কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ থাকবে আর কতকাল

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি কালোটাকা সাদা করেছে। এর ফলে উক্ত টাকা মূল অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছে। এর আগে ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯ হাজার ৬৮২ কোটি কালোটাকা সাদা করা হয়। চলতি অর্থবছরের মাঝ পথেই তৈরি হলো নতুন রেকর্ড।

বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে কালোটাকা রয়েছে। কী পরিমাণ কালোটাকা রয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০০২-০৩ অর্থবছরে মোট জিডিপির ৩৭.৭ শতাংশ ছিল কালোটাকা। টিআইবির এক গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর কালোটাকার পরিমাণ জিডিপির ১০ থেকে ৩৮ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করে।

কালোটাকা জাতীয় অর্থনীতির জন্য একটা বড় সমস্যা। একে মূল ধারার অর্থনীতিতে ফেরানো দরকার। জমি ও রিয়েল এস্টেটে নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই ৭ হাজার ৬৫০ জন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছে। বাকি সময়ে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। মহামারীর মধ্যে এত লোক কালোটাকা কেন সাদা করল সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

সরকার মূল অর্থনীতিতে কালোটাকা ফেরানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন সুযোগ কত বছর ধরে দেয়া হবে। বারবারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে ১৬ বার। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সুযোগের তেমন সুফল মেলে না। সিংহভাগ কালোটাকাই অর্থনীতির মূল ধারার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। কমবেশি মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে বছর বছর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া কতটা সঙ্গত সেই প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষ আয় ভেদে কর দিচ্ছেন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। অথচ যারা অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তুলছে তারা মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

নামমাত্র কর-এ বছর বছর সুযোগ দেয়া হচ্ছে অথচ কালোটাকা তৈরি বন্ধ হচ্ছে না। আবার কালোটাকা যারা সাদা করছে না তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। বন্ধ করা হচ্ছে না কালোটাকার উৎস। অসাধু ব্যক্তিরা যখন দেখে যে, অবৈধ সম্পদের জন্য রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা নেয় না তখন তারা অন্যায় উৎসাহ পায়। অন্যদিকে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন, অনেকের মধ্যে কর ফাঁকি দেয়া বা অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার প্রবণতা তৈরি হয়।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অনন্তকাল ধরে থাকতে পারে না। সরকারকে সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পর কালোটাকার বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, কালোটাকার উৎস বন্ধ করা। এজন্য দুদক, এনবিআর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ থাকবে আর কতকাল

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি কালোটাকা সাদা করেছে। এর ফলে উক্ত টাকা মূল অর্থনীতিতে প্রবেশ করেছে। এর আগে ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯ হাজার ৬৮২ কোটি কালোটাকা সাদা করা হয়। চলতি অর্থবছরের মাঝ পথেই তৈরি হলো নতুন রেকর্ড।

বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে কালোটাকা রয়েছে। কী পরিমাণ কালোটাকা রয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০০২-০৩ অর্থবছরে মোট জিডিপির ৩৭.৭ শতাংশ ছিল কালোটাকা। টিআইবির এক গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর কালোটাকার পরিমাণ জিডিপির ১০ থেকে ৩৮ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করে।

কালোটাকা জাতীয় অর্থনীতির জন্য একটা বড় সমস্যা। একে মূল ধারার অর্থনীতিতে ফেরানো দরকার। জমি ও রিয়েল এস্টেটে নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই ৭ হাজার ৬৫০ জন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছে। বাকি সময়ে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। মহামারীর মধ্যে এত লোক কালোটাকা কেন সাদা করল সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

সরকার মূল অর্থনীতিতে কালোটাকা ফেরানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন সুযোগ কত বছর ধরে দেয়া হবে। বারবারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে ১৬ বার। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সুযোগের তেমন সুফল মেলে না। সিংহভাগ কালোটাকাই অর্থনীতির মূল ধারার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। কমবেশি মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে বছর বছর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া কতটা সঙ্গত সেই প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষ আয় ভেদে কর দিচ্ছেন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। অথচ যারা অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তুলছে তারা মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

নামমাত্র কর-এ বছর বছর সুযোগ দেয়া হচ্ছে অথচ কালোটাকা তৈরি বন্ধ হচ্ছে না। আবার কালোটাকা যারা সাদা করছে না তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। বন্ধ করা হচ্ছে না কালোটাকার উৎস। অসাধু ব্যক্তিরা যখন দেখে যে, অবৈধ সম্পদের জন্য রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা নেয় না তখন তারা অন্যায় উৎসাহ পায়। অন্যদিকে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন, অনেকের মধ্যে কর ফাঁকি দেয়া বা অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার প্রবণতা তৈরি হয়।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অনন্তকাল ধরে থাকতে পারে না। সরকারকে সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পর কালোটাকার বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, কালোটাকার উৎস বন্ধ করা। এজন্য দুদক, এনবিআর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি।