উপজেলা গুদামে চাল কেনা নিয়ে চরম অনিয়ম

বন্ধ রাইস মিলের ৮শ মে.টন চাল কেনা দেখানো হয়

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় খাদ্য বিভাগের কাগজপত্রে চালকলের সংখ্যা ২৩টি দেখানো হলেও ৩টি অটোমেটিক চালকল ও ৪/৫টি চালকল ছাড়া বাকি চালকলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। তিন বছর ধরে একটি অটোমেটিক চালকল বন্ধ, তার পরেও ৮শ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের বরাদ্দ পেয়েছে চালকলটি। উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নিজেই চাল সরবরাহকারী ঠিকাদার, তার তিন ভাই চালকলের মালিক কিন্তু বাস্তবে মাত্র দুটি চাল কল আছে। এভাবেই ২০১৯ সালে বোরো চাল কেনার নামে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য আর ক্ষমতার চরম অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে।

তথ্যঅধিকার আইনে আবেদন করে দীর্ঘ ৮ মাস পর তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের দেয়া লিখিত তথ্য নিয়ে সরজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব।

চলতি বছরেই শুধু চালের বাজার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। মজার ব্যাপার তারাগঞ্জ উপজেলার খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত যে সব চালকল রয়েছে এর মধ্যে ২/৩টি ছাড়া বাকি চাল কলের নামসম্বলিত সাইন বোর্ড নেই।

তারাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তালিকা নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে- ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে ২৩টি চালকলের কাছে থেকে প্রায় ২ হাজার ৩শ মেট্রিক টন চাল কেনা দেখিয়েছিল খাদ্য বিভাগ। গত বছর বোরো মৌসুমে চালের বাজারমূল্য ছিল সর্বোচ্চ ২৫ টাকা কেজি আর খাদ্য বিভাগ চাল কিনেছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দামে চাল কিনেছে খাদ্য বিভাগ। এভাবেই তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে চাল কিনেছে। ফলে উপজেলা পর্যায়ে চালকলের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে চালকল প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল বরাদ্দ দিয়ে চাল কিনেছে তারা। শুধু মাত্র ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চালকল মালিকদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চাল কিনেছে। এতে চালকল মালিকরাও লাভবান হয়েছে। তারা নিজেদের চালকল বন্ধ থাকলেও বাজার থেকে ২৪/২৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সরেজমিন তারাগঞ্জ উপজেলার বালাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এরিস্ট্রোক্র্যাট এগ্রো লি. নামে একটি দৃষ্টিনন্দন অটো চালকল রয়েছে। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিন বছরের বেশি সময় ধরে এটি বন্ধ রয়েছে। অথচ ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগ তাদের নামে ৮শ ১১ দশমিক ৮০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করার বরাদ্দপত্র প্রদান করে।

যে চালকল বন্ধ সেটাকে কিভাবে চাল সরবরাহ করার বরাদ্দপত্র দেয়া হলো এ নিয়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেহেতু গত বছর বোরো মৌসুমে চালের বাজারমূল্য ছিল সর্বোচ্চ ২৫ টাকা আর খাদ্য বিভাগের কেনার মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। সেই সুযোগে চালকল কর্তৃপক্ষ ও খাদ্য বিভাগ যোগসাজস করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। চালকল কর্তৃপক্ষ তার মিল বন্ধ থাকলেও বাজার থেকে চাল কিনে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে ২ কোটি ৯২ লাখ ২৪ হাজার ৮শ টাকা বিল উত্তোলন করেছে। যেহেতু বাজারমূল্য সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে ১০ টাকা কম সে কারণে খাদ্য বিভাগ অর্ধকোটি টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের মিল চালু দেখিয়ে চাল কেনা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম স্বীকার করেন, তাদের মিলটি তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। একইভাবে ওই মিলের আশপাশের লোকজন ও শ্রমিকরাও জানিয়েছে মিলটি বন্ধ। মজার ব্যাপার ওই চালকলটি যে তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ তার প্রমাণ এ বছর বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় তারা মাত্র ৬৭ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছে।

অপরদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটন কোনভাবেই নিজ নামে ব্যবসা করতে পারেন না বলে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে তার মা ছাবেয়া অটো রাইস মিলের নামে ৭৯৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দপত্র হাতিয়ে নেন খাদ্য বিভাগের কাছ থেকে। তার মিলটি উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিপুল পরিমাণ চাল সরবরাহ করে ২ কোটি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ২শ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন খাদ্য বিভাগ থেকে। খাদ্য বিভাগের সরবরাহ করা তালিকা ও বিল প্রদানের পর তার নামেই চেক প্রদান করা হয়েছে বলে খোদ তারাগঞ্জ খাদ্য কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।

একই উপজেলা চেয়ারম্যান লিটনের তিন ভাইয়ের মধ্যে আতাউর রহমানের নামে দুটি এবং আনোয়ারুল ইসলামের ৩৪ মেট্রিক টন চালের বরাদ্দপত্র হাতিয়ে নিয়েছেন। সরজমিন ঘুরে তাদের একটি চালকল চালু আছে বলে তারা দাবি করেছেন, বাকি দুটি বন্ধ রয়েছে। (এলাকাবাসীর বক্তব্য ভিডিও করা আছে)। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি, ফোনও রিসিভ করেননি তিনি।

সরেজমিন তারাগঞ্জ উপজেলার দোহাজারী ইকরচালি এলাকায় দেখা গেছে সেখানে চালকল মালিক চালকলটি বন্ধ করে দিয়ে স্কুল চালু করেছেন অথচ তিনি গত বছর বরাদ্দ পেয়েছেন ১৫ দশমিক ৪৮০ মেট্রিক টন চাল। এভাবে তারাগঞ্জ উপজেলার অটোমেটিক চালকল বাদে বেশিরভাগ চালকল বন্ধ দেখতে পাওয়া যায় অথচ তারা প্রত্যেকে বরাদ্দ পেয়েছে। তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চাল কেনার নামে সরকারি অর্থ লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

অডিট আপত্তি

তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের ২০১৬-১৮ সালের অডিট করে বিভিন্ন অনিয়ম পেয়েছে অডিট টিম। খাদ্য অধিদফতর ঢাকা থেকে আসা অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক ফরিদুল আলম জুয়েল তার দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেছেন, বিভিন্ন রেকডপত্রে কাটাকাটি, ঘষামাজা, উপরি লিখনের আধিক্য দেখা যায়। খামালের গঠন প্রণালী দেখানো হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে খামালের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি। মিলিং রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করা হয়নি। অডিট প্রতিবেদনে আরও বলা হয় ২০১৬-১৮ অর্থবছরে সংযুক্ত বিবরণীতে উল্লেখিত বিভিন্ন কেন্দ্র হতে ১৯৯৭ দশমিক ৫৯৩ মেট্রিক টন চাল ও ২৯৯ দশমিক ৬৪০ মেট্রিক টন গম তারাগঞ্জ খাদ্য গুদামে প্রাপ্তির স্বপক্ষে প্রোগ্রামের কপি অত্র দফতরে সংরক্ষণ করা হয়নি। যা গুরুতর অনিয়ম। এতে সরকারি সম্পদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কেএম তরিকুল ইসলামের সঙ্গে তার দফতরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এরিস্ট্রোক্র্যাট এগ্রো অটোমেটিক রাইস মিলটি জেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে মেশিন চালু করা দেখে গেছেন আমরা জানি মিলটি চালু তবে গত বছর ৮শ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করলেও এ বছর দিয়েছে মাত্র ৬৭ টন। অন্য মিলগুলো চালু আছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে তারাগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয় জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব কিছুই জানেন না বলে জানান।

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৪ পৌষ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

