ফ্লাইট উড়ার আগেই বোমাতঙ্ক : উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর মহড়া

৯৯৯ কলসাইন নিয়ে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাই যাওয়ার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে বাংলাদেশ বিমানের ‘বিজি ৭৩৭’ ফ্লাইটটি। যাত্রীরাও উঠে পড়েছেন বিমানে এ সময় বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে একটি ফোনকল আসে। কন্ট্রোল টাওয়ারের কর্মকর্তারা সালাম দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে ভারি পুরুষ কণ্ঠে বিপরীত প্রান্ত থেকে বলা হয়, দুবাইগামী বিজি ৭৩৭ ফ্লাইটটিতে শক্তিশালী বোমা রাখা আছে। যে কোন সময় বিস্ফোরণ ঘটবে।

একই সময়ে শাহজালালের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচ তৌহিদুল আহসানের টেলিফোনেও এই হুমকি আসে। নাম-পরিচয় না জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন হুমকিদাতা। ফোনকল দুটি পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে এক্সিডেন্ট কমিটির কর্মকর্তারা কন্ট্রোল টাওয়ার ও শাহজালালের পরিচালককে বোমা হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যাক্টিভেট করুন ও সব ধরনের ইমার্জেন্সি অ্যাকশন শুরু করুন। তাৎক্ষণিকভাবে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (ইওসি) কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা টাওয়ার এবং ফ্লোর চার্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, কুইক রেসপন্স ফোর্স, আর্মি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যার) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বোমা হুমকির বিষয়টি অবহিত করা হয়।

জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় অনসি কমান্ডারের দায়িত্ব নেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচ তৌহিদুল আহসান। তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব নেন উইং কমান্ডার আজম। তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হয় পরবর্তী কার্যক্রম। এদিন দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমনই এক দৃশ্যপটের অবতারণা হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেশন রুলস অনুযায়ী প্রতি দুই বছরে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে মহড়া করতে হয়। সে অনুযায়ী শাহজালালের এক্সপোর্ট কার্গো অ্যাপ্রোন এরিয়ার ৮ নম্বর গেটের অদূরে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে বোমা হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিজি-৭৩৭-এর পাইলট ও ক্রুদের বিষয়টি জানানো হয়। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যাত্রীদের অফলোড করার ব্যবস্থা নেন। যাত্রীদের উদ্দেশে পাইলট বলেন, সমস্যার কারণে সব যাত্রীকে হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে ক্রুদের সহায়তায় ফ্লাইট থেকে নেমে লাউঞ্জে যেতে হবে। নামার সময় তাড়াহুড়া না করারও অনুরোধ জানানো হয় ঘোষণায়। পরবর্তী ঘোষণার মাধ্যমে আবার কখন যাত্রা হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে। প্রথমেই শাহজালাল বিমানবন্দরের ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স বিমানটির দিকে এগিয়ে যায়। বিমানটির প্রাথমিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বা ইনার কর্ডনের জন্য দ্রুত এগিয়ে যান এপিবিএন ও অ্যাবসেক সদস্যরা। এ সময় ঘটনাস্থলে একে একে উপস্থিত হয় স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাম্বুলেন্স, বিমানবাহিনীর ফায়ার বিগ্রেড ও অ্যাম্বুলেন্স।

বোমা হুমকির শিকার বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপদ তল্লাশি কার্যক্রমে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। বোমা হুমকির খবর পেয়ে বিমানবাহিনীর কুইক রেসপন্স ফোর্স ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করে বিমানবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। ইউনিটের দক্ষ সদস্যরা তাদের পোর্টেবল জার্মান কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করেন। ফলে সম্ভাব্য সব প্রকার রিমোট কন্ট্রোল কমিউনিকেশনের সিস্টেম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মেহেদুল হাসান এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড লেফটেন্যান্ট ক্যাপ্টেন আজম ডিসপোজাল স্যুট পরে ধীরে ধীরে বিমানটির দিকে এগিয়ে যান। আধুনিক ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে বিমানের ভেতর বোমার অবস্থান খুঁজে দেখেন তারা। এ সময় বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের আরও চার সদস্য বিমানের বাইরের দিকে বোমা রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখছিলেন। এদিকে, বিমান থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে কয়েকজন যাত্রী আহত হন। তাদের দ্রুত চিকিৎসা ও হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এ হেলিকপ্টারে পাইলট হিসেবে ছিলেন স্কোয়াড্রন আনজুম ও স্কোয়াড্রন ইফতি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাম্বুলেন্সেও আহত যাত্রীদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা হয়।

এ কার্যক্রমে সহায়তা করতে উপস্থিত ছিল সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডগ স্কোয়াড টিম। বিমানবাহিনীর অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের দুটি দক্ষ কমান্ডো দল দুটি হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। হেলিকপ্টার দুটির একটিতে পাইলট হিসেবে ছিলেন উইং কমান্ডার আদনান ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ এবং অপরটিতে উইং কমান্ডার ইনসাফ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাদমান।

ঘণ্টাখানেকের তল্লাশি শেষে বিমানের ভেতর একটি ব্রিফকেসে বোমা সদৃশ বস্তুর উপস্থিতি খুঁজে পায় ডিসপোজাল ইউনিট। ইউনিটের বিশেষজ্ঞরা বোমা সদৃশ বস্তুটি ‘বিস্ফোরক’ হতে পারে এমন আশঙ্কায় পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করেন। এরপর বিশেষ পদ্ধতিতে ব্রিফকেসটি নামিয়ে এনে বিশেষ কন্টেইনারে রাখা হয়। এ কন্টেইনার পাঁচ কেজি ওজনের বিস্ফোরকের দহন সহ্য করতে পারে। বস্তুটি অপসারণের পর বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তাকর্মী ও ডগ স্কোয়াডের সাহায্যে বিমানটির আশপাশে আর কোথাও এমন কিছু আছে কিনা পরীক্ষা করে বিমানবন্দরের পরিচালক বিমানটিকে ঝুঁকিমুক্ত বলে ঘোষণা করেন।

এরই মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে নিরাপত্তা মহড়ার। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন রুলস অনুসারে, বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রতি দুই বছর পর পর এ ধরনের মহড়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের পর শাহজালাল বিমানবন্দরে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হলো। এ সময় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল সাইদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর
দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার যোগ্য করে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান
রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি জাপানের রাষ্ট্রদূত
পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাসেমের মৃত্যু
বিএনপি রাজনৈতিক আইসোলেশনে আছে : কাদের
আ’লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটি ঘোষণা
আজ বিটিভির ৫৬ বছরে পদার্পণ
শেষ বিদায়ে ভালোবাসায় সিক্ত নাট্যজন মান্নান হীরা
খুলনায় দুটি পাটকল লিজ নিতে চায় চীন
সুশাসনের ঘাটতি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ১২ দফা সুপারিশ টিআইবির
টিআরপি নির্ধারণের কৌশল প্রণয়নে কমিটি হচ্ছে তথ্যমন্ত্রী
৯৪ হাজারের বেশি শিশু পাবে নিজ ভাষায় পাঠ্যবই
ঘন কুয়াশায় শীতের হাওয়ায় জীবন বিপর্যস্ত

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৭, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪২

শাহজালাল বিমানবন্দরে

ফ্লাইট উড়ার আগেই বোমাতঙ্ক : উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর মহড়া

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

৯৯৯ কলসাইন নিয়ে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাই যাওয়ার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে বাংলাদেশ বিমানের ‘বিজি ৭৩৭’ ফ্লাইটটি। যাত্রীরাও উঠে পড়েছেন বিমানে এ সময় বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে একটি ফোনকল আসে। কন্ট্রোল টাওয়ারের কর্মকর্তারা সালাম দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে ভারি পুরুষ কণ্ঠে বিপরীত প্রান্ত থেকে বলা হয়, দুবাইগামী বিজি ৭৩৭ ফ্লাইটটিতে শক্তিশালী বোমা রাখা আছে। যে কোন সময় বিস্ফোরণ ঘটবে।

একই সময়ে শাহজালালের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচ তৌহিদুল আহসানের টেলিফোনেও এই হুমকি আসে। নাম-পরিচয় না জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন হুমকিদাতা। ফোনকল দুটি পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে এক্সিডেন্ট কমিটির কর্মকর্তারা কন্ট্রোল টাওয়ার ও শাহজালালের পরিচালককে বোমা হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যাক্টিভেট করুন ও সব ধরনের ইমার্জেন্সি অ্যাকশন শুরু করুন। তাৎক্ষণিকভাবে ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (ইওসি) কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা টাওয়ার এবং ফ্লোর চার্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, কুইক রেসপন্স ফোর্স, আর্মি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যার) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বোমা হুমকির বিষয়টি অবহিত করা হয়।

জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় অনসি কমান্ডারের দায়িত্ব নেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচ তৌহিদুল আহসান। তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব নেন উইং কমান্ডার আজম। তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হয় পরবর্তী কার্যক্রম। এদিন দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমনই এক দৃশ্যপটের অবতারণা হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেশন রুলস অনুযায়ী প্রতি দুই বছরে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অংশ হিসেবে মহড়া করতে হয়। সে অনুযায়ী শাহজালালের এক্সপোর্ট কার্গো অ্যাপ্রোন এরিয়ার ৮ নম্বর গেটের অদূরে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে বোমা হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিজি-৭৩৭-এর পাইলট ও ক্রুদের বিষয়টি জানানো হয়। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যাত্রীদের অফলোড করার ব্যবস্থা নেন। যাত্রীদের উদ্দেশে পাইলট বলেন, সমস্যার কারণে সব যাত্রীকে হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে ক্রুদের সহায়তায় ফ্লাইট থেকে নেমে লাউঞ্জে যেতে হবে। নামার সময় তাড়াহুড়া না করারও অনুরোধ জানানো হয় ঘোষণায়। পরবর্তী ঘোষণার মাধ্যমে আবার কখন যাত্রা হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে। প্রথমেই শাহজালাল বিমানবন্দরের ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স বিমানটির দিকে এগিয়ে যায়। বিমানটির প্রাথমিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বা ইনার কর্ডনের জন্য দ্রুত এগিয়ে যান এপিবিএন ও অ্যাবসেক সদস্যরা। এ সময় ঘটনাস্থলে একে একে উপস্থিত হয় স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাম্বুলেন্স, বিমানবাহিনীর ফায়ার বিগ্রেড ও অ্যাম্বুলেন্স।

বোমা হুমকির শিকার বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপদ তল্লাশি কার্যক্রমে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। বোমা হুমকির খবর পেয়ে বিমানবাহিনীর কুইক রেসপন্স ফোর্স ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ শুরু করে বিমানবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। ইউনিটের দক্ষ সদস্যরা তাদের পোর্টেবল জার্মান কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করেন। ফলে সম্ভাব্য সব প্রকার রিমোট কন্ট্রোল কমিউনিকেশনের সিস্টেম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মেহেদুল হাসান এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড লেফটেন্যান্ট ক্যাপ্টেন আজম ডিসপোজাল স্যুট পরে ধীরে ধীরে বিমানটির দিকে এগিয়ে যান। আধুনিক ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে বিমানের ভেতর বোমার অবস্থান খুঁজে দেখেন তারা। এ সময় বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের আরও চার সদস্য বিমানের বাইরের দিকে বোমা রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখছিলেন। এদিকে, বিমান থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে কয়েকজন যাত্রী আহত হন। তাদের দ্রুত চিকিৎসা ও হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এ হেলিকপ্টারে পাইলট হিসেবে ছিলেন স্কোয়াড্রন আনজুম ও স্কোয়াড্রন ইফতি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাম্বুলেন্সেও আহত যাত্রীদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা হয়।

এ কার্যক্রমে সহায়তা করতে উপস্থিত ছিল সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডগ স্কোয়াড টিম। বিমানবাহিনীর অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের দুটি দক্ষ কমান্ডো দল দুটি হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। হেলিকপ্টার দুটির একটিতে পাইলট হিসেবে ছিলেন উইং কমান্ডার আদনান ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ এবং অপরটিতে উইং কমান্ডার ইনসাফ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাদমান।

ঘণ্টাখানেকের তল্লাশি শেষে বিমানের ভেতর একটি ব্রিফকেসে বোমা সদৃশ বস্তুর উপস্থিতি খুঁজে পায় ডিসপোজাল ইউনিট। ইউনিটের বিশেষজ্ঞরা বোমা সদৃশ বস্তুটি ‘বিস্ফোরক’ হতে পারে এমন আশঙ্কায় পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করেন। এরপর বিশেষ পদ্ধতিতে ব্রিফকেসটি নামিয়ে এনে বিশেষ কন্টেইনারে রাখা হয়। এ কন্টেইনার পাঁচ কেজি ওজনের বিস্ফোরকের দহন সহ্য করতে পারে। বস্তুটি অপসারণের পর বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তাকর্মী ও ডগ স্কোয়াডের সাহায্যে বিমানটির আশপাশে আর কোথাও এমন কিছু আছে কিনা পরীক্ষা করে বিমানবন্দরের পরিচালক বিমানটিকে ঝুঁকিমুক্ত বলে ঘোষণা করেন।

এরই মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে নিরাপত্তা মহড়ার। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন রুলস অনুসারে, বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রতি দুই বছর পর পর এ ধরনের মহড়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের পর শাহজালাল বিমানবন্দরে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হলো। এ সময় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল সাইদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।