দুর্গম চরের ১ হাজার ৬৮ পরিবার আলোকোজ্জ্বল : পাল্টাবে চালচিত্র

সাবমেরিন ক্যাবলে আসা বিদ্যুতের সংযোগ পেল শরীয়তপুরের নদী বেষ্টিত দুর্গম আরও একটি চর। গত মঙ্গলবার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৬৮ পরিবারের মধ্যে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

এর ফলে শরীয়তপুরের বিচ্ছিন্ন চারটি চর সাবমেরিন কেবলের বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। সংযোগ পেয়েছে শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কুন্ডেরচর ও চাঁদপুরের একলাশপুর ইউনিয়নের ৪হাজার ৫৬০ পরিবার। ২০২১ সালের ২৬ মার্চের মধ্যে ওই ৪ ইউনিয়নের ৭৯টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক।

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল পদ্মার তলদেশ দিয়ে ১ কিলোমিটার পার হয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যেমে তিনটি চরে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ করা হয় ১০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র। বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নওয়াপাড় ও চরআত্রার বিদ্যুতায়নের উদ্ভোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।

সংযোগ পাওয়ার ১০ মাসের মাথায় চরে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য আর কলকারখানায় এসেছে নতুন গতি। শিক্ষা আর প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে চরের শিক্ষার্থীরাও। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন চরের বাসিন্দারা।

পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে কাচিকাটা, চরাআত্রা ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নে। বিদ্যুৎ বিতরণে চরের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সাব স্টেশন। বিদ্যুতের নানাবিধ সুবিধা পেয়ে খুশি চরের মানুষ।

গ্রামের ভিতর ঢুকতেই দেখা গেল ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ লেগেছে। চরের দরিদ্র মানুষের ঘরগুলো নাজুক হলেও বিদ্যুতের সংযোগ থেকে বাদ যাচ্ছে না কেউই। দেওয়াকান্দি গ্রামের মাফিয়া বেগম রান্নার কাজ করছেন। থাকার ঘরটি বেশ ছোট। কাঁচামাটির ওপর নড়বড়ে টিনের ঘরটি। সেই ঘরেই দেয়া হয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। রান্না ঘরে বসেই কথা হয় মাফিয়া বেগমের সাথে। কথায় কথায় তিনি হিসাব দিতে থাকেন কিভাবে খরচ বাঁচল তার। তিনি বলেন, কিরিসত্যাল আংগাইলে আগে একশো দ্যাশশো টাহা লাগদো আর অহনে যেমন পঞ্চাশ শাইট টাহাই অইয়া যায়। টাহা কম লাগে, আলো অইছে, উপকার পাইছি। তিনটি চরে ছোট বড় মিলে রয়েছে ১০ টি হাট বাজার। বিদ্যুৎ পাওয়ায় বাজারগুলোও এখন বেশ জমজমাট। বেড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিধিও।

নওয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মজিবর খা বলেন, আমাগো বাজারে অন্তত দুইশ ব্যবসায়ী আছে। সবাই বিদ্যুৎ পাইছে। আগে সোলার জ¦ালাইতাম। ঘরের মধ্যেই আলো ছিল। সন্ধ্যা হইলে মানুষ বেশিক্ষণ বাজারে থাকতো না। এহন অনেক রাইত পর্যন্ত মানুষ বাজারে থাকে। আগে এই বাজারে ফ্রিজ ছিল না এহন অনেক ব্যবসায়ী ফ্রিজ কেনছে। ফটোকপি মেশিন কম্পিউটারের দোহানও হইছে। সব দিক দিয়াই কেনা বেচা বাড়ছে। বিদ্যুৎ পাইয়া চরের ব্যবসায়ীরা লাভবান। চরগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে আটটি জাহাজ নির্মাণের ডক ইয়ার্ড। এগুলোও ডিজেল চালিত জেনারেটর দিয়ে চলছিল। ডক ইয়ার্ডগুলোতে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। মক্কা মদিনা ডক ইয়ার্ড পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। বাকিরা পাওয়ার অপেক্ষায়। মক্কা মদিনা ডক ইয়ার্ডে কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপর নওয়াপাড়ার চরমন্ডল এলাকার সততা ডক ইয়ার্ডে গেলে দেখা যায় সেখানে বাল্কহেড নির্মাণ কাজ করছেন শ্রমিকরা। কথা হয় মালিক ছানাউল্লাহ ঢালীর সাথে। তিনি জানান, মিটারের লিগ্যা টাহা জমা দিছি। আমার পাশের ডকে কারে পাইছে। অরা দুইড্যা জাহাজও বানাইছে। অগো লাভ হইছে। যেহানে ডিজেলে মাসে খরচ হইতো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাহা। সেহানে ১০ থেকে ১২ হাজার টাহার কারেং খরচেই হইতাছে। খরচ কমলে আমাগো লাভ বাইরা যায়। এহন অনেকেই তো নতুন কইরা করার চিন্তা করতাছে।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