রংপুরের তারাগঞ্জ

উপজেলা গুদামে চাল কেনা নিয়ে চরম অনিয়ম

বন্ধ রাইস মিলের ৮শ মে.টন চাল কেনা দেখানো হয়

লিয়াকত আলী বাদল ও আশরাফুল ইসলাম তারাগঞ্জ (রংপুর) থেকে ফিরে

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় খাদ্য বিভাগের কাগজপত্রে চালকলের সংখ্যা ২৩টি দেখানো হলেও ৩টি অটোমেটিক চালকল ও ৪/৫টি চালকল ছাড়া বাকি চালকলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। তিন বছর ধরে একটি অটোমেটিক চালকল বন্ধ, তার পরেও ৮শ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের বরাদ্দ পেয়েছে চালকলটি। উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নিজেই চাল সরবরাহকারী ঠিকাদার, তার তিন ভাই চালকলের মালিক কিন্তু বাস্তবে মাত্র দুটি চাল কল আছে। এভাবেই ২০১৯ সালে বোরো চাল কেনার নামে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য আর ক্ষমতার চরম অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে।

তথ্যঅধিকার আইনে আবেদন করে দীর্ঘ ৮ মাস পর তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের দেয়া লিখিত তথ্য নিয়ে সরজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব।

চলতি বছরেই শুধু চালের বাজার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। মজার ব্যাপার তারাগঞ্জ উপজেলার খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত যে সব চালকল রয়েছে এর মধ্যে ২/৩টি ছাড়া বাকি চাল কলের নামসম্বলিত সাইন বোর্ড নেই।

তারাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করা তালিকা নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দেখা গেছে- ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে ২৩টি চালকলের কাছে থেকে প্রায় ২ হাজার ৩শ মেট্রিক টন চাল কেনা দেখিয়েছিল খাদ্য বিভাগ। গত বছর বোরো মৌসুমে চালের বাজারমূল্য ছিল সর্বোচ্চ ২৫ টাকা কেজি আর খাদ্য বিভাগ চাল কিনেছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দামে চাল কিনেছে খাদ্য বিভাগ। এভাবেই তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে চাল কিনেছে। ফলে উপজেলা পর্যায়ে চালকলের সংখ্যা বেশি দেখিয়ে চালকল প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল বরাদ্দ দিয়ে চাল কিনেছে তারা। শুধু মাত্র ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চালকল মালিকদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চাল কিনেছে। এতে চালকল মালিকরাও লাভবান হয়েছে। তারা নিজেদের চালকল বন্ধ থাকলেও বাজার থেকে ২৪/২৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সরেজমিন তারাগঞ্জ উপজেলার বালাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এরিস্ট্রোক্র্যাট এগ্রো লি. নামে একটি দৃষ্টিনন্দন অটো চালকল রয়েছে। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিন বছরের বেশি সময় ধরে এটি বন্ধ রয়েছে। অথচ ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগ তাদের নামে ৮শ ১১ দশমিক ৮০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করার বরাদ্দপত্র প্রদান করে।

যে চালকল বন্ধ সেটাকে কিভাবে চাল সরবরাহ করার বরাদ্দপত্র দেয়া হলো এ নিয়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেহেতু গত বছর বোরো মৌসুমে চালের বাজারমূল্য ছিল সর্বোচ্চ ২৫ টাকা আর খাদ্য বিভাগের কেনার মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। সেই সুযোগে চালকল কর্তৃপক্ষ ও খাদ্য বিভাগ যোগসাজস করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। চালকল কর্তৃপক্ষ তার মিল বন্ধ থাকলেও বাজার থেকে চাল কিনে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে ২ কোটি ৯২ লাখ ২৪ হাজার ৮শ টাকা বিল উত্তোলন করেছে। যেহেতু বাজারমূল্য সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে ১০ টাকা কম সে কারণে খাদ্য বিভাগ অর্ধকোটি টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের মিল চালু দেখিয়ে চাল কেনা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম স্বীকার করেন, তাদের মিলটি তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। একইভাবে ওই মিলের আশপাশের লোকজন ও শ্রমিকরাও জানিয়েছে মিলটি বন্ধ। মজার ব্যাপার ওই চালকলটি যে তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ তার প্রমাণ এ বছর বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় তারা মাত্র ৬৭ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছে।

অপরদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটন কোনভাবেই নিজ নামে ব্যবসা করতে পারেন না বলে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২০১৯ সালে বোরো মৌসুমে তার মা ছাবেয়া অটো রাইস মিলের নামে ৭৯৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দপত্র হাতিয়ে নেন খাদ্য বিভাগের কাছ থেকে। তার মিলটি উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিপুল পরিমাণ চাল সরবরাহ করে ২ কোটি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ২শ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন খাদ্য বিভাগ থেকে। খাদ্য বিভাগের সরবরাহ করা তালিকা ও বিল প্রদানের পর তার নামেই চেক প্রদান করা হয়েছে বলে খোদ তারাগঞ্জ খাদ্য কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।

একই উপজেলা চেয়ারম্যান লিটনের তিন ভাইয়ের মধ্যে আতাউর রহমানের নামে দুটি এবং আনোয়ারুল ইসলামের ৩৪ মেট্রিক টন চালের বরাদ্দপত্র হাতিয়ে নিয়েছেন। সরজমিন ঘুরে তাদের একটি চালকল চালু আছে বলে তারা দাবি করেছেন, বাকি দুটি বন্ধ রয়েছে। (এলাকাবাসীর বক্তব্য ভিডিও করা আছে)। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি, ফোনও রিসিভ করেননি তিনি।

সরেজমিন তারাগঞ্জ উপজেলার দোহাজারী ইকরচালি এলাকায় দেখা গেছে সেখানে চালকল মালিক চালকলটি বন্ধ করে দিয়ে স্কুল চালু করেছেন অথচ তিনি গত বছর বরাদ্দ পেয়েছেন ১৫ দশমিক ৪৮০ মেট্রিক টন চাল। এভাবে তারাগঞ্জ উপজেলার অটোমেটিক চালকল বাদে বেশিরভাগ চালকল বন্ধ দেখতে পাওয়া যায় অথচ তারা প্রত্যেকে বরাদ্দ পেয়েছে। তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চাল কেনার নামে সরকারি অর্থ লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

অডিট আপত্তি

তারাগঞ্জ খাদ্য বিভাগের ২০১৬-১৮ সালের অডিট করে বিভিন্ন অনিয়ম পেয়েছে অডিট টিম। খাদ্য অধিদফতর ঢাকা থেকে আসা অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক ফরিদুল আলম জুয়েল তার দাখিল করা প্রতিবেদনে বলেছেন, বিভিন্ন রেকডপত্রে কাটাকাটি, ঘষামাজা, উপরি লিখনের আধিক্য দেখা যায়। খামালের গঠন প্রণালী দেখানো হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে খামালের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি। মিলিং রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করা হয়নি। অডিট প্রতিবেদনে আরও বলা হয় ২০১৬-১৮ অর্থবছরে সংযুক্ত বিবরণীতে উল্লেখিত বিভিন্ন কেন্দ্র হতে ১৯৯৭ দশমিক ৫৯৩ মেট্রিক টন চাল ও ২৯৯ দশমিক ৬৪০ মেট্রিক টন গম তারাগঞ্জ খাদ্য গুদামে প্রাপ্তির স্বপক্ষে প্রোগ্রামের কপি অত্র দফতরে সংরক্ষণ করা হয়নি। যা গুরুতর অনিয়ম। এতে সরকারি সম্পদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কেএম তরিকুল ইসলামের সঙ্গে তার দফতরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এরিস্ট্রোক্র্যাট এগ্রো অটোমেটিক রাইস মিলটি জেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে মেশিন চালু করা দেখে গেছেন আমরা জানি মিলটি চালু তবে গত বছর ৮শ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করলেও এ বছর দিয়েছে মাত্র ৬৭ টন। অন্য মিলগুলো চালু আছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে তারাগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয় জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব কিছুই জানেন না বলে জানান।