খাদ্য গুদামের চাল কেনা নিয়ে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য

কাগজেকলমে ৫১টি হলেও বাস্তবে ৬/৭টি চালকল

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বন্যা চালকলের মালিক এসএ মতিন। তার চালকলটি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলেও প্রতিবছর উপজেলা খাদ্য বিভাগ থেকে খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করার বরাদ্দ পান। এভাবে উপজেলায় ৫১টি চালকলের মধ্যে ৭/৮টি ছাড়া বাকি চাল কল বন্ধের পরও তারা বরাদ্দ পান। খাদ্য কর্মকর্তাদের কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে খাদ্য বিভাগ।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে দীর্ঘ ৮ মাস পর খাদ্য বিভাগ থেকে পাওয়া চালকল মালিক ও তাদের কাছে থেকে কেনা দেখানো তালিকা নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব :

চলতি বছরেই শুধু চালের বাজার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। কিন্তু যুগ যুগ ধরে চলছিল খাদ্য বিভাগের চাল কেনার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য অনেক কম। ফলে আগে চাল কল ছিল ভবন আছে মেশিন নেই, কোন কোনটার বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই তারপরও তারা চালকলের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেন। মজার ব্যাপার বদরগঞ্জ উপজেলার খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত চালকল রয়েছে এর একটি চাল কলের নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড নেই।

বদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তালিকা নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে ৫১টি চালকলের কাছ থেকে ২ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন চাল কিনেছিল খাদ্য বিভাগ। গত বছর বোরো মৌসুমে চালের বাজারমূল্য ছিল সর্বোচ্চ ২৫ টাকা কেজি আর খাদ্য বিভাগ চাল কিনেছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দামে চাল কিনেছে খাদ্য বিভাগ। এভাবেই তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে চাল কিনেছে।

ফলে উপজেলা পর্যায়ে চালকলের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে চালকল প্রতি নিদৃষ্ট পরিমাণ চাল বরাদ্দ দিয়ে চাল কিনেছে তারা। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা চালকল মালিকদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ৪/৫ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চাল কিনেছে। এতে চালকল মালিকরাও লাভবান হয়েছে। তারা নিজেদের চালকল বন্ধ থাকলেও বাজার থেকে ২৪/২৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

২০১৯ সালের বোরো মৌসুমে এক একটি চালকল ৪৯ দশমিক ২৩০ মেট্রিক টন থেকে শুরু করে ২৪ টন পর্যন্ত চাল সরবরাহ করার বরাদ্দ পেয়েছে। তবে বেশিরভাগ চালকল ৪৯ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ মেট্রিক টন বরাদ্দ পেয়েছে।

বদরগঞ্জ খাদ্য গুদামের পেছনেই রয়েছে উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এসএ মতিনের চালকল। কাগজে কলমে তার চালকলের নাম বন্যা চালকল হলেও সেখানে কোন সাইনবোর্ড নেই। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো চালকলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আশপাশের লোকজন বলেছেন ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে চালকলটি বন্ধ। উনি আবার চাল কলের জায়গায় একটি কমিউনিটি সেন্টার বানিয়েছেন। ফলে চালকলে চাতালের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছিল না।

তিনি তার চালকলের কাছেই দাঁড়িয়ে তার কমিউনিটি সেন্টারের তদারকি করছিলেন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করলেন, ৭ বছর ধরে তার চালকল বন্ধ রয়েছে। তারপরও কিভাবে তিনি চাল সরবরাহের বরাদ্দ পান জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ২০১৯ সালের বোরো মৌসুমে তিনি বরাদ্দ পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ২৩০ মেট্রিক টন চাল। তিনি স্বীকার করেন, গত বছর বাজারে চালের দাম ছিল ২৫ টাকা, তিনি ৩৫ টাকা কেজিদরে চাল সরবরাহ করে বিল নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বদরগঞ্জ উপজেলায় ৫১টি চালকল কাগজ কলমে থাকলেও বাস্তবে মাত্র ৬/৭টি চালকল চালু আছে। তিনি আরও বলেন, বাজার থেকে ধান বা চাল কিনে ওইসব মিল থেকে চাল ধান সেদ্ধ করে চাল করে গুদামে সরবরাহ করেন। তার মতো অন্য চালকল মালিকরাও বাজার থেকে চাল কিনে খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেন। এ বছর বাজারে চালের দাম সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় তিনি কোন চাল সরবরাহ করেননি।

একইভাবে বদরগঞ্জ উপজেলার বালুয়া ভাটা এলাকায় পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা উত্তম কুমার ও তার স্ত্রী রিক্তা রানী সরকারের নামে দুটি চালকল থাকলেও চালকলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বলে সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। অথচ উত্তম কুমার চালকলের নামে এবং তার স্ত্রী রিক্তা রানী সাহার নামে বরাদ্দ পেয়েছিলেন ৪৯ মেট্রিক টন করে। একইভাবে রতন চালকল নামে একটি খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত চালকলে গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা, চাল কল বন্ধ। ওই চালকলের মালিক রতন কুমার কুন্ড গত বছর বরাদ্দ পেয়েছিলেন ৪৯ মেট্রিক টন।

