করোনায় গাড়ি বিক্রিতে ধস

অন্য ব্যবসার মতো বিলাসি পণ্য গাড়ি বিক্রিতেও ধস নেমেছে করোনায়। এই মহামারীর সময় সারাবিশ্ব প্রায় লকডাউন অবস্থায় ছিল। বাইরে বের হতে পারেনি সাধারণ মানুষ। আর মানুষ রাস্তায় না নামতে পারলে তো গাড়ির প্রয়োজনই হয় না। তাই গাড়ি বিক্রিতে ধস নেমেছে এই বছর। রয়টার্স।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সাল ছিল এক দশকের মাঝে গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য সবচেয়ে দুর্বলতম বছর। এমনকি বসন্তকালীন কোম্পানিগুলোকে দুই মাসের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কারখানা বন্ধও রাখতে হয়েছে। তবে কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়াতে চায় গাড়ি প্রস্তুতকারকরা। যে কারণে চলমান ২০২১ সালকে পাখির চোখ করেছে তারা। বিশেষ করে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে স্পোর্টস কার, পিকআপ ট্রাক ও বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির মধ্যদিয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির আশা করছেন তারা। তাদের এই আশার পেছনে অবশ্য কারণ হিসেবে কাজ করছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিতরণ। এরই মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হতে শুরু করেছে একাধিক ভ্যাকসিন। জনজীবনে ভ্যাকসিনের প্রভাব পড়ার সঙ্গে গাড়ি বিক্রির গতিও বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ফক্সওয়াগনের প্রধান নির্বাহী স্কট কিওগ বলেন, একজন মানুষ যতটা আশাবাদী হতে পারে, আমি ততটাই আশাবাদী। সবকিছু এখন নির্ভর করছে কত দ্রুত আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি তার ওপর। গত বছর ১ কোটি ৪৫ লাখ গাড়ি ও হালকা ট্রাক বিক্রি হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম এবং ২০১২ সালের পর সর্বনি¤œ। এদিকে শিল্পটি যখন অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে, তখন জেনারেল মোটরস ও ক্রাইসলারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছ থেকে সহায়তা এবং দেউলিয়াত্ব সুরক্ষা প্রত্যাশা করছে।

তবে মহামারী দ্বারা সৃষ্ট জটিলতাগুলো মন্দার মতো করে প্রস্তুতকাকরদের ক্ষতিগ্রস্ত করেনি এবং বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলগুলোয়ও একই রকমভাবে আঘাত হানেনি। গত বসন্তে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি কমানোর জন্য উত্তর আমেরিকার গাড়ি প্রস্তুতকারক কারখানাগুলো যখন একযোগে বন্ধ করে দেয়া হয়, সে সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ খাত। পাশাপাশি সে সময় অনেক গ্রাহককেও বাধ্যতামূলক গৃহবন্দী হয়ে পড়তে হয়। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বিক্রিও নতুন পথ খুঁজে পেতে থাকে।

সম্প্রতি জেনারেল মোটরসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালে গাড়ি বিক্রি কমেছে ১২ শতাংশ। কিন্তু চতুর্থ প্রান্তিকে গিয়ে আগের বছরের তুলনায় সেটি ৫ শতাংশ বেড়েছে। শেষ তিন মাসে শেভরোলেট, জিএমসি ও কাডিলাক ব্র্যান্ড থেকে দারুণ ফল এসেছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে ২৫ লাখ গাড়ি ও হালকা ট্রাক বিক্রি করেছে জিএম। ২০১৯ সালে যেখানে বিক্রি হয়েছিল ২৯ লাখ। তবে মার্কিন এ গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি বলছে, শেষ তিন মাসে তারা ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩২৩টি গাড়ি বিক্রি করেছে, যা ২০০৭ সালের পর যেকোন চতুর্থ প্রান্তিকের হিসাবে সর্বোচ্চ। জিএমের চিফ ইকোনমিস্ট এলাইন বাকবার্গ বলেন, বিস্তৃত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় আগামী বসন্তে ভোক্তা ও ব্যবসা উভয়ই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসবে বলে আশা করছি।

