কর্মকর্তাকে গালাগাল, জালিয়াতির অভিযোগে কর্মচারী গ্রেফতারের জের

‘কাজ ছাড়াই বেতন নেবে কিন্তু ডিউটি করতে রাজি নয়’

ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম ও সিল সই জালিয়াতির সঙ্গে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আমজাদ আলী খান জড়িত। তার সঙ্গে আরও অর্ধশত ডাক কর্মচারী রয়েছে। তারা ডাক বিভাগের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে র‌্যাব গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ায় তার সহযোগিরা সিনিয়র অফিসারকে জিম্মি করে হুমকি ও গালগাল করেছে।

গত সোমবার সন্ধ্যার পরপরই জিপিওর নৈশ শাখার অফিস চলাকালে কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (কেপিআই) মাইক লাগিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করায় নৈশ শাখার স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, র‌্যাব অভিযান চালিয়ে আসামি গ্রেফতার করেছে। এখন পরবর্তী কার্যক্রম চলবে। আর দুর্নীতির ক্লু উদ্ঘাটনে র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ডাক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে গতকাল র‌্যাবের মহাপরিচালকের কথা হয়েছে।

ঢাকা জিপিওর প্রধান কার্যালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ডাক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতে রাজি নয়। তাদের খুশিমত অফিসে যাবেন। তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করলে অফিসারকে উল্টো কর্মস্থলে গালাগাল ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি বদলি করার ভয় দেখান।

গত ৬ মাস ধরে ঢাকার কেন্দ্রীয় ডাক বিভাগে চিহ্নিত কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারী কাজ না করে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে সরজমিনে জিপিওর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সিনিয়র অফিসার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেতারা এসব তথ্য জানিয়েছে। এমনকি জিপিওর সামনে ডাক বিভাগের একটি ভাস্কর্য ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন বলে কয়েকজন কর্মচারী গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদকের সামনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তারা ডাক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি করছেন।

ঢাকা জিপিওর সিনিয়র পোস্ট মাস্টার খন্দকার শাহনুর সাব্বির তার কার্যালয়ে সংবাদ প্রতিবেদককে জানান, ডাক বিভাগের মানিঅর্ডারসহ অন্যান্য জালিয়াতির ঘটনায় গতকাল গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে গত ২৯ জুলাই রাজধানীর পল্টন থানায় আরও একটি মামলা (নং ৭২) দায়ের করা হয়েছে। জালিয়াতির মূল হোতা প্রতারক ফজলুল হক ও তার স্ত্রী। র‌্যাবের অনুসন্ধানে কিছু ডাক কর্মচারীর নাম বেরিয়ে আসছে। তার মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ডাক বিভাগেরে প্রাথমিক তদন্তে ঢাকা জিপিওর ৫০ লাখ ও নিউমার্কেট ও মিরপুর জিপিও অফিসের ৩২ লাখ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ফজলুল হক নিয়মিত জিপিও অফিসে যেত। নেপথ্যে থেকে সে দুর্নীতি করেছে। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে।

এ কর্মকর্তা বলেন, ডাক বিভাগে এমনি জনবলের অভাব। ৫৭০ জনের জায়গায় আছে ৩৩৫ জন। এরপর একজন কাজ না কলে পুরো সিস্টেমে সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের সেবামূলক কাজ ডাক বিভাগের করতে হয়। মাসিক মুনাফার কাজসহ নানা ধরনের কাজ করতে হয়। এরমধ্যে অনেকেই কাজ করতে চায় না। তারা কোন দফতরে কাজ করবে না। কাজ না করায় সেবা বিঘিœত হচ্ছে। কিছু বললে উল্টো মিছিল করে প্রশাসন জবাব চাই বলেও হুমকি দেয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও প্রতিবাদ করছেন।

অভিযুক্ত গ্রেফতারকৃত জালিয়াত ফজলুল হক ডাক বিভাগ ছাড়াও নানাভাবে বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়ম করছে। এমনকি পথশিশু কল্যাণ টাস্ট্রের নামেও প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ডাক বিভাগের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও কাহিনী বেরিয়ে আসবে। এ চক্রে কারা জড়িত তাদের নামসহ জালিয়াতির সব কাহিনী বেরিয়ে আসবে।

এ সম্পর্কে পোস্টম্যান ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা মাসুদ মিয়া ও মাসুদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ সম্পর্কে র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, আসামিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এখন বিষয়টি দেখবেন।

আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, ডাক বিভাগের অভিযুক্ত কর্মচারী আমজাদের কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সে নানা কৌশলে চলে। কর্মচারী ইউনিয়ন ছাড়াও একটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ডাক বিভাগের কর্মচারীদের রদবদল করাসহ নানা কাজ তিনি করতেন বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।

বুধবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২২ পৌষ ১৪২৭, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ঢাকা জিপিওতে বিক্ষোভ

