এক এসআইয়ের জন্য ইমেজ সংকটে বিএমপি

বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের এসআই মহিউদ্দিনের হাতে গ্রেফতারের পর শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউলের মৃত্যুর কারণে বরিশাল মহানগর পুলিশ এখন ইমেজ সংকটে আছে। অবশ্য মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল মহল থেকে একজন পুলিশ কর্মীর কর্মকাণ্ডে পুরো ইউনিটের ওপর কোন প্রভাব কোন পরবেনা বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি নগরীর ট্রাফিক পুলিশের নানা অপকর্ম এ নগরীতে অনেকটাই ওপেনÑসিক্রেট হয়ে আছে।

বছর দুয়েক আগেও গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে শারীরিক নির্যাতন করার ঘটনায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা ছাড়াও ডিসি ডিবি’র অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ট্রাফিকের ডিসিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে ঘটনা খুব বেশিদিন মনে রাখেনি বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ ওই ইউনিটের দায়িত্বশীল মহল। গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীর পরিবর্তে সাধারণ মাদকসেবীদের আটক করে বা রাত্রিবেলা যুবকদের আটক করে কোন সাক্ষী ছাড়াই তাদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মাদকের পুড়িয়া পাওয়া গেছে বলে প্রচার করে কিছু উপার্জন করার ঘটনা সর্বজনবিদিত।

বিএমপির পুলিশ সদস্যরা করোনার সময়ে মানবিক সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সুনাম অর্জন করলেও বরিশাল নগরীতে গোয়েন্দা শাখার কতিপয় সদস্যের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে সেই সুনামকে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বরং চিরাচরিত বিরূপ ধারণা ক্রমাগত বাড়ছে। গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে নগরীর ধান গবেষণা ইনিস্টিউটের সড়ক থেকে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউলকে আটক করে মহানগর পুলিশের ডিবির সাব-ইনেসপেক্টর মহিউদ্দিন মাহির অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। আর সুস্থ স্বাভাবিক রেজাউলকে আটকের পর রক্তক্ষরণে মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন নগরবাসী। এমনকি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে নিহত রেজাউলের শরীরে একাধিক আঘাতের আলামতও মিলেছে বলে জানা গেছে। মহানগর পুলিশ থেকে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হলেও কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

তবে নিহত রেজাউলের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলা আদালত আমলে নিয়ে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসআই মহিউদ্দিনসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করে দায়ের করা ওই মামলায় আদালত কমপক্ষে একজন ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার কমকর্তাকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করারও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এদিকে এ ঘটনার পর এসআই মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের ঘটনা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা এক সাবেক পুলিশ কর্মীর পুত্র মহিউদ্দিন কনস্টেবল হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর নানা পথ ধরে তিনি সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় নিয়োগ লাভের পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এমনকি ইতিপূর্বে কোতয়ালি থানায় চাকরিকালেও তার বিরুদ্ধে নানা সুস্পষ্ট অভিযোগ ছিল।

বিভিন্ন নিরীহ মানুষকে নানাভাবে প্রাণ নাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নগরীর রূপাতলী ও সাগরদী এলাকায় যেকোন জমিজমা বেচা কেনায় পর্যন্ত তার হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। এভাবেই বরিশাল মহানগর পুলিশের এলাকায় ইতোমধ্যে মহিউদ্দিন প্রায় দেড় একর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কিন্তু এসব বিষয় কি কারণে এতদিন বিএমপির গোয়োন্দা শাখার প্রধানসহ বিএমপির ঊর্র্ধ্বতন মহলের অগোচরে ছিল সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মহানগরবাসীর মধ্যে। তবে এসব বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএমপির কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, এ বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোন একজন বা একাধিক সদস্যর নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ডে পুরো ইউনিটের মর্যাদা ম্লান হতে দেয়া হবে না। পুরো বিষয়টি তদন্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আদালতে দায়েরকৃত মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। সেখানে যা পাওয়া যাবে, সেভাবেই পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান পুলিশ কমিশনার।

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

নির্যাতনে আইনজীবীর মৃত্যু

এক এসআইয়ের জন্য ইমেজ সংকটে বিএমপি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের এসআই মহিউদ্দিনের হাতে গ্রেফতারের পর শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউলের মৃত্যুর কারণে বরিশাল মহানগর পুলিশ এখন ইমেজ সংকটে আছে। অবশ্য মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল মহল থেকে একজন পুলিশ কর্মীর কর্মকাণ্ডে পুরো ইউনিটের ওপর কোন প্রভাব কোন পরবেনা বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি নগরীর ট্রাফিক পুলিশের নানা অপকর্ম এ নগরীতে অনেকটাই ওপেনÑসিক্রেট হয়ে আছে।

বছর দুয়েক আগেও গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে শারীরিক নির্যাতন করার ঘটনায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা ছাড়াও ডিসি ডিবি’র অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ট্রাফিকের ডিসিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে ঘটনা খুব বেশিদিন মনে রাখেনি বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ ওই ইউনিটের দায়িত্বশীল মহল। গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীর পরিবর্তে সাধারণ মাদকসেবীদের আটক করে বা রাত্রিবেলা যুবকদের আটক করে কোন সাক্ষী ছাড়াই তাদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মাদকের পুড়িয়া পাওয়া গেছে বলে প্রচার করে কিছু উপার্জন করার ঘটনা সর্বজনবিদিত।

বিএমপির পুলিশ সদস্যরা করোনার সময়ে মানবিক সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সুনাম অর্জন করলেও বরিশাল নগরীতে গোয়েন্দা শাখার কতিপয় সদস্যের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে সেই সুনামকে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বরং চিরাচরিত বিরূপ ধারণা ক্রমাগত বাড়ছে। গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে নগরীর ধান গবেষণা ইনিস্টিউটের সড়ক থেকে শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউলকে আটক করে মহানগর পুলিশের ডিবির সাব-ইনেসপেক্টর মহিউদ্দিন মাহির অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। আর সুস্থ স্বাভাবিক রেজাউলকে আটকের পর রক্তক্ষরণে মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন নগরবাসী। এমনকি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে নিহত রেজাউলের শরীরে একাধিক আঘাতের আলামতও মিলেছে বলে জানা গেছে। মহানগর পুলিশ থেকে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হলেও কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

তবে নিহত রেজাউলের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলা আদালত আমলে নিয়ে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসআই মহিউদ্দিনসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করে দায়ের করা ওই মামলায় আদালত কমপক্ষে একজন ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার কমকর্তাকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করারও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এদিকে এ ঘটনার পর এসআই মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের ঘটনা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা এক সাবেক পুলিশ কর্মীর পুত্র মহিউদ্দিন কনস্টেবল হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর নানা পথ ধরে তিনি সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় নিয়োগ লাভের পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এমনকি ইতিপূর্বে কোতয়ালি থানায় চাকরিকালেও তার বিরুদ্ধে নানা সুস্পষ্ট অভিযোগ ছিল।

বিভিন্ন নিরীহ মানুষকে নানাভাবে প্রাণ নাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নগরীর রূপাতলী ও সাগরদী এলাকায় যেকোন জমিজমা বেচা কেনায় পর্যন্ত তার হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। এভাবেই বরিশাল মহানগর পুলিশের এলাকায় ইতোমধ্যে মহিউদ্দিন প্রায় দেড় একর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কিন্তু এসব বিষয় কি কারণে এতদিন বিএমপির গোয়োন্দা শাখার প্রধানসহ বিএমপির ঊর্র্ধ্বতন মহলের অগোচরে ছিল সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মহানগরবাসীর মধ্যে। তবে এসব বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএমপির কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, এ বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোন একজন বা একাধিক সদস্যর নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ডে পুরো ইউনিটের মর্যাদা ম্লান হতে দেয়া হবে না। পুরো বিষয়টি তদন্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আদালতে দায়েরকৃত মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। সেখানে যা পাওয়া যাবে, সেভাবেই পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান পুলিশ কমিশনার।