৮০ শতাংশ মানুষের টিকা যোগানই বড় চ্যালেঞ্জ

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তার যোগান দেয়াটাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। লক্ষ্য অনুযায়ী ১৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য নয় কোটি ডোজ টিকা (জনপ্রতি ২টি) পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ আশা করছে। বাকি নয় কোটি ৩২ লাখ মানুষের জন্য ১৮ কোটি ৬৪ লাখ ডোজ টিকার যোগান দিতে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা’র টিকার প্রযুক্তি পাওয়ার চেষ্টা বাংলাদেশ করছে বলে সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

এই প্রযুক্তি হাতে পেলে দেশেই টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে চীনের করোনা টিকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘সিনোভ্যাক’র সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পুনরায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলো বেশি দামে টিকা কিনে মজুদ করছে। এই অবস্থায় ধনী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আরও ৯ কোটি ৩২ লাখ মানুষের টিকার যোগান দেয়া স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের জন্য টিকা পাওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং- জানতে চাইলে ‘কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি’র সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ। সব দেশকে এক জোট হয়ে দর কষাকষি করতে হবে।’

চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানি করোনার টিকার প্রযুক্তি সরবরাহে রাজি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা চীনের সিনোভ্যাককে ফিরিয়ে দিয়েছি। এখন আবারও সিনোভ্যাকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা প্রযুক্তি সরবরাহে রাজি হলে দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় টিকা উৎপাদন হতে পারে। এছাড়াও সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার টেকনোলজিও পাওয়ার চেষ্টা চলছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শতকরা ২০ শতাংশ মানুষের কাছে টিকা পৌঁছানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে উল্লেখ করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এই ২০ শতাংশ টিকা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। টিকা প্রস্তুতকারক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোভ্যাক্সে যোগ না দিলে, ধনী দেশগুলো সহযোগিতা না করলে, গরিব দেশের মানুষকে টিকা দেয়া কঠিন।’

সরকারি হিসেবে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৩ জন। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন নাগরিককে করোনার টিকা দেয়ার খসড়া পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার টিকা যোগানোর চেষ্টা করছে বলে সংবাদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনার টিকা কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এই টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ আগামী জানুয়ারির শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে আসতে পারে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জুনের মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় আরও ছয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে বলে গত ২১ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভাকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া চেষ্টা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সেটা নির্ভর করছে তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর। কিন্তু করোনার টিকা উৎপাদন খুব একটা সহজ নয়, জটিল।’

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আওতায় অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং ইউরোপীয়ান কমিশনের সহযোগিতায় গঠিত ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’র (কোভ্যাক্স) আওতায় আট কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে কেনা এবং কোভ্যাক্স সুবিধায় মোট সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য ৯ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাচ্ছে। বাকি ৯ কোটি ৩২ লাখ মানুষের টিকার যোগান দেয়াই এখন স্বাস্থ্য বিভাগের বড় চ্যালেঞ্জ।

৯ কোটি ৩২ লাখ মানুষের করোনার টিকা কিভাবে যোগান দেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে প্রফেসর ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘কোভাক্স সুবিধার আওতায় এই টিকা পাওয়ার চেষ্টা চলছে। কোভাক্স প্রথম পর্যায়ে ২০ শতাংশ সাবসিডিতে (ভর্তুকি) আমাদের ভ্যাকসিন দিচ্ছে। পরবর্তীতে কোভাক্স থেকেই একটু বেশি দামে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এছাড়াও প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমেও ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা চলছে।’

পাঁচ ধাপে করোনার টিকা প্রয়োগ

জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা খসড়া অনুযায়ী, তিন পর্বে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জনকে করোনা টিকা দেয়া হবে। টিকায় অগ্রাধিকার পাবে করোনা প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ। জনপ্রতি দুটি করে মোট ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬ ডোজ টিকা।

বিশাল পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে ডা. মুশতাক বলেন, ‘টিকার প্রাপ্তিসাপেক্ষে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব।’ প্রথমে যে টিকা আসবে তার দুই ভাগের এক ভাগ প্রথম ডোজ হিসেবে দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাকিটা রেখে দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজের জন্য। এমনভাবে টিকা দেব, যেন প্রথমবার দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায়। এভাবে টিকা পাওয়া নিশ্চিত হলে প্রথম দ্বিতীয় ধাপ শেষ করা হবে। এভাবে প্রথম ফেইজে টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ফেইজে যাব।’

খসড়া পরিকল্পনায় প্রথম ফেইজের টিকা দুই ধাপে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবে, যা মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকার আওতায় আসবে।

প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হবে। এ পর্যায়ে ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন (মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ) টিকা পাবেন।