কর্মকর্তাকে গালাগাল, জালিয়াতির অভিযোগে কর্মচারী গ্রেফতারের জের

‘কাজ ছাড়াই বেতন নেবে কিন্তু ডিউটি করতে রাজি নয়’

বাকী বিল্লাহ

ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার ফরম ও সিল সই জালিয়াতির সঙ্গে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আমজাদ আলী খান জড়িত। তার সঙ্গে আরও অর্ধশত ডাক কর্মচারী রয়েছে। তারা ডাক বিভাগের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে র‌্যাব গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ায় তার সহযোগিরা সিনিয়র অফিসারকে জিম্মি করে হুমকি ও গালগাল করেছে।

গত সোমবার সন্ধ্যার পরপরই জিপিওর নৈশ শাখার অফিস চলাকালে কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (কেপিআই) মাইক লাগিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করায় নৈশ শাখার স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, র‌্যাব অভিযান চালিয়ে আসামি গ্রেফতার করেছে। এখন পরবর্তী কার্যক্রম চলবে। আর দুর্নীতির ক্লু উদ্ঘাটনে র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ডাক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে গতকাল র‌্যাবের মহাপরিচালকের কথা হয়েছে।

ঢাকা জিপিওর প্রধান কার্যালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ডাক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতে রাজি নয়। তাদের খুশিমত অফিসে যাবেন। তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করলে অফিসারকে উল্টো কর্মস্থলে গালাগাল ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি বদলি করার ভয় দেখান।

গত ৬ মাস ধরে ঢাকার কেন্দ্রীয় ডাক বিভাগে চিহ্নিত কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারী কাজ না করে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে সরজমিনে জিপিওর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সিনিয়র অফিসার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেতারা এসব তথ্য জানিয়েছে। এমনকি জিপিওর সামনে ডাক বিভাগের একটি ভাস্কর্য ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন বলে কয়েকজন কর্মচারী গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদকের সামনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তারা ডাক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি করছেন।

ঢাকা জিপিওর সিনিয়র পোস্ট মাস্টার খন্দকার শাহনুর সাব্বির তার কার্যালয়ে সংবাদ প্রতিবেদককে জানান, ডাক বিভাগের মানিঅর্ডারসহ অন্যান্য জালিয়াতির ঘটনায় গতকাল গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে গত ২৯ জুলাই রাজধানীর পল্টন থানায় আরও একটি মামলা (নং ৭২) দায়ের করা হয়েছে। জালিয়াতির মূল হোতা প্রতারক ফজলুল হক ও তার স্ত্রী। র‌্যাবের অনুসন্ধানে কিছু ডাক কর্মচারীর নাম বেরিয়ে আসছে। তার মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ডাক বিভাগেরে প্রাথমিক তদন্তে ঢাকা জিপিওর ৫০ লাখ ও নিউমার্কেট ও মিরপুর জিপিও অফিসের ৩২ লাখ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ফজলুল হক নিয়মিত জিপিও অফিসে যেত। নেপথ্যে থেকে সে দুর্নীতি করেছে। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে।

এ কর্মকর্তা বলেন, ডাক বিভাগে এমনি জনবলের অভাব। ৫৭০ জনের জায়গায় আছে ৩৩৫ জন। এরপর একজন কাজ না কলে পুরো সিস্টেমে সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের সেবামূলক কাজ ডাক বিভাগের করতে হয়। মাসিক মুনাফার কাজসহ নানা ধরনের কাজ করতে হয়। এরমধ্যে অনেকেই কাজ করতে চায় না। তারা কোন দফতরে কাজ করবে না। কাজ না করায় সেবা বিঘিœত হচ্ছে। কিছু বললে উল্টো মিছিল করে প্রশাসন জবাব চাই বলেও হুমকি দেয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও প্রতিবাদ করছেন।

অভিযুক্ত গ্রেফতারকৃত জালিয়াত ফজলুল হক ডাক বিভাগ ছাড়াও নানাভাবে বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়ম করছে। এমনকি পথশিশু কল্যাণ টাস্ট্রের নামেও প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ডাক বিভাগের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও কাহিনী বেরিয়ে আসবে। এ চক্রে কারা জড়িত তাদের নামসহ জালিয়াতির সব কাহিনী বেরিয়ে আসবে।

এ সম্পর্কে পোস্টম্যান ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা মাসুদ মিয়া ও মাসুদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ সম্পর্কে র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, আসামিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এখন বিষয়টি দেখবেন।

আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, ডাক বিভাগের অভিযুক্ত কর্মচারী আমজাদের কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সে নানা কৌশলে চলে। কর্মচারী ইউনিয়ন ছাড়াও একটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ডাক বিভাগের কর্মচারীদের রদবদল করাসহ নানা কাজ তিনি করতেন বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।