কথাশিল্পী শওকত ওসমান ছিলেন গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাংলা সাহিত্যিক। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তিনি যেমন কঠোর মনোভাবাপন্ন ছিলেন, তেমনি শোষকের বিরুদ্ধেও তার লেখনি ছিল ক্ষুরধার। তার অমর সাহিত্য কর্ম আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্মের মধ্যদিয়ে তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন। গতকাল জাতীয় জাদুঘরে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে ‘কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ছেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ, স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দিপু, কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাশদী সিদ্দিকী প্রমুখ।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘শওকত ওসমান আমাদের প্রেরণার উৎস। স্বৈরাচারী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের অতিথি করে অনুষ্ঠান করতাম। তিনি ধীরে ধীরে চমৎকার ভঙ্গিতে কথা বলতেন। তার কথা শুনলে মনে হতো, আমরা যা ভাবছি, সেটাই তিনি বলছেন। তার কথা শুনতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে হাজারও শিক্ষার্থী উপস্থিত হতেন। শওকত ওসমান আমাদের অহংকার, অলঙ্কার। তিনি সাহিত্যের মধ্যদিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন।’
শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সততা, আদর্শনিষ্ঠ কর্মে বিশ্বাস করতেন কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান। নান্দনিক শিল্প সৃষ্টির সৌন্দর্যে বিশ্বাসী ছিলেন শওকত ওসমান। সম্প্রতি ভাস্কর্য ভাঙার যে অপচেষ্টা চলছে, তিনি এর প্রতিবাদ করতেন। আমরাও ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই শৈল্পিক সৌন্দর্য রক্ষার নান্দনিক তাগিদে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান লিখিত বক্তব্যে পিতৃ স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ছাত্রদের পড়ানোর পাশাপাশি তিনি (পিতা শওকত ওসমান) নিজেও প্রচুর পড়াশোনা করতেন। এ কারণেই তার রচনা এমন তির্যক হতে পেরেছে। তিনি কখনোই ফরমায়েশি লেখা লিখে সময় নষ্ট করেননি, সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। পারিবারিক জীবনেও তিনি কখনও সততার বাইরে যাননি। সৎ জীবনযাপন করাটাও তার কাছ থেকেই শিখেছি। সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে তার মূল বিষয় ছিল সাধারণ মানুষ। এর কারণ তিনি নিজেও জন্মেছিলেন দরিদ্র পরিবারে। তাই সাহিত্যের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের সেই জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন।’
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, চিন্তক ও ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’ শওকত ওসমানের ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গল্প নাটক উপন্যাস প্রবন্ধ রস-রচনা রাজনৈতিক লেখা শিশু-কিশোর সাহিত্য সর্বত্রই তার ছিল স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। সুতীক্ষ্ণে সমাজ সচেতনতা আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে তার গল্প-উপন্যাস প্রখর জীবনবাদী। বিভিন্ন বিষয়ে শতাধিক বই লিখেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- বনি আদম, জননী, ক্রীতদাসের হাসি, চৌরসন্ধি, সমাগম, জাহান্নাম হইতে বিদায়, রাজা উপাখ্যান, রাজসাক্ষী, দুই সৈনিক। গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প, পিঁজরাপোল সাবেকি কাহিনী, প্রান্ত ফলক, জন্ম যদি তব বঙ্গে, মনিব ও তাহার কুকুর। রচিত নাটকের মধ্যে রয়েছে- আমলার মামলা, তস্কর ও লস্কর, বাগদাদের কবি, পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা। তার আত্মজীবনী রাহনামা, স্মৃতিকথা দুই খণ্ডে মুজিবনগর ও উত্তর পর্ব মুজিবনগর ইতিহাসের বহু ঘটনার দলিল।
রবিবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২১ , ১৯ পৌষ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
কথাশিল্পী শওকত ওসমান ছিলেন গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাংলা সাহিত্যিক। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তিনি যেমন কঠোর মনোভাবাপন্ন ছিলেন, তেমনি শোষকের বিরুদ্ধেও তার লেখনি ছিল ক্ষুরধার। তার অমর সাহিত্য কর্ম আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্মের মধ্যদিয়ে তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন। গতকাল জাতীয় জাদুঘরে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে ‘কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ছেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ, স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দিপু, কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাশদী সিদ্দিকী প্রমুখ।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘শওকত ওসমান আমাদের প্রেরণার উৎস। স্বৈরাচারী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের অতিথি করে অনুষ্ঠান করতাম। তিনি ধীরে ধীরে চমৎকার ভঙ্গিতে কথা বলতেন। তার কথা শুনলে মনে হতো, আমরা যা ভাবছি, সেটাই তিনি বলছেন। তার কথা শুনতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে হাজারও শিক্ষার্থী উপস্থিত হতেন। শওকত ওসমান আমাদের অহংকার, অলঙ্কার। তিনি সাহিত্যের মধ্যদিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন।’
শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সততা, আদর্শনিষ্ঠ কর্মে বিশ্বাস করতেন কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান। নান্দনিক শিল্প সৃষ্টির সৌন্দর্যে বিশ্বাসী ছিলেন শওকত ওসমান। সম্প্রতি ভাস্কর্য ভাঙার যে অপচেষ্টা চলছে, তিনি এর প্রতিবাদ করতেন। আমরাও ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই শৈল্পিক সৌন্দর্য রক্ষার নান্দনিক তাগিদে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান লিখিত বক্তব্যে পিতৃ স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ছাত্রদের পড়ানোর পাশাপাশি তিনি (পিতা শওকত ওসমান) নিজেও প্রচুর পড়াশোনা করতেন। এ কারণেই তার রচনা এমন তির্যক হতে পেরেছে। তিনি কখনোই ফরমায়েশি লেখা লিখে সময় নষ্ট করেননি, সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। পারিবারিক জীবনেও তিনি কখনও সততার বাইরে যাননি। সৎ জীবনযাপন করাটাও তার কাছ থেকেই শিখেছি। সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে তার মূল বিষয় ছিল সাধারণ মানুষ। এর কারণ তিনি নিজেও জন্মেছিলেন দরিদ্র পরিবারে। তাই সাহিত্যের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের সেই জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন।’
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, চিন্তক ও ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’ শওকত ওসমানের ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গল্প নাটক উপন্যাস প্রবন্ধ রস-রচনা রাজনৈতিক লেখা শিশু-কিশোর সাহিত্য সর্বত্রই তার ছিল স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। সুতীক্ষ্ণে সমাজ সচেতনতা আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে তার গল্প-উপন্যাস প্রখর জীবনবাদী। বিভিন্ন বিষয়ে শতাধিক বই লিখেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- বনি আদম, জননী, ক্রীতদাসের হাসি, চৌরসন্ধি, সমাগম, জাহান্নাম হইতে বিদায়, রাজা উপাখ্যান, রাজসাক্ষী, দুই সৈনিক। গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প, পিঁজরাপোল সাবেকি কাহিনী, প্রান্ত ফলক, জন্ম যদি তব বঙ্গে, মনিব ও তাহার কুকুর। রচিত নাটকের মধ্যে রয়েছে- আমলার মামলা, তস্কর ও লস্কর, বাগদাদের কবি, পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা। তার আত্মজীবনী রাহনামা, স্মৃতিকথা দুই খণ্ডে মুজিবনগর ও উত্তর পর্ব মুজিবনগর ইতিহাসের বহু ঘটনার দলিল।