গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার পথ বাতলে দেবে

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলা করে কৃষিকে সমৃদ্ধ করবে ।

পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প ২০১৮ সালে হাতে নেয়। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে এ গবেষণা কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে।

গত ২৭ ডিসেম্বর কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এমএম কামরুজ্জামান বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ভাসমান কৃষি, জলমগ্ন সামান্য লবণাক্ত অনাবাদী জমি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ফসলের আবাদ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষির মূল বৈশিষ্ট। জলাবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষক হুমকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া অঞ্চলের কৃষির বৈচিত্র্য নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণার আগ্রহ রয়েছে। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন স্তরের গবেষকদের গবেষণার চাহিদা পূরণের কথা চিন্তা করে গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ডেল্টা প্লানের আধুনিক-টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো হবে। চলমান এ প্রকল্পে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঢাকা, বরিশাল, খুলনা বিভাগের গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৩৮টি উপজেলায় কৃষির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম ২০১৮ সালে শুরু করে। বর্তমানে এটি আরও জোরদার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মানসম্পন্ন উচ্চফলনশীল জাতের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করা হবে। এ অঞ্চলের উপযোগী ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। সবজি, ফল, ডাল, আলু, গম, তৈলবীজ, ভূট্টা, নারকেল, তাল, খেজুরের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এ অঞ্চলকে কৃষিতে সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

বীজ, সার বিতরণ, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতের ফসলের বিস্তার ঘটানো হবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বিগত ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী ২০২৩ সালে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। ৩ বিভাগের ৫ জেলার ৩৮টি উপজেলার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্প পরিচালক ড. এমএম কামরুজ্জামান আরও জানান, এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন উন্নত জাতের ফসলের ২ হাজারটি উপযোগিতা যাচাই পরীক্ষাসহ ১১৬ হেক্টর জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এসব প্লটে সব ফসলেরই বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১১৪টি মিশ্র ফলের বাগান গড়ে উঠেছে। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন জাতের ১০ হাজার ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে। সাড়ে ৬ হাজার কৃষকের মাঝে শাক, সবজি ও বীজ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের জন্য আধুনিক গবেষণাগার, অফিস, কর্মকর্তা, কর্মচারী কোয়ার্টার, আন্তর্জাতিক গবেষকদের উপযোগী অতিথি ভবন থাকছে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জে যুগোপযোগী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এখানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ কৃষি গবেষণাগার স্থাপন করা হবে। এটি শিক্ষার্থী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষকদের পরিবেশবান্ধব, অধিক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির গবেষণার কাজে ব্যাপক সহায়তা করবে। এতে এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।

জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলা করে কৃষক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।

গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য গোপালগঞ্জে স্থাপিত হতে যাওয়া কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচিত হবে। সেই সঙ্গে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে কৃষির ব্যাপক উন্নতি হবে। অধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত বাজারজাত করে ন্যয্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। এখানে কৃষি নির্ভর শিল্প গড়ে উঠবে।

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার পথ বাতলে দেবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, গোপালগঞ্জ

image

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলা করে কৃষিকে সমৃদ্ধ করবে ।

পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প ২০১৮ সালে হাতে নেয়। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে এ গবেষণা কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে।

গত ২৭ ডিসেম্বর কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এমএম কামরুজ্জামান বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ভাসমান কৃষি, জলমগ্ন সামান্য লবণাক্ত অনাবাদী জমি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ফসলের আবাদ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষির মূল বৈশিষ্ট। জলাবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষক হুমকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া অঞ্চলের কৃষির বৈচিত্র্য নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণার আগ্রহ রয়েছে। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন স্তরের গবেষকদের গবেষণার চাহিদা পূরণের কথা চিন্তা করে গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ডেল্টা প্লানের আধুনিক-টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো হবে। চলমান এ প্রকল্পে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঢাকা, বরিশাল, খুলনা বিভাগের গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৩৮টি উপজেলায় কৃষির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম ২০১৮ সালে শুরু করে। বর্তমানে এটি আরও জোরদার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মানসম্পন্ন উচ্চফলনশীল জাতের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করা হবে। এ অঞ্চলের উপযোগী ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। সবজি, ফল, ডাল, আলু, গম, তৈলবীজ, ভূট্টা, নারকেল, তাল, খেজুরের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এ অঞ্চলকে কৃষিতে সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

বীজ, সার বিতরণ, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতের ফসলের বিস্তার ঘটানো হবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বিগত ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী ২০২৩ সালে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। ৩ বিভাগের ৫ জেলার ৩৮টি উপজেলার পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্প পরিচালক ড. এমএম কামরুজ্জামান আরও জানান, এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন উন্নত জাতের ফসলের ২ হাজারটি উপযোগিতা যাচাই পরীক্ষাসহ ১১৬ হেক্টর জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এসব প্লটে সব ফসলেরই বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১১৪টি মিশ্র ফলের বাগান গড়ে উঠেছে। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন জাতের ১০ হাজার ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে। সাড়ে ৬ হাজার কৃষকের মাঝে শাক, সবজি ও বীজ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের জন্য আধুনিক গবেষণাগার, অফিস, কর্মকর্তা, কর্মচারী কোয়ার্টার, আন্তর্জাতিক গবেষকদের উপযোগী অতিথি ভবন থাকছে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জে যুগোপযোগী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এখানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ কৃষি গবেষণাগার স্থাপন করা হবে। এটি শিক্ষার্থী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষকদের পরিবেশবান্ধব, অধিক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির গবেষণার কাজে ব্যাপক সহায়তা করবে। এতে এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।

জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলা করে কৃষক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।

গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য গোপালগঞ্জে স্থাপিত হতে যাওয়া কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচিত হবে। সেই সঙ্গে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে কৃষির ব্যাপক উন্নতি হবে। অধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত বাজারজাত করে ন্যয্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। এখানে কৃষি নির্ভর শিল্প গড়ে উঠবে।