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

করোনায় গাড়ি বিক্রিতে ধস

সংবাদ ডেস্ক |

image

অন্য ব্যবসার মতো বিলাসি পণ্য গাড়ি বিক্রিতেও ধস নেমেছে করোনায়। এই মহামারীর সময় সারাবিশ্ব প্রায় লকডাউন অবস্থায় ছিল। বাইরে বের হতে পারেনি সাধারণ মানুষ। আর মানুষ রাস্তায় না নামতে পারলে তো গাড়ির প্রয়োজনই হয় না। তাই গাড়ি বিক্রিতে ধস নেমেছে এই বছর। রয়টার্স।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সাল ছিল এক দশকের মাঝে গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য সবচেয়ে দুর্বলতম বছর। এমনকি বসন্তকালীন কোম্পানিগুলোকে দুই মাসের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কারখানা বন্ধও রাখতে হয়েছে। তবে কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়াতে চায় গাড়ি প্রস্তুতকারকরা। যে কারণে চলমান ২০২১ সালকে পাখির চোখ করেছে তারা। বিশেষ করে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে স্পোর্টস কার, পিকআপ ট্রাক ও বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির মধ্যদিয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির আশা করছেন তারা। তাদের এই আশার পেছনে অবশ্য কারণ হিসেবে কাজ করছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিতরণ। এরই মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হতে শুরু করেছে একাধিক ভ্যাকসিন। জনজীবনে ভ্যাকসিনের প্রভাব পড়ার সঙ্গে গাড়ি বিক্রির গতিও বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ফক্সওয়াগনের প্রধান নির্বাহী স্কট কিওগ বলেন, একজন মানুষ যতটা আশাবাদী হতে পারে, আমি ততটাই আশাবাদী। সবকিছু এখন নির্ভর করছে কত দ্রুত আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি তার ওপর। গত বছর ১ কোটি ৪৫ লাখ গাড়ি ও হালকা ট্রাক বিক্রি হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম এবং ২০১২ সালের পর সর্বনি¤œ। এদিকে শিল্পটি যখন অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে, তখন জেনারেল মোটরস ও ক্রাইসলারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছ থেকে সহায়তা এবং দেউলিয়াত্ব সুরক্ষা প্রত্যাশা করছে।

তবে মহামারী দ্বারা সৃষ্ট জটিলতাগুলো মন্দার মতো করে প্রস্তুতকাকরদের ক্ষতিগ্রস্ত করেনি এবং বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলগুলোয়ও একই রকমভাবে আঘাত হানেনি। গত বসন্তে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি কমানোর জন্য উত্তর আমেরিকার গাড়ি প্রস্তুতকারক কারখানাগুলো যখন একযোগে বন্ধ করে দেয়া হয়, সে সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ খাত। পাশাপাশি সে সময় অনেক গ্রাহককেও বাধ্যতামূলক গৃহবন্দী হয়ে পড়তে হয়। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বিক্রিও নতুন পথ খুঁজে পেতে থাকে।

সম্প্রতি জেনারেল মোটরসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালে গাড়ি বিক্রি কমেছে ১২ শতাংশ। কিন্তু চতুর্থ প্রান্তিকে গিয়ে আগের বছরের তুলনায় সেটি ৫ শতাংশ বেড়েছে। শেষ তিন মাসে শেভরোলেট, জিএমসি ও কাডিলাক ব্র্যান্ড থেকে দারুণ ফল এসেছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে ২৫ লাখ গাড়ি ও হালকা ট্রাক বিক্রি করেছে জিএম। ২০১৯ সালে যেখানে বিক্রি হয়েছিল ২৯ লাখ। তবে মার্কিন এ গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি বলছে, শেষ তিন মাসে তারা ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩২৩টি গাড়ি বিক্রি করেছে, যা ২০০৭ সালের পর যেকোন চতুর্থ প্রান্তিকের হিসাবে সর্বোচ্চ। জিএমের চিফ ইকোনমিস্ট এলাইন বাকবার্গ বলেন, বিস্তৃত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় আগামী বসন্তে ভোক্তা ও ব্যবসা উভয়ই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসবে বলে আশা করছি।