কবি সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন আজ

অযাত্নে-অবহেলায় কবির সমাধি

দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৬তম জন্মদিন আজ। কবির জন্মদিন উপলক্ষে কুড়িগ্রামে নেয়া হয়েছে নানা আয়োজন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিটি অযতœ আর অবহেলায় পরে থাকতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবারের সদস্য, ভক্ত ও স্থানীয়রা। তারা সমাধিটিতে দ্রুততম সময়ে সরকারের ঘোষিত পরিকল্পনা মতো কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে চার বছর পেরিয়ে গেলেও সৈয়দ শামসুল হকের নামে স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজ আটকে পরায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন লেখকের সহধর্মিনী আনোয়ারা সৈয়দ হক। তিনি কমপ্লেক্সের কাজ দেখে মরতে চান বলে এক বার্তায় সাংবাদিকদের অবগত করেন। কবির ছোট ভাই অ্যাডভোকেট সৈয়দ আজিজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনসহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে যোযোগ অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোন সুখবর মেলেনি। হবে হচ্ছে এ পর্যন্তই।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এনডিসি মো. হাসিবুল হাসান জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ শামসুল হকের নামে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যাপারে প্রকল্প অনুমোদন কিংবা কোন বরাদ্দ আসার বিষয়টি জেলা প্রশাসন অবহিত নয়। তাই কবির প্রতি শ্রদ্ধা ও স্থানীয়দের দাবির পরিপেক্ষিতে সমাধিস্থল সংরক্ষণে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে। আশাকরি কবির ৮৬তম জন্মদিনে সে কাজ আমরা শুরু করতে পারব।

কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে কবির সমাধি হয়। তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাকে সমাহিত করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা ছিল এ সমাধিকে ঘিরে কমপ্লেক্স তৈরি হবে দ্রুততম সময়ে। কিন্তু গত চার বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এটা হতাশার বিষয়। খুব কষ্টের ব্যাপার। কেন হচ্ছে না তা জানতে চায় কুড়িগ্রামবাসী তথা সৈয়দ হকের গুণমুগ্ধ সবাই। কমপ্লেক্সের নকশা সংস্কৃিত মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে আছে। আমরা মনে করি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং কবির প্রতি শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান জানাতে দ্রুততম সময়ে এ কমপ্লেক্সটি বাস্তবায়ন করা উচিত।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা নাসির উদ্দিন জানান, এবারও কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসবে তার ভক্ত সমর্থকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিভিন্ন সংগঠন বের করে শোভাযাত্রা। কিন্তু তারা ফিরে যাবে ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়ায়। সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কোন উদ্যোগ না নিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই সমাধিস্থল রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু বলেন, গত বছর কবির জন্মদিন উপলক্ষে বইমেলার আয়োজন ছিল। এবার সেটিও করা সম্ভব হয়নি করোনা পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু সরকার প্রধানের সম্মতি থাকার পরও কেন সৈয়দ হকের সমাধিস্থলে কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে কারোরই বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে আবারও আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্থক্ষেপ কামনা করছি।

লেখক আবদুল খালেক ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৃত্যু ও জন্মদিন এলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সব্যসাচী লেখককে সম্মান জানাতে তার আদর্শকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে যে কাজ তা করা হচ্ছে না। কেন করা হচ্ছে না? লেখকের বাড়ি পশ্চাদপদ জেলা কুড়িগ্রামে তাই! কিন্তু এ লেখক মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। সাহিত্যে গোটা পৃথিবীতে বাংলাদেশের ও বাংলা ভাষার মর্যাদা উচ্চ আসনে বসিয়েছেন। তারপরও কেন এতো অবহেলা তা আমাদেরকে পীড়া দেয়।

কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মারা গেলে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের পাশে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস চত্বরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। প্রতিদিন তার ভক্তরা আসেন এ সমাধিস্থল পরিদর্শনে। এ কমপ্লেক্স নির্মিত হলে কুড়িগ্রামের পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে।

আরও খবর
খন্দকার মুনীরুজ্জামান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক আদর্শে সমাজ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা
প্রধানমন্ত্রী ‘ধ্রুবতারা’ উদ্বোধন করবেন আজ
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের হার কমছে
বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ পেলেন ৭ বিশিষ্ট ব্যক্তি
জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ২০২০ ঘোষণা
অভিনেতা আবদুল কাদেরের মৃত্যু
আ’লীগের নেতৃত্বে থাকবেন ত্যাগীরাই তথ্যমন্ত্রী
পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার : ড. রাজ্জাক
তৃতীয় ধাপের ৬৪ পৌরসভায় নৌকার টিকিট পেলেন যারা
নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতায় নিহত ১
ডিএমপির ২২ পরিদর্শকের বদলি
সব অবৈধ স্থাপনা দু’দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ চসিকের
দেশের ৯০ ভাগ মানুষের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ্য নেই জি.এম কাদের