তৃতীয় পর্যায়েও দুই ধাপে করোনা টিকা দেয়া হবে। এ পর্যায়ের প্রথম ধাপে জনসংখ্যার আরও ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। শেষ ধাপে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

টিকায় অগ্রাধিকার যাদের

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, টিকার তালিকায় সবার আগে আছেন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করা স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং স্বাস্থ্য খাতের স্বেচ্ছাসেবীরা। এর মধ্যে সম্মুখসারির চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, প্যাথলজি ও ল্যাবের কর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, সাইকোথেরাপিস্ট, অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ চার লাখ ৬৩ হাজার ৩৬১ জনকে টিকা দেয়া হবে; যার মধ্যে তিন লাখ ৩২ হাজার ২৭ জন সরকারি প্রতিষ্ঠানের।

করোনা মোকাবিলায় সরাসরি জড়িত বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফারি, প্যাথলজি কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউটিনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স চালক মিলিয়ে সাত লাখ মানুষও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আসবে।

এছাড়াও করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয় কিন্তু টিকা বিতরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাত সচল রাখায় জড়িত সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ৫০ হাজার জন; মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুই লাখ ১০ হাজার জন; সম্মুখসারিতে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন সদস্য, যার মধ্যে দুই লাখ ১২ হাজার ছয়জন পুলিশ এবং বাকিরা আনসার ও ভিডিপির নিয়মিত ও প্রশিক্ষিত সদস্য।

সশস্ত্রবাহিনীর তিন লাখ আট হাজার ৭১৩ জন সদস্য প্রথম ধাপে টিকা পাবেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর দুই লাখ ৭৪ হাজার ৯১৩ জন, নৌবাহিনীর ২২ হাজার জন, বিমানবাহিনীর ১৪ হাজার জন, বিজিবির ৫০ হাজার সদস্য। র‌্যাব সদস্যদের নিয়োগ পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে হওয়ায় তারা নিজস্ব বাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা সেনাবাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন।

অন্যদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৫ হাজার কর্মী এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ৫০ হাজার জন শুরুতে টিকা পাবেন। এক্ষেত্রে যারা ফ্রন্টলাইনার হিসেবে মাঠে কাজ করছেন তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

৬৮ হাজার ২৯৮ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি শুরুতে টিকা পাবেন। এরমধ্যে সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর এবং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার এক লাখ ৫০ হাজার কর্মী, যারা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিষ্কাশন এবং মশক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন।

অপ্রশিক্ষিত এক লাখ ২০ প্রবাসী কর্মীকেও করোনা টিকা দেয়া হবে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত তিন লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মী, যারা জরুরি সেবা দিচ্ছেন তারাও টিকা পাবেন।

প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংকারও টিকা পাবেন। তারা দেশের অর্থনৈতিক সেবায় যুক্ত রয়েছেন, যাদের সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি বলে খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।

পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ধর্মীয় নেতাও টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে, যাদের মধ্যে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার পুরোহিতরা অন্যতম। দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার কর্মীও প্রথম ধাপে টিকা পাবে। বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি, ফায়ার সার্ভিসের সাড়ে তিন লাখ কর্মী, বিমান, স্থল এবং সমুদ্র বন্দরের কর্মীরা বিদেশ ফেরত এবং বিদেশগামীদের সংস্পর্শে আসেন। এ কারণে এই শ্রেণীকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বিভিন্ন বন্দরের দেড় লাখ কর্মীকে শুরুতে টিকা দেয়া হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী ২৬ হাজার ৭২১ জন স্বাস্থ্যকর্মীও প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন।

এইডস, যক্ষ্মা এবং ক্যান্সারের মতো রোগের ওষুধ গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে এমন পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার মানুষও টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন। এক লাখ এক হাজার ৯৪৯ জনকে দেয়ার মতো টিকা সংরক্ষণে রাখা হবে, যা জরুরি ও মহামারী সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার হবে।

খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ৬০ বছর অথবা তারচেয়ে বেশি বয়সের সম্ভাব্য জনসংখ্যা এক কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৩৬৯ জন। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার আট দশমিক দুই শতাংশ।

প্রথম ফেইজের দ্বিতীয় ধাপে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকা পাবেন, এই ধাপে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকরা অগ্রাধিকার পাবেন। প্রথম ফেইজের দ্বিতীয় ধাপে সাত শতাংশ হিসেবে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। বাকি এক দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে টিকা পেতে পারেন। এই ধাপে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন এবং যাদের চিকিৎসায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে এমন জনগোষ্ঠীও টিকা পেতে পারেন।

