ছেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্টে বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল চালককে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তারা সবাই রাইড শেয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তাদের কেউ অ?্যাপসে ভাড়ায় যাবেন না। চুক্তিতে যাবেন।

তেমনই নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে মোটরসাইকেল নিয়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছেন চালকরা। তাদের মধ্যে একজন চালক জসিম মিয়া বলেন, ‘প্রথম প্রথম অনলাইনে চলেছি, যখন দেখছি অনেকই অফলাইনে খ্যাপ মারছে দেখে আমিও শুরু করলাম। অনলাইন থেকে অফলাইনে আয় করা যায় বেশি। তাই এখন অফলাইনে ট্রিপ মারতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। একই বিষয়ে জানতে চাইলে একই সুরে কথা বলেন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা রতন ও লুৎফুর নামে আরও দুই চালক।’

এছাড়া দক্ষিণ সুরমা এলাকার চন্ডিপুল এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা রাইডচালক ফারুক হোসেনের কাছে একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ‘দুই টাকা বেশি কীভাবে আয় হবে সে চিন্তা করি। চুক্তিতে ট্রিপ মারলে যাত্রী পাওয়া যায় বেশি, ভাড়াও বেশি।’

একই অবস্থা অন্য সব রোডেও। সবমিলিয়ে ধর্মঘটে যানবাহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

নিয়মিত রাইড নেন এমন একজন যাত্রী শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেকের মতো তো আমার আর ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তাই রাইড শেয়ারিংটাকে বেছে নিয়েছি। তাই আমি নিয়মিত রাইড নিয়ে থাকি। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল থেকে খেয়াল করে দেখলাম তারা নিয়ম মানছে না, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে। দরদাম করে যেতে হচ্ছে। কিলোমিটার কোন হিসাব নেই, চুক্তিতে যেতে হচ্ছে। নিয়মহীনভাবে চলায় আমাদের অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হচ্ছে। চালকরা নানা অজুহাতে ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। পথে তাড়াহুড়া করে। এসব ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন চলতে হচ্ছে।’

এদিকে, পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে পড়া মানুষ বিকল্প হিসেবে ট্রেনকে বেছে নিয়েছেন। সিলেট থেকে ঢাকাগামী এবং অন্য জায়গা থেকে সিলেটগামী যাত্রীরা গত দু’দিন থেকে ট্রেনেই যাতায়াত করছেন। ফলে সিলেট থেকে অন্য জায়গায় ট্রেন সার্ভিসে হঠাৎ করে উপচেপড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। তবে যাত্রীদের চাপ থাকলেও সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি।

ঢাকায় যেতে ইচ্ছুক রহমান মিয়া নামের একজন বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। জরুরি কাজে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। সড়ক ধর্মঘট তাই এখানে চলে এলাম, ট্রেনে করেই ঢাকা যেতে হবে। ভিড় অনেক, তবুও কষ্ট মেনেই যেতে হচ্ছে।

এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও সিলেট থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে জানিয়ে স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে।

সিডিউল অনুযায়ী গত দু’দিন থেকেই ট্রেন চলছে এবং আজও চলবে বলে জানান তিনি।

এই ধর্মঘট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেটের ১০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ আহূত এই ধর্মঘটকে আদালত অবমাননার শামিল বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয় শাহ শাহেদা আক্তার স্বাক্ষিরত বিবৃতিতে বলা হয়Ñ সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেয়ার দাবিতে পাথর ব্যবসায়ীরা পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, সমাবেশ করেছেন। বর্তমানে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট করছেন পরিবহন মালিকরা। আদালতের কোন নিদের্শনা বা রায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের কার্যক্রম আয়োজন, অংশগ্রহণ ও সমর্থন আদালত অবমাননার শামিল।

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪২

পরিবহন ধর্মঘটে অচল সিলেট

সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

বিশেষ প্রতিনিধি

সিলেটের বন্ধ পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেয়ার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে টানা তিনদিনের পরিবহন ধর্মঘটে মুলত অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। ধর্মঘটে সব প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকায় গোটা সিলেটে অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এ ধর্মঘটের কারণে শুধু সিলেট বিভাগই নয়, সারাদেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেট। এতে গত দুইদিনে অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে বিশিষ্টজনরা বলছেন, পাথর কোয়ারি নিয়ে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়ার ঘটনা আদালত অবমাননার শামিল। কারণ আদালতের নির্দেশেই কোয়ারিগুলো বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ধর্মঘটকারীদের ভাষ্য, সাধারণ শ্রমিকদের পাশাপাশি তাদের ট্রাকও পাথর পরিবহন করতে পারছে না। ফলে এক্ষেত্র তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘটে নাগরিক ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় বিপাকে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রীরা। আর সেই সুযোগে অ্যাপস ছাড়াই চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করছেন রাইড শেয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করা মোটরসাইকেল চালকরা। এজন্য তারা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছে।

করোনাকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় না নিয়ে সিলেট নগরীর প্রায় সবকটি মোড়েই লোকাল বাসের মতো ডেকে ডেকে মোটরসাইকেলে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। নগরীর প্রায় সবগুলো স্পট থেকেই ডেকে ডেকে যাত্রী পরিবহন করছে রাইড শেয়ারের মোটরসাইকেলগুলো। আর ভাড়া নিয়ে রীতিমতো দরদামে মেতে উঠছেন তারা।

