দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহনের বাড়ি দখলের চেষ্টায় নেপথ্যে কে?

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ‘রাতারাতি’ দখলের চেষ্টা ও ঐতিহাসিক ভবনটি ভাঙচুরের নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ মনে করেন, জায়গা-সম্পত্তির অনেক মামলা মাসের পর মাস, যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর পড়ে থাকে, নিষ্পত্তি হয় না। কিন্তু এটা কিভাবে ভোজবাজির মতো রাতারাতি সবকিছু হয়ে গেল, এর পেছনে কি আছে সেটা তদন্ত করে দেখা উচিত। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও নেলী সেনগুপ্তের ওই জায়গার যেসব জাল দলিল সৃজন করা হয়েছে তা দেশের ঐতিহ্য কৃষ্টি রক্ষার স্বার্থে বাতিল ঘোষণা, চট্টগ্রাম জেলা যুগ্ম জজ প্রথম আদালত থেকে প্রদত্ত আদেশ ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসকে না জানিয়ে সরকারি অর্পিত সম্পত্তি দখল করতে পুলিশি তৎপরতার যথাযথ তদন্ত, অর্পিত সম্পত্তিটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে ঐতিহাসিক ভবনটি অক্ষত রেখে পেছনে বহুতল ভবন তৈরি করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন স্মৃতি জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

এ দাবির প্রতি সংহতি জানান খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন, কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। জানা গেছে, আঠার শতকের খ্যাতিমান বাঙালি আইনজীবী যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জে শতাব্দীকাল আগে বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার সন্তান দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই ব্রিটিশ-ভারতের রাচীতে কারাবন্দী অবস্থায় তিনি মারা যান। তার স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাড়িটিতে ছিলেন। সেসময় তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। দেশে ফিরে তিনি দেখেন বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে।

এরপর তিনি ভারতে চলে গেলে পাকিস্তান সরকার সেটিকে শত্রুসম্পত্তি ঘোষণা করে। ভবনসহ জমির পরিমাণ ১৯ গন্ডা এক কড়া। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাড়িসহ জমিটি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি ‘বাংলা কলেজ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৭৫ সালে সেই বাড়িতে ‘শিশুবাগ স্কুল’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। তবে ব্রিটিশ আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি অক্ষত রাখা হয়। ইজারাগ্রহীতা শামসুদ্দিন মো. ইছহাকের সন্তানরা এখন সেটি পরিচালনা করছিলেন। গত সোমবার এম ফরিদ চৌধুরী নামে একজন আদালতের কাছ থেকে মালিকানা সংক্রান্ত দখলি আদেশ পেয়েছেন দাবি করে বুলডোজার নিয়ে তার লোকজন সেটি ভাঙতে যান।

এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষকদের জোরপূর্বক সেখান থেকে বের করে দিয়ে ভবনটির একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ফরিদ চৌধুরীর লোকজন। খবর পেয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত স্থানীয়দের নিয়ে ভবনটির সামনে অবস্থান নেন। প্রতিরোধের মুখে তখন ভবন ভাঙা বন্ধ রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে আইনি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি ভাঙা বন্ধ রাখার আদেশ দেন। এরপরও রাতের আঁধারে দখলদাররা সেটি ভাঙা অব্যাহত রাখলে গত মঙ্গলবার সেখানে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর গতকাল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির দখল ও অবস্থানের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জেএম সেনের যে ভবনটির সঙ্গে জড়িত আছে ব্রিটিশ ভারত থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস। এই ভবনটি সরকার রক্ষা করুক। চসিক প্রশাসকও বলেছেন, জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তিতে পড়ে। অর্পিত সম্পত্তির যদি কোন দাবিদার না থাকে, তাহলে সরকার এটি নিজের কাস্টডিতে নিয়ে যেতে পারবে। খাস জমি হিসেবে গণ্য করতে পারবে। সরকারি জমিতে সরকার অবশ্যই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকও ফোন করে যেসব ঐতিহাসিক স্থান বেহাত হয়েছে বা বেহাত হয়নি, তার একটি তালিকা চেয়েছেন। আমরা সবার সম্মিলিত উদ্যোগ চাই। কবি আবুল মোমেন বলেন, সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যম-িত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা সম্পত্তিসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও নেলী সেনগুপ্তের বাড়িটি সাংস্কৃতিক সম্পদ। এটির সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও নাগরিকদের। রাষ্ট্র উদাসীন থাকায় সচেতন নাগরিক হিসেবে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে নগরের কোতোয়ালি থানাধীন রহমতগঞ্জ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের (জেএম সেনগুপ্ত) শত বছরের পুরনো বাড়ির একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার চক্রান্ত প্রতিহত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, যাত্রামোহন সেনগুপ্তের পুত্র যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন পেশায় ব্যারিস্টার। ছিলেন পাঁচবার কলকাতার মেয়র। এই সেনগুপ্ত পরিবারের ভূমিতে জেএম সেন হল, জে এম সেন স্কুল ও কলেজ, ডা. খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়, ত্রাহি-মেনকা সংগীত মহাবিদ্যালয়, বর্তমান শিশুবাগ স্কুল (জেএম সেনের বসত ঘর), চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কলেজ, চন্দনাইশ বরমা ত্রাহি-মেনকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরমা ডিগ্রি কলেজ এবং বহু স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জেএম সেনের বসত ঘরটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের অংশ। তাই এই ভবন ভেঙে ফেলার ঘটনায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং ভবনটি সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানাচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামে অবস্থিত সব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

আরও খবর
বিদ্রোহী প্রার্থীদের সতর্ক করল আ’লীগ
’৭১-এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার তাগিদ বাংলাদেশের
২০০ পরিবারের জীবিকার মাধ্যম গোলের রস
সরকারি অর্থের অপচয় : সিইসির বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি ১০ আইনজীবীর
এসএমপির সব থানার ওসিকে একযোগে বদলির নতুন রেকর্ড
বোরো মৌসুমের সেচ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে
অপরিকল্পিত ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে সহযোগিতা চান মন্ত্রী
রাজাকারদের উত্তরাধিকারের আ’লীগের মনোনয়ন না দেয়ার দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের
উপাচার্যের দীর্ঘ অনুপস্থিতি ও দুর্নীতির প্রতিবাদে উপ-উপাচার্যকে অবরুদ্ধ
একটি স্কুলে আয়া নিয়োগে ১০ লাখ টাকা!
চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে নবজাতক হত্যা
করোনা আক্রান্ত রোগীদের বন্ধু ওসি মহসিন

শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২১ , ২৪ পৌষ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত

দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহনের বাড়ি দখলের চেষ্টায় নেপথ্যে কে?

চট্টগ্রাম ব্যুরো

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ‘রাতারাতি’ দখলের চেষ্টা ও ঐতিহাসিক ভবনটি ভাঙচুরের নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। চট্টগ্রামের সুশীল সমাজ মনে করেন, জায়গা-সম্পত্তির অনেক মামলা মাসের পর মাস, যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর পড়ে থাকে, নিষ্পত্তি হয় না। কিন্তু এটা কিভাবে ভোজবাজির মতো রাতারাতি সবকিছু হয়ে গেল, এর পেছনে কি আছে সেটা তদন্ত করে দেখা উচিত। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও নেলী সেনগুপ্তের ওই জায়গার যেসব জাল দলিল সৃজন করা হয়েছে তা দেশের ঐতিহ্য কৃষ্টি রক্ষার স্বার্থে বাতিল ঘোষণা, চট্টগ্রাম জেলা যুগ্ম জজ প্রথম আদালত থেকে প্রদত্ত আদেশ ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসকে না জানিয়ে সরকারি অর্পিত সম্পত্তি দখল করতে পুলিশি তৎপরতার যথাযথ তদন্ত, অর্পিত সম্পত্তিটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে ঐতিহাসিক ভবনটি অক্ষত রেখে পেছনে বহুতল ভবন তৈরি করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন স্মৃতি জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

এ দাবির প্রতি সংহতি জানান খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন, কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। জানা গেছে, আঠার শতকের খ্যাতিমান বাঙালি আইনজীবী যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জে শতাব্দীকাল আগে বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার সন্তান দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই ব্রিটিশ-ভারতের রাচীতে কারাবন্দী অবস্থায় তিনি মারা যান। তার স্ত্রী নেলী সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাড়িটিতে ছিলেন। সেসময় তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। দেশে ফিরে তিনি দেখেন বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে।

এরপর তিনি ভারতে চলে গেলে পাকিস্তান সরকার সেটিকে শত্রুসম্পত্তি ঘোষণা করে। ভবনসহ জমির পরিমাণ ১৯ গন্ডা এক কড়া। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাড়িসহ জমিটি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি ‘বাংলা কলেজ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৭৫ সালে সেই বাড়িতে ‘শিশুবাগ স্কুল’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। তবে ব্রিটিশ আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি অক্ষত রাখা হয়। ইজারাগ্রহীতা শামসুদ্দিন মো. ইছহাকের সন্তানরা এখন সেটি পরিচালনা করছিলেন। গত সোমবার এম ফরিদ চৌধুরী নামে একজন আদালতের কাছ থেকে মালিকানা সংক্রান্ত দখলি আদেশ পেয়েছেন দাবি করে বুলডোজার নিয়ে তার লোকজন সেটি ভাঙতে যান।

এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষকদের জোরপূর্বক সেখান থেকে বের করে দিয়ে ভবনটির একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ফরিদ চৌধুরীর লোকজন। খবর পেয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত স্থানীয়দের নিয়ে ভবনটির সামনে অবস্থান নেন। প্রতিরোধের মুখে তখন ভবন ভাঙা বন্ধ রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে আইনি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি ভাঙা বন্ধ রাখার আদেশ দেন। এরপরও রাতের আঁধারে দখলদাররা সেটি ভাঙা অব্যাহত রাখলে গত মঙ্গলবার সেখানে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর গতকাল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির দখল ও অবস্থানের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জেএম সেনের যে ভবনটির সঙ্গে জড়িত আছে ব্রিটিশ ভারত থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস। এই ভবনটি সরকার রক্ষা করুক। চসিক প্রশাসকও বলেছেন, জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তিতে পড়ে। অর্পিত সম্পত্তির যদি কোন দাবিদার না থাকে, তাহলে সরকার এটি নিজের কাস্টডিতে নিয়ে যেতে পারবে। খাস জমি হিসেবে গণ্য করতে পারবে। সরকারি জমিতে সরকার অবশ্যই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকও ফোন করে যেসব ঐতিহাসিক স্থান বেহাত হয়েছে বা বেহাত হয়নি, তার একটি তালিকা চেয়েছেন। আমরা সবার সম্মিলিত উদ্যোগ চাই। কবি আবুল মোমেন বলেন, সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যম-িত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা সম্পত্তিসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও নেলী সেনগুপ্তের বাড়িটি সাংস্কৃতিক সম্পদ। এটির সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও নাগরিকদের। রাষ্ট্র উদাসীন থাকায় সচেতন নাগরিক হিসেবে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে নগরের কোতোয়ালি থানাধীন রহমতগঞ্জ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের (জেএম সেনগুপ্ত) শত বছরের পুরনো বাড়ির একাংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার চক্রান্ত প্রতিহত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, যাত্রামোহন সেনগুপ্তের পুত্র যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন পেশায় ব্যারিস্টার। ছিলেন পাঁচবার কলকাতার মেয়র। এই সেনগুপ্ত পরিবারের ভূমিতে জেএম সেন হল, জে এম সেন স্কুল ও কলেজ, ডা. খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়, ত্রাহি-মেনকা সংগীত মহাবিদ্যালয়, বর্তমান শিশুবাগ স্কুল (জেএম সেনের বসত ঘর), চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কলেজ, চন্দনাইশ বরমা ত্রাহি-মেনকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরমা ডিগ্রি কলেজ এবং বহু স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জেএম সেনের বসত ঘরটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের অংশ। তাই এই ভবন ভেঙে ফেলার ঘটনায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং ভবনটি সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানাচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামে অবস্থিত সব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।