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪২

৮০ শতাংশ মানুষের টিকা যোগানই বড় চ্যালেঞ্জ

রাকিব উদ্দিন

image

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তার যোগান দেয়াটাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। লক্ষ্য অনুযায়ী ১৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য নয় কোটি ডোজ টিকা (জনপ্রতি ২টি) পাওয়া যাবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ আশা করছে। বাকি নয় কোটি ৩২ লাখ মানুষের জন্য ১৮ কোটি ৬৪ লাখ ডোজ টিকার যোগান দিতে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা’র টিকার প্রযুক্তি পাওয়ার চেষ্টা বাংলাদেশ করছে বলে সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

এই প্রযুক্তি হাতে পেলে দেশেই টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে চীনের করোনা টিকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘সিনোভ্যাক’র সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পুনরায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলো বেশি দামে টিকা কিনে মজুদ করছে। এই অবস্থায় ধনী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আরও ৯ কোটি ৩২ লাখ মানুষের টিকার যোগান দেয়া স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের জন্য টিকা পাওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং- জানতে চাইলে ‘কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি’র সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ। সব দেশকে এক জোট হয়ে দর কষাকষি করতে হবে।’

চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানি করোনার টিকার প্রযুক্তি সরবরাহে রাজি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা চীনের সিনোভ্যাককে ফিরিয়ে দিয়েছি। এখন আবারও সিনোভ্যাকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা প্রযুক্তি সরবরাহে রাজি হলে দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় টিকা উৎপাদন হতে পারে। এছাড়াও সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার টেকনোলজিও পাওয়ার চেষ্টা চলছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শতকরা ২০ শতাংশ মানুষের কাছে টিকা পৌঁছানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে উল্লেখ করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এই ২০ শতাংশ টিকা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। টিকা প্রস্তুতকারক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোভ্যাক্সে যোগ না দিলে, ধনী দেশগুলো সহযোগিতা না করলে, গরিব দেশের মানুষকে টিকা দেয়া কঠিন।’

সরকারি হিসেবে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৩ জন। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন নাগরিককে করোনার টিকা দেয়ার খসড়া পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার টিকা যোগানোর চেষ্টা করছে বলে সংবাদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনার টিকা কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এই টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ আগামী জানুয়ারির শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে আসতে পারে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জুনের মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় আরও ছয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে বলে গত ২১ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভাকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া চেষ্টা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সেটা নির্ভর করছে তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর। কিন্তু করোনার টিকা উৎপাদন খুব একটা সহজ নয়, জটিল।’

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আওতায় অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং ইউরোপীয়ান কমিশনের সহযোগিতায় গঠিত ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’র (কোভ্যাক্স) আওতায় আট কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে কেনা এবং কোভ্যাক্স সুবিধায় মোট সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য ৯ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাচ্ছে। বাকি ৯ কোটি ৩২ লাখ মানুষের টিকার যোগান দেয়াই এখন স্বাস্থ্য বিভাগের বড় চ্যালেঞ্জ।

৯ কোটি ৩২ লাখ মানুষের করোনার টিকা কিভাবে যোগান দেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে প্রফেসর ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘কোভাক্স সুবিধার আওতায় এই টিকা পাওয়ার চেষ্টা চলছে। কোভাক্স প্রথম পর্যায়ে ২০ শতাংশ সাবসিডিতে (ভর্তুকি) আমাদের ভ্যাকসিন দিচ্ছে। পরবর্তীতে কোভাক্স থেকেই একটু বেশি দামে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এছাড়াও প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমেও ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা চলছে।’

পাঁচ ধাপে করোনার টিকা প্রয়োগ

জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা খসড়া অনুযায়ী, তিন পর্বে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জনকে করোনা টিকা দেয়া হবে। টিকায় অগ্রাধিকার পাবে করোনা প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ। জনপ্রতি দুটি করে মোট ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬ ডোজ টিকা।

বিশাল পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে ডা. মুশতাক বলেন, ‘টিকার প্রাপ্তিসাপেক্ষে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব।’ প্রথমে যে টিকা আসবে তার দুই ভাগের এক ভাগ প্রথম ডোজ হিসেবে দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাকিটা রেখে দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজের জন্য। এমনভাবে টিকা দেব, যেন প্রথমবার দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায়। এভাবে টিকা পাওয়া নিশ্চিত হলে প্রথম দ্বিতীয় ধাপ শেষ করা হবে। এভাবে প্রথম ফেইজে টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ফেইজে যাব।’

খসড়া পরিকল্পনায় প্রথম ফেইজের টিকা দুই ধাপে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবে, যা মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকার আওতায় আসবে।

প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হবে। এ পর্যায়ে ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন (মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ) টিকা পাবেন।

