চাঁদপুর হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগী-স্বজন

দালালদের দৌরাত্ম্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ এই হাসপাতালটি শরীয়তপুর, লক্ষীপুর ও চাঁদপুর জেলার দরিদ্র অসহায়সহ সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চয়তার অন্যতম বাতিঘর। তবুও হাসপাতালটির কতিপয় নামধারী সেবিকা, ওয়ার্ড বয় ও কর্মচারীর যোগসাজশে এই দালালি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা কমিশনভিত্তিক চুক্তিতে হাসপাতাল থেকে রোগীকে নির্ধারিত প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে নানাভাবে উৎসাহিত করছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ সঙ্কট লেগেই আছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে গেলে প্যারাসিটামল আর কয়েকটা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর বাকি ঔষুধ বাহিরের ফার্মেসি থেকে কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন স্টোরের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তি। শুধু তাই নয় ২৫০ শয্যার এ হাসাপতালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য। দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের যোগসাজশে এই অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্যের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যারা ভুয়া সার্টিফিকেট এমসি সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন কর্তাব্যক্তিরা। এতে করে একদিকে যেমন আইনীভাবে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কিছু সাধারণ মানুষ। অপরদিকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে অসহায়দের ভোগান্তিতে ফেলছেন এক শ্রেণীর পেশাদার মামলাবাজরা। শুধু তাই নয় হাসপাতালের খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট(প্যাথলজি), রেডিওলজিস্ট, প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু পদ শূন্য রয়েছে। এরসঙ্গে গেল দেড় বছর যাবত বিকল হয়ে রয়েছে হাসপাতালের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন। ১টি এনালগ মেশিনে কোনমতে চলছে কার্যক্রম। আর আল্ট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রমও বন্ধ। শুধু তাই নয়, অপারেশন থিয়েটার কার্যক্রমেও পর্যাপ্ত এনেস্থিসিয়া মেশিন নেই।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিব-উল-করিম জানান, শূন্য পদে লোক নিয়োগ চেয়ে ডিজির কাছে তথ্য পাঠিয়েছি। দালালদের দৌরাত্ম্য জনবল সঙ্কটে কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমরা সতর্কতামূলক মাইকিং ও পোস্টারিং করেছি। যাতে কেউ দালালের খপ্পরে না পরে। কিছুদিন আগে এক দালালকে ধরে পুলিশে পর্যন্ত সোপর্দ করেছি। তিনি জানান, সার্টিফিকেট বাণিজ্য এক সময় থাকলেও এখন এই ব্যপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। পুরো হাসপাতলটি ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মনিটরিংয়ে রেখেছি। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরসাথে হাসপাতালে দালালিরোধে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। আমরা সেবার মান বাড়াতে আমাদের পাশের ৩ তলা ভবনটিতে আরো ২৪টি বেড বসানোর পরিকল্পনা করছি। তবে নার্সের অভাবে সেটি বাস্তবায়ন করতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা খাবারের গুণগত মান, পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ ও হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিছন্নতার ব্যপারেও নজর রাখছি। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ দৈনিক সংবাদকে জানান, চাঁদপুর সদর হাসপাতালটি আমাদের অধীনে নয়।

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

চাঁদপুর হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগী-স্বজন

সংবাদদাতা, চাঁদপুর

দালালদের দৌরাত্ম্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ এই হাসপাতালটি শরীয়তপুর, লক্ষীপুর ও চাঁদপুর জেলার দরিদ্র অসহায়সহ সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চয়তার অন্যতম বাতিঘর। তবুও হাসপাতালটির কতিপয় নামধারী সেবিকা, ওয়ার্ড বয় ও কর্মচারীর যোগসাজশে এই দালালি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা কমিশনভিত্তিক চুক্তিতে হাসপাতাল থেকে রোগীকে নির্ধারিত প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে নানাভাবে উৎসাহিত করছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ সঙ্কট লেগেই আছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে গেলে প্যারাসিটামল আর কয়েকটা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর বাকি ঔষুধ বাহিরের ফার্মেসি থেকে কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন স্টোরের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তি। শুধু তাই নয় ২৫০ শয্যার এ হাসাপতালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্য। দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের যোগসাজশে এই অবৈধ সার্টিফিকেট বাণিজ্যের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যারা ভুয়া সার্টিফিকেট এমসি সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন কর্তাব্যক্তিরা। এতে করে একদিকে যেমন আইনীভাবে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কিছু সাধারণ মানুষ। অপরদিকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে অসহায়দের ভোগান্তিতে ফেলছেন এক শ্রেণীর পেশাদার মামলাবাজরা। শুধু তাই নয় হাসপাতালের খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট(চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট(প্যাথলজি), রেডিওলজিস্ট, প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু পদ শূন্য রয়েছে। এরসঙ্গে গেল দেড় বছর যাবত বিকল হয়ে রয়েছে হাসপাতালের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন। ১টি এনালগ মেশিনে কোনমতে চলছে কার্যক্রম। আর আল্ট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রমও বন্ধ। শুধু তাই নয়, অপারেশন থিয়েটার কার্যক্রমেও পর্যাপ্ত এনেস্থিসিয়া মেশিন নেই।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিব-উল-করিম জানান, শূন্য পদে লোক নিয়োগ চেয়ে ডিজির কাছে তথ্য পাঠিয়েছি। দালালদের দৌরাত্ম্য জনবল সঙ্কটে কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমরা সতর্কতামূলক মাইকিং ও পোস্টারিং করেছি। যাতে কেউ দালালের খপ্পরে না পরে। কিছুদিন আগে এক দালালকে ধরে পুলিশে পর্যন্ত সোপর্দ করেছি। তিনি জানান, সার্টিফিকেট বাণিজ্য এক সময় থাকলেও এখন এই ব্যপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। পুরো হাসপাতলটি ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মনিটরিংয়ে রেখেছি। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরসাথে হাসপাতালে দালালিরোধে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। আমরা সেবার মান বাড়াতে আমাদের পাশের ৩ তলা ভবনটিতে আরো ২৪টি বেড বসানোর পরিকল্পনা করছি। তবে নার্সের অভাবে সেটি বাস্তবায়ন করতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা খাবারের গুণগত মান, পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ ও হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিছন্নতার ব্যপারেও নজর রাখছি। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ দৈনিক সংবাদকে জানান, চাঁদপুর সদর হাসপাতালটি আমাদের অধীনে নয়।