আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার

করেনার মধ্যে নানা উত্থান-পতনে চলেছে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল স্বর্ণ ও রুপার বাজার। এছাড়া জ্বালানি তেলের বাজারও উঠানামায় পার হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, ইস্পাত উৎপাদন কমেছে, কমেছে পাম অয়েলের দাম।

স্বর্ণের দাম বেড়েছে

২০২০ সালের শুরু থেকেই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তবে মজার বিষয় হলো, স্বর্ণের দাম বাড়লেও এর চাহিদা কিন্তু খুব একটা বাড়েনি। বরং করোনার ধাক্কায় আয় কমায় চীন ও ভারতসহ শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোয় ব্যক্তিপর্যায়ে স্বর্ণের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী, চাহিদা কমলে পণ্যের দামও কমে যায়। তবে ২০২০ সালে স্বর্ণের বাজারে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। আগস্টে ইতিহাস গড়ে স্বর্ণের দাম। আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্টে বিক্রি হয় মূল্যবান ধাতুটি। এর আগে কখনই এতো বেশি দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়নি।

বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দামও

২০২০ সাল বাড়তি দামে খাবার কেনার মধ্যদিয়ে শুরু করেছিল বিশ্ববাসী। মাঝে কিছুটা কমে এলেও করোনা মহামারীর প্রকোপ যত বেড়েছে, খাবারের দাম ততই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) গ্লোবাল ফুড প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের প্রথম মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্ট। মে মাস নাগাদ খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৯১ পয়েন্টে নেমে আসে, যা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। তবে টানা পতন কাটিয়ে জুনে ঘুরে দাঁড়ায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্ট। এরপর থেকে সূচকমানে আর মন্দা ভাব দেখা যায়নি। বাড়তে বাড়তে গত নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়ায় ১০৫ পয়েন্টে। করোনা মহামারীর মধ্যে এটাই খাদ্যপণ্যের সর্বোচ্চ বৈশ্বিক মূল্যসূচক। একই সঙ্গে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই এ সূচকে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

উত্থান-পতনে জ্বালানি তেলের বাজার

করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক চাহিদায় ধস নামার পাশাপাশি ওপেক প্লাসের আওতায় উত্তোলন হ্রাস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও রুশ-সৌদি মূল্যযুদ্ধ বিদায়ী বছরে জ্বালানি তেলের বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

গত মার্চে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শূন্য ডলারের নিচে নেমে যায়। অর্থাৎ ওই সময় জ্বালানি তেল কিনলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্য নেয়ার পরিবর্তে উল্টো ক্রেতাদের পরিবহন ব্যয় গছিয়ে দিয়েছিল। জ্বালানি তেলের বাজারে এমন নজিরবিহীন ঘটনা আগে দেখা যায়নি।

ইস্পাত উৎপাদনে ধস

করোনা মহামারী বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে ধস নামিয়েছে। গত এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন ১৩ কোটি ৬৯ লাখ টনে নেমে আসে। যদিও এরপর থেকে একটু একটু করে বেড়েছে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন। তবে সংকটকালীন মূল্যবৃদ্ধির পুরোপুরি লাগাম টানা এখনও সম্ভব হয়নি। যদিও মহামারীর সময় বেশির ভাগ দেশে ইস্পাত উৎপাদন ও রপ্তানি কমেছে। তবে ব্যতিক্রম চীন। সংকটকালেও দেশটির ইস্পাত শিল্প শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।

পাম অয়েলের দাম বেড়েছে

শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমে যায়। ফলে এ সময় পণ্যটির চাহিদা ও দাম দুটোই কমতির দিকে থাকে। তবে করোনা মহামারী এবার চিত্রপট পাল্টে দিয়েছে। শীত শুরু হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম বেড়ে ৯১৭ ডলার ছাড়িয়েছে। বিদায়ী বছরের শুরুর দিকে রপ্তানি বাড়াতে পাম অয়েলের বিদ্যমান শুল্কহার শূন্যে নামিয়ে এনছিল কিংবা সীমিত করেছিল মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। নতুন বছরে সেই শুল্কহার ফের বাড়ানো হয়েছে।

কয়লার চাহিদা কমেছে

করোনা মহামারীর জের ধরে চলতি বছর কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা ৭২৪ কোটি ৩০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ), যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম।

শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ পৌষ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ফিরে দেখা-২০২০

আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার

সংবাদ ডেস্ক

করেনার মধ্যে নানা উত্থান-পতনে চলেছে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল স্বর্ণ ও রুপার বাজার। এছাড়া জ্বালানি তেলের বাজারও উঠানামায় পার হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, ইস্পাত উৎপাদন কমেছে, কমেছে পাম অয়েলের দাম।

স্বর্ণের দাম বেড়েছে

২০২০ সালের শুরু থেকেই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তবে মজার বিষয় হলো, স্বর্ণের দাম বাড়লেও এর চাহিদা কিন্তু খুব একটা বাড়েনি। বরং করোনার ধাক্কায় আয় কমায় চীন ও ভারতসহ শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোয় ব্যক্তিপর্যায়ে স্বর্ণের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী, চাহিদা কমলে পণ্যের দামও কমে যায়। তবে ২০২০ সালে স্বর্ণের বাজারে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। আগস্টে ইতিহাস গড়ে স্বর্ণের দাম। আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্টে বিক্রি হয় মূল্যবান ধাতুটি। এর আগে কখনই এতো বেশি দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়নি।

বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দামও

২০২০ সাল বাড়তি দামে খাবার কেনার মধ্যদিয়ে শুরু করেছিল বিশ্ববাসী। মাঝে কিছুটা কমে এলেও করোনা মহামারীর প্রকোপ যত বেড়েছে, খাবারের দাম ততই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের (এফএও) গ্লোবাল ফুড প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের প্রথম মাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্ট। মে মাস নাগাদ খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৯১ পয়েন্টে নেমে আসে, যা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। তবে টানা পতন কাটিয়ে জুনে ঘুরে দাঁড়ায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্ট। এরপর থেকে সূচকমানে আর মন্দা ভাব দেখা যায়নি। বাড়তে বাড়তে গত নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়ায় ১০৫ পয়েন্টে। করোনা মহামারীর মধ্যে এটাই খাদ্যপণ্যের সর্বোচ্চ বৈশ্বিক মূল্যসূচক। একই সঙ্গে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই এ সূচকে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

উত্থান-পতনে জ্বালানি তেলের বাজার

করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক চাহিদায় ধস নামার পাশাপাশি ওপেক প্লাসের আওতায় উত্তোলন হ্রাস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও রুশ-সৌদি মূল্যযুদ্ধ বিদায়ী বছরে জ্বালানি তেলের বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

গত মার্চে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শূন্য ডলারের নিচে নেমে যায়। অর্থাৎ ওই সময় জ্বালানি তেল কিনলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্য নেয়ার পরিবর্তে উল্টো ক্রেতাদের পরিবহন ব্যয় গছিয়ে দিয়েছিল। জ্বালানি তেলের বাজারে এমন নজিরবিহীন ঘটনা আগে দেখা যায়নি।

ইস্পাত উৎপাদনে ধস

করোনা মহামারী বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে ধস নামিয়েছে। গত এপ্রিলে বিশ্বজুড়ে শিল্প ধাতুটির সম্মিলিত উৎপাদন ১৩ কোটি ৬৯ লাখ টনে নেমে আসে। যদিও এরপর থেকে একটু একটু করে বেড়েছে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন। তবে সংকটকালীন মূল্যবৃদ্ধির পুরোপুরি লাগাম টানা এখনও সম্ভব হয়নি। যদিও মহামারীর সময় বেশির ভাগ দেশে ইস্পাত উৎপাদন ও রপ্তানি কমেছে। তবে ব্যতিক্রম চীন। সংকটকালেও দেশটির ইস্পাত শিল্প শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।

পাম অয়েলের দাম বেড়েছে

শীত মৌসুমে পাম অয়েল জমে যায়। ফলে এ সময় পণ্যটির চাহিদা ও দাম দুটোই কমতির দিকে থাকে। তবে করোনা মহামারী এবার চিত্রপট পাল্টে দিয়েছে। শীত শুরু হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম বেড়ে ৯১৭ ডলার ছাড়িয়েছে। বিদায়ী বছরের শুরুর দিকে রপ্তানি বাড়াতে পাম অয়েলের বিদ্যমান শুল্কহার শূন্যে নামিয়ে এনছিল কিংবা সীমিত করেছিল মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। নতুন বছরে সেই শুল্কহার ফের বাড়ানো হয়েছে।

কয়লার চাহিদা কমেছে

করোনা মহামারীর জের ধরে চলতি বছর কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা ৭২৪ কোটি ৩০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ), যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম।