১৫ জানুয়ারি উদ্বোধন সেচ পাবে ৪ জেলার ৬২ হেক্টর জমি
দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় চলতি বোরো (খরিপ-১) মৌসুমে সেচ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সেচ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। এর লক্ষ্য নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও দিনাজপুরের চার জেলার ১২ উপজেলায় এবার ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত মৌসুমে ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানে টার্গেট নেয়া হলেও নদীতে বেশ পানি থাকায় সেচ প্রদান করা হয়েছিল ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। সে হিসাবে এবার ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমি সেচ পেতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে এবার চার জেলার ১২ উপজেলার ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হবে। এরমধ্যে নীলফামারী জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে ডিমলায় ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর, নীলফামারী সদরে ১১ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুরে ৫ হাজার হেক্টর, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৮ হাজার, রংপুর সদর ৫ হাজার, তারাগঞ্জে ২ হাজার, বদরগঞ্জ উপজেলায় ৫শ’ হেক্টর, দিনাজপুর জেলার চিরিবন্দরে দেড় হাজার ও পার্বতীপুর উপজেলায় ৫শ’ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। তিনি জানান, এ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট বন্ধ করে সেচ ক্যানেলে পানি নেয়া হবে। ‘রোটেশন পদ্ধতিতে এবার চার জেলার ১২ উপজেলার ৬২ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদানের আশা করছি। সেই সঙ্গে আমরা এবার এটি পূরণ করতে পারব।’
সরজমিনে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে উজানের পানি তিস্তা নদীতে ৯ হাজার কিউসেক প্রবাহিত হলেও বর্তমানে এটি কমে এসে ৪ হাজার থেকে ৫ কিউসেকে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পানি প্রবাহ ছিল চার হাজার ২শ’ কিউসেকের বেশি। যা অব্যাহত থাকলে এবার বোরো মৌসুমে কৃষকদের সেচ নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
তিস্তা নদী হলো উত্তরের জীবনরেখা। তিস্তা তার জলদুগ্ধে উত্তরের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। কখনও প্রত্যক্ষভাবে, কখনও পরোক্ষভাবে। উত্তরের জনপদে তিস্তা অববাহিকার মানুষ তাই তিস্তার কাছে ঋণী। সেচনির্ভন বোরো আবাদে তিস্তার পানির ব্যাপক চাহিদা। আর অন্যদিকে উজানের পানি প্রবাহের ওপর উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য সেচের ওপর নির্ভরশীল। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, উজানের পানি প্রাপ্তিতার ওপর নির্ভর করে সেচ প্রদান। এর পরও রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে বোরো মৌসুমে সেচ প্রদানের একটি টার্গেট রাখা হয়েছে ৬২ হাজার হেক্টর।
এদিকে মহাপরিকল্পনা নিয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষজন আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতুর পর তিস্তা অববাহিকার চিত্র পাল্টে যাবে মহাপরিকল্পনায়। এই খবর এখন তিস্তা অববাহিকার সঙ্গে জড়িত লাখো পরিবারের মাঝে খুশি বিরাজ করছে। তারা পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আশা করছে।
তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ বলেন, তিস্তা রেস্টোরেশন প্রকল্পে ‘তিস্তার বিস্তৃতি কোন এলাকায় হয়ত পাঁচ কিলোমিটার, কোথাও দেড় কিলোমিটার বা কোথাও তিন কিলোমিটার আছে। সেক্ষেত্রে এই বিস্তৃতি কমিয়ে দেড় বা দুই কিলোমিটার কিংবা প্রকল্পের নকশায় যা আছে সে অনুযায়ী করা হবে। তিনি বলেন, এর ফলে তিস্তার পারে থাকা শত শত একর জমি বা ভূমি পুনরুদ্ধার হবে যা ভূমিহীন মানুষ কিংবা শিল্পায়নের কাজে লাগানো হবে। সেই সঙ্গে ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার মুখে তা আটকে যায়। এরপর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি আশ্বস্ত করেন তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি সমঝোতা হবে। কিন্তু এর পর পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও তিস্তা সমস্যার কোন সমাধান এখনও হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে মীমাংসা আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হয়নি। চলতি বছরে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় কিছু ইস্যুতে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হতে পারে এমন আশা করছেন অনেকেই।
তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬৫-৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে সেই ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের ১ ভাগ।
শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২১ , ২৪ পৌষ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