দুর্গম চরের ১ হাজার ৬৮ পরিবার আলোকোজ্জ্বল : পাল্টাবে চালচিত্র

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর

সাবমেরিন ক্যাবলে আসা বিদ্যুতের সংযোগ পেল শরীয়তপুরের নদী বেষ্টিত দুর্গম আরও একটি চর। গত মঙ্গলবার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৬৮ পরিবারের মধ্যে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

এর ফলে শরীয়তপুরের বিচ্ছিন্ন চারটি চর সাবমেরিন কেবলের বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। সংযোগ পেয়েছে শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কুন্ডেরচর ও চাঁদপুরের একলাশপুর ইউনিয়নের ৪হাজার ৫৬০ পরিবার। ২০২১ সালের ২৬ মার্চের মধ্যে ওই ৪ ইউনিয়নের ৭৯টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক।

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল পদ্মার তলদেশ দিয়ে ১ কিলোমিটার পার হয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যেমে তিনটি চরে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ করা হয় ১০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র। বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নওয়াপাড় ও চরআত্রার বিদ্যুতায়নের উদ্ভোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।

সংযোগ পাওয়ার ১০ মাসের মাথায় চরে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য আর কলকারখানায় এসেছে নতুন গতি। শিক্ষা আর প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে চরের শিক্ষার্থীরাও। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন চরের বাসিন্দারা।

পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে কাচিকাটা, চরাআত্রা ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নে। বিদ্যুৎ বিতরণে চরের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সাব স্টেশন। বিদ্যুতের নানাবিধ সুবিধা পেয়ে খুশি চরের মানুষ।

গ্রামের ভিতর ঢুকতেই দেখা গেল ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ লেগেছে। চরের দরিদ্র মানুষের ঘরগুলো নাজুক হলেও বিদ্যুতের সংযোগ থেকে বাদ যাচ্ছে না কেউই। দেওয়াকান্দি গ্রামের মাফিয়া বেগম রান্নার কাজ করছেন। থাকার ঘরটি বেশ ছোট। কাঁচামাটির ওপর নড়বড়ে টিনের ঘরটি। সেই ঘরেই দেয়া হয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। রান্না ঘরে বসেই কথা হয় মাফিয়া বেগমের সাথে। কথায় কথায় তিনি হিসাব দিতে থাকেন কিভাবে খরচ বাঁচল তার। তিনি বলেন, কিরিসত্যাল আংগাইলে আগে একশো দ্যাশশো টাহা লাগদো আর অহনে যেমন পঞ্চাশ শাইট টাহাই অইয়া যায়। টাহা কম লাগে, আলো অইছে, উপকার পাইছি। তিনটি চরে ছোট বড় মিলে রয়েছে ১০ টি হাট বাজার। বিদ্যুৎ পাওয়ায় বাজারগুলোও এখন বেশ জমজমাট। বেড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিধিও।

নওয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মজিবর খা বলেন, আমাগো বাজারে অন্তত দুইশ ব্যবসায়ী আছে। সবাই বিদ্যুৎ পাইছে। আগে সোলার জ¦ালাইতাম। ঘরের মধ্যেই আলো ছিল। সন্ধ্যা হইলে মানুষ বেশিক্ষণ বাজারে থাকতো না। এহন অনেক রাইত পর্যন্ত মানুষ বাজারে থাকে। আগে এই বাজারে ফ্রিজ ছিল না এহন অনেক ব্যবসায়ী ফ্রিজ কেনছে। ফটোকপি মেশিন কম্পিউটারের দোহানও হইছে। সব দিক দিয়াই কেনা বেচা বাড়ছে। বিদ্যুৎ পাইয়া চরের ব্যবসায়ীরা লাভবান। চরগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে আটটি জাহাজ নির্মাণের ডক ইয়ার্ড। এগুলোও ডিজেল চালিত জেনারেটর দিয়ে চলছিল। ডক ইয়ার্ডগুলোতে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। মক্কা মদিনা ডক ইয়ার্ড পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। বাকিরা পাওয়ার অপেক্ষায়। মক্কা মদিনা ডক ইয়ার্ডে কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপর নওয়াপাড়ার চরমন্ডল এলাকার সততা ডক ইয়ার্ডে গেলে দেখা যায় সেখানে বাল্কহেড নির্মাণ কাজ করছেন শ্রমিকরা। কথা হয় মালিক ছানাউল্লাহ ঢালীর সাথে। তিনি জানান, মিটারের লিগ্যা টাহা জমা দিছি। আমার পাশের ডকে কারে পাইছে। অরা দুইড্যা জাহাজও বানাইছে। অগো লাভ হইছে। যেহানে ডিজেলে মাসে খরচ হইতো ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাহা। সেহানে ১০ থেকে ১২ হাজার টাহার কারেং খরচেই হইতাছে। খরচ কমলে আমাগো লাভ বাইরা যায়। এহন অনেকেই তো নতুন কইরা করার চিন্তা করতাছে।