কমরেড মণি সিংহ আদর্শ রাজনীতির প্রতীক

আসলাম খান

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, টংক আন্দোলনের মহান নায়ক, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সরকারের উপদেষ্টা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড মণি সিংহ আজ থেকে ৩০ বছর পূর্বে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের শোষণ বৈষম্য জুলুমের বিরুদ্ধে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খেটেছেন। কখনও জেল জুলুম খেটে, কখন হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকা, অন্তরীণ থাকা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে টংক আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্বের দেয়া, ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত এলাকা তৎকালীন ময়মনসিংহের নেত্রকোণার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ধান কাড়াড়ি (ধানের মাধ্যমে খাজনা দেয়া) বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করা দুঃসাহসের বিষয়। তার রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য ও রোমাঞ্চকর।

কমরেড মণি সিংহ ১৯০১ সালের (১৯০১-১৯৯০) নেত্রকোণা জেলার সুসং দুর্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য কলকাতায় যান। কলকাতায় ১৯১৪ সালে সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী ‘অনুশীলন’ দলে যোগ দেন। এক দশক পরে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ত্যাগ করে ১৯২৫ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে মেটিয়া বুরুজে কেশোবাম কটন মিলে শ্রমিকদের ১৩ দিনব্যাপী ধর্মঘটে নেতৃত্বে দিয়ে দাবি আদায় করেন। ১৯৩০ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সুসং দুর্গাপুরে আসেন এবং তাকে অন্তরীণ করা হয়। তিনি যখন গ্রামের বাড়িতে আসেন স্থানীয় কৃষকদের অনুরোধে টংক আন্দোলনে শুরু করেন। মণি সিংহ তার পারিবারিক টংক চাষি গুল মামুদের ৬০ মণ টংকের ধান মওকুফ করে দেন। নিজ পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের প্রতিপক্ষ হয়ে সাধারণ কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। ১৯৪৫ সালে ঐতিহাসিক নেত্রকোণায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কিষাণ সভায় মহাসম্মেলনের সংগঠক ও অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৬ সালে হাজং সম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে টংকবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। টংক আন্দোলনে শতাধিক হাজং নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এ আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৫১ সালে মণি সিংহের ওপর হুলিয়া জারি করে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। আদিবাসীদের প্রাণপ্রিয় নেতায় পরিণত হোন। ১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৯ সালে গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সাধারণ কয়েদিদের সহায়তায় রাজশাহী কারাগার ভেঙে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তার জীবন দর্শন, ব্যক্তি জীবনের সততা, আদর্শ নিষ্ঠা, আপসহীনতা, দূরদর্শিতা, সৎ ও ত্যাগের জীবন আর্দশ রাজনীতির প্রতীক। শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, মেহনতি মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং গভীর দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক।

কমরেড মণি সিংহকে চিনতে হলে তার অন্যন্য দুর্লভ অসাধারণ গুণাবলি। উল্লেখ করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আমলে সিপিবি পার্টি সমাবেশে কর্মীদের খাওয়াবার ব্যবস্থা করা হয়। তখন খোলাবাজারের তুলনায় রেশনের চালের দাম বেশ কম। মণি সিংহ পারমিট জোগাড় করে নিলেন। কিন্তু সমাবেশ শেষে দেখা গেল বেশ কিছু পরিমাণ চাল বেচে গেছে। খোলাবাজারে সেই চাল বিক্রি করে প্রচুর লাভ হতে পারত। কমরেড মণি সিংহ চাল বেচে গেছে জানার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলেন, এ চাল সরকারেকে ফেরত দিতে হবে। তৎকালীন মন্ত্রী ফণি ভূষণ মজুমদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চাল ফেরতের কথা বললেন কিন্তু সরকারি বরাদ্ধের চাল দেয়া হলে ফেরত দেয়া কঠিন। তখন তিনি চাল নিয়ে গরিব কর্মীদের মাঝে রেশন দরে বিক্রি করে দেন। ফণি বাবু বললেন ‘দেখুন সত্যিকার নেতা কাকে বলে, সততা কাকে বলে, সত্যিকার পার্টি কাকে বলে। এ রকম আরও নেতাকর্মী ও পার্টি পেলে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে কোন অসুবিধা হতো না’।

অন্য আর একটি ঘটনা। স্বাধীনতার পর সিপিবি অফিসে যে টেলিফোনটি ছিল সে ফোনের বিল একবার বেশি হওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে গিয়ে মণি সিংহ বলেছিলেন, সম্ভবত ভুল হয়েছে, আমার কাছে কয়টা টেলিফোন করা হয়েছে তার লিস্ট রয়েছে। কর্তৃপক্ষ মিলে ঠিক করে নিয়েছিলেন। পরের বার বিল কম হওয়ায় আবার বললেন সম্ভবত কম হয়েছে, সঠিক বিলের অর্থ প্রদান করে এসেছেন। সময় সচেতন মণি সিংহ আত্মগোপন এবং প্রকাশ্য রাজনীতিতে সঠিক সময়ে মিটিং এ উপস্থিত থাকতেন। এজন্য বামপন্থি নেতাকর্মীরা সঠিক সময়কে ‘মণি সিংহ টাইম’ হিসেবে বলতেন এটা এখনও প্রচারিত আছে।