তৃতীয় পর্যায়েও দুই ধাপে করোনা টিকা দেয়া হবে। এ পর্যায়ের প্রথম ধাপে জনসংখ্যার আরও ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। শেষ ধাপে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

টিকায় অগ্রাধিকার যাদের

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, টিকার তালিকায় সবার আগে আছেন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করা স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং স্বাস্থ্য খাতের স্বেচ্ছাসেবীরা। এর মধ্যে সম্মুখসারির চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, প্যাথলজি ও ল্যাবের কর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, সাইকোথেরাপিস্ট, অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ চার লাখ ৬৩ হাজার ৩৬১ জনকে টিকা দেয়া হবে; যার মধ্যে তিন লাখ ৩২ হাজার ২৭ জন সরকারি প্রতিষ্ঠানের।

করোনা মোকাবিলায় সরাসরি জড়িত বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফারি, প্যাথলজি কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউটিনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স চালক মিলিয়ে সাত লাখ মানুষও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় আসবে।

এছাড়াও করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয় কিন্তু টিকা বিতরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাত সচল রাখায় জড়িত সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ৫০ হাজার জন; মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুই লাখ ১০ হাজার জন; সম্মুখসারিতে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন সদস্য, যার মধ্যে দুই লাখ ১২ হাজার ছয়জন পুলিশ এবং বাকিরা আনসার ও ভিডিপির নিয়মিত ও প্রশিক্ষিত সদস্য।

সশস্ত্রবাহিনীর তিন লাখ আট হাজার ৭১৩ জন সদস্য প্রথম ধাপে টিকা পাবেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর দুই লাখ ৭৪ হাজার ৯১৩ জন, নৌবাহিনীর ২২ হাজার জন, বিমানবাহিনীর ১৪ হাজার জন, বিজিবির ৫০ হাজার সদস্য। র‌্যাব সদস্যদের নিয়োগ পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে হওয়ায় তারা নিজস্ব বাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা সেনাবাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন।

অন্যদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ৫ হাজার কর্মী এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ৫০ হাজার জন শুরুতে টিকা পাবেন। এক্ষেত্রে যারা ফ্রন্টলাইনার হিসেবে মাঠে কাজ করছেন তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

৬৮ হাজার ২৯৮ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি শুরুতে টিকা পাবেন। এরমধ্যে সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর এবং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার এক লাখ ৫০ হাজার কর্মী, যারা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিষ্কাশন এবং মশক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন।

অপ্রশিক্ষিত এক লাখ ২০ প্রবাসী কর্মীকেও করোনা টিকা দেয়া হবে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত তিন লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মী, যারা জরুরি সেবা দিচ্ছেন তারাও টিকা পাবেন।

প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংকারও টিকা পাবেন। তারা দেশের অর্থনৈতিক সেবায় যুক্ত রয়েছেন, যাদের সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি বলে খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।

পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ধর্মীয় নেতাও টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে, যাদের মধ্যে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার পুরোহিতরা অন্যতম। দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার কর্মীও প্রথম ধাপে টিকা পাবে। বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি, ফায়ার সার্ভিসের সাড়ে তিন লাখ কর্মী, বিমান, স্থল এবং সমুদ্র বন্দরের কর্মীরা বিদেশ ফেরত এবং বিদেশগামীদের সংস্পর্শে আসেন। এ কারণে এই শ্রেণীকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বিভিন্ন বন্দরের দেড় লাখ কর্মীকে শুরুতে টিকা দেয়া হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী ২৬ হাজার ৭২১ জন স্বাস্থ্যকর্মীও প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন।

এইডস, যক্ষ্মা এবং ক্যান্সারের মতো রোগের ওষুধ গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে এমন পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার মানুষও টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন। এক লাখ এক হাজার ৯৪৯ জনকে দেয়ার মতো টিকা সংরক্ষণে রাখা হবে, যা জরুরি ও মহামারী সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার হবে।

খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ৬০ বছর অথবা তারচেয়ে বেশি বয়সের সম্ভাব্য জনসংখ্যা এক কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৩৬৯ জন। এটি দেশের মোট জনসংখ্যার আট দশমিক দুই শতাংশ।

প্রথম ফেইজের দ্বিতীয় ধাপে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকা পাবেন, এই ধাপে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকরা অগ্রাধিকার পাবেন। প্রথম ফেইজের দ্বিতীয় ধাপে সাত শতাংশ হিসেবে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। বাকি এক দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে টিকা পেতে পারেন। এই ধাপে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন এবং যাদের চিকিৎসায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে এমন জনগোষ্ঠীও টিকা পেতে পারেন।