বিও অ্যাকাউন্ট খোলা অর্ধেকে নেমেছে

নতুন আইপিওর শেয়ার পেতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ থাকতে হবে এবং আইপিওতে যারা আবেদন করবে তারা সবাই শেয়ার পাবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এই খবরের পর নতুন বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। গত নভেম্বরে প্রায় দেড় লাখ নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু গত মাসে তা কমে নেমে এসেছে ৪৪ হাজারে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত একটা গোষ্ঠী নতুন আইপিওর শেয়ার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন নামে একাধিক বিও অ্যাকাউন্ট করতেন একজন বিনিয়োগকারী। সেটা এখন বন্ধ হচ্ছে। তাই বিও অ্যাকাউন্ট কমছে। এটা বাজারের জন্য ভালো।

জানা গেছে, সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে লটারি প্রথা উঠিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করলে সবাই শেয়ার পাবেন। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ন্যূনতম বাজার মূল্যে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। এমন বিধান রেখে আইপিওর সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান লটারি ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হবে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৫২ হাজার ১৬৮টি। নভেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ আট হাজার ৮৯২টি। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় ৪৪ হাজার। এরমধ্যে একক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৩২৫টি। এছাড়া ৯ লাখ আট হাজার ৯৩৮টি যৌথ এবং কোম্পানির বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৩ হাজার ৮৩৫টি।

জানা যায়, নিয়মানুযায়ী জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। গত ছয় বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৯ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট। বর্তমানে বাজারচিত্র বদলে যাওয়ায় আবারও পুঁজিবাজারে ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা।

রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১ , ২৬ পৌষ ১৪২৭, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বিও অ্যাকাউন্ট খোলা অর্ধেকে নেমেছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

নতুন আইপিওর শেয়ার পেতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ থাকতে হবে এবং আইপিওতে যারা আবেদন করবে তারা সবাই শেয়ার পাবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এই খবরের পর নতুন বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। গত নভেম্বরে প্রায় দেড় লাখ নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু গত মাসে তা কমে নেমে এসেছে ৪৪ হাজারে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত একটা গোষ্ঠী নতুন আইপিওর শেয়ার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন নামে একাধিক বিও অ্যাকাউন্ট করতেন একজন বিনিয়োগকারী। সেটা এখন বন্ধ হচ্ছে। তাই বিও অ্যাকাউন্ট কমছে। এটা বাজারের জন্য ভালো।

জানা গেছে, সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে লটারি প্রথা উঠিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করলে সবাই শেয়ার পাবেন। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে ন্যূনতম বাজার মূল্যে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। এমন বিধান রেখে আইপিওর সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান লটারি ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হবে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৫২ হাজার ১৬৮টি। নভেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ আট হাজার ৮৯২টি। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় ৪৪ হাজার। এরমধ্যে একক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৬ লাখ ২৯ হাজার ৩২৫টি। এছাড়া ৯ লাখ আট হাজার ৯৩৮টি যৌথ এবং কোম্পানির বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১৩ হাজার ৮৩৫টি।

জানা যায়, নিয়মানুযায়ী জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। গত ছয় বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৯ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট। বর্তমানে বাজারচিত্র বদলে যাওয়ায় আবারও পুঁজিবাজারে ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা।