‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে

ব্যাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে. আবদুল মোমেন। গতকাল ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কনক্লেভ আয়োজন করে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে. আবদুল মোমেন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে, ‘ডিসিসিআই বিজনসে কনক্লেভ ২০২১’ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ডিসিসিআই’র এ উদ্যোগ বৈশি^ক ব্যবসায়িক সমাজে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কর্মস্পৃহা ও উদ্যোমের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। করোনা মহামারীর মধ্যেও আমাদের পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল ছিল। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সরকার গৃহীত পণোদনা প্যাকেজের যথাযথ বাস্তবায়ানের মাধ্যমে মহামারী সময়কালেও দেশের অর্থনীতি কাক্সিক্ষত মাত্রায় সচল ছিল। বর্তমানে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সরকারের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রধান্যের বিষয়। আগামী মাসের মধ্যে এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সার্ক ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’ নীতি গ্রহণ করেছে, যেখানে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৈশি^ক বাজারে দেশিয় উদ্যোক্তাদের অভিগম্যতা বৃদ্ধি, দেশীয় পণ্যের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষল এবং তথ্য-প্রযুক্তির আদান-প্রদান বাড়ানো প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পাবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ‘উৎপাদনশীল শিল্পের বৈশি^ক কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। তিনি জানান, শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কার্যকর আন্তঃযোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে বর্তমান সরকার বিশ^াস করে এবং এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ে একটি নতুন শাখা স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহ ঢাকা চেম্বারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বৈশি^ক অর্থনীতিতে বিদ্যমান পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশও শিল্প খাতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে নানাবিধ উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। তিনি ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এ অংশগ্রহণকারী বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আজকের এ আয়োজন অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে এবং একই সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এ বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের ২২৭টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ১৭৬টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং-এ অংশগ্রহণ করবে, যেখানে অ্যাপারেল ও টেক্সটাইল, হালকা প্রকৌশল, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষি ও খাদ্য পক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রভৃতি খাত প্রাধান্য পাবে।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মাহামারীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সেখানে স্থানীয় বাজারে চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহও বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে স্বল্পন্নোত দেশ হতে উত্তরণের মানদ- বিচারের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, এতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২০১’ স্থানীয় ও বৈশি^ক ব্যবসায়িক কর্মকা- সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, চামড়া ও কৃষিজাত পণ্য, পাট পণ্য, সিরামিক এবং জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত এবং আশা প্রকাশ করে এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের এ খাতসমূহে বিনিয়োগ করবে। তিনি উল্লেখ করেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশে বিশেষ করে বৈদেশিক বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। তিনি অবহিত করেন, বিডা’র ওয়ানস্টপ সার্ভিস-এর আওতায় বর্তমানে ৪১টি সরকারি সেবা দেয়া হচ্ছে এবং এ মাসের মধ্যে নতুন ১০টি সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই’র সদ্য সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারীর কারণে তথ্য-প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও ব্যবসায়িক কর্মকা-ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং এ পরিস্থিতিতে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা গ্রহণের জন্য আমাদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি দেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের আহ্বান জানান।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, করোনা মাহামারী আমাদের সবার ব্যক্তিগত জীবনও বৈশি^ক অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে এবং এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান। বিল্ড চেয়ারপারসন জানান, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ৩য় এবং এশিয়া অঞ্চলে ১ম অবস্থানে রয়েছে এবং অর্থনীতির এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে বর্তমান সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব, সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তাবায়নের মাধ্যমে আমরা সফলভাবে এ মহামারী মোকাবিলা করতে পেরেছি। তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ৩৪ জন দেশি-বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং ১০টি দেশের প্রায় ২০০ জন উদ্যোক্তা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে অনলাইনে যোগদান করেন।

বুধবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২২ পৌষ ১৪২৭, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

ব্যাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে. আবদুল মোমেন। গতকাল ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কনক্লেভ আয়োজন করে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে. আবদুল মোমেন বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে, ‘ডিসিসিআই বিজনসে কনক্লেভ ২০২১’ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ডিসিসিআই’র এ উদ্যোগ বৈশি^ক ব্যবসায়িক সমাজে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের কর্মস্পৃহা ও উদ্যোমের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। করোনা মহামারীর মধ্যেও আমাদের পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল ছিল। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সরকার গৃহীত পণোদনা প্যাকেজের যথাযথ বাস্তবায়ানের মাধ্যমে মহামারী সময়কালেও দেশের অর্থনীতি কাক্সিক্ষত মাত্রায় সচল ছিল। বর্তমানে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সরকারের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রধান্যের বিষয়। আগামী মাসের মধ্যে এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সার্ক ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’ নীতি গ্রহণ করেছে, যেখানে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৈশি^ক বাজারে দেশিয় উদ্যোক্তাদের অভিগম্যতা বৃদ্ধি, দেশীয় পণ্যের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষল এবং তথ্য-প্রযুক্তির আদান-প্রদান বাড়ানো প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পাবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ‘উৎপাদনশীল শিল্পের বৈশি^ক কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। তিনি জানান, শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কার্যকর আন্তঃযোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে বর্তমান সরকার বিশ^াস করে এবং এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ে একটি নতুন শাখা স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহ ঢাকা চেম্বারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বৈশি^ক অর্থনীতিতে বিদ্যমান পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশও শিল্প খাতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে নানাবিধ উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। তিনি ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এ অংশগ্রহণকারী বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আজকের এ আয়োজন অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে এবং একই সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২১’-এ বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের ২২৭টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা ১৭৬টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং-এ অংশগ্রহণ করবে, যেখানে অ্যাপারেল ও টেক্সটাইল, হালকা প্রকৌশল, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষি ও খাদ্য পক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রভৃতি খাত প্রাধান্য পাবে।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মাহামারীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সেখানে স্থানীয় বাজারে চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহও বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে স্বল্পন্নোত দেশ হতে উত্তরণের মানদ- বিচারের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, এতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ‘ডিসিসিআই বিজনেস কনক্লেভ ২০২০১’ স্থানীয় ও বৈশি^ক ব্যবসায়িক কর্মকা- সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, চামড়া ও কৃষিজাত পণ্য, পাট পণ্য, সিরামিক এবং জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত এবং আশা প্রকাশ করে এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের এ খাতসমূহে বিনিয়োগ করবে। তিনি উল্লেখ করেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশে বিশেষ করে বৈদেশিক বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। তিনি অবহিত করেন, বিডা’র ওয়ানস্টপ সার্ভিস-এর আওতায় বর্তমানে ৪১টি সরকারি সেবা দেয়া হচ্ছে এবং এ মাসের মধ্যে নতুন ১০টি সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই’র সদ্য সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারীর কারণে তথ্য-প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও ব্যবসায়িক কর্মকা-ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং এ পরিস্থিতিতে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা গ্রহণের জন্য আমাদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি দেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের আহ্বান জানান।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, করোনা মাহামারী আমাদের সবার ব্যক্তিগত জীবনও বৈশি^ক অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে এবং এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান। বিল্ড চেয়ারপারসন জানান, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ৩য় এবং এশিয়া অঞ্চলে ১ম অবস্থানে রয়েছে এবং অর্থনীতির এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে বর্তমান সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব, সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তাবায়নের মাধ্যমে আমরা সফলভাবে এ মহামারী মোকাবিলা করতে পেরেছি। তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ৩৪ জন দেশি-বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং ১০টি দেশের প্রায় ২০০ জন উদ্যোক্তা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে অনলাইনে যোগদান করেন।