রংপুর ২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বদরগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের চালকল রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে চালকলটি চালু রয়েছে। এলাকাবাসী জানান সারাবছরই চালকল চালু থাকে। ওই চালকলের নামে বরাদ্দ ছিল ৪৯ মেট্রিক টন। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কয়েক বছর আগেই তিনি তার মিলটি ভাড়া দিয়েছেন। মিলটি তিনি এখন দেখাশোনা করেন না। এলাকাবাসীও জানালেন এমপি সাহেব চালকলটি ভাড়া দিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বদরগঞ্জ উপজেলায় অনেক চালকল আছে যেসব বন্ধ। চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এসএ মতিনের চালকলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, তারপরও তিনি বরাদ্দ কিভাবে পান? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে শুনছি তিনি চালকল মালিক সমিতির সভাপতি।

অনুসন্ধানকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক চৌধুরী তার ভাই শান্তু চালকলের মালিক শান্তু চৌধুরীর চালকল দেখতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের চালকল বন্ধ। গত বছর তারাও ৪৯ টন করে চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। একইভাবে রশিদ চালকলে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে চাতাল নেই চালকলটি চালু আছে। তবে এলাকাবাসী জানালেন, মাঝে মাঝে মিল চালু করেন, সাধারণ কৃষকদের ধান ভেঙে দেন। তবে তিনি নিজে ধান কিনে সেদ্ধ করে চাল তৈরি করেন না। অথচ তিনিও বরাদ্দ পেয়েছিলেন ২৯ টন। এভাবেই বিভিন্ন চালকল ঘুরে চালকলগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। অথচ তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে বদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছায়েদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা চালকল চালু আছে কিনা দেখিনা, অবকাঠামো আছে কিনা তা দেখে চাল সরবরাহ করার বরাদ্দ দেই।

অডিট আপত্তি

বদরগঞ্জ খাদ্য বিভাগের ২০১৬-১৮ সালের অডিট করে বিভিন্ন অনিয়ম পেয়েছে অডিট টিম। তারা প্রতিবেদনে বলেছেন, মিলিং প্রত্যয়নপত্র সংরক্ষণ করা হয়নি। বিভিন্ন রেকর্ডপত্রে কাটাকাটি, ঘষামাজা, উপরিলিখনের আধিক্য দেখা যায়। সার্বিক বিষয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব কিছুই জানেন না বলে জানান।

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১২ পৌষ ১৪২৭, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

রংপুর বদরগঞ্জ

খাদ্য গুদামের চাল কেনা নিয়ে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য

কাগজেকলমে ৫১টি হলেও বাস্তবে ৬/৭টি চালকল

লিয়াকত আলী বাদল ও রুহুল আমিন সরকার, (বদরগঞ্জ) রংপুর থেকে ফিরে

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বন্যা চালকলের মালিক এসএ মতিন। তার চালকলটি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলেও প্রতিবছর উপজেলা খাদ্য বিভাগ থেকে খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করার বরাদ্দ পান। এভাবে উপজেলায় ৫১টি চালকলের মধ্যে ৭/৮টি ছাড়া বাকি চাল কল বন্ধের পরও তারা বরাদ্দ পান। খাদ্য কর্মকর্তাদের কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে খাদ্য বিভাগ।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে দীর্ঘ ৮ মাস পর খাদ্য বিভাগ থেকে পাওয়া চালকল মালিক ও তাদের কাছে থেকে কেনা দেখানো তালিকা নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব :

চলতি বছরেই শুধু চালের বাজার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। কিন্তু যুগ যুগ ধরে চলছিল খাদ্য বিভাগের চাল কেনার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য অনেক কম। ফলে আগে চাল কল ছিল ভবন আছে মেশিন নেই, কোন কোনটার বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই তারপরও তারা চালকলের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেন। মজার ব্যাপার বদরগঞ্জ উপজেলার খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত চালকল রয়েছে এর একটি চাল কলের নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড নেই।

বদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তালিকা নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে ৫১টি চালকলের কাছ থেকে ২ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন চাল কিনেছিল খাদ্য বিভাগ। গত বছর বোরো মৌসুমে চালের বাজারমূল্য ছিল সর্বোচ্চ ২৫ টাকা কেজি আর খাদ্য বিভাগ চাল কিনেছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দামে চাল কিনেছে খাদ্য বিভাগ। এভাবেই তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে চাল কিনেছে।

ফলে উপজেলা পর্যায়ে চালকলের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে চালকল প্রতি নিদৃষ্ট পরিমাণ চাল বরাদ্দ দিয়ে চাল কিনেছে তারা। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা চালকল মালিকদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ৪/৫ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চাল কিনেছে। এতে চালকল মালিকরাও লাভবান হয়েছে। তারা নিজেদের চালকল বন্ধ থাকলেও বাজার থেকে ২৪/২৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

২০১৯ সালের বোরো মৌসুমে এক একটি চালকল ৪৯ দশমিক ২৩০ মেট্রিক টন থেকে শুরু করে ২৪ টন পর্যন্ত চাল সরবরাহ করার বরাদ্দ পেয়েছে। তবে বেশিরভাগ চালকল ৪৯ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ মেট্রিক টন বরাদ্দ পেয়েছে।

বদরগঞ্জ খাদ্য গুদামের পেছনেই রয়েছে উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এসএ মতিনের চালকল। কাগজে কলমে তার চালকলের নাম বন্যা চালকল হলেও সেখানে কোন সাইনবোর্ড নেই। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো চালকলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আশপাশের লোকজন বলেছেন ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে চালকলটি বন্ধ। উনি আবার চাল কলের জায়গায় একটি কমিউনিটি সেন্টার বানিয়েছেন। ফলে চালকলে চাতালের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছিল না।

তিনি তার চালকলের কাছেই দাঁড়িয়ে তার কমিউনিটি সেন্টারের তদারকি করছিলেন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করলেন, ৭ বছর ধরে তার চালকল বন্ধ রয়েছে। তারপরও কিভাবে তিনি চাল সরবরাহের বরাদ্দ পান জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ২০১৯ সালের বোরো মৌসুমে তিনি বরাদ্দ পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ২৩০ মেট্রিক টন চাল। তিনি স্বীকার করেন, গত বছর বাজারে চালের দাম ছিল ২৫ টাকা, তিনি ৩৫ টাকা কেজিদরে চাল সরবরাহ করে বিল নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বদরগঞ্জ উপজেলায় ৫১টি চালকল কাগজ কলমে থাকলেও বাস্তবে মাত্র ৬/৭টি চালকল চালু আছে। তিনি আরও বলেন, বাজার থেকে ধান বা চাল কিনে ওইসব মিল থেকে চাল ধান সেদ্ধ করে চাল করে গুদামে সরবরাহ করেন। তার মতো অন্য চালকল মালিকরাও বাজার থেকে চাল কিনে খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেন। এ বছর বাজারে চালের দাম সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় তিনি কোন চাল সরবরাহ করেননি।

একইভাবে বদরগঞ্জ উপজেলার বালুয়া ভাটা এলাকায় পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা উত্তম কুমার ও তার স্ত্রী রিক্তা রানী সরকারের নামে দুটি চালকল থাকলেও চালকলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বলে সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। অথচ উত্তম কুমার চালকলের নামে এবং তার স্ত্রী রিক্তা রানী সাহার নামে বরাদ্দ পেয়েছিলেন ৪৯ মেট্রিক টন করে। একইভাবে রতন চালকল নামে একটি খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত চালকলে গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা, চাল কল বন্ধ। ওই চালকলের মালিক রতন কুমার কুন্ড গত বছর বরাদ্দ পেয়েছিলেন ৪৯ মেট্রিক টন।

রংপুর ২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বদরগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের চালকল রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে চালকলটি চালু রয়েছে। এলাকাবাসী জানান সারাবছরই চালকল চালু থাকে। ওই চালকলের নামে বরাদ্দ ছিল ৪৯ মেট্রিক টন। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কয়েক বছর আগেই তিনি তার মিলটি ভাড়া দিয়েছেন। মিলটি তিনি এখন দেখাশোনা করেন না। এলাকাবাসীও জানালেন এমপি সাহেব চালকলটি ভাড়া দিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বদরগঞ্জ উপজেলায় অনেক চালকল আছে যেসব বন্ধ। চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এসএ মতিনের চালকলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, তারপরও তিনি বরাদ্দ কিভাবে পান? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে শুনছি তিনি চালকল মালিক সমিতির সভাপতি।

অনুসন্ধানকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক চৌধুরী তার ভাই শান্তু চালকলের মালিক শান্তু চৌধুরীর চালকল দেখতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের চালকল বন্ধ। গত বছর তারাও ৪৯ টন করে চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। একইভাবে রশিদ চালকলে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে চাতাল নেই চালকলটি চালু আছে। তবে এলাকাবাসী জানালেন, মাঝে মাঝে মিল চালু করেন, সাধারণ কৃষকদের ধান ভেঙে দেন। তবে তিনি নিজে ধান কিনে সেদ্ধ করে চাল তৈরি করেন না। অথচ তিনিও বরাদ্দ পেয়েছিলেন ২৯ টন। এভাবেই বিভিন্ন চালকল ঘুরে চালকলগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। অথচ তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে বদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছায়েদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা চালকল চালু আছে কিনা দেখিনা, অবকাঠামো আছে কিনা তা দেখে চাল সরবরাহ করার বরাদ্দ দেই।

অডিট আপত্তি

বদরগঞ্জ খাদ্য বিভাগের ২০১৬-১৮ সালের অডিট করে বিভিন্ন অনিয়ম পেয়েছে অডিট টিম। তারা প্রতিবেদনে বলেছেন, মিলিং প্রত্যয়নপত্র সংরক্ষণ করা হয়নি। বিভিন্ন রেকর্ডপত্রে কাটাকাটি, ঘষামাজা, উপরিলিখনের আধিক্য দেখা যায়। সার্বিক বিষয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব কিছুই জানেন না বলে জানান।