শীত-গ্রীষ্মে বিপন্ন কাঠমিস্ত্রি বাবুলের মানবেতর জীবন

বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ছেলেমেয়ের আট সদস্যের পরিবার নিয়ে ভাঙা ঘরে বর্ষায় বৃষ্টি আর শীত এলে নদী পাড়ের কনকনে হাওয়ায় দুর্বিসহ জীবন কাটান কাঠ মিস্ত্রি বাবুল মিয়া। তাই প্রধান মন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি। স্ত্রী, পাঁচ ছেলে-মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার আট সদস্যের সংসার। বাবুল মিয়ার স্ত্রী নাজমা আক্তার গৃহিনী, ছেলে ইমন(১৬) উপজেলার দীপ্তি একাডেমি স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী, নাদিম(১২) স্থানীয় দাখিল মাদরাসায় ৫ম শ্রেণীতে, নিলয় (৮) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত, মেয়ে শ্যামা (৫) আর তার পঞ্চম সন্তান নীরবের বয়স মাত্র চার মাস। মা আজিমন নেছা(৭৫) দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থতায় ভোগছেন। কাঠমিস্ত্রীর সামান্য আয় দিয়ে কোন মতে চলে হতদরিদ্র বাবুল মিয়ার সংসার। মাথাগুঁজার জায়গা না থাকায় প্রায় ১১ বছর আগে পরিবার নিয়ে তিনি ঠাঁই নিয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পূর্বসীমান্তবর্তী ধীতপুর ইউনিয়নের সুতিয়া নদীর পাড়ে এক চিলতে সরকারি ভূমিতে।

বাবুল মিয়া জানান, তার পৈত্রিকবাস ছিল একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায়। তাদের সামান্য কিছু জমিজমা ছিল। অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া করতে না পেরে মাত্র ১৩ বছর বয়সে কাঠমিস্ত্রী কাজে যোগদেন। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে তাদের ওই সামান্য জমিটুকু বিক্রি করে দিতে হয়। পরে তিনি মাকে নিয়ে মামার বাড়ি ভালুকার ধীতপুর গ্রামে চলে আসেন। ধীতপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ধীতপুর গ্রামে এক নিকট আত্মীয়ের জমিতে একটি ঘর তুলে মাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কোন উপায় না থাকায় দুসম্পর্কের এক আত্মীয়ের পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তায় ধীতপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে সূতিয়া নদীর পাড়ে সরকারী ভূমিতে ছোট্ট একটি বসতঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। প্রায় এগারো বছর যাবত আট সদস্যের পরিবার নিয়ে ওই এক ঘরেই গাদাগাদি করে কোন মতে মাথাগুঁজে পড়ে রয়েছেন তারা। কাঠমিস্ত্রীর সামান্য আয়, মায়ের পাওয়া বয়স্কভাতা আর দুই সন্তানের পাওয়া উপবৃত্তির টাকায় খেয়ে না খেয়ে কোন মতে চলে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা। অনেক সময় প্রতিদিন কাজও জুটে না। তখন পরিবার নিয়ে না খেয়েও থাকতে হয়।

