অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিল ভারত

ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড চালুর ছাড়পত্র দিল বিশেষজ্ঞ কমিটি। এখন ড্রাগ কন্ট্রোলারের অনুমোদন পেলেই এই টিকা দেয়া শুরু হবে। তবে কবে থেকে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাবে।

বিশেষজ্ঞ কমিটি গতকাল দুটি ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। তারমধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের তৈরি করা টিকা নিয়ে রাত পর্যন্ত আলোচনা করেছে কমিটি।

বায়োএনটেক-ফাইজারও তাদের টিকার অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা জানিয়েছে, যাবতীয় তথ্য জমা দিতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তাই গতকাল দুইটি টিকা নিয়েই কমিটি আলোচনা করেছে।

শনিবার থেকে ভারতজুড়ে শুরু হচ্ছে করোনার টিকা দেয়ার মহড়া। অর্থাৎ, করোনার টিকা দেয়ার পরিকাঠামো শেষবারের মতো দেখে নেয়া। যাদের প্রথমে টিকা দেয়া হবে, সেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন সেন্টারে নিয়ে এসে দেখে নেয়া হবে, সবকিছু মসৃণভাবে চলছে কিনা।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাকে জানিয়েছে, জানুয়ারিতেই ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়ে যাবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় তৈরি কোভিশিল্ড ভারতে তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ভারত বায়োটেক আইসিএমআর-এর সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করছে কোভ্যাক্সিন।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা করেছে। ভারতের এই অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশের করোনা টিকা পাওয়ার পথ আরও সুগম হলো।

সেরামের কাছ থেকে এই টিকা বাংলাদেশে সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহ করার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও এই টিকা বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বেক্সিমকো।

তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দামের অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদনের জন্য সায় পাওয়ার বিষয়টি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে এক কোটি ২ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ভারতে ত্রিশ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, আগামী এক বছরে তারা পুরো বিশ্বের জন্য তিনশ’ কোটি টিকা তৈরি করবে।

সেরামের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে ৫ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করে ফেলেছেন। আগামী মার্চের মধ্যে অন্তত ১০ কোটি ডোজ তারা বাজারে ছাড়তে চান।

অক্সফোর্ডের টিকা রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করা যায়; ফলে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে এই টিকা পৌঁছানো তুলনামূলক সহজ।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মডার্নার টিকা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সম্ভব নয়।

গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে এ ভ্যাকসিন আর্জেন্টিনাতেও অনুমোদন দেয়া হয় প্রয়োগের জন্য।

শনিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২১ , ১৮ পৌষ ১৪২৭, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিল ভারত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড চালুর ছাড়পত্র দিল বিশেষজ্ঞ কমিটি। এখন ড্রাগ কন্ট্রোলারের অনুমোদন পেলেই এই টিকা দেয়া শুরু হবে। তবে কবে থেকে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাবে।

বিশেষজ্ঞ কমিটি গতকাল দুটি ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। তারমধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের তৈরি করা টিকা নিয়ে রাত পর্যন্ত আলোচনা করেছে কমিটি।

বায়োএনটেক-ফাইজারও তাদের টিকার অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা জানিয়েছে, যাবতীয় তথ্য জমা দিতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তাই গতকাল দুইটি টিকা নিয়েই কমিটি আলোচনা করেছে।

শনিবার থেকে ভারতজুড়ে শুরু হচ্ছে করোনার টিকা দেয়ার মহড়া। অর্থাৎ, করোনার টিকা দেয়ার পরিকাঠামো শেষবারের মতো দেখে নেয়া। যাদের প্রথমে টিকা দেয়া হবে, সেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন সেন্টারে নিয়ে এসে দেখে নেয়া হবে, সবকিছু মসৃণভাবে চলছে কিনা।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাকে জানিয়েছে, জানুয়ারিতেই ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়ে যাবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় তৈরি কোভিশিল্ড ভারতে তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ভারত বায়োটেক আইসিএমআর-এর সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করছে কোভ্যাক্সিন।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা করেছে। ভারতের এই অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশের করোনা টিকা পাওয়ার পথ আরও সুগম হলো।

সেরামের কাছ থেকে এই টিকা বাংলাদেশে সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহ করার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও এই টিকা বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বেক্সিমকো।

তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী দামের অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদনের জন্য সায় পাওয়ার বিষয়টি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে এক কোটি ২ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ভারতে ত্রিশ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, আগামী এক বছরে তারা পুরো বিশ্বের জন্য তিনশ’ কোটি টিকা তৈরি করবে।

সেরামের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে ৫ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করে ফেলেছেন। আগামী মার্চের মধ্যে অন্তত ১০ কোটি ডোজ তারা বাজারে ছাড়তে চান।

অক্সফোর্ডের টিকা রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করা যায়; ফলে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে এই টিকা পৌঁছানো তুলনামূলক সহজ।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মডার্নার টিকা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সম্ভব নয়।

গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে এ ভ্যাকসিন আর্জেন্টিনাতেও অনুমোদন দেয়া হয় প্রয়োগের জন্য।