বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রবাহমান খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরী ও গোমতী অভিন্ন এই ৬ নদীর তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হলো দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) টেকনিক্যাল কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক। এছাড়া বৈঠকে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি ও ৬ নদীর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়। গত মঙ্গলবার ও গতকাল অনলাইনে েঅনুষ্ঠিত হওয়া দুই দিনব্যাপী এই বৈঠক বাংলাদেশের যৌথনদী কমিশনের মেম্বার মো. মাহমুদুল রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এছাড়া ভারতের যৌথ নদী কমিশনের মেম্বার অতুল জৌনের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আফসানা বিলকিস সংবাদকে বলেন, অনলাইনের এই বৈঠকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরী ও গোমতী অভিন্ন এই ৬ নদী তথ্য বিনিময় করা হয়েছে। ভারতের কিছু তথ্য বাকি ছিল তা পুনরায় চাওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকায় পানিসম্পদ সচিবদের বৈঠকে ছয় নদ-নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সাক্ষরের লক্ষ্যে ওই ছয় নদ-নদীর হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ও হয়েছে। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করা হয়। তবে ভারতের তথ্য অসম্পূর্ণ থাকায় তাদের তথ্যগুলো পুনরায় চাওয়া হয়েছে। এখানে উজানে পানি প্রত্যাহারসহ নদীগুলো সম্পর্কে ভারতের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। দুই দেশ ছয় নদ-নদীর যেসব তথ্য আদান-প্রদান করেছে, তা মূলত নদ-নদীর পানি যেখানে পরিমাপ করা হয়, সেখানকার তথ্য। কিন্তু পানি বণ্টনের খসড়া চুক্তির জন্য এই তথ্য পর্যাপ্ত নয়। তাই ওই ছয় নদ-নদীর উজানে পানি প্রত্যাহার হয়েছে কিনা, কোন অবকাঠামো রয়েছে, সেটা জানা জরুরি। তাই বাংলাদেশ এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওই তথ্য পাওয়ার পর এখন যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
এছাড়া দুই দেশের পক্ষ থেকে ওই ছয় নদ-নদীর বিষয়ে আলাদা আলাদা করে কারিগরি কমিটিও করা হয়েছে। ওই কমিটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির প্রক্রিয়া, নদ-নদীর প্রবাহের জন্য নির্দিষ্ট অনুপাতে পানি রেখে ভাগাভাগির আনুপাতিক কী হতে পারে, সে বিষয়গুলোতে সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। প্রথম দিনের ভার্চুয়াল বৈঠকে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে গঙ্গার পানিপ্রবাহের নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছরের গড় হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা, ২০২০ সালে সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ হিমালয় থেকে উৎসরিত ৩টি বৃহৎ নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার পলল দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এটি পৃথিবীর একটি অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীগুলোর মধ্যে ৫৭টি হচ্ছে আন্তঃসীমান্ত নদী যার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন এবং ৩টি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে অভিন্ন। আবহমানকাল ধরে নদীমাতৃক বাংলাদেশের কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা আবর্তিত হচ্ছে এসব নদীর পানিকে ঘিরে। এ তিনটি নদীর অববাহিকার মোট আয়তন প্রায় ১ দশমিক ৭২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, যার মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এসব নদীর অন্যান্য অববাহিকাভুক্ত দেশ হচ্ছে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীন।
১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে দু’দেশের বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে অভিন্ন নদীর ব্যাপক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণের বিস্তারিত প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রধান প্রধান নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পের ওপর সমীক্ষা পরিচালন, উভয় দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে এসব অঞ্চলের পানিসম্পদের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতসংলগ্ন এলাকায় পাওয়ার গ্রিড সংযোজনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্থায়ী ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠিত হয়।
ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ২৪ নভেম্বর অংশগ্রহণকারী দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে সর্বাধিক যৌথ ফলপ্রসূ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অভিন্ন নদীসমূহ থেকে সর্বোচ্চ সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের স্ট্যাটিউট স্বাক্ষরিত হয়। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ পক্ষের কাজ সম্পাদনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দফতর হিসেবে যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রবাহমান খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরী ও গোমতী অভিন্ন এই ৬ নদীর তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হলো দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) টেকনিক্যাল কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক। এছাড়া বৈঠকে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি ও ৬ নদীর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়। গত মঙ্গলবার ও গতকাল অনলাইনে েঅনুষ্ঠিত হওয়া দুই দিনব্যাপী এই বৈঠক বাংলাদেশের যৌথনদী কমিশনের মেম্বার মো. মাহমুদুল রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এছাড়া ভারতের যৌথ নদী কমিশনের মেম্বার অতুল জৌনের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আফসানা বিলকিস সংবাদকে বলেন, অনলাইনের এই বৈঠকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরী ও গোমতী অভিন্ন এই ৬ নদী তথ্য বিনিময় করা হয়েছে। ভারতের কিছু তথ্য বাকি ছিল তা পুনরায় চাওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকায় পানিসম্পদ সচিবদের বৈঠকে ছয় নদ-নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সাক্ষরের লক্ষ্যে ওই ছয় নদ-নদীর হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ও হয়েছে। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করা হয়। তবে ভারতের তথ্য অসম্পূর্ণ থাকায় তাদের তথ্যগুলো পুনরায় চাওয়া হয়েছে। এখানে উজানে পানি প্রত্যাহারসহ নদীগুলো সম্পর্কে ভারতের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। দুই দেশ ছয় নদ-নদীর যেসব তথ্য আদান-প্রদান করেছে, তা মূলত নদ-নদীর পানি যেখানে পরিমাপ করা হয়, সেখানকার তথ্য। কিন্তু পানি বণ্টনের খসড়া চুক্তির জন্য এই তথ্য পর্যাপ্ত নয়। তাই ওই ছয় নদ-নদীর উজানে পানি প্রত্যাহার হয়েছে কিনা, কোন অবকাঠামো রয়েছে, সেটা জানা জরুরি। তাই বাংলাদেশ এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওই তথ্য পাওয়ার পর এখন যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
এছাড়া দুই দেশের পক্ষ থেকে ওই ছয় নদ-নদীর বিষয়ে আলাদা আলাদা করে কারিগরি কমিটিও করা হয়েছে। ওই কমিটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির প্রক্রিয়া, নদ-নদীর প্রবাহের জন্য নির্দিষ্ট অনুপাতে পানি রেখে ভাগাভাগির আনুপাতিক কী হতে পারে, সে বিষয়গুলোতে সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। প্রথম দিনের ভার্চুয়াল বৈঠকে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে গঙ্গার পানিপ্রবাহের নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছরের গড় হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা, ২০২০ সালে সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ হিমালয় থেকে উৎসরিত ৩টি বৃহৎ নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার পলল দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এটি পৃথিবীর একটি অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীগুলোর মধ্যে ৫৭টি হচ্ছে আন্তঃসীমান্ত নদী যার মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন এবং ৩টি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে অভিন্ন। আবহমানকাল ধরে নদীমাতৃক বাংলাদেশের কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা আবর্তিত হচ্ছে এসব নদীর পানিকে ঘিরে। এ তিনটি নদীর অববাহিকার মোট আয়তন প্রায় ১ দশমিক ৭২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, যার মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এসব নদীর অন্যান্য অববাহিকাভুক্ত দেশ হচ্ছে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীন।
১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে দু’দেশের বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে অভিন্ন নদীর ব্যাপক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণের বিস্তারিত প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রধান প্রধান নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পের ওপর সমীক্ষা পরিচালন, উভয় দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে এসব অঞ্চলের পানিসম্পদের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতসংলগ্ন এলাকায় পাওয়ার গ্রিড সংযোজনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্থায়ী ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠিত হয়।
ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ২৪ নভেম্বর অংশগ্রহণকারী দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে সর্বাধিক যৌথ ফলপ্রসূ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অভিন্ন নদীসমূহ থেকে সর্বোচ্চ সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের স্ট্যাটিউট স্বাক্ষরিত হয়। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ পক্ষের কাজ সম্পাদনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দফতর হিসেবে যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।