‘জুনের মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ’

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আগামী জুনের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট ও গ্যাভি কোভেক্স থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা এয়ারপোর্টে বলে দিয়েছি যারা ইউরোপ থেকে আসবে তাদের আলাদা লাইনের মাধ্যমে বের হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের নিচে। আর ১৮ বছরের নিচে ৪০ শতাংশ মানুষ। এই মুহূর্তে এদের ভ্যাকসিনের দরকার নেই। এছাড়া গর্ভবতী নারী ও কিছু অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে না। কাজেই আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে না। গতকাল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে ওষুধ এবং টিকার জন্য স্থাপিত ল্যাবরেটরি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটটের সঙ্গে তিন কোটি ভ্যাকসিনের চুক্তি হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিমাসে আসবে ৫০ লাখ, যা দিয়ে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। তিন কোটি ভ্যাকসিন দিতে ছয় মাস দরকার হবে। আশা করছি, মে ও জুনের মধ্যে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির আওতায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা দেবে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষকে। তাতে মোট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ভ্যাকসিন বাংলাদেশ জুনের ভেতরে পেয়ে যাচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে পারসেজ অ্যগ্রিমেন্ট হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি জানুয়ারির শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে। যখনই অ্যাস্ট্রাজেনেকা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাবে তখনই বাংলাদেশ সে ভ্যাকসিন পাবে। একইসঙ্গে দেশের ভেতরে ভ্যাকসিন সম্পর্কিত সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা, স্টোরেজ সিস্টেম, কোল্ড চেইন মেইনটেন্যান্সের জন্য কিছু বাড়তি কোল্ড বক্সের দরকার ছিল, সেটারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

টিকার পরীক্ষাগার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৯টি টিকা দেয়া হয়। সেসব টিকার পরীক্ষা হয় এই ল্যাবে। ৯টি ভ্যাকসিনের সঙ্গে কয়েকদিনের মধ্যে যোগ হচ্ছে করোনার টিকা। ভবিষ্যতে এই ল্যাবে সে টিকার পরীক্ষাও হবে। করোনার ভ্যাকসিন এলে মোট ১০ ধরনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হবে। জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরন দেখা দিয়েছে। সেটা বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এয়ারপোর্টে বলে দিয়েছি যারা ইউরোপ থেকে আসবে তাদের আলাদা লাইনের মাধ্যমে বের করতে। পাশাপাশি যারা করোনার সার্টিফিকেট না নিয়ে আসবে তাদের তিনদিনের পরিবর্তে সাতদিনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যসহ ষাটোর্ধ্বদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে জেলা হাসপাতালগুলোতে। পরিবহনের জন্য কোল্ড বক্স কেনার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশের ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব তৈরি হয়েছে। গত মার্চ মাসে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এর স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের মান নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৩ পৌষ ১৪২৭, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

‘জুনের মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আগামী জুনের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট ও গ্যাভি কোভেক্স থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা এয়ারপোর্টে বলে দিয়েছি যারা ইউরোপ থেকে আসবে তাদের আলাদা লাইনের মাধ্যমে বের হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের নিচে। আর ১৮ বছরের নিচে ৪০ শতাংশ মানুষ। এই মুহূর্তে এদের ভ্যাকসিনের দরকার নেই। এছাড়া গর্ভবতী নারী ও কিছু অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে না। কাজেই আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে না। গতকাল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে ওষুধ এবং টিকার জন্য স্থাপিত ল্যাবরেটরি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটটের সঙ্গে তিন কোটি ভ্যাকসিনের চুক্তি হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিমাসে আসবে ৫০ লাখ, যা দিয়ে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। তিন কোটি ভ্যাকসিন দিতে ছয় মাস দরকার হবে। আশা করছি, মে ও জুনের মধ্যে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির আওতায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা দেবে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষকে। তাতে মোট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ভ্যাকসিন বাংলাদেশ জুনের ভেতরে পেয়ে যাচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে পারসেজ অ্যগ্রিমেন্ট হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি জানুয়ারির শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে। যখনই অ্যাস্ট্রাজেনেকা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাবে তখনই বাংলাদেশ সে ভ্যাকসিন পাবে। একইসঙ্গে দেশের ভেতরে ভ্যাকসিন সম্পর্কিত সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা, স্টোরেজ সিস্টেম, কোল্ড চেইন মেইনটেন্যান্সের জন্য কিছু বাড়তি কোল্ড বক্সের দরকার ছিল, সেটারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

টিকার পরীক্ষাগার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ৯টি টিকা দেয়া হয়। সেসব টিকার পরীক্ষা হয় এই ল্যাবে। ৯টি ভ্যাকসিনের সঙ্গে কয়েকদিনের মধ্যে যোগ হচ্ছে করোনার টিকা। ভবিষ্যতে এই ল্যাবে সে টিকার পরীক্ষাও হবে। করোনার ভ্যাকসিন এলে মোট ১০ ধরনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হবে। জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরন দেখা দিয়েছে। সেটা বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এয়ারপোর্টে বলে দিয়েছি যারা ইউরোপ থেকে আসবে তাদের আলাদা লাইনের মাধ্যমে বের করতে। পাশাপাশি যারা করোনার সার্টিফিকেট না নিয়ে আসবে তাদের তিনদিনের পরিবর্তে সাতদিনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যসহ ষাটোর্ধ্বদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে জেলা হাসপাতালগুলোতে। পরিবহনের জন্য কোল্ড বক্স কেনার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশের ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব তৈরি হয়েছে। গত মার্চ মাসে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এর স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের মান নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।