ছোট এলাকা, ভোটার কম তাই বেড়েছে ভোট

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের খরা দেখা গেলেও গত সোমবার প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে গড়ে ৬৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার তথ্যানুযায়ী, করোনার এই সময়ও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। ইভিএমে ভোট দেয়ার আগ্রহ নিয়েও কেন্দ্রে গেছেন অনেকে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া ভোটে ছিল উৎসবের আমেজ। হঠাৎ করে ভোটের হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ফলাফল কিছু পূর্বনির্ধারিত, কিছু ইভিএমের কারসাজি।

এবার পৌর নির্বাচনে ভোটের হার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, জেলা সদর ছাড়া অন্য পৌরসভার নির্বাচনী এলাকা অপেক্ষাকৃত ছোট। ভোটার সংখ্যা তুলনামূলক কম। ভোটারদের সঙ্গে মেয়র প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিবিড় যোগাযোগ থাকে। ওয়ার্ডের আয়তন আরও ছোট বলে কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং তাদের কর্মীরা ভোটের দিন সবার ঘরে ঘরে যেতে পারেন। ভোটারদের কেন্দ্রে আনাও সহজ হয়। তাই পৌর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি হয়েছে। তবে ভোট দিতে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ না মেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে অনেক কেন্দ্রে থেকে। আবার অনেক জায়গায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করে ‘তাণ্ডব চালিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

গত সোমবার দেশের আট বিভাগের ২২ জেলার ২৪টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ওই নির্বাচনে মোট ১১৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে খুলনার চালনা পৌরসভার মেয়র পদে ভোট স্থগিত করা হয়। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ১৮টি, বিএনপি ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রতীকে ৩ জন জয়লাভ করেন।

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৮৫.৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে পটুয়াখালীর কুয়াটাকায়। কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৪০.৮৭ শতাংশ। গড়ে ভোট পড়েছে ৬৫.৩১ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ভোটের আগে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ‘মক ভোটিং’ এর ব্যবস্থা করায় ভোটাররা এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে আগ্রহী হয়েছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তাই ভোটের হার বেড়েছে।’

পটুয়াখালীর কুয়াটাকাটা পৌরসভায় ভোটের হার বেশি হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সূত্র বলছে, ছোট এই এলাকায় ভোটার কম, সবাই সবার চেনা। নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। দিনভর নারী ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকরা সারাদিন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে আনার কাজ করেছেন। কুয়াকাটা পৌরসভায় মোট ৮ হাজার ১২২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬ হাজার ৯১৩ জন।

কুয়াকাটা পৌরসভার ভোটার হোসাইন আমির বলেন, ‘গত নির্বাচনে ভোটারদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ভোটাররা সুষ্ঠু পরিবেশ দেখে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ ভোট দেয়ার জন্য অনেকে এসেছেন।’

ভোটার কাওসার হাওলাদার বলেন, ‘কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত করেছেন।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রির্টানিং অফিসার আবদুর রশিদ বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ও ইভিএম দেখে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার নির্বাচন চলাকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং পঞ্চগড়ে সহিংস ঘটনা ঘটে। এছাড়া ধামরাই পৌরসভায় ভোট চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। পঞ্চগড় পৌরসভায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা এবং হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

সূত্র বলছে, গোলযোগের কারণে সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি কমে যায়। এরপরও প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার চেষ্টা অব্যহত রাখেন। শেষ পর্যন্ত এখানে ৪০.৮৭ শতাংশ ভোট ‘কাস্ট’ হয়, যা সোমবার অনুষ্ঠিত ২৪ পৌরসভার ভোটের হারের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৪৮১৩। ভোট পড়েছে ১৪১৮৮টি।

তুলনামূলক কম ভোট পড়ার বিষয়ে পৌরসদরের বাসিন্দা আবেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটের দিন ইভিএম মেশিন ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ইভিএম সম্পর্কে জনগণের ধারণা না থাকায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। এছাড়া নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা, অনিয়মের আশঙ্কা, ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলাতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় উপস্থিতি কমে যায়।’

তবে সীতাকুণ্ড সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. বুলবুল আহম্মদ বলেন, ‘ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতি বোঝানোর জন্য ‘মক ভোটিং’ এর আয়োজন করা হয়েছে। অধিকাংশ ভোটার এই পদ্ধতি সহজ বলেছে।’

নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সামছুল আলম আজাদ বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে লাঠি নিয়ে অবস্থান করে ভোটারদের বাধা প্রদান করে। এসব কারণে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, ইভিএম মেশিনের ওপর জনগণের আস্থা ছিল না। প্রতিটি কেন্দ্রে বহিরাগতরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছে। যারা ভোট নিয়েছেন তাদের ইভিএম সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল না।

নবনির্বাচিত মেয়র বদিউল আলম, সাধারণ সময়ের সঙ্গে করোনাকালের হিসাব করলে ৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি কম না। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা বুঝতে পারেনি। তাই উপস্থিতি একটু কম ছিল।

প্রথম ধাপে ২৩ পৌরসভার মধ্যে একমাত্র নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেনর পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাকিয়া খাতুন। ১২ হাজার ৫৬ ভোট পেয়ে তিনি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তৌহিদুল ইসলাম পান ৯ হাজার ৪৭৫ ভোট।

ধামরাই পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী গোলাম কবির ২৩ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী দেওয়ান নাজিম উদ্দিন পান ১ হাজার ৫০৩ ভোট। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এখানে কাউন্সিলর ভোট গোপন কক্ষে হলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রে মেয়র ভোট জোর করে প্রকাশ্যে নেয়া হয়েছে।

পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা বহন করে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে জনগণের আস্থা বেড়েছে এবং মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। বিএনপি ইভিএমের বিরোধিতা করলেও তাদের প্রার্থীরা এই পদ্ধতিতে বিজয়ী হওয়ার মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতিতে কোনভাবেই অনিয়মের সুযোগ নেই।’

তবে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এটা কোন নির্বাচনই হয়নি। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কখনওই কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। পৌর নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘ফলাফল কিছু কিছু পূর্বনির্ধারিত। কিছু ইভিএমের কারসাজি।’

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার সংখ্যা ২৫৯টি। ইতোমধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি ৬১টি পৌরসভায় এবং তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ৬৪টি পৌরসভায় ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে আর ৩২টি পৌরসভায় ব্যালট পেপারে এবং তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভার সবগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চতুর্থ ধাপে অবশিষ্ট পৌরসভাগুলোতে ভোট হবে।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৫ পৌষ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচন

ছোট এলাকা, ভোটার কম তাই বেড়েছে ভোট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের খরা দেখা গেলেও গত সোমবার প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে গড়ে ৬৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার তথ্যানুযায়ী, করোনার এই সময়ও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। ইভিএমে ভোট দেয়ার আগ্রহ নিয়েও কেন্দ্রে গেছেন অনেকে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া ভোটে ছিল উৎসবের আমেজ। হঠাৎ করে ভোটের হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ফলাফল কিছু পূর্বনির্ধারিত, কিছু ইভিএমের কারসাজি।

এবার পৌর নির্বাচনে ভোটের হার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, জেলা সদর ছাড়া অন্য পৌরসভার নির্বাচনী এলাকা অপেক্ষাকৃত ছোট। ভোটার সংখ্যা তুলনামূলক কম। ভোটারদের সঙ্গে মেয়র প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিবিড় যোগাযোগ থাকে। ওয়ার্ডের আয়তন আরও ছোট বলে কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং তাদের কর্মীরা ভোটের দিন সবার ঘরে ঘরে যেতে পারেন। ভোটারদের কেন্দ্রে আনাও সহজ হয়। তাই পৌর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি হয়েছে। তবে ভোট দিতে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ না মেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে অনেক কেন্দ্রে থেকে। আবার অনেক জায়গায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করে ‘তাণ্ডব চালিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

গত সোমবার দেশের আট বিভাগের ২২ জেলার ২৪টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ওই নির্বাচনে মোট ১১৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে খুলনার চালনা পৌরসভার মেয়র পদে ভোট স্থগিত করা হয়। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ১৮টি, বিএনপি ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রতীকে ৩ জন জয়লাভ করেন।

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৮৫.৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে পটুয়াখালীর কুয়াটাকায়। কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৪০.৮৭ শতাংশ। গড়ে ভোট পড়েছে ৬৫.৩১ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ভোটের আগে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ‘মক ভোটিং’ এর ব্যবস্থা করায় ভোটাররা এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে আগ্রহী হয়েছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তাই ভোটের হার বেড়েছে।’

