দেশপ্রিয়র বাড়ি ভাঙচুরের তদন্ত চান চসিক প্রশাসক

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এছাড়া ভুয়া দলিল দিয়ে আদালতের আদেশ এনে ‘রাতারাতি’ বাড়ি দখলের চেষ্টা ও ঐতিহাসিক ভবনটি ভাঙচুরের বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতির মাধ্যমে তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছেন সুজন। গতকাল দুপুরে যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে চসিক প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।

জানা গেছে, আঠার শতকের খ্যাতিমান বাঙালি আইনজীবী যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জে শতাব্দীকাল আগে বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার সন্তান দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই ব্রিটিশ-ভারতের রাচীতে কারাবন্দী অবস্থায় তিনি মারা যান। তার স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাড়িটিতে ছিলেন। সে সময় তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। দেশে ফিরে তিনি দেখেন বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে। এরপর তিনি ভারতে চলে গেলে পাকিস্তান সরকার সেটিকে শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে। ভবনসহ জমির পরিমাণ ১৯ গণ্ডা এক কড়া। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাড়িসহ জমিটি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি ‘বাংলা কলেজ’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৭৫ সালে সেই বাড়িতে ‘শিশুবাগ স্কুল’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। তবে ব্রিটিশ আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি অক্ষত রাখা হয়। ইজারাগ্রহীতা শামসুদ্দিন মো. ইছহাকের সন্তানরা এখন সেটি পরিচালনা করছিলেন। গত সোমবার এম ফরিদ চৌধুরী নামে একজন আদালতের কাছ থেকে মালিকানা সংক্রান্ত দখলি আদেশ পেয়েছেন দাবি করে বুলডোজার নিয়ে তার লোকজন সেটি ভাঙতে যান। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষকদের জোরপূর্বক সেখান থেকে বের করে দিয়ে ভবনটির একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ফরিদ চৌধুরীর লোকজন। খবর পেয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত স্থানীয়দের নিয়ে ভবনটির সামনে অবস্থান নেন। প্রতিরোধের মুখে তখন ভবন ভাঙা বন্ধ রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে আইনি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি ভাঙা বন্ধ রাখার আদেশ দেন। এরপরও রাতের আঁধারে দখলদাররা সেটি ভাঙা অব্যাহত রাখলে গত মঙ্গলবার সেখানে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর গতকাল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির দখল ও অবস্থানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আরও খবর
বিদেশে যেতে অন্ধকারে পা বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে
জামিন মেলেনি সাবেক ওসি প্রদীপের
ছাত্রলীগের স্মারক ডাকটিকিট নিয়ে বিতর্ক
অস্ত্র মামলায় নূর হোসেনের যাবজ্জীবন
পুলিশের হাতে সন্ত্রাসী নূরের সাজা পরোয়ানা
ট্রানজিট ক্যাম্পে দুর্ঘটনার হিসাব নেই রাষ্ট্রের কাছে
সালিসি বৈঠকে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা
সম্রাটের ঘনিষ্ঠ ৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে দুদক
অবৈধভাবে খাল এবং রাস্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে ঢাকা উত্তরের মেয়র
বরিশালে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন
আবুল কাশেম হত্যা বিচার কাজ ২৬ বছর পর ফের শুরু হচ্ছে

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

স্মৃতিবিজড়িত

দেশপ্রিয়র বাড়ি ভাঙচুরের তদন্ত চান চসিক প্রশাসক

চট্টগ্রাম ব্যুরো

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এছাড়া ভুয়া দলিল দিয়ে আদালতের আদেশ এনে ‘রাতারাতি’ বাড়ি দখলের চেষ্টা ও ঐতিহাসিক ভবনটি ভাঙচুরের বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতির মাধ্যমে তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছেন সুজন। গতকাল দুপুরে যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে চসিক প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।

জানা গেছে, আঠার শতকের খ্যাতিমান বাঙালি আইনজীবী যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জে শতাব্দীকাল আগে বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার সন্তান দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই ব্রিটিশ-ভারতের রাচীতে কারাবন্দী অবস্থায় তিনি মারা যান। তার স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাড়িটিতে ছিলেন। সে সময় তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। দেশে ফিরে তিনি দেখেন বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে। এরপর তিনি ভারতে চলে গেলে পাকিস্তান সরকার সেটিকে শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে। ভবনসহ জমির পরিমাণ ১৯ গণ্ডা এক কড়া। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাড়িসহ জমিটি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি ‘বাংলা কলেজ’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৭৫ সালে সেই বাড়িতে ‘শিশুবাগ স্কুল’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। তবে ব্রিটিশ আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি অক্ষত রাখা হয়। ইজারাগ্রহীতা শামসুদ্দিন মো. ইছহাকের সন্তানরা এখন সেটি পরিচালনা করছিলেন। গত সোমবার এম ফরিদ চৌধুরী নামে একজন আদালতের কাছ থেকে মালিকানা সংক্রান্ত দখলি আদেশ পেয়েছেন দাবি করে বুলডোজার নিয়ে তার লোকজন সেটি ভাঙতে যান। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষকদের জোরপূর্বক সেখান থেকে বের করে দিয়ে ভবনটির একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ফরিদ চৌধুরীর লোকজন। খবর পেয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত স্থানীয়দের নিয়ে ভবনটির সামনে অবস্থান নেন। প্রতিরোধের মুখে তখন ভবন ভাঙা বন্ধ রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে আইনি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি ভাঙা বন্ধ রাখার আদেশ দেন। এরপরও রাতের আঁধারে দখলদাররা সেটি ভাঙা অব্যাহত রাখলে গত মঙ্গলবার সেখানে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর গতকাল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির দখল ও অবস্থানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।