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১২ পৌষ ১৪২৭, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

কবি সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন আজ

অযাত্নে-অবহেলায় কবির সমাধি

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৬তম জন্মদিন আজ। কবির জন্মদিন উপলক্ষে কুড়িগ্রামে নেয়া হয়েছে নানা আয়োজন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিটি অযতœ আর অবহেলায় পরে থাকতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবারের সদস্য, ভক্ত ও স্থানীয়রা। তারা সমাধিটিতে দ্রুততম সময়ে সরকারের ঘোষিত পরিকল্পনা মতো কমপ্লেক্সের কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে চার বছর পেরিয়ে গেলেও সৈয়দ শামসুল হকের নামে স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজ আটকে পরায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন লেখকের সহধর্মিনী আনোয়ারা সৈয়দ হক। তিনি কমপ্লেক্সের কাজ দেখে মরতে চান বলে এক বার্তায় সাংবাদিকদের অবগত করেন। কবির ছোট ভাই অ্যাডভোকেট সৈয়দ আজিজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনসহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে যোযোগ অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোন সুখবর মেলেনি। হবে হচ্ছে এ পর্যন্তই।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এনডিসি মো. হাসিবুল হাসান জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ শামসুল হকের নামে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যাপারে প্রকল্প অনুমোদন কিংবা কোন বরাদ্দ আসার বিষয়টি জেলা প্রশাসন অবহিত নয়। তাই কবির প্রতি শ্রদ্ধা ও স্থানীয়দের দাবির পরিপেক্ষিতে সমাধিস্থল সংরক্ষণে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে। আশাকরি কবির ৮৬তম জন্মদিনে সে কাজ আমরা শুরু করতে পারব।

কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে কবির সমাধি হয়। তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাকে সমাহিত করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা ছিল এ সমাধিকে ঘিরে কমপ্লেক্স তৈরি হবে দ্রুততম সময়ে। কিন্তু গত চার বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এটা হতাশার বিষয়। খুব কষ্টের ব্যাপার। কেন হচ্ছে না তা জানতে চায় কুড়িগ্রামবাসী তথা সৈয়দ হকের গুণমুগ্ধ সবাই। কমপ্লেক্সের নকশা সংস্কৃিত মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে আছে। আমরা মনে করি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং কবির প্রতি শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান জানাতে দ্রুততম সময়ে এ কমপ্লেক্সটি বাস্তবায়ন করা উচিত।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা নাসির উদ্দিন জানান, এবারও কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসবে তার ভক্ত সমর্থকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিভিন্ন সংগঠন বের করে শোভাযাত্রা। কিন্তু তারা ফিরে যাবে ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়ায়। সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কোন উদ্যোগ না নিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই সমাধিস্থল রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু বলেন, গত বছর কবির জন্মদিন উপলক্ষে বইমেলার আয়োজন ছিল। এবার সেটিও করা সম্ভব হয়নি করোনা পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু সরকার প্রধানের সম্মতি থাকার পরও কেন সৈয়দ হকের সমাধিস্থলে কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে কারোরই বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে আবারও আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্থক্ষেপ কামনা করছি।

লেখক আবদুল খালেক ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৃত্যু ও জন্মদিন এলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সব্যসাচী লেখককে সম্মান জানাতে তার আদর্শকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে যে কাজ তা করা হচ্ছে না। কেন করা হচ্ছে না? লেখকের বাড়ি পশ্চাদপদ জেলা কুড়িগ্রামে তাই! কিন্তু এ লেখক মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। সাহিত্যে গোটা পৃথিবীতে বাংলাদেশের ও বাংলা ভাষার মর্যাদা উচ্চ আসনে বসিয়েছেন। তারপরও কেন এতো অবহেলা তা আমাদেরকে পীড়া দেয়।

কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মারা গেলে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের পাশে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস চত্বরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। প্রতিদিন তার ভক্তরা আসেন এ সমাধিস্থল পরিদর্শনে। এ কমপ্লেক্স নির্মিত হলে কুড়িগ্রামের পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে।