তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়টি আদৌ সুরাহা হবে কি?

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম

গত বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বৈঠক উপলক্ষে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে কোন সুরাহা হয় না। বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল যে, হয়তো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে একটি ইতিবাচক ফলাফল আসবে। কিন্তু না, কিছুই হলো না। আবারও সেই আশার বাণী আর প্রতিশ্রুতির কথাই শোনা গেল। দিন যায়, মাস যায় বছরের পর বছর যায় কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে কোন সুরাহা হয় না। বিগত বছরগুলোতে অনেক বৈঠক হয়েছে, আলোচনাও হয়েছে কিন্তু বাস্তবে কোন কিছুই হয়নি। নানা অজুহাত, আশার বাণীর মধ্যেই বিষয়টি সীমিত।

গত বৃহস্পতিবারের দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বলা হয়েছে যে চলতি মাসে তিস্তার পানি নিয়ে কারিগরি বৈঠক, পরে জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর ভারতের প্রাধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অভিন্ন নদীর পানির বণ্টন সমস্যা আর সমধানসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গঠন করেন যৌথনদী কমিশন (জেআরসি)। জেআরসিও নামমাত্র। ফারাক্কায় কোন দেশ কি পরিমাণ পানি পেল, সেই তথ্যের মধ্যে জেআরসির কাজ সীমিত। তিস্তা বাঁধ ১৯৯৮ সালে স্থাপন হয়। ৬১৫ দশমিক ২৪ মিটার এই বাঁধের উদ্দেশ্য ছিল ৬ লাখ কিউসেক পানি শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। বাংলাদেশের উত্তরে ৭ জেলার ১৩ লাখ ৩৫ হাজার একর জমি এই বাঁধের আওতায়। ২০১৪ সালে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করার কারণে তিস্তা অববাহিকায় ভীষণ সংকট দেখা দেয়। তিস্তায় যখন পানির প্রয়োজন ৫ হাজার কিউসেক, তখন পানি পাওয়া যায় মাত্র ২০০-৩০০ কিউসেক। কখনও কখনও এরও কম।

রংপুরের মানুষের সংকট সরকারের কাছে সব সময় কম গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রমাণ একবাক্যেই দেয়া যায়। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা রাখছে, তখন রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার গত পরিসংখ্যানের হারের চেয়ে বেড়েছে। তিস্তায় পানি না থাকার কারণে যত সংকট দেখা দেয়, তা নিয়ে সরকারকে খুব বেশি বিচলিত হতে দেখা যায়নি। তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে সেই ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের ১ ভাগ। রংপুরের মঙ্গা দূরীকরণে তিস্তা সেচ প্রকল্প অনন্য ভূমিকা পালন করেছ এখন। সেই সেচ প্রকল্প কার্যত শুষ্ক মৌসুমে অচল। যে আট হাজার হেক্টর জমিতে রেশনিং সিস্টেমে পানি দিয়ে ধান চাষ করা হচ্ছে, তা নদীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই ছেড়ে দেয়া প্রয়োজন। তিস্তায় পানি না থাকার কারণে আর অসংখ্য সমস্যা দেখা দেয়। উত্তরের জীবনের জন্য তিস্তার পানির কোন বিকল্প নেই।

তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা অনেক পুরোনো। দেশ স্বাধীনের পরপরই ১৯৭২ সালে তিস্তার পানি নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায় আলোচনা হয়। ১৯৮৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন একটি চুক্তিও হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের ছিল ৩৬ শতাংশ, ভারত ৩৯ শতাংশ আর ২৫ শতাংশ পানি ছিল নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য। ১৯৮৫ সালে সেই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালে মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর কোন চুক্তি হয়নি। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। আমরা তখন আন্দোলন করছিলাম ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে পানি বণ্টন হতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসঙ্গেই বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সফরের আগ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর এলেন না। মনমোহন সিং সহজেই বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া তিনি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করবেন না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার খবর বাংলাদেশের পক্ষে উদ্ধার করা কঠিন। যদি তাদের মধ্যে এভাবেই ঘটনা সাজানো থাকে, মুখ্যমন্ত্রী পানি দিতে অস্বীকৃতি জানাবেন আর এই সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী শুধু সময় নেবেন, তাহলে আমাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু না।