বর্তমানে অর্থ পাচার, দুর্বৃত্তায়ন, লুটপাট ধনী-গরিব বৈষম্য, প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গরিব আরও গরিব হচ্ছে। কমরেড মণি সিংহ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। কমরেড মণি সিংহ বলতেন’ মার্কসবাদ লেলিনবাদ কোন আপ্ত বাক্যের সমষ্টি নয়। বাস্তবতা, ঐতিহ্য, জনগণের চেতনার স্তর, প্রস্তুতি অর্থাৎ প্রতিটি দেশের নিজস্ব বিশিষ্টতা ও অবস্থানকে বিবেচনার মধ্যে নিয়েই তার সার্থক প্রয়োগ সম্ভব। মাটি মানুষের নেতা ছিলেন তিনি। মানুষের মন বুঝতেন, মানুষের সঙ্গে থাকতেন, নেতৃত্ব দিতেন এবং মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সরদার ফজলুল করিম তার বইতে লিখেছেন ‘যখন কৃষক সমাবেশে কমরেড মণি সিংহ বক্তব্য রাখতেন সমাবেশ স্থলে হাজংরা বলতো’ চুপ চুপ এখন আমাদের মণি বেটা বলছে। কবি শামসুর রাহমান কমরেড মণি সিংহকে নিয়ে লেখা ‘ভাস্কর পুরুষ’ কবিতায় শেষ চারটি লাইন- ... প্রগতির/ প্রসিদ্ধ চারণ জাগো, জেগে ওঠো, চেয়ে দ্যাখো,/করোনি শাসন কোনদিন তবু বাংলাদেশ আজ/ তোমাকেই গার্ড অব অনার জানায়।

মণি সিংহের স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এ সংগ্রাম চলছে। তিনি শুধু কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নন। সাধারণ মানুষের কাছে আদর্শিক নেতা, তার জীবন দর্শন আমাদের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকুক। কমরেড মণসিংহের ৩০তম প্রয়াণ দিবসে অতল শ্রদ্ধা।

[লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন]

বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ , ১৬ পৌষ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

কমরেড মণি সিংহ আদর্শ রাজনীতির প্রতীক

আসলাম খান

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, টংক আন্দোলনের মহান নায়ক, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সরকারের উপদেষ্টা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড মণি সিংহ আজ থেকে ৩০ বছর পূর্বে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের শোষণ বৈষম্য জুলুমের বিরুদ্ধে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ১৯৭৭ সালে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খেটেছেন। কখনও জেল জুলুম খেটে, কখন হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকা, অন্তরীণ থাকা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে টংক আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্বের দেয়া, ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত এলাকা তৎকালীন ময়মনসিংহের নেত্রকোণার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ধান কাড়াড়ি (ধানের মাধ্যমে খাজনা দেয়া) বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করা দুঃসাহসের বিষয়। তার রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য ও রোমাঞ্চকর।

কমরেড মণি সিংহ ১৯০১ সালের (১৯০১-১৯৯০) নেত্রকোণা জেলার সুসং দুর্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য কলকাতায় যান। কলকাতায় ১৯১৪ সালে সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী ‘অনুশীলন’ দলে যোগ দেন। এক দশক পরে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন ত্যাগ করে ১৯২৫ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে মেটিয়া বুরুজে কেশোবাম কটন মিলে শ্রমিকদের ১৩ দিনব্যাপী ধর্মঘটে নেতৃত্বে দিয়ে দাবি আদায় করেন। ১৯৩০ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সুসং দুর্গাপুরে আসেন এবং তাকে অন্তরীণ করা হয়। তিনি যখন গ্রামের বাড়িতে আসেন স্থানীয় কৃষকদের অনুরোধে টংক আন্দোলনে শুরু করেন। মণি সিংহ তার পারিবারিক টংক চাষি গুল মামুদের ৬০ মণ টংকের ধান মওকুফ করে দেন। নিজ পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের প্রতিপক্ষ হয়ে সাধারণ কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। ১৯৪৫ সালে ঐতিহাসিক নেত্রকোণায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কিষাণ সভায় মহাসম্মেলনের সংগঠক ও অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৬ সালে হাজং সম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে টংকবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। টংক আন্দোলনে শতাধিক হাজং নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এ আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৫১ সালে মণি সিংহের ওপর হুলিয়া জারি করে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। আদিবাসীদের প্রাণপ্রিয় নেতায় পরিণত হোন। ১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৯ সালে গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সাধারণ কয়েদিদের সহায়তায় রাজশাহী কারাগার ভেঙে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তার জীবন দর্শন, ব্যক্তি জীবনের সততা, আদর্শ নিষ্ঠা, আপসহীনতা, দূরদর্শিতা, সৎ ও ত্যাগের জীবন আর্দশ রাজনীতির প্রতীক। শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, মেহনতি মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং গভীর দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক।

