জীবন মান উন্নয়নে ৩শ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও এক টাকাও ব্যয় করা হয়নি

এক কোটি মানুষ করোনা ঝুঁকিতে প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেই

চরাঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য পর পর দু’বার বাজেটে ৩শ’ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও সেখান থেকে তাদের জন্য এক টাকাও ব্যয় করা হয়নি। গতকাল দুপুরে বিভাগীয় নগরী রংপুরে একটি বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে করোনা প্রতিরোধে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্স আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়কারী ড. মো. মাহবুব হোসেন।

দেশের ৪০ জেলার শতাধিক উপজেলায় তিস্তা, ধরলা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর বক্ষে অসংখ্য ছোট-বড় চর ও দুর্গম দ্বীপচরে প্রায় এক কোটি মানুষ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঝুঁকিতে থাকলেও তাদের করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপূ করোনাভাইরাসের কারণে চলমান দুর্যোগে চরগুলোতে বসবাসরত কোটি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকলেও তাদের জন্য কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া লকডাউনের সময় দুর্গম দ্বীপচরের বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, জামালপুর, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের ৩ উপজেলার হতদরিদ্র পরিবারগুলো অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মাঝে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হলেও দুর্গম অনেক চরেই এ ধরনের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে বন্যা চরের মানুষের যাপিত জীবন তছনছ করে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে চরের মানুষের করোনা প্রতিরোধে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলোÑ কোভিট-১৯ মহামারী প্রতিরোধে চর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দুর্গম চরাঞ্চলে প্রয়োজনে পৃথক টেস্টিং বুথ স্থাপন, একই সঙ্গে চরাঞ্চলে কোয়ারেন্টিন ও বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। চরের মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস সচেতনতা আরও কার্যকর করতে হবে।

অন্যদিকে দুর্গম চরাঞ্চলে যেসব পরিবার বসবাস করে তাদের বেশিরভাগই নারীপ্রধান। করোনাভাইরাসের কারণে নারীরা খুবই বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এ ধরনের পরিবারকে দ্রুত চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও আর্থিক ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসরত বয়স্ক নারী ও পরুষদের জন্য নিয়মিত চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করে ভাতা প্রদানে বাধা দূর করতে হবে। চরের মানুষ সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া চরে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যক্তা আছে চরের কৃষক-কৃষানি ও ক্ষুদ্র উদ্যাক্তাদের শূন্য সুদে কৃষিঋণ প্রদান করতে হবে।

করোনার কারণে চরে উৎপাদিত পণ্য বিপণনে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হওয়ায় তারা পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য সেনানিবাস, আনসার, পুলিশ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চরে উৎপাদিত সবিজি ও অন্য পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

চরে বসবাসরত শিশু ও নারীরা সব সময় খাদ্য বঞ্চনায় বেশি ভুগে থাকে। করোনাভাইরাসের কারণে এ বঞ্চনা আরও তীব্র হয়েছে এমন অবস্থায় চরের নারী ও শিশুদের বিশেষ খাদ্য সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনা পরিস্থিতিতে লৈঙ্গিক ও গার্হ্যস্থ সহিংসতা থেকে চরের নারী ও শিশুদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত দু’বছর ধরে বাজেটে চরের মানুষদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য ৩শ’ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও এক টাকাও ব্যয় করা হয়নি, এর কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রশীদ বাবু, সাধারণ সম্পাদক রঠিক সরকার, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মানিকসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪২

চরাঞ্চলের মানুষের

জীবন মান উন্নয়নে ৩শ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও এক টাকাও ব্যয় করা হয়নি

এক কোটি মানুষ করোনা ঝুঁকিতে প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেই

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

চরাঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য পর পর দু’বার বাজেটে ৩শ’ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও সেখান থেকে তাদের জন্য এক টাকাও ব্যয় করা হয়নি। গতকাল দুপুরে বিভাগীয় নগরী রংপুরে একটি বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে করোনা প্রতিরোধে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্স আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়কারী ড. মো. মাহবুব হোসেন।

দেশের ৪০ জেলার শতাধিক উপজেলায় তিস্তা, ধরলা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর বক্ষে অসংখ্য ছোট-বড় চর ও দুর্গম দ্বীপচরে প্রায় এক কোটি মানুষ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঝুঁকিতে থাকলেও তাদের করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপূ করোনাভাইরাসের কারণে চলমান দুর্যোগে চরগুলোতে বসবাসরত কোটি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকলেও তাদের জন্য কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া লকডাউনের সময় দুর্গম দ্বীপচরের বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, জামালপুর, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের ৩ উপজেলার হতদরিদ্র পরিবারগুলো অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মাঝে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হলেও দুর্গম অনেক চরেই এ ধরনের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে বন্যা চরের মানুষের যাপিত জীবন তছনছ করে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে চরের মানুষের করোনা প্রতিরোধে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলোÑ কোভিট-১৯ মহামারী প্রতিরোধে চর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দুর্গম চরাঞ্চলে প্রয়োজনে পৃথক টেস্টিং বুথ স্থাপন, একই সঙ্গে চরাঞ্চলে কোয়ারেন্টিন ও বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। চরের মানুষের মাঝে করোনাভাইরাস সচেতনতা আরও কার্যকর করতে হবে।

অন্যদিকে দুর্গম চরাঞ্চলে যেসব পরিবার বসবাস করে তাদের বেশিরভাগই নারীপ্রধান। করোনাভাইরাসের কারণে নারীরা খুবই বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এ ধরনের পরিবারকে দ্রুত চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও আর্থিক ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসরত বয়স্ক নারী ও পরুষদের জন্য নিয়মিত চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করে ভাতা প্রদানে বাধা দূর করতে হবে। চরের মানুষ সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া চরে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যক্তা আছে চরের কৃষক-কৃষানি ও ক্ষুদ্র উদ্যাক্তাদের শূন্য সুদে কৃষিঋণ প্রদান করতে হবে।

করোনার কারণে চরে উৎপাদিত পণ্য বিপণনে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হওয়ায় তারা পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য সেনানিবাস, আনসার, পুলিশ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চরে উৎপাদিত সবিজি ও অন্য পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

চরে বসবাসরত শিশু ও নারীরা সব সময় খাদ্য বঞ্চনায় বেশি ভুগে থাকে। করোনাভাইরাসের কারণে এ বঞ্চনা আরও তীব্র হয়েছে এমন অবস্থায় চরের নারী ও শিশুদের বিশেষ খাদ্য সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনা পরিস্থিতিতে লৈঙ্গিক ও গার্হ্যস্থ সহিংসতা থেকে চরের নারী ও শিশুদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত দু’বছর ধরে বাজেটে চরের মানুষদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য ৩শ’ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও এক টাকাও ব্যয় করা হয়নি, এর কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রশীদ বাবু, সাধারণ সম্পাদক রঠিক সরকার, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মানিকসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।