জং ধরেছে কম দামের পাতলা টিনে ছাওয়া বাবুল মিয়ার ঘরের চালে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে। ঘরের বেড়া নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। অনেকদিন ধরেই তার অভারে সংসারে যুক্ত হয়েছে বর্ষার বৃষ্টির পানি আর শীতে নদীর পাড়ের ঠান্ডা বাতাস। এ অস্থায় তার পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে মাথাগুঁজার আশ্রয় হিসেবে সরকারের কাছে সামান্য একটু জমি আর একটি ঘরের দাবি করছেন তিনি। বাবুল মিয়া জানান ‘তিনি মুর্খ অশিক্ষিত মানুষ, অনেক দিন আগে তার এক আত্মীয়কে তার নামে ভূমিহীনের একটি দরখাস্ত দেয়ার জন্য বলেছিলেন, এছাড়া এলাকার মেম্বারকেও বলেছেন। সরকারি জমিতে থাকেন, তার ভাঙ্গাচুরা ঘরে বৃষ্টি হলে পানি পরে। বাবুল মিনতির সুরে বলেন ‘সরকার গরিব মাইনস্যেরে জমি আর গর কইরা দিতাছে, আমারে সরকারি জমি আর একটা গর দেওনের লাইগ্যা কইছলাম, মেম্বর কইছিন আবার আইলে দিব। ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. দুলাল ফকির জানান ‘বাবুল মিয়া বর্তমানে তার ওয়ার্ডে খাস সরকারি জমিতে বসবাস করছেন, সে তিন নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। ভূমি-ঘরহীনের তালিকায় তার নাম গেছে কি-না তা তিনি জানেন না। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. খোরশেদ আলম জানান ‘বাবুল বেশ কয়েক বছর আগে তার ওয়ার্ড থেকে চলে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম জানান ইউনিয়নের জমি ও ঘরহীন মানুষদের তালিকাভূক্তির জন্য তারা মাইকিং করেছেন। তালিকা করেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস। ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, তিনি উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বে আছেন। ধীতপুর ইউনিয়নে প্রায় দুইমাস যাবত তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

image

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ভালুকার ধীতপুর গ্রামে ভূমিহীন কাঠমিস্ত্রি বাবুল মিয়ার পরিবার -সংবাদ

আরও খবর
কর্তা-ঠিকাদার যোগসাজশে এডিপির বরাদ্দ হরিলুট
ময়মনসিংহে করোনায় নতুন শনাক্ত ১২
মুক্তাগাছায় কালভার্টে হঠাৎ ধস ময়মনসিংহ-উত্তরবঙ্গ বিচ্ছিন্ন
পাকুন্দিয়ায় মাস্ক না পরায় অর্থদন্ড
রোহিঙ্গা শিবিরে অপহৃত ত্রাণ কর্তা উদ্ধার
মহেশপুর সীমান্তে ২ ভারতীয়সহ আটক ১৪
দোহারে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন দন্ডিত দুই
পাঁচ দিনেও উদ্ধার হয়নি সোনাগাজীর অপহৃত স্কুলছাত্রী
গফরগাঁয়ে ২৩ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে স্কুলের গন্ডি পেরোননি ১৪ জনই!
শ্রীমঙ্গলে পটকা মাছ খেয়ে বউ শাশুড়ির মৃত্যু
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অস্ত্রসহ আটক ১
ভোলায় স্ত্রীর চুল কেটে দিলেন মাদ্রাসাশিক্ষক স্থানীয়দের ক্ষোভ
মাগুরায় শীতজনিত রোগী বেড়েছে
ক্যাপসিকামে সফল কৃষক খলিল

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪২

শীত-গ্রীষ্মে বিপন্ন কাঠমিস্ত্রি বাবুলের মানবেতর জীবন

প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

image

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ভালুকার ধীতপুর গ্রামে ভূমিহীন কাঠমিস্ত্রি বাবুল মিয়ার পরিবার -সংবাদ

বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ছেলেমেয়ের আট সদস্যের পরিবার নিয়ে ভাঙা ঘরে বর্ষায় বৃষ্টি আর শীত এলে নদী পাড়ের কনকনে হাওয়ায় দুর্বিসহ জীবন কাটান কাঠ মিস্ত্রি বাবুল মিয়া। তাই প্রধান মন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি। স্ত্রী, পাঁচ ছেলে-মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার আট সদস্যের সংসার। বাবুল মিয়ার স্ত্রী নাজমা আক্তার গৃহিনী, ছেলে ইমন(১৬) উপজেলার দীপ্তি একাডেমি স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী, নাদিম(১২) স্থানীয় দাখিল মাদরাসায় ৫ম শ্রেণীতে, নিলয় (৮) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত, মেয়ে শ্যামা (৫) আর তার পঞ্চম সন্তান নীরবের বয়স মাত্র চার মাস। মা আজিমন নেছা(৭৫) দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থতায় ভোগছেন। কাঠমিস্ত্রীর সামান্য আয় দিয়ে কোন মতে চলে হতদরিদ্র বাবুল মিয়ার সংসার। মাথাগুঁজার জায়গা না থাকায় প্রায় ১১ বছর আগে পরিবার নিয়ে তিনি ঠাঁই নিয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পূর্বসীমান্তবর্তী ধীতপুর ইউনিয়নের সুতিয়া নদীর পাড়ে এক চিলতে সরকারি ভূমিতে।