কমরেড মণি সিংহকে চিনতে হলে তার অন্যন্য দুর্লভ অসাধারণ গুণাবলি। উল্লেখ করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আমলে সিপিবি পার্টি সমাবেশে কর্মীদের খাওয়াবার ব্যবস্থা করা হয়। তখন খোলাবাজারের তুলনায় রেশনের চালের দাম বেশ কম। মণি সিংহ পারমিট জোগাড় করে নিলেন। কিন্তু সমাবেশ শেষে দেখা গেল বেশ কিছু পরিমাণ চাল বেচে গেছে। খোলাবাজারে সেই চাল বিক্রি করে প্রচুর লাভ হতে পারত। কমরেড মণি সিংহ চাল বেচে গেছে জানার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলেন, এ চাল সরকারেকে ফেরত দিতে হবে। তৎকালীন মন্ত্রী ফণি ভূষণ মজুমদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চাল ফেরতের কথা বললেন কিন্তু সরকারি বরাদ্ধের চাল দেয়া হলে ফেরত দেয়া কঠিন। তখন তিনি চাল নিয়ে গরিব কর্মীদের মাঝে রেশন দরে বিক্রি করে দেন। ফণি বাবু বললেন ‘দেখুন সত্যিকার নেতা কাকে বলে, সততা কাকে বলে, সত্যিকার পার্টি কাকে বলে। এ রকম আরও নেতাকর্মী ও পার্টি পেলে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে কোন অসুবিধা হতো না’।

অন্য আর একটি ঘটনা। স্বাধীনতার পর সিপিবি অফিসে যে টেলিফোনটি ছিল সে ফোনের বিল একবার বেশি হওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে গিয়ে মণি সিংহ বলেছিলেন, সম্ভবত ভুল হয়েছে, আমার কাছে কয়টা টেলিফোন করা হয়েছে তার লিস্ট রয়েছে। কর্তৃপক্ষ মিলে ঠিক করে নিয়েছিলেন। পরের বার বিল কম হওয়ায় আবার বললেন সম্ভবত কম হয়েছে, সঠিক বিলের অর্থ প্রদান করে এসেছেন। সময় সচেতন মণি সিংহ আত্মগোপন এবং প্রকাশ্য রাজনীতিতে সঠিক সময়ে মিটিং এ উপস্থিত থাকতেন। এজন্য বামপন্থি নেতাকর্মীরা সঠিক সময়কে ‘মণি সিংহ টাইম’ হিসেবে বলতেন এটা এখনও প্রচারিত আছে।

বর্তমানে অর্থ পাচার, দুর্বৃত্তায়ন, লুটপাট ধনী-গরিব বৈষম্য, প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গরিব আরও গরিব হচ্ছে। কমরেড মণি সিংহ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। কমরেড মণি সিংহ বলতেন’ মার্কসবাদ লেলিনবাদ কোন আপ্ত বাক্যের সমষ্টি নয়। বাস্তবতা, ঐতিহ্য, জনগণের চেতনার স্তর, প্রস্তুতি অর্থাৎ প্রতিটি দেশের নিজস্ব বিশিষ্টতা ও অবস্থানকে বিবেচনার মধ্যে নিয়েই তার সার্থক প্রয়োগ সম্ভব। মাটি মানুষের নেতা ছিলেন তিনি। মানুষের মন বুঝতেন, মানুষের সঙ্গে থাকতেন, নেতৃত্ব দিতেন এবং মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সরদার ফজলুল করিম তার বইতে লিখেছেন ‘যখন কৃষক সমাবেশে কমরেড মণি সিংহ বক্তব্য রাখতেন সমাবেশ স্থলে হাজংরা বলতো’ চুপ চুপ এখন আমাদের মণি বেটা বলছে। কবি শামসুর রাহমান কমরেড মণি সিংহকে নিয়ে লেখা ‘ভাস্কর পুরুষ’ কবিতায় শেষ চারটি লাইন- ... প্রগতির/ প্রসিদ্ধ চারণ জাগো, জেগে ওঠো, চেয়ে দ্যাখো,/করোনি শাসন কোনদিন তবু বাংলাদেশ আজ/ তোমাকেই গার্ড অব অনার জানায়।

মণি সিংহের স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এ সংগ্রাম চলছে। তিনি শুধু কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নন। সাধারণ মানুষের কাছে আদর্শিক নেতা, তার জীবন দর্শন আমাদের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকুক। কমরেড মণসিংহের ৩০তম প্রয়াণ দিবসে অতল শ্রদ্ধা।

[লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন]