যেকোন মুহূর্তে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কা
চট্টগ্রাম মহানগরীর সংখ্যালঘুদের ৩০ গণ্ডা জমির উপর কুদৃষ্টি পড়েছে একটি মহলের। সদরঘাটের উত্তর নালাপাড়া মারোয়ারী কলোনীর এই জায়গা নিয়ে যেকোন মুহূর্তে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ডবলমুরিং থানাধীন মাদারবাড়ি মৌজার প্রায় ৬ শতক (৩০ গণ্ডা) সংখ্যালঘুর এই জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকলেও দখলের পাঁয়তারা করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)’র পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইসমাইল বালি এমনটি অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল বালি।
এদিকে মারোয়ারী কলোনীর ১৯ জন ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন ক্রমাগত হুমকিতে। কলোনীর ভাড়াটিয়া শম্ভু দে ও সুজিত কুমার দত্ত ভাড়া পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রকের আদালতে আবেদন পরবর্তী বর্তমানে ভাড়া আদালতের মাধ্যমেই পরিশোধ করছেন। ভাড়াটিয়াদের দাবি, ১৯৯০ সাল থেকেই তারা ঘরভাড়া জমির মূল মালিক ও তার ওয়ারিশদের কাছে পর্যায়ক্রমে দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে ইসমাইল গং এ জমি তাদের দাবি করে ঘরভাড়া দাবি করে। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে আদালতের মাধ্যমে মাসিক ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গতকাল বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাবেক চসিক কাউন্সিলর ইসমাইল বালি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা আমার ক্রয়কৃত জায়গা। আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডে বেশিরভাগ সংখ্যালঘু পরিবার। কেন আমি জাল দলিল সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখল করতে যাব। তিনি এগুলো মিথ্যা বলে দাবি করলেও মামলার আইনজীবী বলেছেন ভিন্ন কথা। জমির প্রকৃত ওয়ারিশ ডা. সজীব তালুকদারের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন মানিক জানান, মাদারবাড়ি মৌজার জমির প্রকৃত ওয়ারিশ ডা. সজীব তালুকদারের এই তপসিলোক্ত সম্পত্তিতে উচ্চআদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কোন রকম পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করার জন্য বলা হচ্ছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জমির মালিক মনোজ আগারওয়ালার সঙ্গে মোছাম্মৎ নুর নাহার বেগম গং এর জাল দলিল বাতিলসহ অন্যান্য মামলা চট্টগ্রাম ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চলমান আছে। এ বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন (১৯৭৫/২০২০) দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্ট বাদি-বিবাদি পক্ষকে গত ২৬ নভেম্বর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশও দিয়েছিলেন। নগরীর উত্তর নালাপাড়া মারোয়ারী কলোনীর বাসিন্দা মনোজ আগারওয়ালার ওয়ারিশ শিক্ষিকা সংগীতা তালুকদার মুন্নীর সূত্রে ওয়ারিশ তার স্বামী ডা. সজীব তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, আমমোক্তারনামা দলিল মূলে ৫৯.৪৭ শতক জমির মালিক হিসেবে এ সম্পত্তি রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। পাথরঘাটা নজু মিয়া লেইনের বাসিন্দা নুর নাহার বেগম ও সাবেক কাউন্সিলর হাজী মো. ইসমাইল বালি গং জালিয়াতির মাধ্যমে জাল দলিল বানিয়ে এ জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা (নং-৩৯০/১৯) দায়ের করার পর জবরদখলের চেষ্টা থেকে তাদের বিরত রাখতে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন জানাই। আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করছে। বিষয়টি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ কমিশনার ও সদরঘাট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
ডা. সজীব তালুকদার আরো বলেন, এ জমির মূল মালিক ছিলেন কিশোরী মোহন ঘোষ। তার মাধ্যমে জমি বিক্রি ও হস্তান্তর সূত্রে পরবর্তীতে মনোজ আগারওয়ালা মারোয়ারী কলোনীর সম্পত্তির মালিক হন। মনোজ আগারওয়ালা আমমোক্তারনামা দলিল মূলে এ সম্পত্তি রক্ষার্থে তাকে নিযুক্ত করেন ও দায়িত্বভার অর্পণ করেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালীরা আমাদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে। প্রতিনিয়ত জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার। আমার প্রত্যাশা, সরকার আমাদের সম্পত্তি রক্ষার্থে এগিয়ে আসবেন।
মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৪ পৌষ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
