ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা
করোনা সংক্রমণের কারণে আগামী বছরের মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষাও পিছিয়ে যাচ্ছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে জুন এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে জুলাই বা অগাস্টে নেয়া হচ্ছে। আর অধ্যাদেশ জারি করে জানুয়ারিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মাধ্যমিকের নতুন ক্লাসে ওঠা শিক্ষার্থীরা চিরাচরিত প্রথার রোল নম্বরের পরিবর্তে পাবে আইডি নম্বর। প্রাথমিকে রোল নম্বর আগের শ্রেণীরটাই অটুট থাকবে। স্কুলে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ হবে ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রথমিক শিক্ষায় নেয়া সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনও যুক্ত ছিলেন।
আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফেব্রুয়ারিতে সিমিত সংখ্যক স্কুল-কলেজ খোলার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তুলে ধরেছেন করোনার প্রেক্ষাপটে নতুন বছরের জন্য সরকারের নেয়া শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদী নানা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের কথা।
আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস পুনর্বিন্যস্ত করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত স্কুল-কলেজে নিয়ে ক্লাস করানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ থেকে প্রত্যক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। সিলেবাস কাস্টমাইজ করার কার্যক্রম চলছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানাতে পারব। পরের স্তরে যেতে যেগুলো প্রয়োজন, সেগুলো মাথায় রেখে সিলেবাসকে কাঁটছাট করে ছোট করা হবে, সেটি আমরা জানিয়ে দেব।’
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ২০২১ সালের জুন নাগদ এই পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘স্কুলগুলো খুলে দেয়ার চেষ্টা করব। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণী যেন নতুন সিলেবাসে ক্লাস করে পরীক্ষা দিতে পারে। সিদ্ধান্ত অনুসারে ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম দিন এসএসসি ও এপ্রিলের প্রথম দিন শুরু হয় এইচএসসি পরীক্ষা।’
গত ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলেও করোনা সংক্রমণে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে।
সেজন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সহসাই এটি জারি করা হবে। পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত আইন রয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে ফল প্রকাশের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। আশা করি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি জারি করতে পারব, এটি জারি করতে পারলেই ফল দিয়ে দেব।’
করোনার কারণে এবার বিশেষ পরিস্থিতিতে ফল দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ফল নিয়ে যদি কোন শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হন তাহলে তিনি নিজ শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করতে পারবেন। তবে আশা করছি রেজাল্ট নিয়ে কেউ অসন্তুষ্ট হবেন না।’
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফল
গত ২৪ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে জানান, জেএসসি-জেডিসি থেকে ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল থেকে ৭৫ শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে।
জেএসসি-জেডিসি সনদে জিপিএ থাকবে না
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এ বছর অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) নির্দেশনা মোতাবেক স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষাবোর্ডগুলো জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজও সম্পন্ন করেছে। বোর্ডগুলো সব শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ সদন দেবে, কিন্তু কোন নম্বরপত্র দেয়া হবে না। এ কারণে জেএসসি-জেডিসির সনদপত্রে জিপিএ উল্লেখ থাকবে না। আমরা যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কিছুটা মূলায়ন করেছি, সে মূল্যায়নপত্রও আমরা সংগ্রহ করব।’
রোল নম্বরের অবসান হচ্ছে
মাধ্যমিকের নতুন ক্লাসে উঠা শিক্ষার্থীদের চিরাচরিত প্রথায় রোল নম্বর দেয়া হবে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বার্ষিক পরীক্ষার মেধাক্রমের ভিত্তিতে আগে যে রোল নম্বর দেয়া হতো, তার বদলে শিক্ষার্থীদের এবার আইডি নম্বর দেয়া হবে। আর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা আগের ক্লাসের রোল নিয়ে পরের ক্লাসে উঠবে। রোল নম্বর নিয়ে একটা সমস্যা হয়। প্রত্যেক শ্রেণীতে যে রোল নম্বর থাকে, আমাদের রোল নম্বরের যে প্রথা রয়েছে, তার কারণে একটা অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা হয় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সময় যে সহযোগিতার মনোভাব, যেটি থাকার দরকার, অনেক সময় সেটির অভাব ঘটে রোল নম্বরের কারণে, সামনে আসতে চায় সবাই।’
২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীর রোল নম্বরের এই বিষয়ের পরিবর্তে আইডি নম্বর প্রদান করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এতে পুরানো রোল নম্বর প্রথার বিলুপ্তি হবে এবং অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সৎ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে বলে আশা করছি।’
প্রাথমিক স্তর থেকে সব শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি দেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পুরো শিক্ষা জীবনে সে ওই আইডি নম্বর নিয়ে থাকবে, তাতে তাকে ‘ট্র্যাক’ করা যাবে, সে ঝরে পড়ছে কি না।’
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, ‘প্রাথমিকে আমাদের আইডি নম্বর দেয়ার পরিকল্পনা নেই। আগের (বছরের) রোল নম্বরই (নতুন ক্লাসে) দেয়া হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আনা এবং গুণগত মান অর্জনে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘এবার লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আমরা আশা করছি, তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও হয়ত সমতা আসবে। কিছু স্কুলে খুব ভালো ফলাফল করে তেমন শিক্ষার্থীরা যায়, কিছু স্কুল থাকে একেবাইরে ভালো ফল করছে না। এই যে একটা বিরাট রকমের বৈষ্যম্য তৈরি হয়ে যায়, এই বৈষম্যটা তারা স্কুল-কলেজ পার হওয়ার পুরো সময়টায় বয়ে নিয়ে যায়। লটারির মাধ্যমে যেটা হচ্ছে, এই বৈষম্যের জায়গাটা অনেকখানি নিরসন হবে এবং কিছুটা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আসবে। মিক্সঅ্যাবিলিট ক্লাসের কারণে ২০২১ সালে আমাদের গুণগত শিক্ষা অর্জন কিছুটা হয়তো সহজতর হবে।’
রাবি ভিসি ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর ব্যবস্থা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর ব্যাখ্যা চেয়ে যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ পেয়েছিলাম, সেগুলো তদন্ত করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমরা সত্যতা পেয়েছি। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছু নির্দেশনা পাঠয়েছিলাম। আমরা এখন সেগুলো দেখবো, সেই নির্দেশনা কতটা পালন করল বা করেনি। যদি না করে থাকে তাহলে সেটি কেন করল না, সে বিষয়ে আমাদের যা করণীয় আমরা নিশ্চয়ই করব।’
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম, সে ব্যাখ্যার সময়টা দিয়েছিলাম তা আসা শুরু হয়েছে। সবগুলো আসেনি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে ব্যাখ্যাগুলো পেয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীতে আমাদের পক্ষ থেকে, সরকারের পক্ষ থেকে সে সিদ্ধান্ত তা তেরি করব।’
পাঠ্যবই বিতরণ ১২ দিন
২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হলেও করোনার কারণে এবার তা হচ্ছে না। বছরের প্রথম ১২ দিন উৎসব না করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া হবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ ডিসেম্বর বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
বছরের প্রথম দিন সারাদেশে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বই উৎসবে অংশ নেয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এবার একই দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেব না। কারণ জনসমাবেশ কিছুতেই আমরা করতে পারি না। তার বদলে প্রতিটি শ্রেণীর বই বিতরণের জন্য তিন দিন করে সময় থাকবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১২ দিনে আমরা বই বিতরণ করব। একেকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তিন দিন (স্কুলে) আসবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বলে দেবে- ‘এত থেকে এত তারিখ পর্যন্ত তোমরা আসো’, সে রকম একটি ব্যবস্থা করে একই ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তিন দিনে ভাগে ভাগে এসে বইগুলো নিয়ে যাবে।’
গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বই বিতরণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমি সবাইকে আহ্বান জানাই। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে কীভাবে বই তুলে দেয়া হবে, সে বিষয়ে কিছু অবশ্য এখনও জানাননি প্রতিমন্ত্রী।
বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