বাবুল মিয়া জানান, তার পৈত্রিকবাস ছিল একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায়। তাদের সামান্য কিছু জমিজমা ছিল। অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া করতে না পেরে মাত্র ১৩ বছর বয়সে কাঠমিস্ত্রী কাজে যোগদেন। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে তাদের ওই সামান্য জমিটুকু বিক্রি করে দিতে হয়। পরে তিনি মাকে নিয়ে মামার বাড়ি ভালুকার ধীতপুর গ্রামে চলে আসেন। ধীতপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ধীতপুর গ্রামে এক নিকট আত্মীয়ের জমিতে একটি ঘর তুলে মাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কোন উপায় না থাকায় দুসম্পর্কের এক আত্মীয়ের পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তায় ধীতপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে সূতিয়া নদীর পাড়ে সরকারী ভূমিতে ছোট্ট একটি বসতঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। প্রায় এগারো বছর যাবত আট সদস্যের পরিবার নিয়ে ওই এক ঘরেই গাদাগাদি করে কোন মতে মাথাগুঁজে পড়ে রয়েছেন তারা। কাঠমিস্ত্রীর সামান্য আয়, মায়ের পাওয়া বয়স্কভাতা আর দুই সন্তানের পাওয়া উপবৃত্তির টাকায় খেয়ে না খেয়ে কোন মতে চলে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা। অনেক সময় প্রতিদিন কাজও জুটে না। তখন পরিবার নিয়ে না খেয়েও থাকতে হয়।

জং ধরেছে কম দামের পাতলা টিনে ছাওয়া বাবুল মিয়ার ঘরের চালে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে। ঘরের বেড়া নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। অনেকদিন ধরেই তার অভারে সংসারে যুক্ত হয়েছে বর্ষার বৃষ্টির পানি আর শীতে নদীর পাড়ের ঠান্ডা বাতাস। এ অস্থায় তার পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে মাথাগুঁজার আশ্রয় হিসেবে সরকারের কাছে সামান্য একটু জমি আর একটি ঘরের দাবি করছেন তিনি। বাবুল মিয়া জানান ‘তিনি মুর্খ অশিক্ষিত মানুষ, অনেক দিন আগে তার এক আত্মীয়কে তার নামে ভূমিহীনের একটি দরখাস্ত দেয়ার জন্য বলেছিলেন, এছাড়া এলাকার মেম্বারকেও বলেছেন। সরকারি জমিতে থাকেন, তার ভাঙ্গাচুরা ঘরে বৃষ্টি হলে পানি পরে। বাবুল মিনতির সুরে বলেন ‘সরকার গরিব মাইনস্যেরে জমি আর গর কইরা দিতাছে, আমারে সরকারি জমি আর একটা গর দেওনের লাইগ্যা কইছলাম, মেম্বর কইছিন আবার আইলে দিব। ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. দুলাল ফকির জানান ‘বাবুল মিয়া বর্তমানে তার ওয়ার্ডে খাস সরকারি জমিতে বসবাস করছেন, সে তিন নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। ভূমি-ঘরহীনের তালিকায় তার নাম গেছে কি-না তা তিনি জানেন না। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. খোরশেদ আলম জানান ‘বাবুল বেশ কয়েক বছর আগে তার ওয়ার্ড থেকে চলে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম জানান ইউনিয়নের জমি ও ঘরহীন মানুষদের তালিকাভূক্তির জন্য তারা মাইকিং করেছেন। তালিকা করেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস। ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, তিনি উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বে আছেন। ধীতপুর ইউনিয়নে প্রায় দুইমাস যাবত তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।