পটুয়াখালীর কুয়াটাকাটা পৌরসভায় ভোটের হার বেশি হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সূত্র বলছে, ছোট এই এলাকায় ভোটার কম, সবাই সবার চেনা। নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। দিনভর নারী ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকরা সারাদিন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে আনার কাজ করেছেন। কুয়াকাটা পৌরসভায় মোট ৮ হাজার ১২২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬ হাজার ৯১৩ জন।

কুয়াকাটা পৌরসভার ভোটার হোসাইন আমির বলেন, ‘গত নির্বাচনে ভোটারদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ভোটাররা সুষ্ঠু পরিবেশ দেখে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ ভোট দেয়ার জন্য অনেকে এসেছেন।’

ভোটার কাওসার হাওলাদার বলেন, ‘কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত করেছেন।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রির্টানিং অফিসার আবদুর রশিদ বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ও ইভিএম দেখে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার নির্বাচন চলাকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং পঞ্চগড়ে সহিংস ঘটনা ঘটে। এছাড়া ধামরাই পৌরসভায় ভোট চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। পঞ্চগড় পৌরসভায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা এবং হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

সূত্র বলছে, গোলযোগের কারণে সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি কমে যায়। এরপরও প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার চেষ্টা অব্যহত রাখেন। শেষ পর্যন্ত এখানে ৪০.৮৭ শতাংশ ভোট ‘কাস্ট’ হয়, যা সোমবার অনুষ্ঠিত ২৪ পৌরসভার ভোটের হারের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৪৮১৩। ভোট পড়েছে ১৪১৮৮টি।

তুলনামূলক কম ভোট পড়ার বিষয়ে পৌরসদরের বাসিন্দা আবেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটের দিন ইভিএম মেশিন ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ইভিএম সম্পর্কে জনগণের ধারণা না থাকায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। এছাড়া নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা, অনিয়মের আশঙ্কা, ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলাতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় উপস্থিতি কমে যায়।’

তবে সীতাকুণ্ড সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. বুলবুল আহম্মদ বলেন, ‘ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতি বোঝানোর জন্য ‘মক ভোটিং’ এর আয়োজন করা হয়েছে। অধিকাংশ ভোটার এই পদ্ধতি সহজ বলেছে।’

নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সামছুল আলম আজাদ বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে লাঠি নিয়ে অবস্থান করে ভোটারদের বাধা প্রদান করে। এসব কারণে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, ইভিএম মেশিনের ওপর জনগণের আস্থা ছিল না। প্রতিটি কেন্দ্রে বহিরাগতরা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছে। যারা ভোট নিয়েছেন তাদের ইভিএম সম্পর্কে ভালো ধারণা ছিল না।

নবনির্বাচিত মেয়র বদিউল আলম, সাধারণ সময়ের সঙ্গে করোনাকালের হিসাব করলে ৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি কম না। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা বুঝতে পারেনি। তাই উপস্থিতি একটু কম ছিল।

প্রথম ধাপে ২৩ পৌরসভার মধ্যে একমাত্র নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেনর পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাকিয়া খাতুন। ১২ হাজার ৫৬ ভোট পেয়ে তিনি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তৌহিদুল ইসলাম পান ৯ হাজার ৪৭৫ ভোট।

ধামরাই পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী গোলাম কবির ২৩ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী দেওয়ান নাজিম উদ্দিন পান ১ হাজার ৫০৩ ভোট। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এখানে কাউন্সিলর ভোট গোপন কক্ষে হলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রে মেয়র ভোট জোর করে প্রকাশ্যে নেয়া হয়েছে।

পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা বহন করে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে জনগণের আস্থা বেড়েছে এবং মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। বিএনপি ইভিএমের বিরোধিতা করলেও তাদের প্রার্থীরা এই পদ্ধতিতে বিজয়ী হওয়ার মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতিতে কোনভাবেই অনিয়মের সুযোগ নেই।’

তবে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এটা কোন নির্বাচনই হয়নি। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কখনওই কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। পৌর নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘ফলাফল কিছু কিছু পূর্বনির্ধারিত। কিছু ইভিএমের কারসাজি।’

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার সংখ্যা ২৫৯টি। ইতোমধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি ৬১টি পৌরসভায় এবং তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ৬৪টি পৌরসভায় ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে আর ৩২টি পৌরসভায় ব্যালট পেপারে এবং তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভার সবগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চতুর্থ ধাপে অবশিষ্ট পৌরসভাগুলোতে ভোট হবে।