১৫ জানুয়ারি উদ্বোধন সেচ পাবে ৪ জেলার ৬২ হেক্টর জমি
মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট
দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় চলতি বোরো (খরিপ-১) মৌসুমে সেচ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সেচ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। এর লক্ষ্য নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও দিনাজপুরের চার জেলার ১২ উপজেলায় এবার ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত মৌসুমে ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানে টার্গেট নেয়া হলেও নদীতে বেশ পানি থাকায় সেচ প্রদান করা হয়েছিল ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। সে হিসাবে এবার ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমি সেচ পেতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে এবার চার জেলার ১২ উপজেলার ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হবে। এরমধ্যে নীলফামারী জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে ডিমলায় ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর, নীলফামারী সদরে ১১ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুরে ৫ হাজার হেক্টর, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৮ হাজার, রংপুর সদর ৫ হাজার, তারাগঞ্জে ২ হাজার, বদরগঞ্জ উপজেলায় ৫শ’ হেক্টর, দিনাজপুর জেলার চিরিবন্দরে দেড় হাজার ও পার্বতীপুর উপজেলায় ৫শ’ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। তিনি জানান, এ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট বন্ধ করে সেচ ক্যানেলে পানি নেয়া হবে। ‘রোটেশন পদ্ধতিতে এবার চার জেলার ১২ উপজেলার ৬২ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদানের আশা করছি। সেই সঙ্গে আমরা এবার এটি পূরণ করতে পারব।’
সরজমিনে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে উজানের পানি তিস্তা নদীতে ৯ হাজার কিউসেক প্রবাহিত হলেও বর্তমানে এটি কমে এসে ৪ হাজার থেকে ৫ কিউসেকে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পানি প্রবাহ ছিল চার হাজার ২শ’ কিউসেকের বেশি। যা অব্যাহত থাকলে এবার বোরো মৌসুমে কৃষকদের সেচ নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
তিস্তা নদী হলো উত্তরের জীবনরেখা। তিস্তা তার জলদুগ্ধে উত্তরের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। কখনও প্রত্যক্ষভাবে, কখনও পরোক্ষভাবে। উত্তরের জনপদে তিস্তা অববাহিকার মানুষ তাই তিস্তার কাছে ঋণী। সেচনির্ভন বোরো আবাদে তিস্তার পানির ব্যাপক চাহিদা। আর অন্যদিকে উজানের পানি প্রবাহের ওপর উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য সেচের ওপর নির্ভরশীল। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, উজানের পানি প্রাপ্তিতার ওপর নির্ভর করে সেচ প্রদান। এর পরও রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে বোরো মৌসুমে সেচ প্রদানের একটি টার্গেট রাখা হয়েছে ৬২ হাজার হেক্টর।
এদিকে মহাপরিকল্পনা নিয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষজন আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতুর পর তিস্তা অববাহিকার চিত্র পাল্টে যাবে মহাপরিকল্পনায়। এই খবর এখন তিস্তা অববাহিকার সঙ্গে জড়িত লাখো পরিবারের মাঝে খুশি বিরাজ করছে। তারা পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আশা করছে।
তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ বলেন, তিস্তা রেস্টোরেশন প্রকল্পে ‘তিস্তার বিস্তৃতি কোন এলাকায় হয়ত পাঁচ কিলোমিটার, কোথাও দেড় কিলোমিটার বা কোথাও তিন কিলোমিটার আছে। সেক্ষেত্রে এই বিস্তৃতি কমিয়ে দেড় বা দুই কিলোমিটার কিংবা প্রকল্পের নকশায় যা আছে সে অনুযায়ী করা হবে। তিনি বলেন, এর ফলে তিস্তার পারে থাকা শত শত একর জমি বা ভূমি পুনরুদ্ধার হবে যা ভূমিহীন মানুষ কিংবা শিল্পায়নের কাজে লাগানো হবে। সেই সঙ্গে ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার মুখে তা আটকে যায়। এরপর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি আশ্বস্ত করেন তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি সমঝোতা হবে। কিন্তু এর পর পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও তিস্তা সমস্যার কোন সমাধান এখনও হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে মীমাংসা আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হয়নি। চলতি বছরে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় কিছু ইস্যুতে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হতে পারে এমন আশা করছেন অনেকেই।
তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬৫-৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে সেই ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের ১ ভাগ।