করোনা সংক্রমণের কারণে আগামী বছরের মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষাও পিছিয়ে যাচ্ছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে জুন এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে জুলাই বা অগাস্টে নেয়া হচ্ছে। আর অধ্যাদেশ জারি করে জানুয়ারিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, মাধ্যমিকের নতুন ক্লাসে ওঠা শিক্ষার্থীরা চিরাচরিত প্রথার রোল নম্বরের পরিবর্তে পাবে আইডি নম্বর। প্রাথমিকে রোল নম্বর আগের শ্রেণীরটাই অটুট থাকবে। স্কুলে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ হবে ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রথমিক শিক্ষায় নেয়া সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনও যুক্ত ছিলেন।
আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফেব্রুয়ারিতে সিমিত সংখ্যক স্কুল-কলেজ খোলার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তুলে ধরেছেন করোনার প্রেক্ষাপটে নতুন বছরের জন্য সরকারের নেয়া শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদী নানা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের কথা।
আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস পুনর্বিন্যস্ত করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত স্কুল-কলেজে নিয়ে ক্লাস করানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ থেকে প্রত্যক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। সিলেবাস কাস্টমাইজ করার কার্যক্রম চলছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানাতে পারব। পরের স্তরে যেতে যেগুলো প্রয়োজন, সেগুলো মাথায় রেখে সিলেবাসকে কাঁটছাট করে ছোট করা হবে, সেটি আমরা জানিয়ে দেব।’
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ২০২১ সালের জুন নাগদ এই পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘স্কুলগুলো খুলে দেয়ার চেষ্টা করব। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণী যেন নতুন সিলেবাসে ক্লাস করে পরীক্ষা দিতে পারে। সিদ্ধান্ত অনুসারে ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম দিন এসএসসি ও এপ্রিলের প্রথম দিন শুরু হয় এইচএসসি পরীক্ষা।’
গত ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলেও করোনা সংক্রমণে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি ও সমমানের ফলফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে।
সেজন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সহসাই এটি জারি করা হবে। পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত আইন রয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে ফল প্রকাশের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। আশা করি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি জারি করতে পারব, এটি জারি করতে পারলেই ফল দিয়ে দেব।’
করোনার কারণে এবার বিশেষ পরিস্থিতিতে ফল দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ফল নিয়ে যদি কোন শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হন তাহলে তিনি নিজ শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করতে পারবেন। তবে আশা করছি রেজাল্ট নিয়ে কেউ অসন্তুষ্ট হবেন না।’
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফল
গত ২৪ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে জানান, জেএসসি-জেডিসি থেকে ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল থেকে ৭৫ শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে।
জেএসসি-জেডিসি সনদে জিপিএ থাকবে না
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এ বছর অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) নির্দেশনা মোতাবেক স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষাবোর্ডগুলো জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজও সম্পন্ন করেছে। বোর্ডগুলো সব শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ সদন দেবে, কিন্তু কোন নম্বরপত্র দেয়া হবে না। এ কারণে জেএসসি-জেডিসির সনদপত্রে জিপিএ উল্লেখ থাকবে না। আমরা যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কিছুটা মূলায়ন করেছি, সে মূল্যায়নপত্রও আমরা সংগ্রহ করব।’
রোল নম্বরের অবসান হচ্ছে