১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনটি ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট থেকে আইনে পরিণত হয়েছে। সেখানে উজানের দেশ থেকে ভাটির দেশে প্রবাহিত নদীর পানি কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তার দিকনির্দেশনা আছে। যে নদীর পানি যে খাতে প্রবাহিত হয়, সেই নদীর পানি সেই খাতে না রেখে খাত পরিবর্তন করলে তা নদীর জন্য কল্যাণের হবে না। ভারতের যেটি তোরসা নদী বাংলাদেশ তা দুধকুমার। ভারতের যেটি জলঢাকা, বাংলাদেশ তা ধরলা নদী। এ নদীতে এমন উল্লেখযোগ্য পানি থাকে না, যা দিয়ে তিস্তার ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। আর এ দুটি নদীতে পানি থাকলেও তা দিয়ে তিস্তা ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হতো না। ২০১৪ সাল থেকে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে। আর আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতাও তিস্তায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

আমাদের নদী নিয়ে দুই রকম কমিশন আছে। একটি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন আর একটি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের যে আইন রয়েছে তাতে ভারতের সঙ্গে আলাপ করার ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। আর যৌথ নদী কমিশন বছরে চারবার করে সভা করার কথা থাকলেও চার বছরে একবার করে বসে কি না, তার খবর আমরা পাই না। আর তাছাড়া তিস্তা প্রসঙ্গে যৌথ নদী কমিশনের কোন কার্যক্রম আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। আমরা মনে করি, তিস্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। অবস্থা দেখে মনে হয়, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সম্ভাবনা অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছে। চেষ্টা ঝিমিয়ে গেলেও ভারত কিন্তু বসে নেই। ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে বসে আছে। সুতরাং বড় চেষ্টা আসতে হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও।

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (ইঝঈখ)]

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪২

তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়টি আদৌ সুরাহা হবে কি?

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম

গত বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বৈঠক উপলক্ষে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে কোন সুরাহা হয় না। বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল যে, হয়তো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে একটি ইতিবাচক ফলাফল আসবে। কিন্তু না, কিছুই হলো না। আবারও সেই আশার বাণী আর প্রতিশ্রুতির কথাই শোনা গেল। দিন যায়, মাস যায় বছরের পর বছর যায় কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে কোন সুরাহা হয় না। বিগত বছরগুলোতে অনেক বৈঠক হয়েছে, আলোচনাও হয়েছে কিন্তু বাস্তবে কোন কিছুই হয়নি। নানা অজুহাত, আশার বাণীর মধ্যেই বিষয়টি সীমিত।

গত বৃহস্পতিবারের দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বলা হয়েছে যে চলতি মাসে তিস্তার পানি নিয়ে কারিগরি বৈঠক, পরে জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর ভারতের প্রাধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অভিন্ন নদীর পানির বণ্টন সমস্যা আর সমধানসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গঠন করেন যৌথনদী কমিশন (জেআরসি)। জেআরসিও নামমাত্র। ফারাক্কায় কোন দেশ কি পরিমাণ পানি পেল, সেই তথ্যের মধ্যে জেআরসির কাজ সীমিত। তিস্তা বাঁধ ১৯৯৮ সালে স্থাপন হয়। ৬১৫ দশমিক ২৪ মিটার এই বাঁধের উদ্দেশ্য ছিল ৬ লাখ কিউসেক পানি শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। বাংলাদেশের উত্তরে ৭ জেলার ১৩ লাখ ৩৫ হাজার একর জমি এই বাঁধের আওতায়। ২০১৪ সালে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করার কারণে তিস্তা অববাহিকায় ভীষণ সংকট দেখা দেয়। তিস্তায় যখন পানির প্রয়োজন ৫ হাজার কিউসেক, তখন পানি পাওয়া যায় মাত্র ২০০-৩০০ কিউসেক। কখনও কখনও এরও কম।