এদিকে অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রী না উঠে মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে চড়ে বসা যাত্রী বা চালক উভয়ই অপরিচিত থাকায় কারও তথ্যই কারও কাছে থাকছে না। এতে দুজনই বিপদ নিয়ে চলাচল করছেন সড়কে।

নগরের রিকাবীবাজার পয়েন্ট থেকে টিলাগড়ের গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন অমিতাভ দেবনাথ নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি পাঠাও-উবারের অ্যাপস ব্যবহার করেন। অন্যদিন যেখানে রিকোয়েস্ট পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল হাজির হতো, আজ সেখানে রিকোয়েস্ট গ্রহণই হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘একজন ফোন রিসিভ করেছিলেন, কিন্তু তিনি অ্যাপসের পরিবর্তে চুক্তিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেই। পরে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে অফিসে যাই।’

উপশহর পয়েন্ট থেকে শিবগঞ্জ পয়েন্টে অ্যাপসে ভাড়া আসে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সেখানে দ্বিগুণ ৫০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করছেন রাইড নেয়া যাত্রীরা। এদিকে সিলেটের রাইডাররা মোটরবাইক নিয়ে ট্রিপ দিচ্ছেন মৌলভীবাজার পর্যন্ত। সেখানে ভাড়া হাঁকানো হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া শেরপুর পর্যন্ত রাইডাররা চাচ্ছেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্টে বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল চালককে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তারা সবাই রাইড শেয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো তাদের কেউ অ?্যাপসে ভাড়ায় যাবেন না। চুক্তিতে যাবেন।

তেমনই নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে মোটরসাইকেল নিয়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছেন চালকরা। তাদের মধ্যে একজন চালক জসিম মিয়া বলেন, ‘প্রথম প্রথম অনলাইনে চলেছি, যখন দেখছি অনেকই অফলাইনে খ্যাপ মারছে দেখে আমিও শুরু করলাম। অনলাইন থেকে অফলাইনে আয় করা যায় বেশি। তাই এখন অফলাইনে ট্রিপ মারতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। একই বিষয়ে জানতে চাইলে একই সুরে কথা বলেন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা রতন ও লুৎফুর নামে আরও দুই চালক।’

এছাড়া দক্ষিণ সুরমা এলাকার চন্ডিপুল এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা রাইডচালক ফারুক হোসেনের কাছে একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ‘দুই টাকা বেশি কীভাবে আয় হবে সে চিন্তা করি। চুক্তিতে ট্রিপ মারলে যাত্রী পাওয়া যায় বেশি, ভাড়াও বেশি।’

একই অবস্থা অন্য সব রোডেও। সবমিলিয়ে ধর্মঘটে যানবাহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

নিয়মিত রাইড নেন এমন একজন যাত্রী শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেকের মতো তো আমার আর ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তাই রাইড শেয়ারিংটাকে বেছে নিয়েছি। তাই আমি নিয়মিত রাইড নিয়ে থাকি। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল থেকে খেয়াল করে দেখলাম তারা নিয়ম মানছে না, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে। দরদাম করে যেতে হচ্ছে। কিলোমিটার কোন হিসাব নেই, চুক্তিতে যেতে হচ্ছে। নিয়মহীনভাবে চলায় আমাদের অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হচ্ছে। চালকরা নানা অজুহাতে ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। পথে তাড়াহুড়া করে। এসব ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন চলতে হচ্ছে।’

এদিকে, পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে পড়া মানুষ বিকল্প হিসেবে ট্রেনকে বেছে নিয়েছেন। সিলেট থেকে ঢাকাগামী এবং অন্য জায়গা থেকে সিলেটগামী যাত্রীরা গত দু’দিন থেকে ট্রেনেই যাতায়াত করছেন। ফলে সিলেট থেকে অন্য জায়গায় ট্রেন সার্ভিসে হঠাৎ করে উপচেপড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। তবে যাত্রীদের চাপ থাকলেও সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি।

ঢাকায় যেতে ইচ্ছুক রহমান মিয়া নামের একজন বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। জরুরি কাজে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। সড়ক ধর্মঘট তাই এখানে চলে এলাম, ট্রেনে করেই ঢাকা যেতে হবে। ভিড় অনেক, তবুও কষ্ট মেনেই যেতে হচ্ছে।

এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও সিলেট থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে জানিয়ে স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে।

সিডিউল অনুযায়ী গত দু’দিন থেকেই ট্রেন চলছে এবং আজও চলবে বলে জানান তিনি।

এই ধর্মঘট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেটের ১০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদ আহূত এই ধর্মঘটকে আদালত অবমাননার শামিল বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয় শাহ শাহেদা আক্তার স্বাক্ষিরত বিবৃতিতে বলা হয়Ñ সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেয়ার দাবিতে পাথর ব্যবসায়ীরা পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, সমাবেশ করেছেন। বর্তমানে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট করছেন পরিবহন মালিকরা। আদালতের কোন নিদের্শনা বা রায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের কার্যক্রম আয়োজন, অংশগ্রহণ ও সমর্থন আদালত অবমাননার শামিল।