যেকোন মুহূর্তে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কা
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম মহানগরীর সংখ্যালঘুদের ৩০ গণ্ডা জমির উপর কুদৃষ্টি পড়েছে একটি মহলের। সদরঘাটের উত্তর নালাপাড়া মারোয়ারী কলোনীর এই জায়গা নিয়ে যেকোন মুহূর্তে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ডবলমুরিং থানাধীন মাদারবাড়ি মৌজার প্রায় ৬ শতক (৩০ গণ্ডা) সংখ্যালঘুর এই জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকলেও দখলের পাঁয়তারা করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)’র পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইসমাইল বালি এমনটি অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল বালি।
এদিকে মারোয়ারী কলোনীর ১৯ জন ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন ক্রমাগত হুমকিতে। কলোনীর ভাড়াটিয়া শম্ভু দে ও সুজিত কুমার দত্ত ভাড়া পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রকের আদালতে আবেদন পরবর্তী বর্তমানে ভাড়া আদালতের মাধ্যমেই পরিশোধ করছেন। ভাড়াটিয়াদের দাবি, ১৯৯০ সাল থেকেই তারা ঘরভাড়া জমির মূল মালিক ও তার ওয়ারিশদের কাছে পর্যায়ক্রমে দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে ইসমাইল গং এ জমি তাদের দাবি করে ঘরভাড়া দাবি করে। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে আদালতের মাধ্যমে মাসিক ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গতকাল বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাবেক চসিক কাউন্সিলর ইসমাইল বালি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা আমার ক্রয়কৃত জায়গা। আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডে বেশিরভাগ সংখ্যালঘু পরিবার। কেন আমি জাল দলিল সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখল করতে যাব। তিনি এগুলো মিথ্যা বলে দাবি করলেও মামলার আইনজীবী বলেছেন ভিন্ন কথা। জমির প্রকৃত ওয়ারিশ ডা. সজীব তালুকদারের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন মানিক জানান, মাদারবাড়ি মৌজার জমির প্রকৃত ওয়ারিশ ডা. সজীব তালুকদারের এই তপসিলোক্ত সম্পত্তিতে উচ্চআদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কোন রকম পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করার জন্য বলা হচ্ছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জমির মালিক মনোজ আগারওয়ালার সঙ্গে মোছাম্মৎ নুর নাহার বেগম গং এর জাল দলিল বাতিলসহ অন্যান্য মামলা চট্টগ্রাম ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চলমান আছে। এ বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন (১৯৭৫/২০২০) দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্ট বাদি-বিবাদি পক্ষকে গত ২৬ নভেম্বর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশও দিয়েছিলেন। নগরীর উত্তর নালাপাড়া মারোয়ারী কলোনীর বাসিন্দা মনোজ আগারওয়ালার ওয়ারিশ শিক্ষিকা সংগীতা তালুকদার মুন্নীর সূত্রে ওয়ারিশ তার স্বামী ডা. সজীব তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, আমমোক্তারনামা দলিল মূলে ৫৯.৪৭ শতক জমির মালিক হিসেবে এ সম্পত্তি রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। পাথরঘাটা নজু মিয়া লেইনের বাসিন্দা নুর নাহার বেগম ও সাবেক কাউন্সিলর হাজী মো. ইসমাইল বালি গং জালিয়াতির মাধ্যমে জাল দলিল বানিয়ে এ জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা (নং-৩৯০/১৯) দায়ের করার পর জবরদখলের চেষ্টা থেকে তাদের বিরত রাখতে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন জানাই। আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করছে। বিষয়টি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ কমিশনার ও সদরঘাট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
ডা. সজীব তালুকদার আরো বলেন, এ জমির মূল মালিক ছিলেন কিশোরী মোহন ঘোষ। তার মাধ্যমে জমি বিক্রি ও হস্তান্তর সূত্রে পরবর্তীতে মনোজ আগারওয়ালা মারোয়ারী কলোনীর সম্পত্তির মালিক হন। মনোজ আগারওয়ালা আমমোক্তারনামা দলিল মূলে এ সম্পত্তি রক্ষার্থে তাকে নিযুক্ত করেন ও দায়িত্বভার অর্পণ করেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালীরা আমাদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে। প্রতিনিয়ত জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার। আমার প্রত্যাশা, সরকার আমাদের সম্পত্তি রক্ষার্থে এগিয়ে আসবেন।