মাধ্যমিকের নতুন ক্লাসে উঠা শিক্ষার্থীদের চিরাচরিত প্রথায় রোল নম্বর দেয়া হবে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বার্ষিক পরীক্ষার মেধাক্রমের ভিত্তিতে আগে যে রোল নম্বর দেয়া হতো, তার বদলে শিক্ষার্থীদের এবার আইডি নম্বর দেয়া হবে। আর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা আগের ক্লাসের রোল নিয়ে পরের ক্লাসে উঠবে। রোল নম্বর নিয়ে একটা সমস্যা হয়। প্রত্যেক শ্রেণীতে যে রোল নম্বর থাকে, আমাদের রোল নম্বরের যে প্রথা রয়েছে, তার কারণে একটা অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা হয় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সময় যে সহযোগিতার মনোভাব, যেটি থাকার দরকার, অনেক সময় সেটির অভাব ঘটে রোল নম্বরের কারণে, সামনে আসতে চায় সবাই।’
২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীর রোল নম্বরের এই বিষয়ের পরিবর্তে আইডি নম্বর প্রদান করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এতে পুরানো রোল নম্বর প্রথার বিলুপ্তি হবে এবং অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সৎ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে বলে আশা করছি।’
প্রাথমিক স্তর থেকে সব শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি দেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পুরো শিক্ষা জীবনে সে ওই আইডি নম্বর নিয়ে থাকবে, তাতে তাকে ‘ট্র্যাক’ করা যাবে, সে ঝরে পড়ছে কি না।’
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, ‘প্রাথমিকে আমাদের আইডি নম্বর দেয়ার পরিকল্পনা নেই। আগের (বছরের) রোল নম্বরই (নতুন ক্লাসে) দেয়া হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আনা এবং গুণগত মান অর্জনে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘এবার লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আমরা আশা করছি, তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও হয়ত সমতা আসবে। কিছু স্কুলে খুব ভালো ফলাফল করে তেমন শিক্ষার্থীরা যায়, কিছু স্কুল থাকে একেবাইরে ভালো ফল করছে না। এই যে একটা বিরাট রকমের বৈষ্যম্য তৈরি হয়ে যায়, এই বৈষম্যটা তারা স্কুল-কলেজ পার হওয়ার পুরো সময়টায় বয়ে নিয়ে যায়। লটারির মাধ্যমে যেটা হচ্ছে, এই বৈষম্যের জায়গাটা অনেকখানি নিরসন হবে এবং কিছুটা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আসবে। মিক্সঅ্যাবিলিট ক্লাসের কারণে ২০২১ সালে আমাদের গুণগত শিক্ষা অর্জন কিছুটা হয়তো সহজতর হবে।’
রাবি ভিসি ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর ব্যবস্থা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর ব্যাখ্যা চেয়ে যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ পেয়েছিলাম, সেগুলো তদন্ত করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমরা সত্যতা পেয়েছি। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছু নির্দেশনা পাঠয়েছিলাম। আমরা এখন সেগুলো দেখবো, সেই নির্দেশনা কতটা পালন করল বা করেনি। যদি না করে থাকে তাহলে সেটি কেন করল না, সে বিষয়ে আমাদের যা করণীয় আমরা নিশ্চয়ই করব।’
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম, সে ব্যাখ্যার সময়টা দিয়েছিলাম তা আসা শুরু হয়েছে। সবগুলো আসেনি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে ব্যাখ্যাগুলো পেয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীতে আমাদের পক্ষ থেকে, সরকারের পক্ষ থেকে সে সিদ্ধান্ত তা তেরি করব।’
পাঠ্যবই বিতরণ ১২ দিন
২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হলেও করোনার কারণে এবার তা হচ্ছে না। বছরের প্রথম ১২ দিন উৎসব না করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া হবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ ডিসেম্বর বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
বছরের প্রথম দিন সারাদেশে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বই উৎসবে অংশ নেয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এবার একই দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেব না। কারণ জনসমাবেশ কিছুতেই আমরা করতে পারি না। তার বদলে প্রতিটি শ্রেণীর বই বিতরণের জন্য তিন দিন করে সময় থাকবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১২ দিনে আমরা বই বিতরণ করব। একেকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তিন দিন (স্কুলে) আসবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বলে দেবে- ‘এত থেকে এত তারিখ পর্যন্ত তোমরা আসো’, সে রকম একটি ব্যবস্থা করে একই ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তিন দিনে ভাগে ভাগে এসে বইগুলো নিয়ে যাবে।’
গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বই বিতরণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমি সবাইকে আহ্বান জানাই। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে কীভাবে বই তুলে দেয়া হবে, সে বিষয়ে কিছু অবশ্য এখনও জানাননি প্রতিমন্ত্রী।