কিশোরগঞ্জে বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ঋণের জালে ফেঁসে শতাধিক সদস্য নিঃস্বপ্রায়

বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সুদের জালে ফেঁসে নিষ্পেশিত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক সদস্য। ঋণ দিয়ে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেয়া এ সমিতির একমাত্র কাজ। এছাড়া ঋণের কিস্তি আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সাপ্তাহিক সঞ্চয়, মেয়াদি আমানতও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সমিতির পরিচালক ফাঁকা চেকের বিনিময়ে দাদনও দিয়ে থাকেন। সময়মত মূল টাকার ৫/৬ গুণ আদায় করেন। এ ব্যাপারে এক শিক্ষক কোর্টে একটি প্রতারণার মামলা করেছেন।

সরজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে ২০১৮ সালে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে একটি নিবন্ধন নেয় দাদন ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম। নিবন্ধন নেয়ার পর তার গ্রামের বাড়ি সিট রাজিব বাংলাবাজারে একটি টিনসেড পাকাবাড়িতে সমিতির প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনি ওই বাড়িতে থাকেন না। তিনি দুই স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা শহরের প্রাণিসম্পদ অফিসের পাশে চারতলা ভবনে বসবাস করেন। সমিতির নামে শুরু করেন সুদের কারবার । এলাকাভিত্তিক সমিতি খুলে প্রায় শতাধিক সদস্যের মাঝে চড়া সুদে ঋণ বিতরণ করেন। ঋণের কিস্তি আদায়ের পাশাপাশি সঞ্চয় ও মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব সঞ্চয় ও মেয়াদি আমানত। আবার সমিতির সদস্যদের মাঝেই চড়া সুদে খাটানো হচ্ছে।

অথচ সমবায় আইনে আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সমবায় আইন ২০০১ ২৩-এর খ উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে কোন সমবায় সংগঠন ব্যাংকিং ব্যবসা (বীমা ও সুদে টাকা খাটানো) পরিচালনা করতে পারবে না। করলে অনাধিক সাত বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। সমিতির পরিচালক আইনের তোয়াক্কা না করে শতাধিক সদস্যকে সুদের জালে ফাঁসিয়ে নিঃস্ব করেছেন। সমিতির শাপলা কেন্দ্রর সদস্য বই নম্বর ০৬ ফারজানা বেগম জানায়, আমি সমিতি থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এর প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় সঞ্চয় ৭৫ টাকাসহ ৭০০ টাকা । ৪৬ কিস্তি দেয়ার পর ঋণ পরিশোধ হবে। এছাড়াও মেয়াদি আমানত দিতে হয় মাসে ২০০ টাকা । তিনি আরও বলেন এক সপ্তাহ টাকা দিতে না পারলে সমিতির পরিচালক অকথ্য ভাষায় গালাগলি করেন। অপর সদস্য মোরশেদা বেগম, তেতুলিয়া কেন্দ্রের রঞ্জনারাণীসহ অনেকে জানায়, বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ঋণের জালে ফেঁসে আমরা এখন প্রায় নিঃস্ব। আগে এত চড়া সুদের কথা জানলে ঋণ নিতাম না। বিন্যাকুড়ি চন্দনপাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রশিদুল ইসলাম প্রতারণার অভিযোগে ৪২০ ও ৪০৬ দণ্ডবিধি আইনে গত ২০২০ সালের ২৫ জুলাই শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোর্টে একটি মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি সরজমিন তদন্তে গিয়েছিলাম এতে কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তবে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বন্ধন ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেয়াদি আমানত সংগ্রহের কথা অস্বীকার করেন।

রবিবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২১ , ১৯ পৌষ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

কিশোরগঞ্জে বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ঋণের জালে ফেঁসে শতাধিক সদস্য নিঃস্বপ্রায়

প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ, (নীলফামারী)

বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সুদের জালে ফেঁসে নিষ্পেশিত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক সদস্য। ঋণ দিয়ে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেয়া এ সমিতির একমাত্র কাজ। এছাড়া ঋণের কিস্তি আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সাপ্তাহিক সঞ্চয়, মেয়াদি আমানতও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সমিতির পরিচালক ফাঁকা চেকের বিনিময়ে দাদনও দিয়ে থাকেন। সময়মত মূল টাকার ৫/৬ গুণ আদায় করেন। এ ব্যাপারে এক শিক্ষক কোর্টে একটি প্রতারণার মামলা করেছেন।

সরজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে ২০১৮ সালে উপজেলা সমবায় অফিস থেকে একটি নিবন্ধন নেয় দাদন ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম। নিবন্ধন নেয়ার পর তার গ্রামের বাড়ি সিট রাজিব বাংলাবাজারে একটি টিনসেড পাকাবাড়িতে সমিতির প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনি ওই বাড়িতে থাকেন না। তিনি দুই স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা শহরের প্রাণিসম্পদ অফিসের পাশে চারতলা ভবনে বসবাস করেন। সমিতির নামে শুরু করেন সুদের কারবার । এলাকাভিত্তিক সমিতি খুলে প্রায় শতাধিক সদস্যের মাঝে চড়া সুদে ঋণ বিতরণ করেন। ঋণের কিস্তি আদায়ের পাশাপাশি সঞ্চয় ও মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব সঞ্চয় ও মেয়াদি আমানত। আবার সমিতির সদস্যদের মাঝেই চড়া সুদে খাটানো হচ্ছে।

অথচ সমবায় আইনে আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সমবায় আইন ২০০১ ২৩-এর খ উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে কোন সমবায় সংগঠন ব্যাংকিং ব্যবসা (বীমা ও সুদে টাকা খাটানো) পরিচালনা করতে পারবে না। করলে অনাধিক সাত বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। সমিতির পরিচালক আইনের তোয়াক্কা না করে শতাধিক সদস্যকে সুদের জালে ফাঁসিয়ে নিঃস্ব করেছেন। সমিতির শাপলা কেন্দ্রর সদস্য বই নম্বর ০৬ ফারজানা বেগম জানায়, আমি সমিতি থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এর প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় সঞ্চয় ৭৫ টাকাসহ ৭০০ টাকা । ৪৬ কিস্তি দেয়ার পর ঋণ পরিশোধ হবে। এছাড়াও মেয়াদি আমানত দিতে হয় মাসে ২০০ টাকা । তিনি আরও বলেন এক সপ্তাহ টাকা দিতে না পারলে সমিতির পরিচালক অকথ্য ভাষায় গালাগলি করেন। অপর সদস্য মোরশেদা বেগম, তেতুলিয়া কেন্দ্রের রঞ্জনারাণীসহ অনেকে জানায়, বন্ধন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ঋণের জালে ফেঁসে আমরা এখন প্রায় নিঃস্ব। আগে এত চড়া সুদের কথা জানলে ঋণ নিতাম না। বিন্যাকুড়ি চন্দনপাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রশিদুল ইসলাম প্রতারণার অভিযোগে ৪২০ ও ৪০৬ দণ্ডবিধি আইনে গত ২০২০ সালের ২৫ জুলাই শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোর্টে একটি মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি সরজমিন তদন্তে গিয়েছিলাম এতে কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তবে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বন্ধন ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেয়াদি আমানত সংগ্রহের কথা অস্বীকার করেন।