পুলিশের নির্যাতনে প্রতিবন্ধী অটোচালক হত্যা

হত্যা নয়, আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা রেকর্ড করা হয়

বিক্ষুব্ধ জনতার সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ : আহত ২০

রংপুর নগরীর পার্কের মোড় কোর্টপাড়া এলাকায় প্রতিবন্ধী অটোচালক নাজমুল ইসলামকে মিথ্যা চুরির ঘটনায় দায়ী করে তাকে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও হত্যা মামলা দায়ের না করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এদিকে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছে নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকা, হাতের নখ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা, হাতুড়ি দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়েরের ঘটনাকে অমানবিক বর্বোরোচিত আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করে হত্যাকারী পুলিশ সদস্য হাসান ও তার স্ত্রী সাথী বেগমের ফাঁসি দাবি করেছে। সেই সঙ্গে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা রেকর্ডকারী ও নেপথ্যের হুকুমদাতা পুলিশদের শাস্তি দাবি করেছে।

অপরদিকে প্রতিবন্ধী নাজমুলকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে উল্টো নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্য ও তার স্ত্রীকে রক্ষার মিশন সফল করতে হত্যা মামলা রেকর্ড না করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করার খবর জানাজানি হলে নিহতের স্বজন এলাকাবাসী ও বিক্ষুব্ধ জনতা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পার্কের মোড় এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ এবং রংপুর ও লালমনিরহাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও পুলিশের লাঠি চার্জে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।

সরেজমিন পার্কের মোড় কোর্টপাড়া এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ির মূল গেটে তালা ঝুলছে। নিহত নাজমুলের স্ত্রী শ্যামলী বেগম জানালেন তার স্বামীকে নির্দয়ভাবে অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ সদস্য হাসান ও তার স্ত্রী সাথী বেগম। তিনি তাদের ফাঁসি দাবি করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাজহাট থানা পুলিশ তাকে থানায় ডেকে নিয়ে কাগজে সই নিয়েছে সেখানে হত্যা মামলা না করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছে এ বিষয়টি তাকে পুলিশ জানায়নি।

তিনি বলেন, তারা তো রাতভর নির্যাতন করেছে যা আশপাশের শত শত মানুষ দেখেছে। তাছাড়া তার স্বামী প্রতিবন্ধী তার পা খোড়া সে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারে না সে কিভাবে ঘরের সিলিং-এর মধ্যে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে? একজন প্রতিবন্ধী এবং শারীরিকভাবে পঙ্গু মানুষকে নিয়ে পুলিশের এ ধরনের নাটক করার কোন মানে হয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী মর্জিনা বেগম ও আলেয়া বেগম জানিয়েছেন, নাজমুলকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার দৃশ্য তারা দেখেছেন। তার হাতের আঙ্গুলে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হাতগুলো থেতলে দেয়া হয়েছে। প্লাস দিয়ে হাতের আঙ্গুলের বেশ কয়েকটি নখ তুলে ফেলা হয়েছে। সারারাত ধরে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরের দিন শুনলাম সে নাকি আত্মহত্যা করেছে এটা সাজানো নাটক ছাড়া আর কি হতে পারে। (তাদের বক্তব্য ভিডিও করা আছে)।

এদিকে বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন বলেছিলেন, তিনি দেখেছেন যে ঘরে আত্মহত্যা করেছে সেই ঘরটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। ফলে এটা নিঃসন্দেহে আত্মহত্যা। তার পরেও ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্য ও তার স্ত্রী তাই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে তাজহাট থানার ওসি আখতারুজ্জমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হত্যা মামলা হয়নি আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৩২৩/৩৪২/৩০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে দুপুর সাড়ে বারটায় কঠোর পুলিশি পাহারায় পুলিশ কনস্টেবল হাসান ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয় তাদের সরাসরি হাজত খানায় নেয়া হয়।

তবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাদের পক্ষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোন জামিনের আবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। পিপি আবদুল মালেক অ্যাডভোকেট জানান, আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪২

পুলিশের নির্যাতনে প্রতিবন্ধী অটোচালক হত্যা

হত্যা নয়, আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা রেকর্ড করা হয়

বিক্ষুব্ধ জনতার সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ : আহত ২০

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

image

রংপুর : গতকাল রংপুর-লালমনিরহাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা -সংবাদ

রংপুর নগরীর পার্কের মোড় কোর্টপাড়া এলাকায় প্রতিবন্ধী অটোচালক নাজমুল ইসলামকে মিথ্যা চুরির ঘটনায় দায়ী করে তাকে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও হত্যা মামলা দায়ের না করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এদিকে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছে নিহতের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকা, হাতের নখ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা, হাতুড়ি দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়েরের ঘটনাকে অমানবিক বর্বোরোচিত আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করে হত্যাকারী পুলিশ সদস্য হাসান ও তার স্ত্রী সাথী বেগমের ফাঁসি দাবি করেছে। সেই সঙ্গে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা রেকর্ডকারী ও নেপথ্যের হুকুমদাতা পুলিশদের শাস্তি দাবি করেছে।

অপরদিকে প্রতিবন্ধী নাজমুলকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে উল্টো নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্য ও তার স্ত্রীকে রক্ষার মিশন সফল করতে হত্যা মামলা রেকর্ড না করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করার খবর জানাজানি হলে নিহতের স্বজন এলাকাবাসী ও বিক্ষুব্ধ জনতা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পার্কের মোড় এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ এবং রংপুর ও লালমনিরহাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও পুলিশের লাঠি চার্জে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।

সরেজমিন পার্কের মোড় কোর্টপাড়া এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ির মূল গেটে তালা ঝুলছে। নিহত নাজমুলের স্ত্রী শ্যামলী বেগম জানালেন তার স্বামীকে নির্দয়ভাবে অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ সদস্য হাসান ও তার স্ত্রী সাথী বেগম। তিনি তাদের ফাঁসি দাবি করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাজহাট থানা পুলিশ তাকে থানায় ডেকে নিয়ে কাগজে সই নিয়েছে সেখানে হত্যা মামলা না করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছে এ বিষয়টি তাকে পুলিশ জানায়নি।

তিনি বলেন, তারা তো রাতভর নির্যাতন করেছে যা আশপাশের শত শত মানুষ দেখেছে। তাছাড়া তার স্বামী প্রতিবন্ধী তার পা খোড়া সে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারে না সে কিভাবে ঘরের সিলিং-এর মধ্যে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে? একজন প্রতিবন্ধী এবং শারীরিকভাবে পঙ্গু মানুষকে নিয়ে পুলিশের এ ধরনের নাটক করার কোন মানে হয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী মর্জিনা বেগম ও আলেয়া বেগম জানিয়েছেন, নাজমুলকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার দৃশ্য তারা দেখেছেন। তার হাতের আঙ্গুলে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হাতগুলো থেতলে দেয়া হয়েছে। প্লাস দিয়ে হাতের আঙ্গুলের বেশ কয়েকটি নখ তুলে ফেলা হয়েছে। সারারাত ধরে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরের দিন শুনলাম সে নাকি আত্মহত্যা করেছে এটা সাজানো নাটক ছাড়া আর কি হতে পারে। (তাদের বক্তব্য ভিডিও করা আছে)।

এদিকে বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন বলেছিলেন, তিনি দেখেছেন যে ঘরে আত্মহত্যা করেছে সেই ঘরটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। ফলে এটা নিঃসন্দেহে আত্মহত্যা। তার পরেও ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্য ও তার স্ত্রী তাই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে তাজহাট থানার ওসি আখতারুজ্জমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হত্যা মামলা হয়নি আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৩২৩/৩৪২/৩০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে দুপুর সাড়ে বারটায় কঠোর পুলিশি পাহারায় পুলিশ কনস্টেবল হাসান ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয় তাদের সরাসরি হাজত খানায় নেয়া হয়।

তবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাদের পক্ষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোন জামিনের আবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। পিপি আবদুল মালেক অ্যাডভোকেট জানান, আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।