রংপুরের মানুষের সংকট সরকারের কাছে সব সময় কম গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রমাণ একবাক্যেই দেয়া যায়। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা রাখছে, তখন রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার গত পরিসংখ্যানের হারের চেয়ে বেড়েছে। তিস্তায় পানি না থাকার কারণে যত সংকট দেখা দেয়, তা নিয়ে সরকারকে খুব বেশি বিচলিত হতে দেখা যায়নি। তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে সেই ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের ১ ভাগ। রংপুরের মঙ্গা দূরীকরণে তিস্তা সেচ প্রকল্প অনন্য ভূমিকা পালন করেছ এখন। সেই সেচ প্রকল্প কার্যত শুষ্ক মৌসুমে অচল। যে আট হাজার হেক্টর জমিতে রেশনিং সিস্টেমে পানি দিয়ে ধান চাষ করা হচ্ছে, তা নদীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই ছেড়ে দেয়া প্রয়োজন। তিস্তায় পানি না থাকার কারণে আর অসংখ্য সমস্যা দেখা দেয়। উত্তরের জীবনের জন্য তিস্তার পানির কোন বিকল্প নেই।

তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা অনেক পুরোনো। দেশ স্বাধীনের পরপরই ১৯৭২ সালে তিস্তার পানি নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায় আলোচনা হয়। ১৯৮৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন একটি চুক্তিও হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের ছিল ৩৬ শতাংশ, ভারত ৩৯ শতাংশ আর ২৫ শতাংশ পানি ছিল নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য। ১৯৮৫ সালে সেই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালে মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর কোন চুক্তি হয়নি। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। আমরা তখন আন্দোলন করছিলাম ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে পানি বণ্টন হতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসঙ্গেই বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সফরের আগ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর এলেন না। মনমোহন সিং সহজেই বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া তিনি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করবেন না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার খবর বাংলাদেশের পক্ষে উদ্ধার করা কঠিন। যদি তাদের মধ্যে এভাবেই ঘটনা সাজানো থাকে, মুখ্যমন্ত্রী পানি দিতে অস্বীকৃতি জানাবেন আর এই সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী শুধু সময় নেবেন, তাহলে আমাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু না।

১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনটি ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট থেকে আইনে পরিণত হয়েছে। সেখানে উজানের দেশ থেকে ভাটির দেশে প্রবাহিত নদীর পানি কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তার দিকনির্দেশনা আছে। যে নদীর পানি যে খাতে প্রবাহিত হয়, সেই নদীর পানি সেই খাতে না রেখে খাত পরিবর্তন করলে তা নদীর জন্য কল্যাণের হবে না। ভারতের যেটি তোরসা নদী বাংলাদেশ তা দুধকুমার। ভারতের যেটি জলঢাকা, বাংলাদেশ তা ধরলা নদী। এ নদীতে এমন উল্লেখযোগ্য পানি থাকে না, যা দিয়ে তিস্তার ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। আর এ দুটি নদীতে পানি থাকলেও তা দিয়ে তিস্তা ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হতো না। ২০১৪ সাল থেকে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে। আর আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতাও তিস্তায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

আমাদের নদী নিয়ে দুই রকম কমিশন আছে। একটি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন আর একটি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের যে আইন রয়েছে তাতে ভারতের সঙ্গে আলাপ করার ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। আর যৌথ নদী কমিশন বছরে চারবার করে সভা করার কথা থাকলেও চার বছরে একবার করে বসে কি না, তার খবর আমরা পাই না। আর তাছাড়া তিস্তা প্রসঙ্গে যৌথ নদী কমিশনের কোন কার্যক্রম আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। আমরা মনে করি, তিস্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। অবস্থা দেখে মনে হয়, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সম্ভাবনা অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছে। চেষ্টা ঝিমিয়ে গেলেও ভারত কিন্তু বসে নেই। ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে বসে আছে। সুতরাং বড় চেষ্টা আসতে হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও।

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (ইঝঈখ)]