চাঁদপুর মহিলা অধিদফতরে জীবিকায়ন প্রকল্পে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

চাঁদপুরে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক রাফিয়া ইকবাল ও প্রোগ্রাম অফিসার সাজিয়া আফরিনের বিরুদ্ধে ‘জীবিকায়নের জন্য মহিলাদের দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ’ প্রকল্পে নিয়োগ বাণিজ্য ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মোটাদাগে টাকায় ওই প্রকল্পে গোপনে ৫ জন নিয়োগ দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যাদেরকে চাকরি পাইয়ে দিবে বলে আগে থেকেই প্রত্যেকের থেকে ৪-৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। ওদের কালো টাকা সাদা করার দায় সারার জন্য গত মঙ্গলবার লোক দেখানো নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এসব অভিযোগ তোলেন ওই প্রকল্প থেকে বাদ পড়া ৪ প্রশিক্ষক। অভিযোগকারীরা হলেন, কম্পিউটার প্রশিক্ষক সোহেল রানা, ব্লক/বাটিক প্রশিক্ষক শামীমা নাসরিন, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক সালমা আক্তার, বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষক রুমা আক্তার। এদের মধ্যে ব্লক/বাটিক প্রশিক্ষক শামীমা নাসরিন সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭ সালের ৭ই ডিসেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ব্লক/বাটিক পদে মহিলা অধিদফতরে কর্মরত ইতির নিকট দরখাস্ত জমা দেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। যেখানে উল্লেখ ছিল পূর্বে যারা আবেদন করেছে তাদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। এখন তারা নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে অনিয়ম করে আমাকে ইন্টারভিউ কার্ড পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি আমি বিষয়টি রাফিয়া ইকবাল মেডামকে অবহিত করলে তিনি কোন সাড়া না দিয়ে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। আমি আমার চাকরি ফিরত পেতে তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট উর্ধতনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কম্পিউটার প্রশিক্ষক সোহেল রানা, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক সালমা আক্তার, বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষক রুমা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, ডব্লিউটিসি প্রকল্প ২০১১ সালের ৫ই মে থেকে শুরু হয়। প্রকল্প ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত চলে। ডব্লিউটিসি এর অর্থায়নে ২০১৪ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর সদর কার্যালয়ের মৌখিক ও ২০১৪ সালের ৪ই সেপ্টেম্বরের নির্দেশিকা অনুযায়ী পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়। এতে ২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করি। ২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর জেলার উপ-পরিচালক পদে মো. মহিউদ্দিন আহমেদ যোগদান করেন। ২০১৭ সালের জুনে আমাদের বকেয়া বেতন ও এরিয়ার বিল ৩ লাখ টাকা আসে। পরে মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এই টাকা থেকে বেনিফিট চান। আর তা না দেয়ায় আমাদের জুলাই/১৭ হতে ডিসেম্বর/১৭ পর্যন্ত বেতন আটকিয়ে দেয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান ২০১৮ সালের ২৮শে মে আমাদের প্রশিক্ষকদের পক্ষে দেন। যা বর্তমান জেলা কর্মকর্তা রাফিয়া ইকবাল তিনিও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে উল্লেখ করেন আমাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোন প্রতিবন্ধকতা দৃশ্যমান হয়নি। তারা সাংবাদিকদের আরও জানান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি মহোদয়ও আমাদের পক্ষে সুপারিশ দেন। আমরা সুপ্রীমকোর্ট থেকে নোটিসও প্রদান করি কিন্তু আমাদের বেতন ও আটকিয়ে রাখা হয়। হাইকোর্টের নোটিসের পরও জবাব দেয়া হয়নি। এমনকি আমাদের চাকরি বহাল না করে নতুনভাবে কিছু লোক থেকে মোটাদাগে টাকা (প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা) নিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়ার অপচেষ্টা করছেন। আমরা উর্ধতনদের নিকট এ ব্যাপারে তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে সাজিয়া আফরিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি কারও কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেইনি। আমার বিরুদ্ধে লোক নিয়োগের কথা বলে ৪-৫ লাখ করে টাকা নিয়েছি এমন কোন প্রমাণ নেই। আর একই পদে ১০-১২ বছর রয়েছি সেটি আমার যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায়। তাই আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক রাফিয়া ইকবালের সঙ্গে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি কারও থেকে কোন টাকা-পয়সা নেইনি। সম্পূর্ণ বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হচ্ছে। এখানে আগে থেকে কাউকেউ সিলেক্ট করে রাখা হয়নি। সম্পূর্ণ অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা। উল্টো ওরা যাতে তাদের বকেয়া টাকা দ্রুত পেয়ে যায় আমি সে ব্যাপারে ওদের যথেষ্ট সাহায্য করেছি। এদিকে গতকাল দুপুরে ইন্টারভিউ নেওয়ার স্থানে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানকে অভিযোগগুলো অবহিত করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি এসব কিছুই জানতাম না। আর এখন অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। শামীমা নাসরিনের বিষয়টি আমরা দেখি কিছু করা যায়কিনা! তবে কিছু করা না গেলে ভুক্তভোগী সবাইকে স্ব উদ্যোগে আইনি পক্রিয়ায় যেতে ইচ্ছে হলে সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৬ পৌষ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

চাঁদপুর মহিলা অধিদফতরে জীবিকায়ন প্রকল্পে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

সংবাদদাতা, চাঁদপুর

চাঁদপুরে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক রাফিয়া ইকবাল ও প্রোগ্রাম অফিসার সাজিয়া আফরিনের বিরুদ্ধে ‘জীবিকায়নের জন্য মহিলাদের দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ’ প্রকল্পে নিয়োগ বাণিজ্য ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মোটাদাগে টাকায় ওই প্রকল্পে গোপনে ৫ জন নিয়োগ দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যাদেরকে চাকরি পাইয়ে দিবে বলে আগে থেকেই প্রত্যেকের থেকে ৪-৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। ওদের কালো টাকা সাদা করার দায় সারার জন্য গত মঙ্গলবার লোক দেখানো নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এসব অভিযোগ তোলেন ওই প্রকল্প থেকে বাদ পড়া ৪ প্রশিক্ষক। অভিযোগকারীরা হলেন, কম্পিউটার প্রশিক্ষক সোহেল রানা, ব্লক/বাটিক প্রশিক্ষক শামীমা নাসরিন, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক সালমা আক্তার, বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষক রুমা আক্তার। এদের মধ্যে ব্লক/বাটিক প্রশিক্ষক শামীমা নাসরিন সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭ সালের ৭ই ডিসেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ব্লক/বাটিক পদে মহিলা অধিদফতরে কর্মরত ইতির নিকট দরখাস্ত জমা দেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। যেখানে উল্লেখ ছিল পূর্বে যারা আবেদন করেছে তাদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। এখন তারা নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে অনিয়ম করে আমাকে ইন্টারভিউ কার্ড পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি আমি বিষয়টি রাফিয়া ইকবাল মেডামকে অবহিত করলে তিনি কোন সাড়া না দিয়ে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। আমি আমার চাকরি ফিরত পেতে তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট উর্ধতনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কম্পিউটার প্রশিক্ষক সোহেল রানা, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক সালমা আক্তার, বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষক রুমা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, ডব্লিউটিসি প্রকল্প ২০১১ সালের ৫ই মে থেকে শুরু হয়। প্রকল্প ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত চলে। ডব্লিউটিসি এর অর্থায়নে ২০১৪ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর সদর কার্যালয়ের মৌখিক ও ২০১৪ সালের ৪ই সেপ্টেম্বরের নির্দেশিকা অনুযায়ী পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়। এতে ২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করি। ২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর জেলার উপ-পরিচালক পদে মো. মহিউদ্দিন আহমেদ যোগদান করেন। ২০১৭ সালের জুনে আমাদের বকেয়া বেতন ও এরিয়ার বিল ৩ লাখ টাকা আসে। পরে মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এই টাকা থেকে বেনিফিট চান। আর তা না দেয়ায় আমাদের জুলাই/১৭ হতে ডিসেম্বর/১৭ পর্যন্ত বেতন আটকিয়ে দেয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান ২০১৮ সালের ২৮শে মে আমাদের প্রশিক্ষকদের পক্ষে দেন। যা বর্তমান জেলা কর্মকর্তা রাফিয়া ইকবাল তিনিও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে উল্লেখ করেন আমাদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোন প্রতিবন্ধকতা দৃশ্যমান হয়নি। তারা সাংবাদিকদের আরও জানান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি মহোদয়ও আমাদের পক্ষে সুপারিশ দেন। আমরা সুপ্রীমকোর্ট থেকে নোটিসও প্রদান করি কিন্তু আমাদের বেতন ও আটকিয়ে রাখা হয়। হাইকোর্টের নোটিসের পরও জবাব দেয়া হয়নি। এমনকি আমাদের চাকরি বহাল না করে নতুনভাবে কিছু লোক থেকে মোটাদাগে টাকা (প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা) নিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়ার অপচেষ্টা করছেন। আমরা উর্ধতনদের নিকট এ ব্যাপারে তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে সাজিয়া আফরিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি কারও কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেইনি। আমার বিরুদ্ধে লোক নিয়োগের কথা বলে ৪-৫ লাখ করে টাকা নিয়েছি এমন কোন প্রমাণ নেই। আর একই পদে ১০-১২ বছর রয়েছি সেটি আমার যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায়। তাই আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক রাফিয়া ইকবালের সঙ্গে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি কারও থেকে কোন টাকা-পয়সা নেইনি। সম্পূর্ণ বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হচ্ছে। এখানে আগে থেকে কাউকেউ সিলেক্ট করে রাখা হয়নি। সম্পূর্ণ অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা। উল্টো ওরা যাতে তাদের বকেয়া টাকা দ্রুত পেয়ে যায় আমি সে ব্যাপারে ওদের যথেষ্ট সাহায্য করেছি। এদিকে গতকাল দুপুরে ইন্টারভিউ নেওয়ার স্থানে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানকে অভিযোগগুলো অবহিত করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি এসব কিছুই জানতাম না। আর এখন অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। শামীমা নাসরিনের বিষয়টি আমরা দেখি কিছু করা যায়কিনা! তবে কিছু করা না গেলে ভুক্তভোগী সবাইকে স্ব উদ্যোগে আইনি পক্রিয়ায় যেতে ইচ্ছে হলে সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।